কুফর ও শিরকের সংজ্ঞা এবং কাফের ও মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য

প্রশ্ন: কুফর এবং শিরকের সংজ্ঞা কি? কাফের এবং মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য কী?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: কুফর এবং শিরক ইসলামি শরীয়তের দুটি পরিভাষা।
.
কুফরী হলো: সত্যকে অস্বীকার করা এবং তা (সত্যকে) গোপন করা। আভিধানিক অর্থে কুফরির আসল অর্থ হলো: আবরণ তথা গোপন করা,আচ্ছন্ন করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় ঈমানের বিপরীত অবস্থানকে কুফরী বলা হয়।কেননা কুফরী হচ্ছে আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান না রাখা, চাই তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হোক কিংবা না হোক। বরং তাদের ব্যাপারে কোন প্রকার সংশয় ও সন্দেহ, উপেক্ষা কিংবা ঈর্ষা, অহংকার কিংবা রাসূলের অনুসরণের প্রতিবন্ধক কোন প্রবৃত্তির অনুসরণ কুফরীর হুকুমে কোন পরিবর্তন আনয়ন করবে না। যদিও তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী বড় কাফির হিসাবে বিবেচিত।অনুরূপভাবে ঐ অস্বীকারকারী ও বড় কাফির, যে অন্তরে রাসূলগণের সত্যতার প্রতি বিশ্বাস রাখা সত্ত্বেও হিংসাবশতঃ মিথ্যা সাব্যস্ত করে থাকে। কুফুরী দুই প্রকার।

প্রথম প্রকার: বড় কুফরী এ প্রকারের কুফুরী মুসলমান ব্যক্তিকে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়। এটি আবার পাঁচ ভাগে বিভক্ত:

(১). মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কুফরী।

(২). মনে বিশ্বাস রেখেও অস্বীকার অহংকারশতঃ কুফরী।

(৩). সংশয়জনিত কুফুরী

(৪). উপেক্ষা প্রদর্শন ও মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কুফরী।

