একজন মুমিনের মৃত্যুর পূর্ব সময় থেকে শুরু করে কবরস্থ করার পর পর্যন্ত কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে করনীয় ও বর্জনীয় সপ্তম পর্ব

প্রশ্ন: কেউ মারা গেলে আমাদের করনীয় কি? আত্মীয়-স্বজনের জন্য যা করা বৈধ, এবং যা করা ওয়াজিব।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা:সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে কেননা জন্ম নিলে মরিতে হইবে এটা চিরন্তন সত্য বাণী। মহান আল্লাহ বলেন, জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। [সূরা আল ইমরান:১৮৫]অপর আয়াতে বলেন,প্রত্যেক প্রাণীর মৃত্যু নির্দিষ্ট সময়ে হবে। [সূরা নূহ,৪]আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, ‘তিনি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত মানুষকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন সেই মেয়াদকাল এসে যায়, তখন তারা তা মুহূর্তকাল দেরী বা এগিয়ে আসতে পারে না। [সূরা নাহল ১৬/৬১]
.
◾ব্যক্তির রূহ কবয হয়ে গেলে মৃতের জন্য নিম্নবর্ণিত কাজগুলো সম্পন্ন করা আবশ্যক:
_______________________________
▪️(১)। মৃত ব্যক্তির খোলা চোখ দুটো বন্ধ করে দেওয়া এবং এই সময় মৃতের মাগফেরাতের জন্য বারবার দো‘আ করা ও তার সদগুণাবলী বর্ণনা করা উচিৎ।
যেমন, আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, সৎপথপ্রাপ্ত লোকেদের দলভুক্ত কর এবং ওকে মাফ করে দাও প্রভু! ওর মত (ভালো লোক) ওর বংশে পুনঃ দান কর। আমাদেরকে এবং ওকে মাফ করে দাও প্রভু! ওর কবরকে প্রশস্ত করো এবং তা আলোময় করে দিও—” ইত্যাদি।উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) আবু সালামার নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তার চক্ষু (মৃত্যুর পর) খোলা ছিল। তিনি তা বন্ধ করে দিলেন এবং বললেন, “রূহ কবয হয়ে গেলে চোখ তার দিকে তাকিয়ে থাকে।” নবী (ﷺ)বললেন, তোমরা নিজেদের উপর বদদুআ করো না বরং মঙ্গলের দুআ কর। কারণ তাতে ফেরেশতাগণ ‘আমীন’ বলেন ও তার জন্য ওগুলি ওয়াজিব হয়ে যায়’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়’।[সহীহ মুসলিম হা/২২০০ ‘জানায়েয’ অধ্যায়-১১, অনুচ্ছেদ-২০; ঐ, মিশকাত হা/১৬১৭]
.
অতঃপর নবী (ﷺ) বললেন, “হে আল্লাহ! তুমি আবু সালামাহকে ক্ষমা করে দাও। ওর মর্যাদা উন্নীত করে ওকে হেদায়াতপ্রাপ্তদের দলভুক্ত করে দাও। ওর অবশিষ্ট পরিজনের মধ্যে ওর পরবর্তী প্রদান কর। আমাদেরকে এবং ওকে মাফ করে দাও হে সারা জাহানের প্রভু! ওর জন্য ওর কবরকে প্রশস্ত ও আলোকিত করে দাও।”(সহীহ মুসলিম ১৫২৮, ইবনে মাজাহ ১৪৪৪ মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৭, বাইহাকী ৩/৩৩৪)
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে যে, ৪, ৩ এমনকি ২ জন নেককার মুমিন ব্যক্তিও যদি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে উত্তম সাক্ষ্য দেয়, তাতেই তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।[সহীহ বুখারী,১৩৬৮,মুসনাদে আহমাদ ১৩৯ মিশকাত হা/১৬৬৩,]
.
অন্য আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, ‘কোন মুসলমান মারা গেলে তার নিকটতম প্রতিবেশীদের চারজন যদি তার সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয় যে, তারা তার সম্পর্কে ভাল ব্যতীত কিছুই জানে না, তাহ’লে আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের সাক্ষ্য কবুল করলাম এবং আমি তার ঐসব গোনাহ মাফ করে দিলাম, যেগুলি তোমরা জানো না’। [মুসনাদে আবু ইয়ালা, ছহীহ ইবনু হিব্বান,সহীহুত তারগীব হা/৩৫১৫; তালখীছ ২৬ পৃঃ]
.
