কাউকে ছোট করে কথা বলা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, ভিন্ন নামে ডাকা, বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দেওয়া সম্পর্কে ইসলামের বিধান

প্রশ্ন: কাউকে ছোট করে কথা বলা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, ভিন্ন নামে ডাকা, বিভিন্ন ভাবে মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া সম্পর্কে ইসলামের বিধান কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
▪️ভূমিকা: পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।(সূরা ত্বীন,৪)। আমাদের আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়া (আঃ)। তাঁদের থেকেই দুনিয়াতে মানুষ বিস্তার লাভ করেছে।(সূরা নিসা ৪/১)। সে হিসাবে পৃথিবীর সকল মানুষ ভাই-ভাই। আদর্শিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে মুসলমানরা ইব্রাহীম (আঃ)-এর বংশধর। (সূরা হজ্জ ২২/৭৮)। সুতরাং যেদিক দিয়েই বিবেচনা করা হোক না কেন পৃথিবীর সকল মানুষ পরস্পর ভাই-ভাই। তাই মানুষ একে অপরকে কিংবা এক মুসলমান অপর মুসলমানকে কষ্ট দিতে পারে না। কারণ পরস্পরকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। ইসলামী শরীয়তে এক মুসলিম অপর মুসলিমকে ছোট করা অথবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলা অথবা বিভিন্ন কথা কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেয়া হারাম, এটি কবিরা গুনাহ। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে ইমানদারগণ! কোনও মুমিন সম্প্রদায় যেন অপর কোনও মুমিন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে। কেননা যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরাও যেন অন্য নারীদেরকে উপহাস না করে। কেননা যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ উপাধি অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তওবা করে না তারাই তো যালিম।’[সূরা আল-হুজুরাত : ১১] ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) উক্ত আয়াতে وَ لَا تَنَابَزُوۡا بِالۡاَلۡقَابِ ‘আর তোমরা একে অপরকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না’ এর ব্যাখ্যায় বলেন, لا تتداعوا بالألقاب ، وهي التي يسوء الشخص سماعها ‘তোমারা একে অপরকে এমন সব উপাধি দ্বারা ডাকাডাকি করো না যা সে শুনতে অপছন্দ করে।’[তাফসীরে ইবনু কাছীর, ৭/৩৭৬ পৃ.]।
.
অপর একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন,অপরাধ না করা সত্ত্বেও যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়,তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’[সূরা আহযাব ৩৩/৫৮]।
.
মুসলমানকে কষ্ট দিতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন: وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوْا فَقَدِ احْتَمَلُوْا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِيْنًا، ‘অপরাধ না করা সত্ত্বেও যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়,তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’(আহযাব ৩৩/৫৮)। মুমিনকে কষ্ট দিতে নিষেধ করে রাসূল (ﷺ) বলেন, হে ঐ জামা‘আত! যারা মুখে ইসলাম কবুল করেছ, কিন্তু অন্তরে এখনো ঈমান মযবুত হয়নি। তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবে না এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হবে আল্লাহ তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ প্রকাশ করে দিবেন তাকে অপমান করে ছাড়বেন,সে তার উটের হাওদার ভিতরে অবস্থান করে থাকলেও।’(তিরমিযী হা/২০৩২; মিশকাত হা/৫০৪৪; ছহীহুত তারগীব হা/২৩৩৯)।

মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কয়েকটি মাধ্যম: মানুষকে প্রধানত কথা ও কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া হয়ে থাকে। কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া বলতে গালি দেওয়া, গীবত-তোহমত, চোগলখুরী করা, খোঁটা দেওয়া, তুচ্ছ জ্ঞান করা ইত্যাদি বোঝায়। আর কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া বলতে যুলুম করা, ধোঁকা-প্রতারণা, রাস্তা বন্ধ করা, সম্পদ জবর দখল করা ও হত্যা করা ইত্যাদি বুঝায়।

(ক). কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া: আঘাতের ক্ষত ও ব্যথা দ্রুত সেরে যায়। কিন্তু কথার মাধ্যমে দেওয়া আঘাত ও ক্ষতের নিরাময় সহজে হয় না। সেজন্য কবি বলেন, جِرَاحَاتُ السِّنَانِ لَهَا الْتِئَامُ * وَلاَ يَلْتَامُ مَا جَرَحَ اللِّسَانُ তরবারির আঘাতের ক্ষতের প্রতিষেধক আছে, কিন্তু জিহবার ক্ষতের কোন প্রতিষেধক নেই।’(তুহফাতুল আহওয়াযী ৭/১৭৩; মিরক্বাত ৩/৫৯ পৃঃ)। তাই কথার মাধ্যমে দেওয়া আঘাত মানুষ সবচেয়ে বেশী স্মরণে রাখে এবং এ আঘাত সর্বাধিক ব্যথাতুর হয়। কথার দ্বারা মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল:

