ইসলামী শরীয়তে কি এমন কিছু অবস্থা আছে যে কিছু অবস্থায় যে নারীর সাথে বিবাহ জায়েয আবার কিছু কিছু অবস্থায় সেই একই নারীর সাথে বিবাহ জায়েয নয়

হ্যাঁ; ইসলামি শরীয়তে এমন কিছু অবস্থা রয়েছে। কিছু অবস্থায় যে নারীর সাথে বিবাহ জায়েয;আবার কিছু কিছু অবস্থায় একই নারীর সাথে বিবাহ জায়েয নয়।নীচে কিছু উদাহরণ পেশ করা হলো যাতে বিষয়টি পরিস্কার হয়:

(১)। ইদ্দত পালনরত নারীকে অন্য কোন পুরুষ বিয়ে করা হারাম। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: এবং নির্দিষ্ট কাল ইদ্দত পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনের সংকল্প করো না। আর জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের অন্তরে যা আছে তা জানেন। কাজেই তাঁকে ভয় কর এবং জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম সহনশীল। [সূরা বাকারাঃ২/২৩৬] এ বিধানের গূঢ় রহস্য হলো সেই নারী গর্ভবতী হওয়া থেকে নিরাপদ না হওয়া। যার ফলে একজনের পানির সাথে অন্যজনের পানির মিশ্রণ ঘটবে এবং বংশ পরিচয়ে জটিলতা তৈরী হবে।
.
(২)। ব্যভিচারী নারীকে বিয়ে করা হারাম: যদি তার ব্যভিচারের কথা জানতে পারে; যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই নারী তাওবা করে ও তার ইদ্দত শেষ হয়।যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “এবং ব্যভিচারিণী নারী— তাকে ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া কেউ বিয়ে করে না। আর মুমিনদের জন্য তা হারাম করা হয়েছে।”[সূরা নূর, আয়াত: ৩] পক্ষান্তরে ব্যভিচারিণী নারী যদি তওবা করে প্রকৃত মুসলিম নারী হয়, তাহলে এক মাসিক অপেক্ষার পর তবেই তাকে বিবাহ করা বৈধ হতে পারে। গর্ভ হলে গর্ভাবস্থায় বিবাহ-বন্ধন শুদ্ধ নয়। প্রসবের পরই বিবাহ হতে হবে। (উসাইমীন মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৭৮০)।
.
(৩)। যে পুরুষ তার স্ত্রীকে তিন তালাক্ব দিয়েছে সেই নারীর অন্যত্র সঠিকভাবে বিয়ে হওয়া এবং ঐ স্বামী তার সাথে সহবাস করা ছাড়া তাকে বিয়ে করা হারাম। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তালাক্ব দুইবার… যদি তাকে তালাক্ব দেয়” অর্থাৎ তৃতীয় বার। তাহলে এরপর স্ত্রী আর এই স্বামীর জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অন্য এক স্বামীকে বিয়ে করে।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৩০] উল্লেখ্য যে হিল্লা বিয়ে হারাম। রাসূল (ﷺ) হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে অভিসম্পাত বা লানত করেছেন।(তিরমিযী, হা/১১১৯, ১১২০; আবু দাঊদ, হা/২০৭৬; ইরওয়াউল গালীল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩০৮-৩০৯)।
.
(৪)। (হজ্জ-উমরার) ইহরামরত নারীকে বিয়ে করা হারাম, যতক্ষণ না সে নারী ইহরাম থেকে হালাল হন। সুতরাং হজ্জ বা উমরায় ইহরাম বাঁধা অবস্থায় বিবাহ ও বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া হারাম। এই অবস্থায় কারো বিবাহ হলেও তা বাতিল।(ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ: ৪/৬)
.
(৫)। দুই বোনকে একত্রে বিয়ে করা হারাম।মহান আল্লাহ একত্রে দুই বোনকে (বৈবাহিক সম্পর্ক রাখাকে একজন পুরুষের জন্য হারাম করেছেন (আন-নিসা, ৪/২৩)। আবূ হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত আছে,ছোট বোনের সাথে বড় বোনকে এবং বড় বোনের সাথে ছোট বোনকে একত্রে (সতীনরূপে) বিয়ে করতে রাসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী, হা/১১২৬; আবূ দাউদ, হা/২০৬৫; নাসায়ী, হা/৩২৯৮)।
.
