মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য বিষয় হল তালাক এই হাদীসটি কি সহীহ এবং হাদীসটির সঠিক ব্যাখ্যা

হাদীসটি দুটি সনদে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর সূত্রে বর্নিত হয়েছে। হাদীসটি হল:

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَبْغَضُ الْحَلَالِ إِلَى اللَّهِ الطلاقُ

ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার কাছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট হালাল কার্য হলো তালাক।(আবু দাঊদহা/২১৭৮ ইবনু মাজাহ হা/ ২০১৮, আলবানী ইরওয়াউল গালীল, হা/২০৪০)।
.
তাহক্বীক: হাদীসটি দুটি সনদে ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর সূত্রে বর্নিত হয়েছে যার একটি সনদে ইবনে উমারের নাম বাদ পড়েছে। হাদীসটির যার একটি সনদ “মুরসাল” অপরটি “মুত্তাসিল”। সনদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে অনেক কথা বলতে হবে তাই বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে সংক্ষিপ্ত কথা হল হাদীসটির ইসনাদ মু‘আল্লাল অর্থাৎ সহীহ নয় বরং বর্ননাটি মুরসাল। কারণ হাদীসটির আবূ দাঊদ-এর সনদে মুহাম্মাদ বিন খালিদ এবং ইবনু মাজাহ-এর সনদে ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু ওয়ালীদ ওয়াস সাফী দুর্বল রাবী। রাবী উবায়দুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ আল-ওয়াসসাফী সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় অধিক দুর্বল। আবু জা’ফার আল-উকায়লী বলেন, তার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আবু হাতিম আর-রাযী, আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু হাতিম বিন হিব্বান ও ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। আহমাদ বিন শু’আয়ব আন-নাসায়ী বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে অভিযুক্ত। ইমাম যাহাবী তাকে দুর্বল বলেছেন। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৬৯৪, ১৯/১৭৩ নং পৃষ্ঠা আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন যঈফ আল জামি হা/ ৪৪, যঈফ আত তারগীব হা/ ১২৩৮)
.
হাদীসটি সঠিক অর্থ হল: বর্ননাটি মুরসাল একথা ঠিক কিন্তু হাদীসটির মর্ম বা অর্থ সহীহ।কারন বিবাহ একটি জান্নাতী বন্ধন। এ সম্পর্কের অবসান কারো জন্যই কাম্য নয়। তবু জীবনের অনিবার্য প্রয়োজনে এ সম্পর্কের অবসান ঘটাতেই হয়। স্বামী স্ত্রীর এই বন্ধন ছিন্নের মাধ্যম হলো তালাক। তবে শরীয়তের দৃষ্টিতে ত্বলাকের প্রকৃতি ও স্বভাবগত বিধান হলো তা হালাল, কিন্তু ওটাকে যখন পাপের সাথে সংমিশ্রণ করা হয়, তখন তা হয় আল্লাহর কাছে অপ্রিয়। যেমন মানুষ অন্যায় ও অযাচিতভাবে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ফেলে, অসময়ে স্ত্রীকে তালাক দেয়, শারী‘আত সীমালঙ্ঘন করে একই সঙ্গে একাধিক তালাক দিয়ে দেয় অর্থাৎ তালাক বৈধ হওয়া সত্ত্বেও হারাম ও বিদ্‘আত পন্থায় তা প্রয়োগের কারণে তা হয় আল্লাহর কাছে অপ্রিয় ও অপছন্দনীয়। আল্লামা ত্বীবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তালাক ইসলামে বৈধ হলেও তা আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়, কেননা শায়ত্বনের কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো। সুতরাং শায়ত্বনের প্রিয় কাজ আল্লাহর কাছে কখনো পছন্দনীয় হতে পারে না।(বিস্তারিত দেখতে পারেন মিশকাতুল মাসাবিহ হা/৩২৮০ ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
.
হাদীসটি সম্পর্কে সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
.
এটা বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার কাছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট বা অপছন্দীয় হালাল কার্য হলো তালাক। যদিও এই হাদীসটি সহীহ নয়, তবে এর অর্থ সঠিক: মহান আল্লাহ তালাককে অপছন্দ করেন, কিন্তু তিনি তার বান্দাদের জন্য এটি নিষিদ্ধ করেন না, যাতে তাদের জন্য জিনিসগুলি সহজ হয়। যদি তালাকের বৈধ বা শরীয়ত সম্মত কারণ থাকে, তাহলে তা জায়েয এবং এই মহিলাকে স্ত্রী হিসেবে রাখার সম্ভাব্য ফলাফলের উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে যদি তাকে রাখলে এমন কিছু হয় যা শরীয়তের পরিপন্থী এমন কিছুর দিকে পরিচালিত করে যা তাকে তালাক দেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না।যেমন নারীর যদি দ্বীনদারীত্বের বা সতীত্বের অভাব হয়,ফলে স্বামী তাকে সোজা করতে পারে না,তাহলে এই ক্ষেত্রে আমরা বলি যে তালাক দেওয়া উত্তম। কিন্তু যদি তালাক দেওয়ার কোন শরয়ী কারণ বা সাধারণ কারণ না থাকে তবে তালাক না দেওয়াই উত্তম,বরং সেক্ষেত্রে তালাক দেওয়া মাকরূহ বা অপছন্দনীয়।(উসামীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং ৫৫ প্রশ্ন নং-৩ ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১২০৭৬১) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।