(৫). নিফাকী ও কপটতার কুফরী।

দ্বিতীয় প্রকার কুফরি: এ প্রকারের কুফরী মানুষকে মুসলিম মিল্লাত থেকে বহিস্কৃত করে না। একে ‘আমলী কুফরী’ও বলা হয়। যেমন: মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী ও পরস্পরে যুদ্ধ করা কুফরী।
.
অপরদিকে শিরক শব্দটি আরবী শব্দ; যার আভিধানিক অর্থ শরিক, অংশীদার, সমকক্ষ, সামঞ্জস্য ইত্যাদি; পারিভাষিক অর্থে আল্লাহ তায়ালা কুরআন ও সহীহ হাদিসের মাধ্যমে আমাদেরকে তার নিজের নাম ও গুণাবলী সমূহের যে বর্ণনা শিক্ষা দিয়েছেন সেগুলোর কোন ব্যাপারে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক বা অংশীদার করা বা সমকক্ষ করা বা সামঞ্জস্য করার নামই শিরক। আরো সহজে বললে ইবাদতের প্রকারসমূহ থেকে কোনো কিছু আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য সম্পাদন করাকে শিরক বলে। যেমন: আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট দু‘আ করা, গাইরুল্লাহর জন্য কুরবানী করা, মানত করা এবং এমন বিষয়ে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের নিকট উদ্ধার কামনা করা, যা থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ রাখে না। শিরক হচ্ছে তাওহীদের বিপরীত। আল্লাহ তায়ালার সমস্ত নাম ও গুণাবলীর ব্যাপারে তার এককত্বই হচ্ছে তাওহীদ। আর তাওহীদ হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য ইবাদতকে নির্দিষ্ট করা। শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ। আল্লাহ তা‘আলা সংবাদ দিয়েছেন যে, যারা শিরক থেকে তাওবা করবে না, তিনি তাদের জন্য ক্ষমার কোনো ব্যবস্থা রাখেন নি। অথচ আল্লাহ তা‘আলা নিজের উপর রহমত করাকে আবশ্যক করেছেন। শিরকের অবস্থা যেহেতু এরকমই এবং তা যেহেতু সর্বাধিক বড় গুনাহ, তাই বান্দার উপর আবশ্যক হলো শিরক থেকে খুব সাবধানতা অবলম্বন করা এবং সেটাকে খুব ভয় করবে। শিরক থেকে বাঁচার জন্য সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে। কেননা সর্বাধিক নিকৃষ্ট গুনাহ এবং সবচেয়ে বড় যুলুম। লুকমান আলাইহিস সালাম স্বীয় পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে যা বলেছিলেন, তা উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,﴿يَا بُنَيَّ لا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ﴾‘‘হে প্রিয় বৎস! আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা যুলুম’’। (সূরা লুকমান: ১৩)
.
▪️কাফের এবং মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য কী?
.
প্রথমেই বলেছি কুফরী হলো: সত্যকে অস্বীকার করা এবং তা (সত্যকে) গোপন করা। আভিধানিক অর্থে কুফরির আসল অর্থ হলো: আবরণ তথা গোপন করা,আচ্ছন্ন করা। যে কুফরি করে সে ব্যক্তি হয় কাফের।
.
অন্যদিকে শিরক শব্দের অর্থ হল: অংশীদার স্থাপন করা, মহান আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা। আর যে আল্লাহর সাথে শিরক করে সে হয় মুশরিক।
.
কখনো কখনো অস্বীকার করা এবং মিথ্যা প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে কুফরি হয়, অর্থাৎ কুফর অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যানের রূপ নিতে পারে, অপরদিকে মুশরিকরাও আল্লাহকে বিশ্বাস করতে পারে। যেমন, (মুশরিকদের) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ছিল। যখন তাদের বলা হত, আসমান কে সৃষ্টি করেছে? যমীন কে সৃষ্টি করেছে? পাহাড় কে সৃষ্টি করেছে? কে রিযিক দেন? কে মৃত্যু দেন? তারা বলে, আল্লাহ। অথচ তারা মুশরিক। এটাই মুশরিক ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য। তবে কখনো কখনো দুটি শব্দের প্রত্যেকটি শব্দ একটি অপরটির অর্থে আসে। সুতরাং কাফের শব্দটি মুশরিকের অর্থে আর মুশরিক শব্দটি কাফেরের অর্থে ব্যবহার হতে পারে।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন:

” الشرك والكفر قد يطلقان بمعنى واحد وهو الكفر بالله تعالى ، وقد يفرق بينهما فيخص الشرك بعبادة الأوثان وغيرها من المخلوقات مع اعترافهم بالله تعالى ككفار قريش ، فيكون الكفر أعم من الشرك ”

কখনো কখনো শিরক এবং কুফর উভয়টি একই অর্থে ব্যবহার হয়। তা হলো আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করা। তবে উভয়ের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। আল্লাহকে স্বীকার করা স্বত্বেও মূর্তি এবং অন্যান্য সৃষ্টির সাথে ইবাদত করা হলো শিরকের সাথে খাস যেমন: কুরাইশের মুশরিকরা। আর কুফরী হলো শিরক থেকে আম অর্থাৎ ব্যাপক। (নববী শারহু সহিহ মুসলিম: খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৭১ )
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন:

الكفر جحد الحق وستره ، كالذي يجحد وجوب الصلاة أو وجوب الزكاة أو وجوب صوم رمضان أو وجوب الحج مع الاستطاعة أو وجوب بر الوالدين ونحو هذا ، وكالذي يجحد تحريم الزنا أو تحريم شرب المسكر أو تحريم عقوق الوالدين أو نحو ذلك .

أما الشرك فهو : صرف بعض العبادة لغير الله ، كمن يستغيث بالأموات أو الغائبين أو الجن أو الأصنام أو النجوم ونحو ذلك ، أو يذبح لهم أو ينذر لهم ، ويطلق على الكافر أنه مشرك ، وعلى المشرك أنه كافر ، كما قال الله عز وجل : ( وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ لا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ ) المؤمنون/117 ، وقال سبحانه : ( إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ) المائدة/72 ، وقال جل وعلا في سورة فاطر : ( ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِنْ قِطْمِيرٍ . إِنْ تَدْعُوهُمْ لا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ وَلا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيرٍ ) فاطر/13، 14 ، فسمى دعاءهم غير الله شركا في هذه السورة ، وفي سورة المؤمنون سماه كفراً .

