জুমআর সালাত সম্পর্কে বিস্তারিত

প্রশ্ন: জুমআর সালাতের সূচনা, গুরুত্ব, ফজিলত, কার উপর জুমআ ফরজ এবং কার উপর নয়, জুমআর খুৎবা এবং সুন্নত সম্মত কিরাআত, এবং জুমআর রাকআত ছুটে গেলে করনীয় কি? বিস্তারিত বর্ননা সহ।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
জুমআর সূচনা: ১ম হিজরীতে জুমআ ফরয হয় এবং হিজরত কালে ক্বোবা ও মদ্বীনার মধ্যবর্তী বনু সালেম বিন আওফ গোত্রের ‘রানূনা’ (رانوناء) উপত্যকায় সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জুমআর সালাত আদায় করেন।(মির‘আত ২/২৮৮; ঐ, ৪/৪৫১; ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ২/২১১)। যাতে একশত মুসল্লী শরীক ছিলেন। (ইবনু মাজাহ হা/১০৮২; সীরাতে ইবনে হিশাম ১/৪৯৪; যা-দুল মা‘আ-দ ১/৯৮)।

তবে হিজরতের পূর্বে মদ্বীনার আনসারগণ আপোষে পরামর্শক্রমে ইহুদী ও নাসারাদের সাপ্তাহিক ইবাদতের দিনের বিপরীতে নিজেদের জন্য একটি ইবাদতের দিন ধার্য করেন ও সেমতে আস‘আদ বিন যুরারাহ (রাঃ) এর নেতৃত্বে মদ্বীনার বনু বায়াযাহ গোত্রের নাক্বী‘উল খাযেমাত (نَقِيعُ الْخَضِمَاتِ) নামক স্থানের ‘নাবীত’ (هَزْمُ النَّبِيْتِ) সমতল ভূমিতে সর্বপ্রথম জুমআর সালাত চালু হয়। যেখানে চল্লিশ জন মুসল্লী যোগদান করেন। (ইবনু মাজাহ হা/১০৮২; আবুদাঊদ হা/১০৬৯ সনদ ‘হাসান’। সীরাতে ইবনে হিশাম ১/৪৩৫; যা-দুল মা‘আ-দ ১/৩৬১; নায়ল ৪/১৫৭-৫৮; মির‘আত ৪/৪২০)। অতঃপর হিজরতের পর জুম‘আ ফরয করা হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, জুম‘আর এই দিনটি প্রথমে ইয়াহূদী-নাসারাদের উপরে ফরয করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এ বিষয়ে মতভেদ করে। তখন আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এই দিনের প্রতি (অহীর মাধ্যমে) হেদায়াত দান করেন। এক্ষণে সকল মানুষ আমাদের পশ্চাদানুসারী। ইহুদীরা পরের দিন (শনিবার) এবং নাসারারা তার পরের দিন (রবিবার)। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৫৪ ‘জুম‘আ’ অনুচ্ছেদ-৪২; মির‘আত ৪/৪২১ পৃঃ)।

জুমআর গুরুত্ব ও ফজিলতঃ সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করবে, যতটুকু সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করবে, তারপর নিজের তেল হতে তার শরীরে কিছু তেল মাখাবে, অথবা ঘরে সুগন্ধি থাকলে কিছু সুগন্ধি লাগাবে। তারপর মসজিদের দিকে রওনা হবে। দু’ব্যক্তির মধ্যে ফাঁক করবে না। যতটুকু সম্ভব সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) (নফল) আদায় করবে। চুপচাপ বসে ইমামের খুতবাহ্ শুনবে। নিশ্চয় তার জুমু‘আহ্ ও আগের জুমু‘আর মাঝখানের সব (সগীরাহ্) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। [সহীহ : বুখারী ৮৮৩, শারহুস সুন্নাত ১০৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৭৩৬]।

আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমু‘আর দিন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) মসজিদের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে যান। যে ব্যক্তি মসজিদে প্রথমে আসে তার নাম লিখেন। এরপর তার পরের ব্যক্তির নাম লিখেন। (অতঃপর তিনি বলেন), যে ব্যক্তি মসজিদে প্রথমে যান তার দৃষ্টান্ত হলো, যে মক্কায় কুরবানী দেবার জন্য একটি উট পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু‘আর সালাতে আসে তার দৃষ্টান্ত হলো, যে একটি গরু পাঠায়। তারপর যে লোক জুমু‘আর জন্য মসজিদে আসে তার উপমা হলো, যে ব্যক্তি কুরবানীর জন্য মক্কায় একটি দুম্বা পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু‘আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য মসজিদে আসে তার উদাহরণ হল, যে কুরবানী করার জন্য মক্কায় একটি মুরগী পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু‘আর জন্য মসজিদে আসে তার উপমা হলো, যে একটি ডিম পাঠায়। আর ইমাম খুতবাহ্ দেবার জন্য বের হলে তারা তাদের দপ্তর গুটিয়ে খুতবাহ্ শোনেন। [সহীহ : বুখারী ৯২৯, মুসলিম ৮৫০, আহমাদ ১০৫৬৮, শারহু মা‘আনির আসার ৬২৪১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৬২]।

কাদের উপর জুমআ ফরজ এবং কাদের জন্য ফরজ নয়ঃ শহরে হোক বা গ্রামে হোক জুম‘আর সালাত প্রত্যেক বয়স্ক পুরুষ ও জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমানের উপরে জামা‘আত সহ আদায় করা ‘ফরযে আইন’। মহান আল্লাহ বলেন,হে ঈমানদারগণ! যখন জুমআর দিন নামাযের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা সত্বর আল্লাহর স্মরণের জন্য উপস্থিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় বর্জন কর। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা উপলব্ধি কর। [সূরা জুম‘আ ৬২/৯; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২২৫]। মহানবী (ﷺ) বলেন, “প্রত্যেক সাবালক পুরুষের জন্য জুমআয় উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব।” (নাসাঈ, সুনান ১৩৭১)।

তবে গোলাম, রোগী, মুসাফির, শিশু ও মহিলাদের উপরে জুম‘আ ফরয নয়। [আবুদাঊদ, দারাকুৎনী, মিশকাত হা/১৩৭৭, ১৩৮০ ‘জুম‘আ ওয়াজিব হওয়া’ অনুচ্ছেদ-৪৩; ইরওয়া হা/৫৯২, ৩/৫৪, ৫৮; আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩৪১ পৃঃ]।

জুমু‘আহ্ ফরয হওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া শর্ত, নারীদের ওপর জুমু‘আহ্ ওয়াজিব নয়। তবে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেনঃ নারীদের জন্য স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে জুমু‘আয় উপস্থিত হওয়া মুস্তাহাব। তাই নারীরা চাইলে পড়তে পারে অন্যথায় বাড়িতে যোহর আদান করবে। এক্ষেত্রে নারীরা বাড়িতে আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করবে পুরুষের জামাআতের জন্য অপেক্ষা করবেনা।

জুমা পরিত্যাগকারীর বিধান: আবুল জা’দ যামরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি বিনা ওজরে তিনটি জুমুআহ ত্যাগ করবে সে ব্যক্তি মুনাফিক।” (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সহিহ তারগিব ৭২৬ নং)।

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী (ﷺ) জুমআর দিন খাড়া হয়ে খুতবা দানকালে বললেন, “সম্ভবত: এমনও লোক আছে, যার নিকট জুমুআহ উপস্থিত হয়; অথচ সে মদ্বীনা থেকে মাত্র এক মাইল দূরে থাকে এবং জুমআয় হাযির হয় না।” দ্বিতীয় বারে তিনি বললেন, “সম্ভবত: এমন লোকও আছে যার নিকট জুমুআহ উপস্থিত হয়; অথচ সে মদ্বীনা থেকে মাত্র দুই মাইল দূরে থাকে এবং জুমআয় হাজির হয় না।” অতঃপর তৃতীয়বারে তিনি বললেন, “সম্ভবত: এমন লোকও আছে যে মদ্বীনা থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে থাকে এবং জুমআয় হাজির হয় না তার হৃদয়ে আল্লাহ মোহ্‌র মেরে দেন।” (আবূ য়্যা’লা, সহিহ তারগিব ৭৩১নং)

তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি অবহেলা করে পরপর তিন জুম‘আ পরিত্যাগ করল, সে ব্যক্তি ইসলামকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করল। [আবু ইয়া‘লা, ছহীহ আত-তারগীব হা/৭৩৩; আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৭১)। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি পরপর ৩ টি জুমুআহ ত্যাগ করল, সে অবশ্যই ইসলামকে নিজের পিছনে ফেলে দিল।” (ঐ, সহিহ তারগিব ৭৩২)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জুম‘আ থেকে অলসতাকারীদের ঘর জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। [সহীন মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৭৮ ‘জুম‘আ ওয়াজিব হওয়া’ অনুচ্ছেদ-৪৩]।

জুমআর খুৎবা: ইমাম সাহেব খুৎবা মাতৃভাষায় দিবেন। কেননা খুৎবা অর্থ ভাষণ, যা শ্রোতাদের বোধগম্য ভাষায় হওয়াই স্বাভাবিক। আল্লাহ বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُوْلٍ إِلاَّ بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ‘আমরা সকল রাসূলকেই তাদের স্বজাতির ভাষা-ভাষী করে প্রেরণ করেছি, যাতে তিনি তাদেরকে (আল্লাহর দ্বীন) ব্যাখ্যা করে দেন।’ (সূরা ইবরাহীম ১৪/৪)।

জুম‘আর জন্য দু’টি খুৎবা দেওয়া সুন্নাত, যার মাঝখানে বসতে হয়। (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৫; আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩৪৫)। ইমাম মিম্বরে বসার সময় মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে সালাম দিবেন। (ইবনু মাজাহ হা/১১০৯; সহীহাহ হা/২০৭৬)। আবু ঞবকর ও ওমর (রাঃ) এটি নিয়মিত করতেন। আবু হানীফা ও মালেক (রহঃ) প্রমুখ মসজিদে প্রবেশকালে সালাম করাকেই যথেষ্ট বলেছেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৩০; নায়ল ৪/২০১)। খত্বীব হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দিবেন। (আবুদাঊদ হা/১০৯৬; ইরওয়া হা/৬১৬, ৩/৭৮, ৯৯; নায়ল ৪/২১২)।

নিতান্ত কষ্টদায়ক না হ’লে সর্বদা দাঁড়িয়ে খুৎবা দিবেন। ১ম খুৎবায় হাম্দ, দরূদ ও ক্বিরাআত ছাড়াও সকলকে নসিহত করবেন, অতঃপর বসবেন। দ্বিতীয় খুৎবায় হাম্দ ও দরূদ সহ সকল মুসলমানের জন্য দো‘আ করবেন। (জুম‘আ ৬২/১১; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৫, ১৫,১৬)। প্রয়োজনে এই সময়ও কিছু নসিহত করা যায়। (নাসাঈ হা/১৪১৭-১৮, তিরমিযী হা/৫০৬) ইমাম শাফেঈ (রহঃ) হাম্দ, দরূদ ও নসিহত তিনটি বিষয়কে খুৎবার জন্য ‘ওয়াজিব’ বলেছেন। যাতে কুরআন থেকে একটি আয়াত হলেও পাঠ করতে হবে। এতদ্ব্যতীত সূরায়ে ক্বাফ এর প্রথমাংশ বা অন্য কিছু আয়াত তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব। (মির‘আত ২/৩০৮, ৩১০; ঐ, ৪/৪৯৪, ৪৯৮-৯৯; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৯, অনুচ্ছেদ-৪৫)। খুৎবা আখেরাত মুখী, সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ হওয়া বাঞ্ছনীয়। (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৫-০৬ ‘খুৎবা ও সালাত’ অনুচ্ছেদ-৪৫)। তবে দীর্ঘ হওয়াও জায়েয আছে।(মুসলিম হা/৭২৬৭ (২৮৯২), ‘ফিতান’ অধ্যায়-৫২, অনুচ্ছেদ-৬; মির‘আত ৪/৪৯৬)। খুৎবার সময় কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ সালাত পড়ে বসবেন। (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১১; ‘খুৎবা ও সালাত’ অনুচ্ছেদ-৪৫; নায়ল ৪/১৯৩)।

