একজন মুমিনের মৃত্যুর পূর্ব সময় থেকে শুরু করে কবরস্থ করার পর পর্যন্ত কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে করনীয় ও বর্জনীয় ষষ্ঠ পর্ব

প্রশ্ন: শুভ ও অশুভ মরণের কোন লক্ষন রয়েছে কি? থাকলে সেগুলো কেমন?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
এক:হুসনুল খাতিমা বা ভাল মৃত্যুঃ ভাল মৃত্যু মানে- মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহর ক্রোধ উদ্রেককারী গুনাহ হতে বিরত থাকতে পারা, পাপ হতে তওবা করতে পারা,নেকীর কাজ ও ভাল কাজ বেশি বেশি করার তাওফিক পাওয়া এবং এ অবস্থায় মৃত্যু হওয়া।মুসলিম মারা গেলে তার পরপারের জীবন কেমন হবে তার কিছু লক্ষণ মরণমুহূর্তে অভিব্যক্ত হয়ে থাকে। মৃত্যুর পর মধ্যকালে ও পরকালে তার জীবন সুখের হবে এমন শুভমরণের কিছু লক্ষণ নিম্নরূপঃ
▪️১। ভাল মৃত্যুর একটি অন্যতম আলামত হল মৃত্যুর সময় ‘কালেমা’ পাঠ করতে পারা।বিশুদ্ধচিত্তে (অর্থ জেনে)কালেমাটি শুদ্ধভাবে পাঠ করে ইন্তেকাল করলে ইন শা আল্লাহ মাইয়্যেত জান্নাতবাসী হবে। অবশ্য অন্যান্য পাপের শাস্তি তাকে পূর্বেই ভুগতে হবে।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তির সর্বশেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।” [সুনানে আবু দাউদ, ৩১১৬ মাওয়ারিদুয যামআন ৭১৯)।
▪️২। মৃত্যুর সময় কপালে ললাটে ঘাম বের হওয়া। মহানবী (ﷺ) বলেন, “মুমিনের মৃত্যুকালে তার কপালে ঘাম ঝরে।” (তিরমীযী ৯৮২নং নাসাঈ ৪২৭নং ইবনে মাজাহ ১৪৫২ নং আহমদ ৫/৩৫০, ৩৫৭, ৩৬০, হাকেম ১/৩৬ ; ইবনে হিব্বান ৭৩০)।
▪️৩। জুমআর রাত্রে অথবা দিনে মৃত্যুবরণ করা। দলিল হচ্ছে মহানবী (ﷺ) বলেন,“যে মুসলিম জুমআর দিন মারা যায়, আল্লাহ তাকে কবরের ফিতনা থেকে বাঁচান।”(তিরমিযী ৮৫৮ মুসনাদে আহমাদ ৬২৯৪ ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭৭৩ সনদ হাসান )যদিও কেউ কেউ হাদীসটি জয়ীফ বলেছেন তাদের মধ্যে শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব ও হুসাইন সালীম আসাদ অন্যতম(তাহকীক মুসনাদে আহমাদ হা/৬৫৮২; তাহকীক মুসনাদে আবু ইয়া‘লা হা/৪১১৩)। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ)ও এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীছ সমূহকে যঈফ বলেছেন (ফাৎহুল বারী ৩/২৫৩)
▪️৪। আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধরত অবস্থায় জিহাদের ময়দানে মৃত্যুবরণ করা। দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী:“আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়,তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয় ভীতিও নেই এবং কোন চিন্তা ভাবনাও নেই। আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং তা এভাবে যে, আল্লাহ, ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯-১৭১] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে নিহত হয় সে শহিদ এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে মারা যায় সেও শহিদ।”[সহিহ মুসলিম, ১৯১৫]
জানের নবী (ﷺ) বলেন, আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য রয়েছে ৬টি দান; তার রক্তের প্রথম ক্ষরণের সাথে তার পাপ ক্ষমা করা হবে, জান্নাতে তার বাসস্থান দেখানো হবে, কবরের আযাব থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হবে, কিয়ামতের মহাত্রাস থেকে নিরাপত্তা পাবে, ঈমানের অলঙ্কার পরিধান করবে, সুনয়না হুরীদের সাথে তার বিবাহ দেওয়া হবে এবং তার নিজ পরিজনের মধ্যে ৭০ জনের জন্য তার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে।” (তিরমিযী ১৫৮৬ ইবনে মাজাহ ২৭৮১ আহমাদ ১৬৫৩ সহীহ তিরমিযী ১৩৫৫)