(৬)। কোন নারী ও তার ফুফুকে এবং কোন নারী ও তার খালাকে একত্রে বিয়ে করা হারাম।জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মহিলার আপন ফুফু বা খালা কোন পুরুষের স্ত্রী হলে ঐ মহিলা যেন উক্ত পুরুষকে বিয়ে না করে।(সহীহ বুখারী, হা/৫১০৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০৮)।রাসূল (ﷺ) এই বিধানের হেতু বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: “যদি তোমরা এটি কর তাহলে আত্মীয়তার সম্পর্কগুলোকে ছিন্ন করবে”। আত্মীয়তার সম্পর্কগুলো এ কারণে ছিন্ন হবে যেহেতু সতীনদের মাঝে ঈর্ষা থাকে। তাই যদি সতীনদের একজন অন্যদের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়া হয়; তাদের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন ঘটবে। তবে যদি একজনকে তালাক্ব দিয়ে দেয়া হয় এবং তার ইদ্দত শেষ হয়ে যায় তখন তার বোন, ফুফু বা খালাকে বিয়ে করা জায়েয; সেই অনিষ্টটি অটুট না থাকার কারণে।
.
(৭)। চারজনের অধিক নারীকে একত্রে বিয়ে করা হারাম। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর যদি আশঙ্কা কর যে, তোমরা ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে (স্বাধীন) নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে, তাদের মধ্যে হতে দুই, তিন বা চারজনকে বিয়ে করবে, আর যদি আশঙ্কা কর যে সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই (স্ত্রীরূপে) গ্রহণ কর। এটাই তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর নিকটবর্তী’ (সূরা আন-নিসা : ৩)। উক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একজন পুরুষ একই সঙ্গে সর্বাধিক চারজন মহিলাকে বিবাহ করতে পারবে। কেননা এখানে বিবাহের সর্বোচ্চ সংখ্যা বর্ণনা করা হয়েছে, আর তা হল, ‘চার’ (ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৩৪২৯৮)। আবূ হাইয়ান আন্দালুসী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘(দুই, তিন বা চার) এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, আমাদের জন্য দু’টি, তিনটি অথবা চারটি পর্যন্ত বিবাহ করা বৈধ। আর আমাদের জন্য পাঁচটি বা এর বেশি বিবাহ করা জায়েয নয়’ (আল-বাহরুল মুহীত্ব, ৩/১৭১ পৃ.)। ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আলেমদের ঐকমত্যানুসারে চারের অধিক বিবাহ করা হারাম। এক্ষেত্রে অবশ্যই পঞ্চম বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে। কারণ এটি কুরআন,সহীহ হাদীছ ও ইজমা বিরোধী কার্যকলাপ’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ২০/২১ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৩৪২৯৮)।
.
ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, ‘যদি এক সঙ্গে চারের অধিক স্ত্রী রাখা জায়েয হত, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা সেটা বর্ণনা করতেন।(তাফসীরে ইবনু কাসীর, ২/২০৯ পৃ.)।হাদীসে এসেছে ইবনু ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘যে সময়ে গাইলান ইবনু সালামাহ আস-সাক্বাফী ইসলাম গ্রহণ করেন, সে সময়ে তাঁর দশজন স্ত্রী ছিল, যাদের তিনি জাহিলী যুগে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর সাথে সাথে তাঁরাও মুসলিম হয়। রাসূল (ﷺ) তাঁকে এদের মধ্যে হতে যে কোন চারজনকে বেছে নেয়ার নির্দেশ দেন’ (তিরমিযী, হা/১১২৮)। সুতরাং চারজন স্ত্রী থাকা অবস্থায় কোন পুরুষ পঞ্চম বিবাহ করতে চাইলে আগে পূর্বের চারজন স্ত্রীর মধ্যে কোন একজন মৃত্যুবরন করতে হবে অথবা একজনকে তালাক দিতে হবে অতঃপর পঞ্চম বিবাহ করতে হবে এর পূর্বে নয়। আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন: ফাদিলাতুশ শাইখ সালেহ আল-ফাওযান এর ‘আল-মুলাখখাস আল-ফিকহী: ২/২৭১) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।