▪️(২)। মৃতের মুখগহ্বার খোলা থাকলে বন্ধ করে দেবে। প্রয়োজনে দুই চিবুক চেপে কোন কিছু দিয়ে বেঁধে দেওয়া।হাত-পা হিলিয়ে ঢিলা করে দেবে।শরীয়তগত অনিবার্য কারণে দাফন করতে দেরী হবে আশঙ্কা করলে লাশ ফ্রিজে রাখার ব্যবস্থা করবে।
▪️(৩)। একটি চাদর বা কাঁথা দ্বারা তার সর্বশরীর ঢেকে দেবে। উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তিকালের পর তাঁর পবিত্র শরীরের উপর ইয়ামিনী চাদর দিয়ে তাঁকে ঢেকে রাখা হয়েছিল।”(সহীহ বুখারী ৫৮১৪, মুসলিম ৯৪২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৬১২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৬৯। মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৬২০)
তবে মৃত ব্যক্তি হজ্জ-উমরাহ করতে গিয়ে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মারা গেলে তার চেহারা ও মাথা ঢাকা চলবে না। কারণ,আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, এক ব্যক্তি (হাজ্জের সময়) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলেন। তার উটটি (তাকে পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে) তার ঘাড় ভেঙে দিলো। তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। এ অবস্থায়ই তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দাও। আর তাকে তার দু’টি কাপড় দিয়ে কাফন দাও। তার গায়ে কোন সুগন্ধি লাগিও না, তার মাথাও ঢেকো না। কারণ তাকে ক্বিয়ামাতের দিন ‘লাব্বাইক’ বলা অবস্থায় উঠানো হবে। (সহীহ বুখারী ১৮৫১, মুসলিম ১২০৬, নাসায়ী ২৮৫৩, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৬২৫২, আহমাদ ১৮৫০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৮০, ইরওয়া ৬৯৪, সহীহ আত্ তারগীব ১১১৫। মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৬৩৭)
▪️(৪)।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করবে এবং এতে মোটেই বিলম্ব করবে না। কারণ মৃত ব্যক্তিকে তাড়াতাড়ি দাফন করার ব্যাপারে শরী‘আতের স্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,তোমরা জানাযা বহন করার সময় দ্রুতগতিতে চল। কেননা সে যদি নেক ব্যক্তি হয় তবে তাকে কল্যাণের দিকে এগিয়ে দিলে। আর যদি অন্য কিছু হয়, তবে খারাপ লোককে তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দিলে।'(সহীহ বুখারী, হা/১৩১৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৯৪৪; মিশকাত, হা/১৬৪৬)।
.
▪️(৫)। যে শহর বা গ্রামে মৃত্যু ঘটেছে সেই শহর বা গ্রামেই লাশ দাফন করবে। দূরে কোথাও নিয়ে দাফন করার জন্য যদি অসিয়তও করে থাকে তবুও তা কার্যকরী করা উচিত নয়। (আলবানী (রহঃ) আহকামুল জানাইয)।কারণ, এ কাজ উক্ত শীঘ্রতার আদেশের পরিপন্থী। পরন্তু জাবের (রাঃ) বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিন মুসলিমদের লাশ বাকী’তে দাফন করার জন্য বহন করা শুরু হলে রসূলুল্লাহর তরফ থেকে এক আহ্বানকারী আহ্বান করে বলল, আল্লাহর রসূল (ﷺ) তোমাদেরকে তোমাদের লাশসমূহকে তাদের মৃত্যুস্থলে দাফন করতে আদেশ করেছেন। আমার আম্মাজান তখন আমার আব্বাজান ও মামাজানকে একটি সেচক উটের পিঠে পাশাপাশি রেখে বাকীতে দাফন করার উদ্দেশ্যে বহন করে ফেলেছিলেন। কিন্তু তাদেরকেও (ঐ আদেশানুসারে) ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।'(আবু দাউদ ১৭৪২ ক, তিরমিযী ১৬৩১ ইবনে মাজাহ ১৫০৫ক, আহমাদ ১৩৬৫৩ ক, মাওয়ারেদু্য যামআন ১৯৬ বাইহাকী ৪/৫৭)
.