▪️৫। আল্লাহর পথে জিহাদে থেকে গাজী হয়ে ইন্তেকাল করা,প্লেগ, পেটের রোগে বা পানিতে ডুবে মারা যাওয়া। যেহেতু এমন মাইয়্যেতরা শহীদের মর্যাদা পায়। প্রাণের নবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে কাকে কাকে তোমরা শহীদ বলে গণ্য কর?” সকলে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদে) নিহত হয় সেই ব্যক্তি শহীদ। তিনি বললেন, “তাহলে তো আমার উম্মতের শহীদ-সংখ্যা নেহাতই কম।” সকলে বলল, তবে তারা আর কারা, হে আল্লাহর রসূল?’ বললেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (জিহাদে) নিহত হয় সে শহীদ, যে আল্লাহর পথে (গাজী হয়ে) মারা যায় সে শহীদ, যে প্লেগরোগে মারা যায় সে শহীদ, যে পেটের পীড়ায় মারা যায় সে শহীদ এবং যে পানিতে ডুবে মারা যায় সেও শহীদ।”(সহীহ মুসলিম ৩৫৩৯, আহমাদ ১৩ ১৮)
▪️(৬).যে ব্যক্তি দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যায় সেও শহীদের দর্জা পায়। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “শহীদ হল পাঁচ ব্যক্তি, প্লেগরোগে মৃত, পেটের রোগে মৃত, পানিতে ডুবে মৃত শহীদ, দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত শহীদ এবং আল্লাহর পথে (জিহাদে) নিহত ব্যক্তি শহীদ।” (বুখারী ৬১৫, মুসলিম ৩৫৩৮)।
▪️(৭)তদনুরূপ আগুনে পুড়ে মরা, প্লুরিসি রোগে মরা, সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মহিলার প্রাণত্যাগ করাও শহীদী মরণ। নবী করীম (ﷺ) বলেন, “আল্লাহর পথে (জিহাদে) নিহত হওয়া ছাড়া আরো সাত ব্যক্তি শহীদ হয়; প্লেগ রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ, ডুবে গিয়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, প্লুরিসি রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পেটের রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পুড়ে গিয়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ এবং সে মহিলাও শহীদ যে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যায়।” (মালেক, মুঅত্তা ৪৯৩ক, আবু দাউদ ২৭০৪ক সহীহ আবু দাউদ ২৬৬৮নং)
▪️(৮)ক্ষয় রোগে মরাও শুভ মরণের শুভ লক্ষণ; এমন মৃত্যুও শহীদের মর্যাদা দান করে। রসূল (ﷺ) বলেন, “—–ক্ষয় রোগের ফলে মরণ শহীদের মরণ।”
(মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩১৭, ৫/ ৩০১)
▪️(৯)ধন-সম্পদ ডাকাতের খপ্পরে পড়লে, পরিবার পরিজন, নিজের দ্বীন বা জান বিনাশের শিকার হলে তা রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুও শহীদী মৃত্যু। নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি নিজের মাল রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহীদ, যে নিজের পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহীদ, যে নিজের দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহীদ এবং যে তার নিজের প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সেও শহীদ।” (আবু দাউদ ৪১৪২ক, নাসাঈ ৪০২৬ক, তিরমিযী ১৩৪ ১ক)
▪️(১০).তদনুরূপ নিজের সওয়ারী থেকে পড়ে গিয়ে যে মারা যায়, সেও শহীদ। (সহীহুল জামে’ ৬৩৩৬)
▪️(১১).শত্রুঘাটি বা সীমান্ত প্রতিরক্ষার কাজে থাকা অবস্থায় মরণ ও শুভ মরণ। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “একটি দিন ও রাতের প্রতিরক্ষা কাজ একমাস (নফল) রোযা ও নামায অপেক্ষা উত্তম। মরার পরেও তার সেই আমল জারী থাকে যা সে জীবিত অবস্থায় করত। তার রুজী জারী হয় এবং (কবরের) যাবতীয় ফিতনা থেকে সে নিরাপত্তা লাভ করে।” (মুসলিম ২৫৩৭ক, তিরমিযী ১৫৮৮ক, নাসাঈ ৩১১৬ক)।
▪️১২. নিজের ধর্ম, সম্পদ ও জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা। দলিল হচ্ছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার ধর্ম (ইসলাম) রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহীদ।”(সহীহ বুখারি ২৪৮০ও সহীহ মুসলিমে,
১৪১জামে তিরমিযি, ১৪২১)
উল্লেখ্য যে, কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে ‘শহীদ’ বলা বা উপাধি স্বরূপ ব্যবহার করা বৈধ নয়। কারণ, নির্দিষ্টভাবে ‘শহীদ’ কে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। অবশ্য মহানবী (ﷺ) যাদেরকে ‘শহীদ’ বলে চিহ্নিত করেছেন তাদের কথা স্বতন্ত্র। (ইবনে উসাইমিন আশ শারহুল মুমতে’৫/৩৭৮)। প্রতিবেশীর একাধিক দ্বীনদার, জ্ঞানী সৎলোক যদি মৃত ব্যক্তির জন্য দ্বীনদারী ও সততার সাক্ষ্য দেয়, তবে সে ব্যক্তিও ঐ সাক্ষ্যানুসারে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে জান্নাতী হবে।
