খোলা তালাক

প্রশ্ন: খোলা তালাক কি? কী কী কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক চওয়া বৈধ? খোলা গ্রহণকারী মহিলার ইদ্দত এবং পরবর্তী বিবাহের নিয়ম কি?
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: খোলা শব্দটি ‘আরবী خُلْعُِ الثوب থেকে নেয়া হয়েছে, যার অর্থ কাপড় খুলে ফেলা। আরবেরা এ কথা তখনই বলে اذا ازاله যখন কাপড় খুলে ফেলানো হয়। কেননা নারী পুরুষের পোষাক স্বরূপ, অনুরূপ পুরুষও নারীর পোষাক স্বরূপ। আল্লাহর বাণী: ‘‘স্ত্রীগণ তোমাদের পোষাক স্বরূপ তোমরাও তাদের পোষাক।’’ (সূরা আল-বাকারাহ্; ২/১৮৭)। ইসলামের পরিভাষায় মহিলা তার স্বামীর নিকট থেকে কোনো কিছুর (মোহরের) বিনিময়ে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়াকে খোলা বলা হয়। এক্ষেত্রে স্বামী সে বিনিময়টি গ্রহণ করে স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে; এ বিনিময়টি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত মোহরানা হোক কিংবা এর চেয়ে বেশি সম্পদ হোক কিংবা এর চেয়ে কম হোক। (ফিক্বহুস সুন্নাহ; ২/৩১৯ পৃঃ)।মোটকথা স্বামী বা তার পরিবারের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেতে স্ত্রী ‘খোলা’ করার অধিকার রাখে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া ৩৩/২১; উসাইমীন আশ-শারহুল মুমতে‘১২/৪৬৯) কুরআন ও সহীহ হাদীসে খুলা করার বৈধতা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন; ‘‘অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি কিছু বিনিময় দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় তবে উভয়ের কারো পাপ হবে না।’’ (সূরা আল- বাকারহ্; ২/১২৯)। নিম্নের বিশুদ্ধ হাদীসটিসহ একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসও খোলা বৈধ হওয়ার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
.
মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের কন্যা জামীলা কিংবা সাহল আনসারী (রাঃ)-এর কন্যা হাবীবাহ নামক জনৈকা মহিলা একদিন ফজরের অন্ধকারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মজলিসে এসে তার স্বামী ছাবিত বিন ক্বায়েস বিন শাম্মাস-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করল যে, সে তাকে মেরেছে ও অঙ্গহানি করেছে। সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি তার দ্বীন বা চরিত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করি না। বরং তার বেঁটে অবয়ব ও কুৎসিত চেহারার অভিযোগ করি। হে রাসূল! যদি আল্লাহর ভয় না থাকত তাহলে বাসর রাতে আমি তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করতাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাবিতকে ডাকালেন ও তার মতামত জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাকে ‘মোহর’ স্বরূপ আমার সবচেয়ে মূল্যবান দু’টি খেজুর বাগান দিয়েছিলাম, যা তার অধিকারে আছে। যদি সেটা আমাকে ফেরত দেয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন মহিলাকে বললেন, তুমি কি বলতে চাও। মহিলাটি বলল হাঁ। ফেরৎ দেব। চাইলে আরো বেশী দেব। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাবিতকে বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীকে পৃথক করে দাও। অতঃপর তাই করা হলো। (সহীহ বুখারী, মুওয়াত্ত্বা, আবু দাঊদ, ইবনু জারীর, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ; ইবনু কাছীর ১/২৮১-৮২; মিশকাত হা/৩২৭৪ ‘বিবাহ’ অধ্যায়-১৩ ‘খোলা ও তালাক’ অনুচ্ছেদ-১১; ইবনু হাজার দু’টিকে পৃথক ঘটনা মনে করেন। শাওকানী, নায়লুল আওত্বার, কায়রো: ১৩৯৮/১৯৭৮ খৃঃ, ‘খোলা’ অনুচ্ছেদ, ৮/৪৩ পৃঃ)। ইবনু জারীর বলেন যে, উপরোক্ত ঘটনা উপলক্ষে অত্র আয়াত (বাক্বারাহ ২২৯-এর দ্বিতীয়াংশ) নাযিল হয়। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইসলামের ইতিহাসে এটাই হলো ‘খোলা’-র প্রথম ঘটনা এবং এটাই হলো খোলা-র মূল দলীল। (তাফসীরে ইবনে কাছীর; ১/২৮১ পৃঃ)
.
