একজন সামর্থ্যবান নারী কি তার স্বামীর পক্ষ থেকে কুরবানী দিতে পারবে যার কুরবানী  দেওয়ার সামর্থ্য নেই

ইসলামী শরীয়তের বিধি বিধান নারী-পুরুষ সবার জন্য।যেখানে যেখানে পার্থক্য রয়েছে রাসূল (ﷺ) সেটা বলে গেছেন। কুরবানী ওয়াজিব হওয়া কিংবা সুন্নত হওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া শর্ত নয়। কোরবানী পুরুষদের উপর যেমন ওয়াজিব হয় তেমনি নারীদের উপরও ওয়াজিব হয়। কারণ ওয়াজিব হওয়ার দলিলগুলো নর-নারী সবাইকে সমানভাবে শামিল করে।”(আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা (৫/৭৯-৮১) সুতরাং কুরবানী যেহেতু শরীয়তের একটি বিধান সুতরাং সেটাও নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য নির্ধারিত।বিধানের ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারীর কোন ভেদ নেই। যদি কোন মহিলার কুরবানী দেওয়ার সামর্থ্য থাকে তবে কুরবানী করা তার জন্য নির্ধারিত, এবং যদি কোন মহিলা কুরবানী দেয়,তবে তার নিজের পক্ষ থেকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে, যার মধ্যে তার স্বামীও রয়েছে।হানাফি মাজহাবের আলেমগণ ছাড়া অন্য সকল আলেম একমত যে, ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে ও নিজের পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানী দিলে তাতে সুন্নতে কিফায়া আদায় হবে। দলিল হচ্ছে- আবু আইয়ুব আনসারীর হাদিস। তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি এর যামানায় কোরবানীর পশু কেমন ছিল। তিনি বলেন: একজন লোক তার নিজের পক্ষ থেকে ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দিয়ে কোরবানী দিত। তারা নিজেরাও খেত, অন্যদেরকেও খাওয়াত। এক পর্যায়ে মানুষ বাহাদুরি করা শুরু করল; এখনকার অবস্থাতো দেখতেই পাচ্ছেন।”।[তিরমিযি হা/১৫০৫ সনদ হাসান সহীহ)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] -কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: কুরবানী কি সামগ্রিকভাবে পরিবারের জন্য নাকি পরিবারের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যের জন্য…?
.
তিনি জবাবে বলেন: কুরবানি দেওয়া একটি নিশ্চিত সুন্নত যা নারী ও পুরুষের জন্য নির্ধারিত। একজন পুরুষ এবং তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে, একজন মহিলা এবং তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে একটি কুরবানী গ্রহণযোগ্য, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছর কুরবানী করতেন। তিনি দু’টি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও খাসি করা মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি নিজ উম্মাতের যারা আল্লাহ্‌র একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুয়াতের সাক্ষ্য দেয় তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২২ মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ খন্ড: ১৮ পৃষ্ঠা: ৩৮)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন: একজন ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে এবং জীবিত ও মৃতসহ তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে কুরবানী দিতে পারে। এটাই সুন্নত।(ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দার্ব থেকে ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৯১৫১৫)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: আমার স্ত্রী আমার বাবার সাথে এক বাসায় থাকেন। এমতাবস্থায় ঈদুল আযহার সময় আমার ও বাবার পক্ষ থেকে একটি মাত্র পশু জবাই করা কি যথেষ্ট হবে? নাকি হবে না?

জবাবে তারা বলেন: যদি বাস্তবতা এমনই হয় যেমনটি আপনি উল্লেখ করেছেন যে, পিতা ও পিতার সন্তান এক বাসায় থাকে; তাহলে আপনার পক্ষ থেকে, আপনার পিতার পক্ষ থেকে, আপনার স্ত্রীর পক্ষ থেকে, আপনার পিতার স্ত্রীর পক্ষ থেকে এবং আপনাদের দুই পরিবারের সকল সদস্যদের পক্ষ থেকে একটি পশু জবাই করলে কুরবানীর সুন্নত আদায় হওয়ার জন্য যথেষ্ট।(ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা খন্ড: ১১পৃষ্ঠা: ৪০৪)
.
এখন প্রশ্ন অনুযায়ী একজন নারী যদি তার স্বামীর পক্ষ থেকে কুরবানী দিতে চান, এই অর্থে যে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করা হয়েছে,তাহলে সেটি জায়েজ রয়েছে,তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো তার স্বামীর অনুমতি থাকা অপরিহার্য, কেননা তার অনুমতি ব্যতীত তার উদ্দেশ্যে অন্য কারো পক্ষে ইবাদত করা জায়েয নয়।এ বিধানের ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারীর কোন ভেদ নেই। কারণ কুরবানী একটি ইবাদত এবং সমস্ত ইবাদতের মধ্যে অবশ্যই একটি উদ্দেশ্য থাকতে হবে।(ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১১২২৬৪)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
___________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।