وقال سبحانه في سورة التوبة : ( يُرِيدُونَ أَنْ يُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللَّهُ إِلا أَنْ يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ . هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ ) التوبة/32، 33 ، فسمى الكفار به كفاراً ، وسماهم مشركين ، فدلَّ ذلك على أن الكافر يسمى مشركاً ، والمشرك يسمى كافراً ، والآيات والأحاديث في ذلك كثيرة ،

ومن ذلك قول النبي صلى الله عليه وسلم : ( بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْك الصَّلاةِ ) ، أخرجه مسلم في صحيحه عن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما ، وقوله صلى الله عليه وسلم : ( الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ ) أخرجه الإمام أحمد وأبو داود والترمذي والنسائي وابن ماجه بإسناد صحيح عن بريدة بن الحصيب رضي الله عنه ، والله ولي التوفيق

কুফুরি হলো সত্যকে অস্বীকার করা এবং তা গোপন করা। যেমন যে ব্যক্তি সলাতের ওয়াজিব, যাকাতের ওয়াজিব, রমজান মাসের সিয়ামের ওয়াজিব এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্বের ওয়াজিব, পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের ওয়াজিব ইত্যাদি অস্বীকার করে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি যেনা, মদ পান, পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া ইত্যাদি হারাম হওয়াকে অস্বীকার করে। আর শিরক হলো: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করা। যেমন: মৃত ব্যক্তি, অনুপস্থিত ব্যক্তি, জ্বীন, মূর্তি, তারকা ইত্যাদির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা বা তাদের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা কিংবা মানত করা। কাফেরকে মুশরিক বলা হয় এবং মুশরিককে কাফের বলা হয়। যেমন: মহান আল্লাহ বলেছেন: আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে, এ বিষয়ে তার নিকট কোন প্রমাণ নেই; তার হিসাব তো তার রব-এর নিকটই আছে; নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না।(সূরা মুমিনুন:২৩/১১৭) অপর আয়াতে বলেন,নিশ্চয় কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করে দিয়েছেন, এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। (সূরা মায়েদাহ,৫/৭২) আর আল্লাহ সূরা ফাতিরে বলেন: তিনি আল্লাহ, তোমাদের রব; সমস্ত কর্তৃত্ব তাঁরই, আর আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকো তারা খেজুরের আঁটির আবরণেরও মালিক নয়। যদি তোমরা তাদেরকে ডাক, তারা তোমাদের ডাক শুনবে না; আর শুনতে পেলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেবে না এবং কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শরীক করাকে অস্বীকার করবে। আর সর্বজ্ঞ আল্লাহর ন্যায় কেউ তোমাকে অবহিত করবে না। (সূরা ফাতির, ৩৫/১৩-১৪) আল্লাহ ব্যতীত তাদের ডাকাকে এই সূরায় শিরক বলা হয়েছে এবং সূরা মুমিনুনে এটিকে কুফর বলেছেন। আল্লাহ বলেন, তারা (ইয়াহুদী-খৃষ্টানরা) তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায় কিন্তু আল্লাহ্ তাঁর নূর পরিপূর্ণ করা ছাড়া আর কিছু করতে অস্বীকার করছেন। যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে। তিনিই সে সত্তা যিনি তার রাসূলকে (মুহাম্মদকে) হিদায়াত ও সত্য দ্বীন (ইসলাম) সহ পাঠিয়েছেন, যেন তিনি আর সব দ্বীনের উপর একে বিজয়ী করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সুরা তওবা: ৯/৩২,৩৩) এখানে আল্লাহ তায়ালা কুফরীর দ্বারা তাদেরকে কাফের বলেছেন এবং একইসাথে তাদেরকে মুশরিক বলেছেন। এটাই প্রমাণ করে যে, কাফেরকে মুশরিক হিসেবে আর মুশরিককে কাফের হিসেবে তারা চিহ্নিত করা যেতে পারে এ বিষয়ে অনুরূপ আয়াত এবং হাদিস অনেক রয়েছে। আরেকটি উদাহরণ হল সেই হাদিস যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মাঝে পার্থক্য হলো সলাত ছেড়ে দেওয়া। ইমাম মুসলিম হাদীসটি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।অন্য হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমাদের এবং তাদের মধ্যে চুক্তি হলো সালাত ছেড়ে দেওয়া যে সালাত ছেড়ে দিল সে কুফরি করল।ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী এবং ইবনে মাজাহ রহ. হাদিসটি বুরায়দা ইবনে হাসিবের সূত্রে বর্ণনা করেন। (বিন বায মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/৯; পৃষ্ঠা: ১৭৪-১৭৫)
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] অপর ফাতওায় বলেছেন:

” ومن الشرك أن يعبد غير الله عبادة كاملة ، فإنه يسمى شركا ، ويسمى كفرا ، فمن أعرض عن الله بالكلية وجعل عبادته لغير الله كالأشجار أو الأحجار أو الأصنام أو الجن أو بعض الأموات من الذين يسمونهم بالأولياء ، يعبدهم أو يصلي لهم أو يصوم لهم وينسى الله بالكلية ، فهذا أعظم كفرا وأشد شركا ، نسأل الله العافية ، وهكذا من ينكر وجود الله ، ويقول ليس هناك إله ، والحياة مادة ، كالشيوعيين والملاحدة المنكرين لوجود الله ، هؤلاء أكفر الناس وأضلهم وأعظمهم شركا وضلالا نسأل الله العافية ، والمقصود أن أهل هذه الاعتقادات وأشباهها كلها تسمى شركا ، وتسمى كفرا بالله عز وجل ، وقد يغلط بعض الناس لجهله فيسمي دعوة الأموات والاستغاثة بهم وسيلةً ، ويظنها جائزة ، وهذا غلط عظيم ؛ لأن هذا العمل من أعظم الشرك بالله ، وإن سماه بعض الجهلة أو المشركين وسيلة ، وهو دين المشركين الذي ذمهم الله عليه وعابهم به ، وأرسل الرسل وأنزل الكتب لإنكاره والتحذير منه ”

শিরকের অন্তর্ভুক্ত হলো: আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সম্পূর্ণরূপে উপাসনা করা। একে বলা হয় শিরক এবং কুফর। যে ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উপাসনা করে, যেমন গাছ, পাথর, মূর্তি, জ্বীন অথবা মৃতদের মধ্যে কেউ কেউ যাদেরকে তারা ওলী (পীর) বলে ডাকে এবং তাদের পূজা করে, তাদের জন্য নামাজ পড়ে বা তাদের জন্য রোজা রাখে এবং আল্লাহকে পরিপূর্ণরুপে ভুলে যায়। এটি সবচেয়ে বড় কুফর এবং সবচেয়ে বড় শিরক বরং এটি শিরকের নিকৃষ্টতম রূপ। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদের এসব থেকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখেন।একইভাবে যারা আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে এবং বলে কোনো ইলাহ (মাবুদ) নেই এবং জীবন একটি বস্তু, যেমন শিয়া এবং নাস্তিক যারা আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে তারাই সবচেয়ে কাফের, বিপথগামী , মুশরিক এবং সবচেয়ে বড় পথভ্রষ্ট। মোট কথা এই যে, যারা এই এবং অনুরূপ আক্বীদা পোষণ করে তারা সকলেই মুশরিক ও কাফের বলে গণ্য হয় যারা আল্লাহকে অবিশ্বাস এবং অস্বীকার করে।আর কিছু লোক অজ্ঞতাবশত, মৃতকে ডাকা এবং তাদের সাহায্য চাওয়াকে ভুলবশত ওসীলা মনে করে তাদেরকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে আর এগুলো করাকে তারা জায়েজ মনে করে। কিন্তু এটি মারাত্মক ভুল। কেননা এই কাজগুলো বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত।কিছু অজ্ঞ মানুষ এবং মুশরিকরা এটাকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।আর এই ব্যাপারে মুশরিকদেরকে আল্লাহ তাআলা ধিক্কার দিয়েছেন, সতর্ক করেছেন, নবী রাসুলগণ প্রেরণ করেছেন এবং তাদেরকে সতর্ক করার জন্য ও তাদের কাজকে নাকচ করার জন্য কিতাব নাযিল করেছেন। (বিন বায মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/৪; পৃষ্ঠা: ৩২-৩৩) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।