“খোলা” তালাক কিনা এ নিয়ে ফুকাহায়ে কিরামের মাঝে ইখতিলাফ রয়েছে। তবে সঠিক মত হল “খুলা” তালাক নয়, বরং ‘বিচ্ছেদ। কেননা আল্লাহর কালাম পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- অর্থাৎ ‘‘তালাক দু’বার …, অতঃপর সে যদি তালাক দেয়’’- (সূরা আত্ব তালাক; ৬৫/২৯-৩০)। এ শেষ বাক্যের পূর্বে খুলা‘র কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, খোলা তালাক নয়। কেননা প্রথমে ২ তালাক, খুলা‘কে যদি তালাক ধরা হয় তাহলে সেটা এক তালাক, পরের বাক্যে (এক) তালাক উল্লেখ হয়েছে, এতে মোট ৪ তালাক হয়। অথচ এটা কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং খুলা তালাক নয়; বরং ‘ফাসখে নিকাহ’ বা বিবাহ ভঙ্গ মাত্র। অবশ্য খুলা‘কে ত্বলাকের বর্ণনার মধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র। যা নবী করীম ( ﷺ) ছাবেত বিন ক্বায়েস (রাঃ)-এর স্ত্রীকে ‘খোলা’ করে নেওয়ার পর তাকে ‘খোলা’র ইদ্দত স্বরূপ এক ঋতু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। (আবু্ দাঊদ হা/২২২৯-৩০, তিরমিযী হা/১১৮৫, নাসাঈ হা/৩৪৯৭, ইবনু মাজাহ হা/২০৫৮, হাদীসটি সহীহ; নায়লুল আওত্বার ৮/৪১ পৃঃ)। উক্ত হাদীসটিও প্রমাণ করে যে, ‘খোলা’ তালাক নয়। কারণ যদি তালাক হতো, তবে উক্ত মহিলাকে তিনি তিন ‘তোহর’ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলতেন। সহীহ বুখারীতে ‘খোলা’র ক্ষেত্রে যে ‘তালাক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কেননা উক্ত হাদীসটি ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত। পক্ষান্তরে আবু দাউদ, নাসাঈ, মুওয়াত্ত্বা বর্ণিত খোলাকারিণী মহিলা ছাবিত-এর স্ত্রী জামীলা বা হাবীবাহ্-র বর্ণনায় এসেছে وَخَلِّ سبِيْلَهَا অর্থাৎ ‘মহিলাকে ছেড়ে দাও’। অতএব এ বিষয়ে উক্ত মহিলার বক্তব্যই অগ্রাধিকারযোগ্য। (নায়লুল আওত্বার; ৮/৪৫-৪৬)
.
হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘খোলা’ যে তালাক নয়, তার প্রমাণ হলো- তালাকের ক্ষেত্রে আল্লাহ যে তিনটি বিধানের কথা বলেছেন সেগুলোর মধ্যে সব ক’টি ‘খোলা’তে পাওয়া যায় না। যেমন; তিনটি নিম্নরূপ- (১). ‘তালাকে রাজঈ’র পর স্বামী তার স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে বিনা বিবাহে ফিরিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু ‘খোলা’ হলে স্ত্রীর সম্মতি ব্যতীত তা পারবে না। (২). ‘তালাক’ তিনটি পর্যন্ত সীমিত। সুতরাং তালাকের সংখ্যা পূর্ণ হয়ে গেলে স্ত্রীর অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ ও মিলন না হওয়া পর্যন্ত প্রথম স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিতে পারবে না। কিন্তু ‘খোলা’য় স্ত্রীকে অপর কারো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয়েই প্রথম স্বামীর কাছে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফিরে যেতে পারবে। (৩). ‘খোলা’র ইদ্দত হলো এক ঋতু। পক্ষান্তরে সহবাস কৃত স্ত্রীর তালাকের ইদ্দত তিন তোহর। (নায়লুল আওত্বার; ৮/৪৬-৬৭)
.