▪️(১). গালি দেওয়া: মানুষকে গালি দেওয়া হলে সে কষ্ট পায়। আর এটা কবীরা গোনাহ। পরকালে এর প্রতিকার হবে নেকী প্রদান বা গোনাহ বহনের মাধ্যমে। রাসূল (ﷺ) বলেন, سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ ‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।’(বুখারী হা/৪৮, ৬০৪৪, ৭০৭৬; মুসলিম হা/৬৪; মিশকাত হা/৪৮১৪)। মুসলমানকে গালি দেওয়া নিজেকে ধ্বংসে নিপতিত করার শামিল। রাসূল (ﷺ) বলেন, سَابُّ الْمُؤْمِنِ كَالْمُشْرِفِ عَلَى الْهَلَكَةِ، ‘মুসলমানকে গালি দেওয়া নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিপতিত করার ন্যায়।’ (বায্যার, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫৮৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৭৮০)।

▪️(২). গীবত-তোহমত:গীবত-তোহমতের মাধ্যমেও মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়। গীবত অর্থ দোষচর্চা, পরনিন্দা। আর তোহমত অর্থ মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা। এ দু’টিই পরিবারে ও সমাজে নানা বিশৃঙ্ক্ষলা সৃষ্টির জন্য দায়ী।গীবত বা দোষচর্চা থেকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন: وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُ، ‘আর একে অপরের পিছনে গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করে? বস্ত্ততঃ তোমরা সেটি অপছন্দ করে থাক।’(হুজুরাত ৪৯/১২)। অনুরূপভাবে রাসূল (ﷺ) গীবত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু বারযাহ আসলামী (রাঃ) বলেন, يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الإِيْمَانُ قَلْبَهُ لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِيْنَ ‘হে ঐসব লোক! যারা কেবল মুখে ঈমান এনেছ। কিন্তু তাদের হৃদয়ে ঈমান প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলমানদের গীবত করো না।’(আবূদাঊদ হা/৪৮৮০; তিরমিযী হা/২০৩২; মিশকাত হা/৫০৪৪)। ক্বায়েস বলেন: আমর ইবনুল আছ (রাঃ) তার কতিপয় সঙ্গী-সাথীসহ ভ্রমণ করছিলেন। তিনি একটি মৃত খচ্চরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন,যা ফুলে উঠেছিল। তখন তিনি বললেন,আল্লাহর কসম! কোন ব্যক্তি যদি পেট পুরেও এটা খায়,তবুও তা কোন মুসলমানের গোশত খাওয়ার চেয়ে উত্তম।'(আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭৩২, সনদ সহীহ)।

▪️(৩). চোগলখুরী করা: মানুষকে কষ্ট দেওয়ার আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে চোগলখুরী করা। আর তা হচ্ছে দুই ভাই বা বন্ধুর মাঝে সম্পর্ক বিনষ্টের উদ্দেশ্যে একে অপরের কাছে পরস্পরের দোষ উল্লেখ করা। ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন-মিথ্যা অপবাদ কি জিনিস আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব না? তা হচ্ছে চোগলখুরী করা। জনসমক্ষে কারো সমালোচনা করা।’(সহীহ মুসলিম হা/৬৮০২)।আরেকটি হাদীছে এসেছে, আব্দুর রহমান ইবনু গানম ও আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন: আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা,যাদেরকে দেখলে আল্লাহকে স্মরণ হয়। আর আল্লাহ তা‘আলার নিকৃষ্ট বান্দা তারা, যারা মানুষের পরোক্ষভাবে নিন্দা করে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং পূত-পবিত্র লোকেদের পদস্খলন প্রত্যাশা করে।’(আহমাদ হা/১৭৯৯৮; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৬৭০৮; সহীহাহ হা/২৮৮৯; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৪৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৮১৪; মিশকাত হা/৪৮৭১-৭২)।এমনকি ব্যক্তি চোগলখুরীর জন্য কবরে শাস্তি হয়’। (বুখারী হা/২১৬; মুসলিম হা/২৯২; মিশকাত হা/৩৩৮)।

▪️(৪). মন্দ নামে ডাকা:মানুষকে মন্দ নামে ডাকা তাকে কষ্ট দেওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম। যেটা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,আর তোমরা একে অপরকে মন্দ লকবে ডেকো না। বস্ত্ততঃ ঈমান আনার পর তাকে মন্দ নামে ডাকা হলো ফাসেকী কাজ। যারা এ থেকে তওবা করে না, তারা সীমালংঘনকারী।’(হুজুরাত ৪৯/১১)।