▪️১৩. ভাল মৃত্যুর আরো একটি আলামত হলো- নেক আমলরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি কোন একটি সদকা করল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [মুসনাদে আহমাদ (২২৮১৩), আলবানি জানায়িয গ্রন্থে পৃষ্ঠা-৪৩ এ হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন। দেখুন কিতাবুল জানায়িয, পৃষ্ঠা- ৩৪]
◾অশুভ মরণের লক্ষণ:কিছু লক্ষণ এমন আছে যাতে বুঝা যায় যে, ব্যাক্তির মরন শুভ নয়। যেমন-
_____________________________
প্রতিটি বিষয়ের যেমন ভাল দিক আছে তেমনি বিপরীতে খাবার দিকও আছে মৃত্যুর যন্ত্রণা বড়ই কঠিন।আল্লাহ তা‘আলা বলেন,‘হে নবী! আপনি যদি অত্যাচারীদের দেখতেন, যখন তারা মৃত্যুকষ্টে পতিত হয়, ফেরেশ্স্তাগণ তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলেন, তোমরা তোমাদের আত্মা বের করে দাও। ফেরেশতাগণ এ সময় বলেন, আজ হ’তে তোমাদেরকে প্রতিফল স্বরূপ অপমানজনক শাস্তি দেওয়া হবে। আর অপমানজনক শাস্তির কারণ হচ্ছে, তোমরা আল্লাহর প্রতি অসত্য আরোপ করতে এবং অহংকার করে তার আয়াত সমূহ এড়িয়ে চলতে’ (আন‘আম ৯৩) এক নজরে অশুভ মৃত্যুর কিছু লক্ষন যেমন:-
▪️(১)শিরক কুফুরী করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা।
মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা,৭২)
▪️(২)কাবীরা গোনাহ ও বিভিন্ন অসৎকর্ম করা অবস্থায় মরণ অশুভ মরণের লক্ষণ। মহান আল্লাহ বলেন,তাওবাহ্‌ তাদের জন্য নয় যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে, ‘আমি এখন তাওবাহ্‌ করছি’ এবং তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফের অবস্থায়। এরাই তারা যাদের জন্য আমরা কষ্টদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করেছি।(সূরা নিসা,১৮) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে বেশী ঘৃণিত।-যার প্রথম শ্রেনী- যে ব্যক্তি মক্কার হারাম এলাকায় নিষিদ্ধ কাজ করে।(সহীহ বুখারী, মিশকাত হা/১৪২)।
▪️(৩).আক্বীদাগত বিদআতে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরন করা।রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশনা নেই,তা পরিত্যাজ্য।
’ (মুসলিম হা/১৭১৮)অপর বর্ননায় বিদআতির ফরয বা নফল কোনটাই গ্রহণ করা হবে না।’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৭২৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৬০৮)
▪️(৪).মৃত্যুর সময় হাজারো চেষ্টা করেও কালেমা পড়তে না পেরে মৃত্যুবরন করা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তির সর্বশেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।” [সুনানে আবু দাউদ, ৩১১৬ মাওয়ারিদুয যামআন ৭১৯)।
▪️(৫) যার মৃত্যুতে সমাজের দ্বীনদার মানুষ খুশি হয় এমন মৃত্যু শুভ নয়। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম (একবার) এক জানাযায় গেলেন। সেখানে তারা মৃতের প্রশংসা করতে লাগলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা শুনে বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। (ঠিক) এভাবে তারা আর এক জানাযায় গেলেন সেখানে তারা তার বদনাম করতে লাগলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুনে বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। এ কথা শুনে ‘‘উমার জানতে চাইলেন। কি ওয়াজিব হয়ে গেছে? (হে আল্লাহর রাসূল!) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা যে ব্যক্তির প্রশংসা করেছ, তার জন্য জান্নাত প্রাপ্তি ওয়াজিব হয়ে গেছে। আর যার বদনাম করেছ, তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা জমিনে আল্লাহর সাক্ষী। (সহীহ : বুখারী ১৩৬৭, ২৬৪২, মুসলিম ৯৪৯, আত্ তিরমিযী ১০৫৮, নাসায়ী ১৯৩২, আহমাদ ১২৯৩৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫১৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৯৫০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫০৭। মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৬৬২)
