নারীদের ইদ্দত সম্পর্কে বিস্তারিত

প্রশ্ন: ইদ্দত কাকে বলে? ইদ্দত পালনের সময়সীমা কতদিন? ইদ্দত পালন করা ছাড়া কোন নারী দ্বিতীয় বিবাহ করলে সেই বিবাহ কি বাতিল হবে? সবশেষে শরীয়তের আলোকে তালাক দিয়ে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার সঠিক পদ্ধতি কি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ‘ইদ্দত’ শব্দটি আরবি (আরবি: عدة )। আভিধানিক অর্থ হলো- গণনা করা বা গণনাকৃত। মহিলাদের ইদ্দত হলো- ঐ সকল দিন, যেগুলো অতিবাহিত হলে তার জন্য বিবাহ করা হালাল হয়ে যায়। ইদ্দত পালন করা ফরজ। ইদ্দত চলাকালীন অবস্থায় কোন মহিলার সাথে সহবাস করা হারাম। ইদ্দত পালন না করে দ্বিতীয় বিবাহ করলে সেটি সহীহ হবেনা। সুতরাং, কেউ বিবাহ বসলে সেই বিবাহ বাতিল হবে এবং উক্ত নারীর সাথে সহবাস করলে সেটি যিনা হবে। মহান আল্লাহ বলেন, নির্দিষ্ট কাল ইদ্দত পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনের সংকল্প করো না। আর জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদের অন্তরে যা আছে তা জানেন। কাজেই তাঁকে ভয় কর এবং জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম সহনশীল। (সূরা বাকারাহ্; ২/২৩৬)।
.
ইদ্দতের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীকে বিবাহ-বিচ্ছেদের ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করতে সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে সেই সুযোগে স্ত্রী প্রত্যানীতা করতে পারে। তাছাড়া ইদ্দত বিধিবদ্ধ করায় এ কথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, বিবাহ কোন ছেলেখেলার বিষয় নয়। এর আগে-পিছে রয়েছে বিভিন্ন নিয়ম-নীতি ও সীমা-সময়। তাছাড়া পরন্তু ইদ্দতের মাঝে নারীর গর্ভাশয় পরীক্ষা হয়। যাতে দুই স্বামীর তরফ থেকে বংশের সংমিশ্রণ না ঘটে।

▪️এবার এক নজরে ইদ্দত বা শোক পালনের সময়সীমা;
_____________________________________
🔸(১). বিবাহের পর স্বামীর সাথে সহবাস না হলে স্ত্রীর কোন ইদ্দত নেই, আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা মুমিন নারীদের বিবাহ করবে, অতঃপর তাকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিবে, তখন তোমাদের জন্য তাদের উপর কোন ইদ্দত নেই; যা তোমরা গণনা করবে।’ (সূরা আহযাব; ৩৩/৪৯)। তবে যদি তার স্বামী মারা যান, তাহলে সহবাস না হলেও তার জন্য তাকে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। (সূরা বাক্বারাহ; ২/২৩৪)

🔸(২). গর্ভবতী নারীর ইদ্দত হলো সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত।’ (সূরা তালাক্ব; ৬৫/৪)। এবার গর্ভধারণ তুলনামূলক লম্বা হলেও সন্তান প্রসব পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে। একই কারণে গর্ভের শেষের দিকে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর ইদ্দত মাত্র কয়েক ঘণ্টাও হতে পারে।
.
🔸(৩). স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে স্ত্রীর ইদ্দত পালনের সময়সীমা তিন হায়েজ। (সূরা তালাক; ৬৫/৪)
.
