ঈদের দিন পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় এবং কোলাকুলি করার বিধান

প্রথমত: বছরের দুটি উৎসবের দিন ঈদ উপলক্ষে মুসলমানগণ পরস্পরে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করাতে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে অসুবিধা নেই। কারণ হাদীসে এসেছে সাহাবীগণ ঈদ উপলক্ষে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। তারা পরস্পর তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম” অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের এবং আপনার (ইবাদত-বন্দেগী) কবুল করুন।(বায়হাকী খন্ড:২ পৃষ্ঠা:৩১৯ হাফের ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন এর সনদ হাসান ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৪৯০২১)
.
দ্বিতীয়ত: ঈদের দিন সালাত শেষে কোলাকুলি করার তিনটি অবস্থা হতে পারে। যথা:

(১). যাদের সাথে প্রতিদিন দেখা-সাক্ষাৎ হয় তাদের সাথে সুন্নত মনে করে ঈদের দিন কোলাকুলি করা। এমন হলে এটি বিদআত হবে।
.
(২). যদের সাথে নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ হয় না এমন ব্যক্তি শহর কিংবা বিদেশ থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসলে দীর্ঘদিন পর সাক্ষাৎ হওয়ার কারণে তাদের সাথে কোলাকুলি করা এটি মুস্তাহাব।
.
(৩). সুন্নত মনে না করে প্রথাগত কারণে আমভাবে পরস্পর অর্থাৎ এক মুসলিম অন্য মুসলিমের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর কোলাকুলি করা। এতে কোনো অসুবিধা নেই ইনশাআল্লাহ,তবে উত্তম না করা। এখন প্রশ্ন হতে পারে প্রথমটি বিদআত দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি নয় কেন? তাহলে চলুন দেখে আসি এ ব্যপারে শরীয়তের উসূল বা মূলনীতি কি?
.
ইবাদতের ক্ষেত্রে শরীয়তের উসূল বা মূলনীতি হলো, যে ইবাদত করা হবে তা অবশ্যই শরীয়ত কর্তৃক দলিলনির্ভর হতে হবে। সুতরাং,কারও জন্য সেই ইবাদত করা জায়েজ নয়, যেই ইবাদত প্রজ্ঞাবান শরিয়তপ্রণেতা রাসূল (ﷺ) থেকে সাব্যস্ত বা প্রমাণিত হয়নি। দলিল বিহীন ইবাদতের নিয়তে সবকিছুই বিদআত হবে। এই মূলনীতির আলোকে ঈদের সালাত শেষে সুন্নত মনে করে পরস্পরে কোলাকুলি করার শারঈ কোন দলিল নেই। তাই প্রথমটি পয়েন্টটি বিদআত। কারন রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’ (সহীহ বুখারী, মুসলিম,মিশকাত হা/১৪০)।এ হাদীসটি ইসলামের মৌলিক নীতিমালার মূল এবং সকল প্রকার বিদ্‘আতকে প্রত্যাখ্যান করার সুস্পষ্ট দলীল। ইমাম নাবাবী বলেছেনঃ অশ্লীল ও অপছন্দকর বিষয়কে বর্জন করার ব্যাপারে এ হাদীসটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করার জন্য হাদীসটির সংরক্ষণ একান্তই প্রয়োজন। মিশকাতুল মাসাবিহ হা ১৪০ ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
.
দ্বিতীয়টি মুস্তাহাব কারন কেউ বাইরে থেকে কেউ আগমন করলে তার সাথে কোলাকুলি করার দলিল রয়েছে। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, كَانَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا تَلَاقُوْا تَصَافَحُوْا وَإِذَا قَدِمُوْا مِنْ سَفَرٍ تَعَانَقُوْا ‘নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবীগণ পরস্পর সাক্ষাতে মুসাফাহা করতেন আর সফর থেকে আসলে কোলাকুলি করতেন’ (ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৯৭; সনদ সহীহ, সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬৪৭)। এই দলিলের আলোকে দ্বিতীয়টি মুস্তাহাব।
.
তৃতীয়টি: মুবাহ অর্থাৎ জায়েজ।কারন এখানে ইবাদতের নিয়ত নেই বরং ঈদের দিন এই কোলাকুলি প্রথাগত বিষয়ের কারণে করা হচ্ছে। আর শরীয়তের মূলনীতি হল: যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আচার বা প্রথা শরিয়তের নিষেধ সাব্যস্ত হচ্ছে না,ততক্ষণ পর্যন্ত তার উসূল বৈধতা।অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত শরী‘আতে কোন প্রথাকে হারাম বা নিষিদ্ধ সাব্যস্ত না করে তবে মূলনীতি হল তা জায়েয।

সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] উসাইমীন,জিজ্ঞেস করা হয়েছিল”ঈদের নামাজ পর করমর্দন, কোলাকুলি এবং মুবারকবাদের নীতি কী?”
.
উত্তরে শাইখ বলেন,“ এই জিনিসগুলো করায় কোনো সমস্যা নেই। কেননা মানুষ এগুলো ইবাদত বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য করেনা। তারা সম্পূর্ণ দেশাচারমূলক (দেশে প্রচলিত যে আচার বা নিয়ম) প্রথা (রীতিনীতি) হিসেবে করে এবং একে অপরকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদানের জন্য করে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আচার বা প্রথার শরিয়তের নিষেধ সাব্যস্ত হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মূলনীতি হলো বৈধতা। যেমন বলা হয়—‘সকল (প্রথাগত) বিষয়ের মৌলিক মান হলো বৈধতা, আর শরিয়তপ্রণেতার অনুমতি ছাড়া সকল ইবাদতের মৌলিক মান হলো নিষিদ্ধতা’(ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন মাজমূ’উ ফাতাওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৬;পৃষ্ঠা: ২০৮-২১০ ফাতওয়া অনুবাদ আব্দুল্লাহ মৃধা ভাই) আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯৯০২১)
.
বিশেষ দ্রষ্টব্য শরীয়তের কোন হুকুম-আহকাম কে বিশেষ করে মতানৈক্যপূর্ণ বিষয়গুলোকে নিষেধ বা বিদআত সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সামনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে সাব্যস্ত করা উচিত। কারন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ছাড়া কোনো কিছুকে বিদআত/হারাম অথবা নাজায়েজ বললে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্ত সৃষ্টি হতে পারে। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।