নারীদের ঋতুকালে বা পবিত্রকালে, সহবাস কৃত বা সহবাসহীন, সকল অবস্থায় স্ত্রী ‘খোলা’ করতে পারে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ; ২/৩২৩)। ‘মোহরানা’ ফিরিয়ে দিয়ে বা অন্য কোন মালের বিনিময়ে ‘খোলা’ করাই দলীল সম্মত। তবে মালের বিনিময় ছাড়াও ‘খোলা’ সংঘটিত হতে পারে। বিশেষ করে স্বামীর পক্ষ থেকে যদি স্ত্রীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কুমতলব থাকে, তবে সেখানে মালের বিনিময় ছাড়াই আদালত উভয়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। কারণ হাদীসে এসেছে, কোন ক্ষতি করা চলবে না, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যাবে না।’(সহীহ ইবনু মাজাহ হা/১৮৯৬)
.
🔹কী কী কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক চওয়া বৈধ?
____________________________________
শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে যে সকল কারণে তার স্বামীর কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে পারে নিম্নে এ বিষয়ে মৌলিক ১০টি দিক তুলে ধরা হলো:-

(১). স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণ-পোষণের হক আদায় করতে অপারগ হয়।
(২). স্বামী যদি স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়।
(৩). স্বামী যদি পরকীয়া, পাপাচারিতা এবং অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হয়।
(৪). স্বামীর প্রতি মনে প্রচণ্ড ঘৃণা সৃষ্টি হলে ( তা যে কারণেই হোক না কেন)।
(৫). স্বামী দীর্ঘ সময় জেলে বন্দি থাকার কারণে স্ত্রী যদি নিজের নিরাপত্তা হীনতা অনুভব করে বা ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
(৬). স্বামী দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকার কারণে স্ত্রী যদি এতে নিজের ঈমান-আখলাকের ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করে।
(৭). স্বামী যদি স্ত্রীকে শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে মারপিট, জুলুম-নির্যাতন, অপমান-অপদস্থ, অভিসম্পাত ও গালাগালি করে।
(৮). স্বামী যদি এমন কোন দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় যার কারণে স্ত্রী তাতে সংক্রমিত হওয়ার আশংকা করে।
(৯). স্বামী যদি স্ত্রীকে তার পরিবার-পরিজন বিশেষ করে পিতামাতার সাথে দেখা-সাক্ষাতে সম্পূর্ণভাবে বাধা দেয়।
(১০). স্বামী যদি নিজে তাওহীদ ভিত্তিক জীবন গঠন, নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান পালন না করে অথবা ইসলামের কোন বিষয়কে অস্বীকার করে অথবা ইসলাম সম্পর্কে কটুক্তি করে অথবা স্ত্রীকে নামায, রোযা, পর্দা ইত্যাদি ফরয ইবাদতে বাধা দেয়…ইত্যাদি।
.
মোটকথা, স্বামীর অন্যায়-অপকর্ম ও পাপাচারের কারণে স্ত্রী নিজের ঈমান-আমল, আখলাক ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করলে এবং স্ত্রীর প্রতি অবধারিত হক আদায়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে সেই স্বামীর নিকট স্ত্রীর খোলা তালাক চাওয়া বৈধ। স্বামী খোলা তালাক দিতে অস্বীকার করলে সে কোর্টের আশ্রয় নিয়ে বিবাহ ভঙ্গ করতে পারে। তবে একজন বুদ্ধিমান নারীর করণীয় হলো, স্বামীর মাঝে দোষ-ত্রুটি দেখলে তাকে ধৈর্যের সাথে সংশোধন করার চেষ্টা করা, নিজে না পারলে অন্যের মাধ্যমে চেষ্টা করা, স্বামীকে তার আচার-আচরণ পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দেয়া। মোটকথা সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাড়াহুড়া করবে না এবং সন্তান-সন্ততির কথা বিবেচনা করে সবর অবলম্বন করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ গ্রহণের পাশাপাশি ইস্তিখারার সালাত আদায় করবে। তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করবেন। (নোট: আব্দুল্লাহিল হাদী)।
.