🔸(৪). তালাকপ্রাপ্ত নারী যদি ঋতুহীনা কিশোরী বা বৃদ্ধা হলে তার ইদ্দত তিন মাস। (সূরা আল-আহযাব;৬৫/ ৪)। কিন্তু ইদ্দত শুরু করে কিছু দিন পরে তার ঋতু শুরু হলে, ঋতু হিসাবেই তাকে তিন ইদ্দত পালন করতে হবে। (ফিকহুস সুন্নাহ; ২/২৯৭)। কোন জানা কারণে মাসিক বন্ধ থাকলে বা হবার সম্ভাবনা না থাকলে তার ইদ্দতও তিন মাস। কিন্তু হবার সম্ভাবনা থাকলে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তিন মাসিক ইদ্দত পালন করবে। অবশ্য যদি অজানা কারণে মাসিক বন্ধ থাকে তাহলে ১ বছর অর্থাৎ গর্ভের ৯ মাস এবং ইদ্দতের তিন মাস অপেক্ষা করে তবে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করতে পারবে। (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন; ২/৭৯৯)
.
🔸(৫). স্ত্রীর পক্ষ থেকে খোলা নিলে খোলা কারিনীর ইদ্দতকাল এক হায়েয। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত। ছাবিত ইবনু ক্বায়স (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর স্ত্রী তার কাছ থেকে খোলা তালাক নিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ইদ্দাতকাল নির্ধারণ করলেন এক হায়েয। (আবু দাঊদ, হা/২২২৯ হাকেম হা/২৮২৫, সনদ সহীহ)। সাথে সাথে স্বামী থেকে প্রাপ্ত সকল মোহর তাকে ফেরত দিবে। (সহীহ বুখারী, হা/৫২৭৩; মিশকাত, হা/৩২৭৪)।মোটকথা খু’লা কারিনী একবার হায়েয শেষ হলে তার ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে। ইদ্দত শেষ হওয়ার পর সে মহিলা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে; এর আগে নয়। (ইবনু তায়মিয়াহহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩৩/১৫৩; আল-ইস্তিযকার ৬/৮২; বিদায়াতুল মুজতাহিদ ৩/৮২; উসাইমীন আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/৪৫০-৪৭০)। তবে স্ত্রী খোলা গ্রহণ করার পরে প্রথম স্বামী যদি পুনরায় তাকে বিবাহ করতে চায় তাহলে মহিলার সম্মতিক্রমে দুজন শাক্ষী,নতুন আকদ এবং নতুন মোহর নির্ধারণের মাধ্যমে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ইদ্দত পালন করা জরুরি নয়। এ ব্যাপারে ফকীহদের মাঝে কোন দ্বিমত নাই। (বিদায়াতুল মুজতাহিদ ৩/৯২ ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩২৪)। স্ত্রীর সম্মতি ব্যতীত ইদ্দত কালের মধ্যে তাকে ফিরিয়ে নেওয়া জায়েয নয়। (তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/২৮৩-৮৪; কুরতুবী ৩/১৪৩-৪৫)
.
🔸(৬). কোনো মহিলার স্বামী নিখোঁজ হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে এবং সে জীবিত না-কি মৃত কোনোভাবে তা জানতে না পারলে, ঐ মহিলা চার বছর অপেক্ষা করবে। অতঃপর ঐ স্বামীকে মৃত ভেবে চার মাস ১০দিন ইদ্দত পালন করার পর চাইলে অন্যত্র বিবাহ করতে পারে। এক্ষেত্রে তালাক প্রদানের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, أَيُّمَا امْرَأَةٍ فَقَدَتْ زَوْجَهَا فَلَمْ تَدْرِ أَيْنَ هُوَ فَإِنَّهَا تَنْتَظِرُ أَرْبَعَ سِنِينَ ثُمَّ تَعْتَدُّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا ثُمَّ تَحِلُّ ‘যে নারীর স্বামী নিখোঁজ হয়ে যায় এবং জানতে পারে না সে কোথায়। তাহলে সে চার বছর অপেক্ষা করবে। অতঃপর চার মাস ইদ্দত পালন করে হালাল হয়ে যাবে। (অর্থাৎ সে এখন অন্যত্র বিবাহ করতে পারে)। (মুয়াত্বা মালেক; হা/২১৩৪, বুলুগুল মারাম হা/১১১৭, হাদিসটি মাওকুফের ভিত্তিতে সহীহ, তাওযিহুল আহকাম, ৫/৫৯৪)