আয়েশা (রাঃ) এর এক ভাই ওয়াদিউল হাবাশাতে মারা গেলে এবং সেখান হতে তার লাশ বহন করা হলে তিনি বলেছিলেন, যার শোক আমাকে সন্তপ্ত করেছে তা এই যে, আমার ইচ্ছা ছিল আমার ভাই-এর দাফন তার মৃত্যুস্থলেই হোক।”(বাইহাকী, আহকামুল জানায়্যে ১৪পৃঃ)
▪️(৬)।যত দ্রুত সম্ভব মাইয়্যেতের বকেয়া ঋণ থাকলে
পরিশোধ করা। এতে মৃত্যের ত্যক্ত সমস্ত সম্পদ লেগে গেলেও ঋণ পরিশোধে ওয়ারেসীনদের দ্বিধা করা উচিত নয়।কিন্তু কিছু না থাকলে বা কেউ না থাকলে বা ঋণ মাফ না করলে সমাজ বা ইসলামী রাষ্ট্র তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করবে।না হলে বায়তুল মাল বা মুসলিমদের বিশেষ ফান্ড হতে ঋণ পরিশোধ করা হবে। অবশ্য এতে যদি কোন আত্মীয় বা অন্য কোন মুসলিম সাহায্য করে ঋণ পরিশোধ করে দেয় তাও উত্তম ও বৈধ।(বুখারী ২২৯৮, মুসলিম ১৬১৯, তিরমিযী ১০৭০ মিশকাত হা/১৬৪৬, ২৯১৩; তালখীছ ১৩-১৪ পৃঃ।)
.
যেমনঃসা’দ বিন আত্বঅল (রাঃ) বলেন, তার ভাই মাত্র ৩ শত দিরহাম রেখে মারা যান। আর ছেড়ে যান সন্তান-সন্ততিও। আমার ইচ্ছা ছিল ও দিরহামগুলো আমি তার পরিবারবর্গের উপর খরচ করব। কিন্তু নবী (ﷺ) আমাকে বললেন, “তোমার ভাই তো ঋণ-জালে আবদ্ধ। সুতরাং তুমি গিয়ে (আগে) তার ঋণ শোধ কর।” অতএব আমি গিয়ে তার ঋণ শোধ করে এলাম এবং নবী (ﷺ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি তার সমস্ত ঋণ শোধ করে দিয়েছি। তবে একটি মহিলা দুই দীনার পাওয়ার কথা দাবী করছে, কিন্তু তার কোন সবুত নেই। তিনি বললেন, “ওকেও দিয়ে দাও। কারণ ও সঠিক বলছে।”(ইবনে মাজাহ ২৪২৪ মুসনাদে আহমাদ ১৬৯৩)
.
রসূল (ﷺ) বলেছিলেন, “আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয় অতঃপর তা পরিশোধে অপারগ হয়ে পরিশোধ না করেই মারা যায়, সে ব্যক্তির অভিভাবক আমিই।”(মুসনাদে আহমাদ ২৩৩১৬, সহীহ ইবনে মাজাহ ১৯৭৩নং, এ ব্যাপারে আরো অন্যান্য হাদীসও রয়েছে। দেখুন আহকামুল জানায়েয আলামা আলবানী)
.
মোট কথা, ঋণ পরিশোধ হওয়া পর্যন্ত মৃত ব্যক্তি জান্নাত প্রবেশে প্রতিবন্ধী থাকবে। অতএব কর্তব্য হল, মাইয়্যেতের ত্যক্ত সম্পত্তি ও অর্থ থেকে প্রথমে তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা, অতঃপর তার ঋণ পরিশোধ, অতঃপর অসিয়ত পালন, এবং সবশেষে বাকী সম্পত্তি ও অর্থ ওয়ারেসীনদের মাঝে ভাগবন্টন করা হবে।
▪️নিকটাত্মীয়দের আরো কয়েকটি কাজ করা ওয়াজিব। সেগুলো হলো:
________________________________
▪️(ক) ধৈর্য ধারণ করা ও তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকা। (সহীহ বুখারী: ১২৫২, ১২৮৩, ৭১৫৪) যেহেতু আল্লাহ এতে বান্দাকে পরীক্ষা করেন এবং যা কিছু হয় তা সবই মুমিনের জন্য মঙ্গলদায়ক। আল্লাহ তাআ’লা বলেন,অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্যই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথী। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে এবং ধন-প্রাণ ও ফসলে লোকসান দিয়ে পরীক্ষা করব; আর তুমি ধৈর্যশীলদের শুভসংবাদ দাও; যারা তাদের উপর কোন বিপদ এলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করব। এই সকল লোকেদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আশিস ও করুণা বর্ষিত হয়, আর এরাই হল সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা বাকারাহ ১৫৩-১৫৭)
.
