এশার ফরয সালাতের পর সর্বমোট কত রাকাআত সুন্নত বা নফল সালাত আদায় করা যায়

প্রশ্ন: এশার ফরয সালাতের পর সর্বমোট কত রাকাআত সুন্নত বা নফল সালাত আদায় করা যায়? আজ আমরা সেই উত্তরটি খোঁজার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: মহান আল্লাহ মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য-কে তাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। মহান আল্লাহর নিকটবর্তী ও আখিরাতে কৃতকার্য হওয়ার জন্য সর্বোত্তম আমলের বিকল্প নেই। এ কারণে শরী‘আতে সর্বশ্রেষ্ঠ আমলের কথা বলে দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকেও শরীক না করে।’ (সূরা আল-কাহফ: ১১০)। ইসলামে কালিমাতুশ শাহাদাহ পাঠ করার পর সালাতের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আর নাই। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ ব্রেইনের অধিকারী মুসলিমের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যথা সময়ে যথা নিয়মে আদায় করা ফরজ। সব ওয়াক্তের সলাতই মর্যাদাপূর্ণ। তবে বিশেষভাবে আসর, ইশা ও ফরজ সালাতের মর্যাদা ও ফযিলত স্বতন্ত্র। যেমন: আবু হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “মুনাফিকদের উপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই তাতে আসত।” (বুখারি ৬৫৭, ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম ৬৫১)। আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডা নামায (আসর ও ইশার নামায) পড়ে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহুল বুখারী ৫৭৪, মুসলিম ৬৩৫)।

উসমান বিন আফফান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে এশার সালাত আদায় করল সে যেন অর্ধরাত্রি পর্যন্ত সালাতে রত থাকল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করল সে যেন সারা রাত্রি সালাত আদায় করল’। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৫৬; মিশকাত, হা/৬৩০)। রবীআ ইবনু কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাতের বেলা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে থাকতাম। ওযুর পানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এগিয়ে দিতাম। একদিন তিনি আমাকে বললেন, (দ্বীন-দুনিয়ার কল্যাণের জন্য যা কিছু চাও) চেয়ে নাও। আমি নিবেদন করলাম, আমি শুধু জান্নাতে আপনার সহচর্য লাভ করতে চাই। তিনি বললেন, এছাড়া আর কিছু চাও? আমি বললাম, এটাই আমার একমাত্র আবেদন। তিনি বললেন, তুমি বেশি বেশি সেজদার মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করো।’
.
পাচঁ ওয়াক্ত সালাতের মধ্যে এক ওয়াক্ত সালাত হল সালাতুল এশা। এশার সালাত বিশুদ্ধ দলিলের আলোকে ৬ রাকাআত যার ৪ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। পূর্বের পর্বগুলোতে একাধিক হাদীসে উল্লেখ হয়েছে যে, এশার পরে মহানবী (ﷺ) ২ রাকআত সুন্নত নিজের ঘরে পড়তেন।কিন্তু সুন্নত সালাত ঘরে পড়ার সুযোগ না থাকলে অথবা সংসারের ব্যস্ততায় পড়ার অবসর না হলে তা মসজিদেই পড়ে নেওয়া যায়। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে ১২ রাক‘আত সালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। সেগুলো হল যোহরের পূর্বে চার পরে দুই, মাগরিবের পরে দুই, এশার পরে দুই এবং ফজরের পূর্বে দুই। অন্য বর্ণনায় ১০ রাক‘আতের কথা এসেছে। সেখানে যোহরের পূর্বে দুই রাক‘আত বলা হয়েছে। (বুখারী হা/১১৬৫; মিশকাত হা/১১৫৯, ১১৬০)। আওয়াল ওয়াক্তে আাদায় নামায উত্তম হলেও এক তৃতীয়াংশ বা মধ্যরাতে (শেষ অক্তে) এশার নামায পড়া আফযল। মহানবী (ﷺ) বলেন, “আমার উম্মতের জন্য কষ্টসাধ্য না জানলে আমি এশার নামাযকে এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধরাত পর্যন্ত দেরী করে পড়তে তাদেরকে আদেশ দিতাম।” (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ৬১১) প্রিয় রাসূল (ﷺ) এশার নামাযকে এক তৃতীয়াংশ রাত্রি পর্যন্ত দেরী করে পড়তে পছন্দ করতেন এবং এশার পূর্বে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলাকে অপছন্দ করতেন। (বুখারী ৫৯৯, মুসলিম, প্রমুখ)। যাতে এশা, তাহাজ্জুদ, বিতর ও ফজরের নামায যথা সময়ে পড়া সহজ হয়।
.
সুতরাং আমাদের করণীয় হলো,জামাআতের সাথে এশার ফরজ সালাত আদায়ের পরে দু’রাক‘আত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা আদায় করা। (বুখারী হা/১১৬৫; মুসলিম হা/৭২৮; মিশকাত হা/১১৫৯)। এরপরে বাড়িতে গিয়ে কেউ চাইলে চার রাক‘আত নফল সালাত আদায় করতে পারে। (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৯৬)। কিন্তু এই চার রাক‘আত সালাত বিশেষ কোন সালাত নয় এবং এশার সালাতের সাথেও সংশ্লিষ্ট নয়। বরং এটি তাহাজ্জুদের সালাতের অংশ হিসাবে গণ্য। (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ২/৯৬)।যেমন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি আমার খালা নবী করীম (ﷺ)ভএর সহধর্মিনী মায়মুনা (রাঃ) এর ঘরে এক রাতে ছিলাম। রাসূল (ﷺ) ও সেই রাতে সেখানে ছিলেন। নবী করীম (ﷺ) জামা‘আতে এশার সালাত আদায় করে তাঁর ঘরে চলে আসলেন এবং চার রাক‘আত সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন । (সহীহ বুখারী হা/১১৭;সহীহ মুসলিম হা/৯০১)। উক্ত চার রাক‘আত সালাতের ফযীলতে বলা হয়েছে যে, তা ক্বদর রাতের সালাত আদায়ের সমতুল্য। (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৭৩৫১-৭৩৫৭; মারওয়াযী, মুখতাছার ক্বিয়ামুল লাইল হা/১৯২)। তবে উক্ত মর্মে বর্ণিত মারফূ‘ হাদীসগুলোর সবই অত্যন্ত জয়ীফ বা দুর্বল। তবে প্রায় একই মর্মে সহীহ সূত্রে বেশ কিছু মওকূফ হাদীস বর্ণিত হওয়ায় আলবানী (রহঃ) বলেন, এই আমলের ফযীলত সম্পর্কিত বর্ণনাটি মারফূ‘র পর্যায়ভুক্ত। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫০৬০ এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।অর্থাৎ কেউ চাইলে উক্ত ৪ রাকাআত নফল সালাত আদায় করতে পারেন ইনশাআল্লাহ।পরিশেষে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের সাথে সাথে নফল সালাতের প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।