জুমআর ক্বিরাআত: জুমআর নামায ফরয ২ রাকআত। এতে ক্বিরাআত হবে জেহরী অর্থাৎ উচ্চস্বরে। এ নামাযে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা বা আয়াত যথানিয়মে পড়া যায়। তবে সুন্নত হল জুম‘আর সালাতে ইমাম প্রথম রাক‘আতে সূরায়ে ‘জুমআ’ অথবা সূরায়ে ‘আ‘লা’ এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরায়ে ‘মুনা-ফিকুন’ অথবা সূরায়ে ‘গা-শিয়াহ’ পড়বেন। (মুসলিম, মিশকাত হা/৮৩৯-৪০সালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২)। অন্য সূরাও পড়া যাবে। (আবুদাঊদ হা/৮১৮, ৮২০, ৮৫৯)। জুম‘আর দিন ফজরের ১ম রাক‘আতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সূরায়ে ‘সাজদাহ’ ও ২য় রাক‘আতে সূরায়ে ‘দাহর’ পাঠ করতেন।(মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৩৮)।

জুম‘আর সুন্নাত: জুম‘আর পূর্বে নির্দিষ্ট কোন সুন্নাত সালাত নেই। মুসল্লী কেবল ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ দু’রাক‘আত পড়ে বসবে। অতঃপর সময় পেলে খত্বীব মিম্বরে বসার আগ পর্যন্ত যত খুশী নফল সালাত আদায় করবে। জুম‘আর সালাতের পরে মসজিদে চার রাক‘আত অথবা বাড়ীতে দু’রাক‘আত সুন্নাত আদায় করবে। তবে মসজিদেও চার বা দুই কিংবা দুই ও চার মোট ছয় রাক‘আত সুন্নাত ও নফল পড়া যায়।(মুসলিম, মিশকাত হা/১১৬৬ ‘সুন্নাত সালাত সমূহ ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৩০; তিরমিযী হা/৫২২-২৩)।

দো‘আ কবুলের সময়কাল: বিদ্বানগণ জুম‘আর দিনে দো‘আ কবুলের সঠিক সময়কাল নিয়ে মতভেদ করেছেন। এই মতভেদের ভিত্তি মূলতঃ আমর বিন আওফ (রাঃ) বর্ণিত তিরমিযীর হাদীস, যেখানে জামা‘আতের শুরু থেকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত সময়কালকে এবং অপরটি আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) বর্ণিত হাদীস, যেখানে ঐ সময়কালকে ‘আসরের সালাতের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত’ বলা হয়েছে। (তিরমিযী হা/৪৮৯; ঐ, মিশকাত হা/১৩৬০; তুহফা হা/৪৮৮-৮৯)। এবিষয়ে বিদ্বানগণের ৪৩টি মতভেদ উল্লেখিত হয়েছে। (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ৪/১৭২-৭৬)।