▪️(খ) “ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়া। (অর্থ : ‘আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’) পাঠ করবে এবং আল্লাহ-নির্ধারিত তাক্বদীরের উপরে সবর করবে ও সন্তুষ্ট থাকবে।[সূরা বাকারা:১৫৬] এসময় মৃতেরমাগফেরাতের জন্য নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়া যেতে পারে।আর এরপরই নিম্নের দুআ বলাও বিধেয়ঃاللهم اجرني في مصيبتي واخلف لي خيرا منها
.
উচ্চারণঃ- আল্লাহুম্মা আ-জিরনী ফী মুসীবাতী অআখলিফলী খায়রাম মিনহা।অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমার এই বিপদে তুমি আমাকে প্রতিদান দাও এবং এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান কর।এই দুআ পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা বিগত ব্যক্তিত্ব অপেক্ষা উত্তম বিনিময় প্রদান করে থাকেন।উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, ‘যখন আবূ সালামাহ মারা গেলেন,তখন আমি বললাম, ‘মুসলিমদের মধ্যে আর কে এমন ব্যক্তি আছে যে (আমার নিকট) আবু সালামার চেয়ে ভালো হবে? যার পরিবার ছিল আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর প্রতি প্রথম হিজরতকারী পরিবার। আমি (মনে মনে) এরূপ বারবার বলতাম।অতঃপর আল্লাহ তাঁর রাসূল (ﷺ)-কে বিনিময় স্বরূপ আমাকে দান করলেন। তিনি হাত্বেব বিন আবী বালতাআহকে আমার নিকট বিবাহের পয়গাম দিয়ে পাঠালেন। আমি বললাম, আমার একটি মেয়ে আছে, আর আমি বড় (সপত্নীর বিষয়ে) ঈর্ষাবতী। কিন্তু তিনি বললেন, ‘আমরা তার মেয়ের জন্য দুআ করব, যাতে আল্লাহ তার নিকট থেকে মায়ের প্রয়োজন দূর করে দেন এবং আরো দুআ করব, যাতে তার (উম্মে সালামার) ঈর্ষা দুরীভূত হয়ে যায়।(সহীহ মুসলিম ৯১৮, ৯১৯, তিরমিযী ৯৭৭, নাসায়ী ১৮২৫, আহমাদ ৩১১৯, ইবনু মাজাহ ১৪৪৭, আহমাদ ২৫৯৫৮, ২৬০৬৮, ২৬০৯৫, ৬১২৯, ২৬১৫৭, ২৬১৯৯, মুওয়াত্তা মালিক ৫৫৮)
.
▪️(গ) স্বামীর জন্য ৪ মাস ১০ দিন শোক পালন করতে হবে।(সহীহ বুখারী: ১২৮০, ৫৩৩৪) তবে সন্তান বা অন্য কোন আপনজন মারা গেলে সর্বোচ্চ ৩ দিন শোক পালন করতে পারবে। এর বেশি জায়েয নেই।রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন(স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রী) রঙিন কাপড় ব্যবহার করতে পারবে না। তবে সূতাগুলো একত্রে বেঁধে হালকা রং লাগিয়ে তা দিয়ে কাপড় বুনলে তা ব্যবহার করা যাবে।’(ছহীহ বুখারী, হা/৫৩৪২)। আলেমগণ বলেন, (ثَوْب عَصْب) হল এমন কাপড়, যা সুন্দর নয় বা যার মাধ্যমে সৌন্দর্য ফুটে উঠে না। শারঈ বিধান হল, বিধবা স্ত্রী এমন পোশাক পরিধান করবে, যা সুন্দর নয়। কেননা অসুন্দর পোশাক ফেতনাকে উপেক্ষা করে। এ কারণে সাধারণ পোশাক (যা রঙিন না) ব্যবহার করবে। এমননিভাবে ইদ্দতকালীন সুগন্ধী, স্বর্ণ, রৌপ্য, হিরা, মণি-মুক্তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে।(শাইখ বিন বায, মাজমূ‘ঊ ফাতাওয়া, ২২তম খণ্ড, পৃ. ২১২)
.
যয়নাব বিন্তে আবী সালামাহ বলেন, আমি নবী (ﷺ) এর এক পত্নী উম্মে হাবীবার নিকট গেলে তিনি বললেন, আমি শুনেছি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসিনী কোন মহিলার জন্য কোন মূতের উপর তিন দিনের অধিক শোক পালন করা হালাল নয়। তবে মৃত স্বামী হলে তার উপর ৪ মাস ১০ দিন শোক পালন করবে।” (সহীহ বুখারী ১২০১,মুসলিম ২৭৩০ প্রমুখ)
▪️আত্মীয়-স্বজনের জন্য যা করা বৈধঃ
________________________________
আত্মীয়-স্বজন বা উপস্থিত ব্যক্তিরা মাইয়্যেতের চেহারা খুলে দেখতে ও তাকে চুম্বন দিতে পারে। চাপা-কান্না কাঁদতে এবং তিন দিন পর্যন্ত শোক পালন করতে পারে। (অবশ্য স্ত্রী হলে মৃত স্বামীর জন্য ৪ মাস ১০দিন শোক পালন। করবে।)
.