▪️(৫). উপহাস করা: কোন মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সবারই কোন না কোন দিক দিয়ে দুর্বলতা থাকে। তাই কোন মানুষকে উপহাস করা উচিত নয়। এতে মানুষ মনে অত্যন্ত কষ্ট পায়। এটা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন: ‘হে বিশ্বাসীগণ! কোন সম্প্রদায় যেন কোন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে। হতে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম। আর নারীরা যেন নারীদের উপহাস না করে। হতে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম।’(হুজুরাত ৪৯/১১)।

▪️(৬). তুচ্ছজ্ঞান করা: কোন মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করলে বা হেয় ভাবলে সে যারপর নাই কষ্ট পায়। এ কাজ থেকে রাসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন এবং এর অশুভ পরিণতি বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন কোন মুসলিমের উপর প্রত্যেক মুসলিমের জান-মাল ও ইয্যত-আব্রু হারাম। (মুসলিম হা/২৫৬৪; মিশকাত হা/৪৯৫৯; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৮৫)।তিনি আরো বলেন, إِنَّ مِنْ أَرْبَى الرِّبَا اسْتِطَالَةَ الْمَرْءِ فِي عِرْضِ أَخِيهِ. ‘সবচেয়ে বড় সূদ হলো অন্যায়ভাবে কোন মুসলিমের মানহানি করা।(আবূদাঊদ হা/৪৮৭৬; সহীহাহ হা/১৪৩৩, ৩৯৫০; সহীহুল জামে‘ হা/২২০৩, ২৫৩১; সহীহুত তারগীব হা/২৮৩৩)।

▪️(৭). মিথ্যা অপবাদ দেওয়া: মিথ্যা অপবাদ হলো কারো ব্যাপারে অন্যের নিকটে এমন কথা বলা যা তার মাঝে নেই। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২৮)। কারো উপর মিথ্যা অপবাদ লাগিয়ে প্রচার করা কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আর মিথ্যা অপবাদকারীর শাস্তি হচ্ছে ৮০ বেত্রাঘাত।(সূরা নূর ২৪/৪-৫)। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন: এ ব্যাপারে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত রয়েছে যে, সতীসাধ্বী নারীর উপর অপবাদ দেওয়ার শাস্তি পুরুষের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। (ফৎহুল বারী ১২/১৮১)। উল্লেখ্য, শরী‘আত নির্ধারিত হদ্দ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের, সাধারণভাবে অন্যদের নয়।

▪️(৮). কুধারণা করা: কোন মানুষের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা সমীচীন নয়। কেননা এতে মানুষ কষ্ট পায়। বরং মুমিনের প্রতি সুধারণা পোষণ করা কর্তব্য। আল্লাহ বলেন,বিশ্বাসীগণ! তোমরা অধিক ধারণা হতে বিরত থাক। নিশ্চয়ই কিছু কিছু ধারণা পাপ।’ (হুজুরাত ৪৯/১২)।

▪️(৯). খোঁটা দেওয়া: পৃথিবীর সকল মানুষকে আল্লাহ সমান করে সৃষ্টি করেননি। বরং কাউকে ধনী,কাউকে দরিদ্র করেছেন। আল্লাহ বলেন, وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ، ‘আর তোমরা এমন সব বিষয় আকাঙ্ক্ষা করো না, যেসব বিষয়ে আল্লাহ তোমাদের একের উপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন।’ (নিসা ৪/৩২)। সুতরাং ধনী-দরিদ্রের এ মর্যাদাগত পার্থক্য আল্লাহ করে দিয়েছেন। তাই ধনীরা দরিদ্রদের দান করে খোঁটা দিলে তারা অন্তরে কষ্ট পায়। মানুষকে কষ্ট দেওয়ার এটা একটা অন্যতম মাধ্যম।তিন ব্যক্তির সাথে ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তাকাবেন না,তাদেরকে পবিত্র করবেন না, আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। তার মধ্যে খোঁটা দানকারী একজন। (মুসলিম হা/১০৬; মিশকাত হা/২৭৯৫)।