জুমআর রাকআত ছুটে গেলে:
___________________________
কারো জুমআর এক রাকআত ছুটে গেলে বাকী আর এক রাকআত ইমামের সালাম ফিরানোর পর উঠে পড়ে নিলে তার জুমুআহ হয়ে যাবে। অনুরুপ কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকূ পেলেও ঐ রাকআত এবং তার সাথে আর এক রাকআত পড়লে তারও জুমুআহ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকূ থেকে ইমামের মাথা তোলার পর জামাআতে শামিল হয়, তাহলে সে জুমআর নামায পাবে না। এই অবস্থায় তাকে যোহরের ৪ রাকআত আদায়ের নিয়তে জামাআতে শামিল হয়ে ইমামের সালাম ফিরার পর ৪ রাকআত ফরয পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৪১৮, ৪২১)। যেমন: জামাআত ছুটে গেলে জুমআও ছুটে যাবে। এ ক্ষেত্রেও একাকী যোহ্‌র পড়তে হবে। কারণ জামাআত ছাড়া জুমুআহ হয় না। মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর এক রাকআত নামায পায়, সে যেন অপর এক রাকআত পড়ে নেয়।” (ইবনে মাজাহ্‌, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৬২২, জামে ৫৯৯১)। মহানবী (ﷺ) আরো বলেন, “যে ব্যক্তি এক রাকআত নামায পায়, সে নামায পেয়ে যায়।” (বুখারী ৫৭৯, মুসলিম, সহীহ ৬০৭, তিরমিযী, সুনান ৫২৪)।

ইবনে মাসঊদ ও ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর এক রাকআত পেয়ে যায়, সে ব্যক্তি যেন আর এক রাকআত পড়ে নেয়। কিন্তু যে (দ্বিতীয় রাকআতের) রুকূ না পায়, সে যেন যোহরের ৪ রাকআত পড়ে নেয়।” (ইবনে আবী শাইবা, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, বায়হাকী, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৬২১ বায়হাকী, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৬২১)।

আরো কিছু করনীয়:
__________________________
১। জুম’আর দিন গোসল করা। যাদের উপর জুম’আ ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন (বুখারীঃ ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।
২। জুম’আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০)।
৩। মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ ৮৮৭, ইঃফাঃ ৮৪৩)।
৪। গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮৩)।
৫। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুম’আ আদায় করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৭)।
৬। মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযীঃ ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৬)।
৭। মনোযোগ সহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ ৮৫৭, আবু দাউদঃ ১১১৩, আহমাদঃ ১/২৩০)।
৮। আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ ৮৮১, মুসলিমঃ ৮৫০)।
৯। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)।
১০। জুম’আর দিন ফজরের নামাজে ১ম রাক’আতে সূরা সাজদা (সূরা নং: ৩২) আর ২য় রাকা’আতে সূরা ইনসান (দাহর) (সূরা নং: ৭৬) পড়া। (বুখারীঃ ৮৯১, মুসলিমঃ ৮৭৯)।
১১। সূরা জুম’আ ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুম’আর সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুম’আ আদায় করা। (মুসলিমঃ ৮৭৭, ৮৭৮)।
১২। জুম’আর দিন ও জুম’আর রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদঃ ১০৪৭)।
১৩। এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা। (বুখারীঃ ৯৩৫)।
১৪। মুসুল্লীদের ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারীঃ ৯১০, ৮৮৩)।
১৫। মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)।
১৬। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারীঃ ৯১১, মুসলিমঃ ২১৭৭, ২১৭৮)।
১৭। খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দু’রাকা’আত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারীঃ ৯৩০)।
১৮। জুম’আর দিন জুম’আর পূর্বে মসজিদে জিকর বা কোন শিক্ষামুলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। (আবু দাউদঃ ১০৮৯)।
১৯। কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ীঃ ৭১৪, বুখারীঃ ৯৩৪)।
২০। মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ ৮৫৩)।
২১। ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)।
২২। ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদঃ ১১১০, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪)।
২৩। খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদঃ ১১০৮)।
২৪। জুম’আর দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)] নোট সালাতুর রাসূল ﷺ (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।