▪️(৬)পিতা মাতার অবাধ্য অবস্থায় মৃত্যুবরন করা।রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,তিনজন ব্যক্তির কোন দান বা সৎকর্ম আল্লাহ কবুল করেন না : পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, খোটা দানকারী এবং তাক্বদীরে অবিশ্বাসী ব্যক্তি’।(ত্বাবারাণী কাবীর হা/৭৫৪৭; ছহীহাহ হা/১৭৮৫) তিন ব্যক্তির উপর আল্লাহ্ তা‘আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তম্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তি’’।(জা’মিউস্ সাগীর : ৩/৬৯)
▪️(৪).খারাপ মৃত্যুর মধ্যে একটা কমন আলামত সেটা হলো আত্মহত্যার মৃত্যু। যারা যেইভাবে আত্মহত্যা করে তারা যেইভাবে আত্মহত্যা করবে,জাহান্নামে সারাক্ষন ঐভাবেই আবার আত্মহত্যা করতে থাকবে। অর্থাৎ কেউ যদি ফাঁসি দিয়ে মারা যায় তাহলে জাহান্নামে তারা এভাবেই মরতেই থাকবে কিন্তু মৃত্যু তো হবে না শুধু ফাঁসি দিতেই থাকবে দিতেই থাকবে আর কষ্ট পেতে থাকবে।(সূরা নিসা,২৯-৩০ সূরা বাকারা,১৯৫ সহীহ বুখারী ৫৭০০,মুসলিম ১১০)
▪️(৫)জান কবজের পর কুঞ্চিত হয়ে যাওয়া, চেহারা কৃষ্ণবর্ণ বা বিবর্ণ হয়ে যাওয়া, মহান আল্লাহ বলেন,
সুতরাং কেমন হবে তাদের দশা ! যখন ফেরেশতারা তাদের চেহারা ও পৃষ্ঠাদেশে আঘাত করতে করতে প্ৰাণ হরণ করবে।(সূরা মুহাম্মদ,৪৭/২৭)
▪️(৬)মালাকুল মাওতের নিকট থেকে আল্লাহর ক্রোধের কথা শুনে মাইয়্যেতের চেহারায় অসন্তুষ্টি ও ঘাবড়ে যাওয়ার স্পষ্ট ছাপ পড়ে যাওয়া।(আলবিজাযাহ ৫০ পৃঃ)
▪️(৭)চেহারার সাথে সারা দেহ কালো হয়ে যাওয়া প্রভৃতি অশুভ মরণের লক্ষণ ধরা যায়। আর সকলের ঠিকানা আল্লাহই অধিক জানেন।(দেখুন,আলবিজাযাহ ৫০ পৃঃ)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
পরিশেষে,মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সালালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক ছালাতে জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে পরিত্রাণ চাইতেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯৩৯)
অশুভ বা আকস্মিক মৃত্যু থেকে বাঁচার দোয়াটি পাঠ করতে পারেন (আরবি) :
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَدْمِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّي وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْغَرَقِ وَالْحَرَقِ وَالْهَرَمِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাদমি ওয়া আউজুবিকা মিনাত তারাদ্দি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল গারাকি ওয়াল হারকি ওয়াল হারাকি ওয়াল হারামি ওয়া আউজুবিকা আঁইয়াতাখব্বাতানিশ শাইতনু ইংদাল মাওতি ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা ফি সাবিলিকা মুদবিরান ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা লাদি-গান।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই গহ্বরে পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ থেকে, আমি আপনার কাছ থেকে আশ্রয় চাই পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ থেকে এবং অতি বার্ধক্য থেকে। আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই মৃত্যুকালে শয়তানের প্রভাব থেকে, আমি আশ্রয় চাই আপনার পথে জিহাদ থেকে পলায়নপর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা থেকে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে মৃত্যুবরণ থেকে।(আবু দাউদ, হাদিস,১৫৫২; নাসায়ি, হাদিস : ৫৫৪৬), হাকিম, হাদিস : ১/৫৩১)
_________________________
উপস্থাপনায়ঃ
জুয়েল মাহমুদ সালাফি