🔸(৭). স্বামী মারা গেলে স্ত্রী চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। (সূরা বাকারাহ; ২/২৩৪ সহীহ বুখারী, হা/৫৩৪২)। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী মূলতঃ স্বামীর গৃহে অবস্থান করেই ইদ্দত পালন করবে। বাধ্যগত কারণ ব্যতীত এসময় বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। (সূরা তালাক; ৬৫/১, আবু দাউদ হা/২৩০০; মিশকাত হা/৩৩৩২ ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ২০তম খণ্ড, পৃ. ৪৪০)। ফুরাই‘আহ বিনতে মালেক (রাযিয়াল্লাহ আনহা) তার স্বামীর মৃত্যুর পর পিতার বাড়ী চলে যাওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুমতি চাইলে তিনি তাকে বলেছিলেন, ‘ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার বাড়িতেই অবস্থান কর।’ (আবু দাঊদ, হা/২৩০০; তিরমিযী, হা/১২০৪, সনদ সহীহ)। তবে কোন ক্ষতি বা শত্রুর ভয়ের আশঙ্কা থাকলে অন্য স্থানেও অবস্থান করা যায়। (ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ২০তম খণ্ড, পৃ. ৪৬৩)। পাশাপাশি এই সময় রঙ্গিন বা অধিক সৌন্দর্য প্রকাশক কোন পোষাক পরিধান করবে না। অলঙ্কার ব্যবহার করবে না। বিশেষ কারণ ব্যতীত সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদীও ব্যবহার করা যাবেনা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, لَا تَلْبَسُ ثَوْبًا مَصْبُوْغًا إِلَّا ثَوْبَ عَصْبٍ ‘(স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রী) রঙিন কাপড় ব্যবহার করতে পারবে না। তবে সূতাগুলো একত্রে বেঁধে হালকা রং লাগিয়ে তা দিয়ে কাপড় বুনলে তা ব্যবহার করা যাবে।’ (সহীহ বুখারী হা/৫৩৪২, সহীহ মুসলিম ৯৩৮, মিশকাত হা/৩৩৩১)।আহালুল আলেমগণ বলেন, (ثَوْب عَصْب) হলো এমন কাপড়, যা সুন্দর নয় বা যার মাধ্যমে সৌন্দর্য ফুটে উঠে না। শারঈ বিধান হলো, বিধবা স্ত্রী এমন পোশাক পরিধান করবে, যা সুন্দর নয়। কেননা অসুন্দর পোশাক ফেতনাকে উপেক্ষা করে। এ কারণে সাধারণ পোশাক (যা রঙিন না) ব্যবহার করবে। এমননিভাবে ইদ্দতকালীন সুগন্ধী, স্বর্ণ, রৌপ্য, হিরা, মণি-মুক্তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে। (শাইখ বিন বায, মাজমূ‘ঊ ফাতাওয়া, ২২তম খণ্ড, পৃ. ২১২)। তবে নিরাপত্তার আশংকা থাকলে অন্য কোন নিরাপদ স্থানে ইদ্দত পালন করতে পারে। যেমন; রাসূল (আল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একজন মহিলাকে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)-এর বাড়ীতে ইদ্দত পালন করতে বলেছিলেন। (সহীহ মুসলিম ১৪৮০, আবু দাঊদ ২২৮৪, নাসায়ী ৩২৪৫, মিশকাত হা/৩৩২৪)
.
জেনে রাখা ভালো, স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে স্ত্রীর নাকফুল, কানের দুল, পরিহিত শাড়ী খুলে রাখার যে রেওয়াজ সমাজে চালু আছে সেটা অনেকটা বাড়াবাড়ি বৈ কিছুই নয়। অন্যদিকে সদ্য বিধবা স্ত্রীকে নতুন শাড়ী উপহার দেওয়াও কুসংস্কার মাত্র। কোনও কারণে ইদ্দতের সময় পিছিয়ে দেওয়া যায় না। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই ইদ্দত পালন শুরু করতে হবে। (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২/৮১৫, ফাতাওয়াল মারআহ ৬৫পৃঃ)। উল্লেখ যে, স্বামী মারা গেলে শোক পালন করতে গিয়েৎউচ্চৈঃস্বরে কান্নাকাটি করা যাবে না। কেননা এটা জাহেলী প্রথা এবং তাওবা না করে মৃত্যুবরণ করলে ক্বিয়ামতের দিন তাকে দুর্গন্ধযুক্ত পায়জামা ও শরীরে পাঁচড়া সৃষ্টিকারী পোশাক পরিধান করানো হবে। (সহীহ মুসলিম হা/৯৩৪; মিশকাত হা/১৭২৭)
.