▪️(১০). দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করা: পৃথিবীতে দোষ-ত্রুটি মুক্ত কোন মানুষ নেই। সুতরাং নিজের মাঝে দোষ রেখে অপরের ত্রুটি খুঁজতে যাওয়া বোকামী বৈকি? কিন্তু মানুষ অপরের দোষ খুঁজে বের করে নিজে শান্তি অনুভব করে। কেউ কেউ অন্যের দোষ খুঁজে বের করাকে কৃতিত্ব ভাবে। এ কাজ মানুষকে যারপরনাই কষ্ট দেয়। অপরের দোষ খোঁজা কিছু কিছু মানুষের স্বভাব। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেন, يُبْصِرُ أحَدُكُمُ الْقَذَاةَ فى عَيْنِ أخِيهِ، وَيَنْسَى الْجِذْعَ فِيْ عَيْنهِ، ‘তোমাদের কেউ তার (মুসলিম) ভাইয়ের চোখে পতিত সামান্য ময়লাটুকুও দেখতে পায়, কিন্তু নিজ চোখে পতিত খড়-কুটাও (অধিক ময়লা) দেখে না।’(সহীহ ইবনে হিববান হা/৫৭৬১; সহীহাহ হা/৩৩; আদাবুল মুফরাদ হা/৫৯২) মানুষের দোষ-ত্রুটি খুঁজতে রাসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন এবং এর মন্দ পরিণতি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: ‘তোমরা দোষ-ত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষ-ত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষ-ত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন।’ (আবূদাউদ হা/৪৮৮০; তিরমিযী হা/২০৩২; ছহীহুল জামে‘ হা/২৩৩৯)।

▪️(১১). শত্রুতা পোষণ করা: মানুষ একে অপরকে ভাই মনে করবে এবং মুমিনও পরস্পরকে ভাই ভাববে এটাই তার করণীয়। কিন্তু কোন ক্রমেই একে অপরের সাথে শত্রুতা পোষণ করা কিংবা শত্রু ভাবা সমীচীন নয়। এগুলি মানুষকে কষ্ট দেয়। তাই এসব পরিহার করতে হবে। আল্লাহ বলেন: শয়তান তো কেবল চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও সালাত হতে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব এক্ষণে তোমরা নিবৃত্ত হবে কি? (সূরা মায়েদাহ ৫/৯১)। মুসলিম ভ্রাতৃত্ব সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেন: পারস্পরিক ভালোবাসা, সহানুভূতি ও মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে গোটা মুসলিম জাতি একটি দেহের সমতুল্য। যখন তার একটি অঙ্গ ব্যথিত হয়,তখন তার গোটা শরীর জ্বর ও উত্তাপ অনুভব করে।’ (মুসলিম হা/২৫৮৫; সহীহাহ হা/১০৮৩; সহীহুল জামে‘ হা/৫৮৪৯)।

▪️(১২). যুলুম করা: যুলুম অর্থ অন্যায়, অবিচার, নিপীড়ন ইত্যাদি। এটা হক বা ন্যায়ের বিপরীত। পরিভাষায় কোন বস্ত্তকে তার অনুপযুক্ত স্থানে রাখা। (রাগেব ইছফাহানী, মুফরাদাতু আলফাযিল কুরআন, পৃঃ ৫৩৭)। কেউ কেউ বলেন: যুলুম হচ্ছে অন্যের মালিকানায় হস্তক্ষেপ বা সীমালংঘন করা।(আল-জুরজানী, আত-তা‘রিফাত, পৃঃ ১৮৬)।যুলুমের শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَظْلِمْ مِنْكُمْ نُذِقْهُ عَذَابًا كَبِيْرًا، ‘বস্ত্ততঃ তোমাদের মধ্যে যারা সীমালংঘন করবে, আমরা তাদের বড় শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাব।’ (ফুরক্বান ২৫/১৯)। তিনি আরো বলেন, وَالظَّالِمُوْنَ مَا لَهُمْ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا نَصِيْرٍ، ‘আর যালেমদের কোন বন্ধু নেই বা কোন সাহায্যকারী নেই।’ (শূরা ৪২/৮)। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দাগণ! আমি আমার ওপর যুলুম করাকে হারাম করে দিয়েছি। তাই আমি তোমাদের জন্যও যুলুম করা হারাম করে দিলাম। অতএব তোমরা (পরস্পরের প্রতি) যুলুম করো না।’ (মুসলিম হা/২৫৭৭; সহীহুল জামে‘ হা/৪৩৪৫; মিশকাত হা/২৩২৭)।
.
পরিশেষে, কথা বা কাজ যে কোন মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। কেননা এসব বান্দার সাথে সংশ্লিষ্ট পাপ ও কবীরা গোনাহ। এসব পাপ থেকে বিরত না থাকলে পরকালে নেকী দিয়ে প্রায়শ্চিত্য করতে হবে। কিংবা যাদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়েছে তাদের গোনাহ কষ্টদানকারীর উপরে বর্তাবে। অবশেষে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। তাই আল্লাহ আমাদের সকলকে ঐ পাপ থেকে হেফাযত করুন-আমীন! সংকলিত। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
__________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।