তাহিয়্যাতুল ওযু বা ওযুর পর দু রাকআত নফল সালাত

প্রশ্ন: তাহিয়্যাতুল ওযু বা ওযুর পর দু রাকআত নফল সালাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই?▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: তাহিয়্যাতুল ওযু বা ওযুর পর দু রাকআত নফল সালাতের বিনিময়ে জান্নাতের ওয়াদা রয়েছে। আজ আমরা তাহিয়্যাতুল ওযু সম্পর্কে কিছু মাসয়ালাসহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্। যে ব্যক্তি ওযু করে তার জন্য ওযু শেষ করে দুই রাকাআত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব, এই বিধান নারী-পুরুষ সবার জন্য প্রযোজ্য। উকবা ইবনু আমির (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে, তারপর দাঁড়িয়ে তার চেহারা ও মনকে পুরোপুরি নামাজের দিকে ফিরিয়ে, যা পাঠ করছে তা জেনে-বুঝে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এবং তাতে কোনো ভুল না করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ২৩৪; হাকিম, আল-মুসতাদরাক: ৩৫০৮; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৭০৫৪]।
.
উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনবার তিনবার করে ওযুর অঙ্গগুলো ধৌত করলেন তারপর বললেন, আমি যেভাবে ওযু করলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেভাবেই ওযু করেছেন। আর তিনি বলেছেন, من توضَّأَ نحوَ وضوئي هذا ثمَّ رَكعَ رَكعتينِ لا يحدِّثُ نفسَه فيهما إلَّا بخيرٍ غفرَ لَه ما تقدَّمَ من ذنبِه “যে ব্যক্তি আমার অজুর মতো অজু করে এমভাবে দুই রাকাআত নামাজ পড়বে যে তার মনে কোন অন্য কোন ধারণা/কল্পনা জাগ্রত হবে না বা মনে মনে অন্য কোন কথা চিন্তা করবে না, তাহলে তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী হা/১৫৯, ১৬৪; মুসলিম হা/২২৬; আহমাদ হা/৪১৮)। এখানে পূর্বের সমস্ত গুণাহ ক্ষমা করা হবে বলতে সগীরা গুনাহ কে বোঝানো হয়েছে।

রাসূল (ﷺ) বলেন,لاَ يَتَوَضَّأُ رَجُلٌ مُسْلِمٌ فَيُحْسِنُ الْوُضُوءَ فَيُصَلِّى صَلاَةً إِلاَّ غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الصَّلاَةِ الَّتِى تَلِيْهَا- ‘কোন মুসলিম উত্তম রূপে ওযু করে সালাত আদায় করলে পরবর্তী ওয়াক্তের সালাত পর্যন্ত তার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ [মুসলিম হা/২২৭]।
.
রাসূল (ﷺ) আরো বলেন, যখন কোন মুসলিমের নিকটে ফরয সালাতের সময় উপস্থিত হয়, তখন যদি উত্তমরূপে ওযু করে এবং একান্ত বিনীতভাবে সালাতের রুকূ, সিজদাহ ইত্যাদি আদায় করে তাহলে সে পুনরায় কবীরা গোনাহে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তার পূর্বেকার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। আর এরূপ সারা বছরই হতে থাকে। [মুসলিম হা/১৩৮; মিশকাত হা/২৮৬]।

সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা এবং ওযু ভঙ্গ হলে সাথে সাথে ওযু করে নেওয়ার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা (প্রত্যেক বিষয়ে) কর্তব্যনিষ্ঠ রহ্‌; আর তাতে কখনই সক্ষম হবে না। জেনে রেখো, তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল নামায। আর মুমিন ব্যতীত কেউই ওযুর হিফাযত করবে না। (ইবনে মাজাহ্‌,সহীহ তারগীব ১৯০)।
.
ইমাম আল-হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহঃ) তাহিয়্যাতুল ওযু সংক্রান্ত হাদিস উল্লেখ করার পর বলেন, ‘এই হাদিসে ওযুর পরপরই দুই রাকাআত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার দলিল রয়েছে।’ ইমাম নববি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘একাধিক বিশুদ্ধ হাদিস থাকায় প্রমাণিত হয়, অজুর পরপরই দুই রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব।’ (আল মাজমু শারহিল মুহাযযাব (৩/৫৪৫)।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-وَيُسْتَحَبُّ أَنْ يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ عَقِبَ الْوُضُوءِ وَلَوْ كَانَ وَقْتَ النَّهْيِ ، وَقَالَهُ الشَّافِعِيَّةُ ” انتهى . (الفتاوى الكبرى)
‘ওযুর পরপরই দুই রাকাআত নামাজ পড়া মুস্তাহাব যদিও তা নিষিদ্ধ সময়ে হয়। শাফেয়ীগণও এমনটি বলেছেন।’ (আল ফাতাওয়া আল কুবরা,৫/৩৪৫)।

