উপরে উঠার সময় আল্লাহু আকবার এবং নিচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ বলার বিধান

প্রশ্ন: উপরে উঠার সময় ‘তাকবির ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নিচে নামার সময় ‘তাসবিহ’ ‘সুবহানাল্লাহ’ বলার বিধান কী? এই আমলটি কি সবসময়ের জন্য নাকি শুধুমাত্র সফরের সাথে খাস?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: উচ্চ স্থানে উঠার সময় ‘তাকবির’ ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নিচে নামার সময় ‘তাসবিহ’ ‘সুবহানাল্লাহ কোন ক্ষেত্রে বলতে হবে এই মাসালায় কিছুটা মতানৈক্য থাকলেও অধিক বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে,এটি সফরের সাথে খাস। কারণ সর্বাবস্থায় উপরে উঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নিচে নামার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়তে হয় মর্মে রাসূল (ﷺ) কিংবা তার সাহাবীদের থেকে বিশুদ্ধ কোন দলিল পাওয়া যায় না। সুতরাং যদি এগুলো সর্বদাই উঁচু-নিচু স্থানে আরহনের সময় পাঠ করার বিধান থাকতো তাহলে রাসূল ﷺ অবশ্যই সেটা বলতেন যেমনি ভাবে তিনি ঘরে প্রবেশ এবং ঘর থেকে বাহির হওয়ার সময় কী বলতে হবে সেটা আমাদেরকে জানিয়ে গেছেন। তাছাড়া আমরা জানি ইবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে তাওক্বীফিয়্যাহ তথা কুরআন-হাদীসের দলিলনির্ভর, এতে বিবেকের কোনো স্থান নেই। সুতরাং দলিলের আলোকে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে সফরে রাসূল (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীগন যখন পাহাড়ে উঠতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং যখন নেমে যেতেন তখন তাসবীহ পাঠ করতেন। এই মর্মে দলিল হচ্ছে জাবির (রাঃ) বলেন,كُنَّا إِذَا صَعِدْنَا كَبَّرْنَا وَإِذَا نَزَلْنَا سَبَّحْنَا ‘আমরা যখন উপরের দিকে উঠতাম, ‘আল্লা-হু আকরাব’ ও যখন নীচের দিকে নামতাম তখন ‘সুব্হা-নাল্লাহ’ বলতাম।(সহীহ বুখারী হা/২৯৯৩; দারেমী হা/২৭১৬; ইবনু খুযায়মাহ হা/২৫৬২)।
.
অপর বর্ননায় আবু যুবাইর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। ‘আলী-আযদী (রাঃ) তাকে জানিয়েছেন, ইবনু ‘উমার তাকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে বের হওয়ার সময় উটের পিঠে সোজা হয়ে বসে তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে এ আয়াত পড়তেনঃسُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا، وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ، وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ ‘‘মহান পবিত্র তিনি, যিনি একে আমাদের অনুগত বানিয়েছেন, তা না হলে একে বশ করতে ‘আমরা সক্ষম ছিলাম না। নিশ্চয়ই আমাদেরকে আমাদের রবের নিকট ফিরে যেতে হবে।’’[সূরা আয-যুখরুফঃ আয়াত ১৩-১৪] অতঃপর এ দু‘আ পাঠ করতেনঃاللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَى، وَمِنِ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى، اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا، اللَّهُمَّ اطْوِ لَنَا الْبُعْدَ، اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ، وَالْخَلِيفَةُ فِي الْأَهْلِ وَالْمَالِ তিনি যখন ফিরে আসতেন, এ দু‘আই পাঠ করতেন, শুধু এটুকু বাড়িয়ে বলতেনঃ آيِبُونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সেনাবাহিনী কোনো উঁচু স্থানে উঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন এবং নীচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ বলতেন।(আবু দাউদ হা/২৫৯৯ মুসনাদে আহমেদ হা/৬৩১১ সহীহ ইবনে হিব্বান হা/২৬৯৬)
.
উচ্চ স্থানে আরোহণের সময় ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নিচে স্থানে নামার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ পাঠ করার হিকমাহ কী?
.