🔹স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পরে কতদিন তার খরচ দিতে হবে?
_______________________________________
স্বামী স্ত্রীকে রাজঈ তালাক (প্রথম ও দ্বিতীয় তালাক) দিলে ইদ্দতকাল পর্যন্ত খোরপোষ দিবে। (নাসাঈ, হা/৩৪০৩; সহীহাহ, হা/১৭১১)। আর তৃতীয় তালাক হয়ে গেলে তাকে কোনো খোরপোষ দিতে হবে কিনা এ ব্যাপারে আলিমদের মতানৈক্য রয়েছে। তবে সহীহ মুসলিমের হাদীস অনুযায়ী বিশুদ্ধ কথা হলো, এভাবে যদি তালাক বায়্যিনাহ্ অর্থাৎ তৃতীয় তালাক হয় তাহলে স্বাভাবিক ভাবে ঐ নারী কোন খোরাকী পাবেনা। (সহীহ মুসলিম, হা/১৪৮০; মিশকাত, হা/৩৩২৪)। তবে স্ত্রী গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত স্বামীকে তার খোরপোষের ব্যবস্থা করতে হবে ও দুধ পান করালে তাকে উপযুক্ত মজুরী দিতে হবে। (আত-ত্বালাক; ৬৫/৪, দেখুন, সহীহ মুসলিম ১৪৮০, আবু দাঊদ ২২৮৪, নাসায়ী ৩২৪৫, আহমাদ ২৭৩২৭)। অপর দিকে যে নারী খোলা করে নিয়েছে সে কোনো খোরপোষ পাবে না। (ইবনু আবী শায়বাহ, হা/১৮৮১৪, ১৮৪৯৭)।

▪️শরীয়তের আলকে তালাক দিয়ে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার সঠিক পদ্ধতি কি?
__________________________________
ইসলামি শরীয়তের বিধান হলো কেউ তার স্ত্রীকে তালাকে রাজঈ অর্থাৎ এক তালাক অথবা দুই তালাক দিয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারে। এমনকি যদি এক সঙ্গে তিন তালাক দেয় তবুও। কারণ এক মজলিসে তিন তালাক দিলে অধিক বিশুদ্ধ মতে এক তালাক হিসাবে গণ্য হবে। যেমন: আবদু ইয়াযীদ তার স্ত্রী উম্মে রুকানাকে তালাক দেন। পরবর্তীতে তিনি দারুণভাবে মর্মাহত হন। তখন রাসূল (ﷺ) তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি তোমার স্ত্রীকে কিভাবে তালাক দিয়েছ? তিনি উত্তরে বলেন, এক মজলিসে তিন তালাক দিয়েছি। রাসূল (ﷺ) বলেন, ওটা এক তালাক হয়েছে। তুমি স্ত্রীকে ফেরত নাও।’(আবু দাউদ হা/২১৯৬; আহমাদ হা/২৩৮৭; আওনুল মা‘বূদ ৬/২৭৯; যাদুল মা‘আদ ৫/২২৯; সনদ হাসান)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর যামানায় এবং আবু বকর (রাঃ) ও ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতের প্রথম দু’বছর একত্রিত তিন তালাককে এক তালাক গণ্য করা হতো। (সহীহ মুসলিম হা/১৪৭২; ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/২৯৯)
.