❖ তাহিয়্যাতুল অযুর সালাতের কতিপয় দিক:
______________________________________

▪️(১) ওযু অথবা গোসলের পর তাহিয়্যাতুল অযুর দুই রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব এবং নফল; এটি ফরজ বা ওয়াজিব নয়। সাধারণ নফল বা সুন্নাত নামাজের মতো দুই রাকাত নামাজ পড়বেন। বিশেষ কোনো নিয়ম নেই।
.
▪️(২) ওযু করার পরপরই এই নামাজ পড়তে হয়। আলিমগণ বলেন, অজুর অঙ্গগুলো পুরোপুরি শুকানোর আগেই এটি পড়তে শুরু করা; এর বেশি দেরি না করা। তার মানে এই নয় যে, অযুর পর ওযুর অঙ্গগুলো মুছা যাবে না।
.
▪️(৩) ওযুর পর বিভিন্ন ওয়াক্তের সুন্নাত নামাজের আগে এটি পড়া যাবে। আবার, কেউ কুরআন তিলাওয়াত বা অন্য কোনো কারণে ওযু করলেও এই নামাজ পড়া যাবে।
.
▪️(৪) ওযুর পরপর মাসজিদে প্রবেশ করলে তাহিয়্যাতুল অযু এবং তাহিয়্যাতুল/দুখুলুল মাসজিদ একত্রে আদায় করা যাবে। মানে ২ নামাজের নিয়ত একত্রে করে শুধু দুই রাকাত পড়লেই চলবে। তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সম্পর্কে পরের পর্বে আলোচনা আসবে ইনসাআল্লাহ।
.
▪️(৫) ওযুর পর নামাজ পড়ে দু‘আ করলে আল্লাহ কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করবে, এরপর পূর্ণরূপে দুই রাকআত নামাজ পড়বে, আল্লাহ্ তার চাওয়ার বিষয় দান করবেন—শীঘ্রই অথবা কিছু কাল পর।’’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৬/৪৪৩; হাদিসটির সনদ সহিহ]।
.
▪️(৬) তাহিয়্যাতুল ওযুর সালাতের নিষিদ্ধ কোন সময় নেই যখনই ওযু করবেন তখনই পড়তে পারবেন।

▪️(৭) এই নামাজের উপর গুরুত্ব দিয়ে আমল করতেন বিলাল (রা.)। আল্লাহ্ এর বিনিময়ে তাঁকে বিরাট মর্যাদা দান করেছেন।
.
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে বিলাল! আমাকে সর্বাধিক আশা-জাগানিয়া আমল সম্পর্কে বলো, যা তুমি ইসলাম গ্রহণের পর আমল করেছো। কেননা, আমি (মি’রাজের রাতে) জান্নাতের মধ্যে আমার সামনে তোমার জুতার আওয়াজ শুনেছি।” বিলাল (রা.) বললেন, ‘আমার দৃষ্টিতে এর চেয়ে অধিক আশা-জাগানিয়া এমন কোনো আমল করিনি যে, আমি রাত-দিনের মধ্যে যখনই পবিত্রতা অর্জন (অযু গোসল অথবা তায়াম্মুম) করেছি, তখনই আমার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়েছি, যতটুকু নামাজ পড়া আমার জন্য লিখা ছিলো।’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১১৪৯; ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৭০৮৫]।

পরিশেষে বলব, উত্তমরূপে ওযু করে সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের সবাইকে পাপমুক্ত হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।