জেনে রাখা ভালো, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এক সুদৃঢ় ও মযবুত বন্ধন, যা সহজে ছিন্ন হওয়ার নয়। এটা ছিন্ন হয় তালাকের মাধ্যমে। যথাযোগ্য শারঈ কারণ ব্যতীত স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক চাওয়া হারাম। এরূপ করলে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,‘যে নারী বিনা কারণে স্বামীর নিকটে তালাক চায়, তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধিও হারাম।’ (তিরমিযী হা/১১৮৬-৮৭; সিলসিলা সহীহাহ হা/৮৩৩)। অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এটা ভীতি ও ধমকিমূলক বাক্য। মুহসিন বা নেককারগণ যেমন প্রথম ধাপেই জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবেন তারা সেই সুঘ্রাণ পাবে না। আল্লামা কাযী ইয়ায বলেন; এটাও হতে পারে যে, যদি সে জান্নাতে প্রবেশ করে তবে সুঘ্রাণ থেকে বঞ্চিত থাকবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ হা/৩২৭৯ ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য) অন্য বর্ণনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যারা স্বামী থেকে পৃথক হতে চায় এবং যারা খোলা করতে চায়, তারা মুনাফিক।’(নাসাঈ হা/২৪৬১, মিশকাত হা/৩২৯০, সনদ সহীহ)

🔹খোলা গ্রহণকারী মহিলার ইদ্দত এবং পরবর্তী বিবাহের নিয়ম কি?
____________________________________
খোলা গ্রহণকারী মহিলা কতদিন ইদ্দত পালন করতে হবে এই মাসালায় আহালুল আলেমগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। চার খলীফাসহ সাহাবী ও বিদ্বানগণের মতে খোলা তালাকের ইদ্দত হলো এক ঋতুকাল। কিন্তু জমহূর বিদ্বানগণের মতে অন্যান্য তালাকের ন্যায় এতেও স্ত্রী তিন ঋতুকাল পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। (সহীহ ইবনু মাজাহ হা/১৮৯৫, ৯৬; ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩২৩,৩২৭-২৮)। সুতরাং মতানৈক্য থাকলেও সঠিক কথা হলো যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে খোলা তালাক নেয়া হয় তাহলে তার ইদ্দত হলো, এক হায়েয।অর্থাৎ একবার হায়েয শেষ হলে তার ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে। ইদ্দত শেষ হওয়ার পর সে মহিলা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে; এর আগে নয়। (ইবনু তায়মিয়াহহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩৩/১৫৩; আল-ইস্তিযকার ৬/৮২; বিদায়াতুল মুজতাহিদ ৩/৮২; উসাইমীন আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/৪৫০-৪৭০)। তবে স্ত্রী খোলা গ্রহণ করার পরে প্রথম স্বামী যদি পুনরায় তাকে বিবাহ করতে চায় তাহলে মহিলার সম্মতিক্রমে দুজন শাক্ষী, নতুন আকদ এবং নতুন মোহর নির্ধারণের মাধ্যমে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ইদ্দত পালন করা জরুরি নয়। এ ব্যাপারে ফকীহদের মাঝে কোন দ্বিমত নাই। (বিদায়াতুল মুজতাহিদ ৩/৯২ ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩২৪)। স্ত্রীর সম্মতি ব্যতীত ইদ্দত কালের মধ্যে তাকে ফিরিয়ে নেওয়া জায়েয নয়। (তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/২৮৩-৮৪; কুরতুবী ৩/১৪৩-৪৫)
.
তবে যেহেতু নতুন বিবাহ তাই প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হলেও ওলী বা অবিভাবকের অনুমতি নেয়া অপরিহার্য। অনুরূপভাবে যদি সে অন্যত্র বিবাহ করতে চায় তবুও ওলী বা অবিভাবকের অনুমতি নেয়া আবশ্যক। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: لا نكاح إلا بولي) অভিভাবক ব্যতীত বিবাহ হবে না। (তিরমিযী হা/১১০১; মিশকাত হা/৩১৩০)। তিনি আরো বলেন, যদি কোন নারী তার ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করে, তবে তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল। এইরূপ অবৈধ পন্থায় বিবাহিত নারীর সাথে সহবাস করলে তাকে মোহর দিতে হবে। কারণ স্বামী মোহরের বিনিময়ে তার লজ্জাস্থানকে ব্যবহার করেছে। যদি ওলীগণ বিবাদ করেন, তবে যার ওলী নেই তার ওলী দেশের শাসক।(ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১৩১)। নবী করীম (ﷺ) আরও বলেন, ‘কোন মহিলা অপর কোন মহিলার বিয়ে দিবে না এবং কোন মহিলা নিজেকেও (অলী ব্যতীত) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করবে না।’ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১৩৬; ইরওয়া হা/৮৪১)। (আল্লাহ ই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।