সুতরাং কেউ যদি তার স্ত্রীকে এক তালাক অথবা দুই তালাক এবং যদি এক সঙ্গে তিন তালাক দেয় তবুও সে তার স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারবে এক্ষেত্রে স্ত্রীর ইদ্দতের (তিন তোহরের) মধ্যে হলে স্বামী সরাসরি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলে কিছুই করতে হবেনা। শুধু তোমাকে গ্রহণ করলাম এইটুকু বললেই যথেষ্ট হবে। আর ইদ্দত অর্থাৎ তিনটি মাসিক পার হয়ে গেলে নতুন ভাবে বিবাহ ছাড়া ফেরত নেয়া যাবেনা, তখন উভয়ের সম্মতিতে পূর্বের ন্যায় মোহর নির্ধারণ করে নতুন ভাবে বিবাহের মাধ্যমে ফেরত নিতে হবে। (সূরা বাক্বারাহ: ২/২৩২)। তবে স্বামী যদি তিন মাসে তিন তালাক দেয় তাহলে উক্ত স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবে না। যতক্ষণ স্বেচ্ছায় এই স্ত্রীর অন্য কোথাও বিবাহ না হবে এবং সেখান থেকে স্বেচ্ছায় তালাক না হবে। (সূরা বাকারাহ ২২৯-২৩০; সহীহ বুখারী হা/৫২৬৫; মিশকাত হা/৩২৯৫)।
.
জেনে রাখা ভালো যে, সমাজে প্রচলিত আছে কোন স্বামীর তিন ত্বালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে অন্য করো কাছে বিয়ে দেয় যে, বিয়ের পর সহবাস শেষে ঐ ব্যক্তি স্ত্রীকে ত্বালাক দিবে, যেন সে অর্থাৎ পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয় এবং সে তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারে।প্রচলিত এই হিল্লা প্রথা একটি জাহেলিয়াত। এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) এদের লা‘নত করেছেন। (আবু দাঊদ হা/২০৭৬; মিশকাত হা/৩২৯৬)। আলী বিন আবী ত্বালিব, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেছেন, ‘রাসূল (ﷺ) হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে অভিসম্পাত বা লানত করেছেন।’ (তিরমিযী, হা/১১১৯, ১১২০; আবু দাঊদ, হা/২০৭৬; ইরওয়াউল গালীল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩০৮-৩০৯)।
.
তবে হ্যাঁ, তিন হায়েজে তিন ত্বালাক প্রাপ্তা নারীর ইদ্দাত শেষ হওয়ার পর কোন পুরুষ যদি তাকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করে, ত্বালাক দেওয়ার পরিকল্পনা বা বৈধ করার উদ্দেশ্য ছাড়াই সহবাস করে এবং পরবর্তীতে যদি দ্বিতীয় স্বামী কোন কারণে তাকে স্বেচ্ছায় ত্বালাক দেয় বা মারা যায়, সেক্ষেত্রে প্রথম স্বামী তাকে আবার বিয়ে করতে পারবে। (সূরা আল-বাক্বারাহ; ২৩০)। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে তার স্ত্রীকে তিন ত্বালাক দিয়েছে, ফলে সে অন্য পুরুষকে বিয়ে করে তার সাথে নির্জনবাস করে, অতঃপর সহবাস ব্যতীতই স্বামী তাকে ত্বালাক দেয়, সে কি পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হবে? নবী (ﷺ) বললেন, ‘প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অপরের সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে এবং সে তার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে।’ (সহীহ বুখারী, হা/৫২৬১, ৫২৬৫, ৫৭৯২; সহীহ মুসলিম, হা/১৪৩৩)।
.
অতএব, তালাকের পর তিনটি ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নিলে স্বাভাবিকভাবে বিবাহ ছাড়াই নিতে পারবে আর তিনটি ইদ্দত পার হয়ে গেলে নতুনভাবে মোহর, সাক্ষী, মেয়ের পিতার অনুমতি ইত্যাদি নির্ধারণ করে নতুন ভাবে পূর্বের স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে কোন বাধা নেই।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন-সুন্নাহর যাবতীয় বিধি বিধান যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।