এ ব্যাপারে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যার কিছু নিম্নরূপ:সাহাবী জাবের (রাঃ) বলেন, ‘যখন আমার পিতা (আব্দুল্লাহ) ইন্তিকাল করলেন, তখন আমি তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে কাঁদতে লাগলাম। এ দেখে সকলে আমাকে নিষেধ করল। কিন্তু নবী (ﷺ) আমাকে নিষেধ করেন নি। অতঃপর নবী (ﷺ) এর আদেশক্রমে তার জানাযা উঠানো হল। এতে আমার ফুফু ফাতেমা কাঁদতে শুরু করলেন। নবী (ﷺ) তাঁকে বললেন, “কাঁদ অথবা না কাঁদ, ওর লাশ উঠানো পর্যন্ত ফিরিশ্তাবর্গ নিজেদের পক্ষ দ্বারা ওকে ছায়া করে রেখেছিল।” (বুখারী ১১৬৭ ক, মুসলিম ৪৫১৭ ক প্রমুখ)।
.
মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আবু বকর (রাঃ) তার বাসা সুন্‌হ থেকে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে এলেন। ঘোড়া থেকে নেমে মসজিদে প্রবেশ করলেন। অতঃপর নবী (ﷺ) এর নিকট গেলেন। তিনি তখন চেককাটা ইয়ামানী চাদরে ঢাকা ছিলেন। আব্বা (আবু বকর) তাঁর চেহারার কাপড় খুলে দিয়ে ঝুঁকে পড়ে তার দুই চক্ষের মাঝে চুম্বন করলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর বললেন, ‘আমার মা ও বাপ আপনার জন্য কুরবান হোক, হে আল্লাহর নবী! আল্লাহ আপনার মধ্যে দুটি মরণ একত্রিত করবেন না। এখন যে মরণ আপনার উপর অবধার্য ছিল তা আপনি বরণ করে নিয়েছেন।অন্য এক বর্ণনাতে তিনি বললেন, ‘আপনি সেই মৃত্যু বরণ করে নিয়েছেন যার পর আর কোন মৃত্যু নেই।”(সহীহ বুখারী ১২ ৪২নং, নাসাঈ ১৮১৮প্রমুখ)।
.
মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘উসমান বিন মাযউন মারা গেলে নবী (ﷺ) তাঁকে দেখতে গেলেন। তিনি তার চেহারার কাপড় খুলে ঝুঁকে তাকে চুম্বন করলেন। অতঃপর তিনি এমন কাঁদলেন যাতে দেখলাম, তার চোখের পানি তার গাল বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে।(তিরমিজি আবু দাউদ ২৭৫০]
.
এ ছাড়া জাফর মারা গেলে মহানবী (ﷺ) তার পরিজনের নিকট ৩ দিন না এসে শোক প্রকাশে ঢিল দিলেন। অতঃপর তাদের নিকট এসে বললেন, আজকের পর থেকে তোমরা আমার ভায়ের জন্য কাঁদবে না। (আবু দাউদ ৩৬৬০ক, নাসাঈ ৫১৩২ মিশকাত হা/৪৪৬৩ ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২, অনুচ্ছেদ-৩।]
.
আনাস (রাঃ)বলেন,রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর পুত্র ইব্রাহীমের নিকট গেলেন, যখন সে মারা যাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দু’চোখ দিয়ে অশ্রুপাত হতে লাগল। আব্দুর রহমান ইবনে আওফ তাঁকে বললেন, ‘আপনিও (কাঁদছেন)? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “হে আওফের পুত্র! এটা তো মমতা।” অতঃপর দ্বিতীয়বার কেঁদে ফেললেন। তারপর বললেন, “চোখ অশ্রুপাত করছে এবং অন্তর দুঃখিত হচ্ছে। আমরা সে কথাই বলব, যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে। আর হে ইব্রাহীম! আমরা তোমার বিরহে দুঃখিত।” (বুখারী ১৩০৩, মুসলিম ৬১৬৭, কিছু অংশ হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৩৫৯ জানাযা দর্পন প্রমুখ)।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
উপস্থাপনায়ঃ
জুয়েল মাহমুদ সালাফি