উঁচু স্থানে আরোহণের সময় ‘আল্ল-হু আকবার’ বলার সম্পর্ক হলো, উঁচু স্থান অন্তরের জন্য অতি প্রিয়, যাতে অহংকার দানা বাধে। এজন্য রাসূল ﷺ নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি উঁচু ভূমি অতিক্রম করবে সে আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্বকে স্মরণ করবে। তিনি সবকিছু থেকে বড়। যাতে সে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। অতঃপর তিনি তাকে তার অনুগ্রহ বৃদ্ধি করে দিবেন। আর নিচে নামার সাথে সুবহানআল্লাহ বলার সম্পর্ক হলোঃ নিম্ন জায়গাটা সংকীর্ণ স্থান। কাজেই তার জন্য তিনি তাসবীহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, কেননা তা (তাসবীহ) প্রশস্ততার কারণ। যেমন- ইউনুস (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণিত রয়েছে, যখন তিনি অন্ধকারে তাসবীহ পড়তেন, অতঃপর তিনি দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেলেন। আল্লাহ তা‘আলার কথাঃ ‘‘যদি তিনি আল্লাহর তাসবীহ পাঠ না করতেন তবে তাকে কিয়ামাত পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হত।’’ (সূরা আস স-ফফা-ত ৩৭: ১৪৩-১৪৪) অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে মাছের পেটের অন্ধকার থেকে পরিত্রাণ দিলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাসবীহের বাস্তবায়ন করতেন, যাতে তিনি তাঁর অনিষ্টতা থেকে মুক্তি পান এবং তাকে শত্রু পেয়ে বসা থেকে মুক্তি পান।(মিশকাতুল মাসাবিহ হা/২৪৫৩ ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে নিম্নলিখিত প্রশ্ন করা হয়েছিল: হাদীসে বলা হয়েছে যে, নবী (ﷺ) পাহাড়ে আরোহণের সময় তাকবীর বলতেন এবং উপত্যকায় নামার সময় তাসবীহ বলতেন। প্রশ্ন হছে, এই তাকবীর ও তাসবীহ কি শুধু সফরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাকি বাড়িতেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় যাওয়া আসার সময় পাঠ করা যায়?
.
জবাব শাইখ বলেন:” كان النبي صلى الله عليه وسلم في أسفاره إذا علا صَعداً كبر، وإذا نزل وادياً سبح، وذلك أن العالي على الشيء قد يتعاظم في نفسه، فيرى أنه كبير، فكان من المناسب أن يكبر الله عز وجل فيقول: الله أكبر، وأما إذا نزل فالنزول سفول فناسب أن يسبح الله عز وجل عند السفول، هذه هي المناسبة . ولم ترد السنة بأن يفعل ذلك في الحضر، والعبادات مبنية على التوقيف، فيقتصر فيها على ما ورد، وعلى هذا فإذا صعد الإنسان الدرجة في البيت فإنه لا يكبر، وإذا نزل منها فإنه لا يسبح، وإنما يختص هذا في الأسفار”

সফরকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পাহাড়ে উঠতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং উপত্যকায় নামলে তাসবীহ বলতেন। এটা এই জন্য যে, যে ব্যক্তি কোনো কিছুর ঊর্ধ্বে সে গর্ববোধ করতে পারে এবং নিজেকে মহান ভাবতে পারে, তাই আল্লাহু আকবার বলে আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করা তার জন্য উপযুক্ত এবং যখন সে নামবে, তখন সে নিম্ন স্তরে নেমে যাচ্ছে, তাই তার জন্য আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করা উপযুক্ত, তাই যখন নিচে নামবেন তখন তাসবীহ পাঠ করবেন। তবে সফর না করার সময় এটি পাঠ করার বিষয়ে সুন্নাতে কোন বর্ননা নেই। ইবাদতের কাজগুলি তাওক্বীফিয়্যাহর উপর ভিত্তি করে, অর্থাৎ তারা সীমিত যা বিশুদ্ধ দলিলে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং তার উপর ভিত্তি করে, সঠিক কথা হচ্ছে যখন একজন ব্যক্তি তার বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে উপরে যায় তখন তাকে তাকবীর বলতে হবে না এবং যখন সে নীচে নামবে তখন তাকে তাসবীহ বলতে হবে না। বরং এটি শুধুমাত্র সফরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।(উসাইমীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ: ৩/১০২ এবং ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৬৪৩৪০)
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, উপরে উঠার সময় ‘তাকবির ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নিচে নামার সময় ‘তাসবিহ’ ‘সুবহানাল্লাহ’ পাঠ করা নারী পুরুষ উভয়ের জন্য মুস্তাহাব। আর এই বিধান শুধুমাত্র সফরের সাথে খাস,সবসময়ের জন্য নয়। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন সুন্নার উপর অটুট থাকার তৌফিক দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।