আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সংক্ষিপ্ত জীবনী, মর্যাদা ও ফজিলত

ভূমিকা: প্রখ্যাত সাহাবী আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর প্রকৃত নাম আব্দুল্লাহ। উপনাম আবু বকর। তার পূর্ণাঙ্গ নাম হল- আব্দুল্লাহ বিন উসমান বিন ‘আমির বিন ‘আমর বিন কা‘ব বিন সা‘দ বিন তাইম বিন মুররাহ বিন কা‘ব বিন লুয়াই বিন গালিব কুরাশি তাইমী। তাঁর বেশ কয়েকটি উপাধি নাম রয়েছে। যেমন, আতীক্ব, সিদ্দীক্ব, সাহিব, আতকা এবং আওয়াহ।তার পিতার নাম উসমান এবং তাঁর উপনাম আবু কুহাফা। তিনি হস্তীবর্ষের পরের বছর মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তবে কেউ বলেন,হস্তীবর্ষের তিন বছর পরে, কারো মতে, আড়াই বছর পরে।তাঁর মায়ের নাম সালমা বিনতে সাখর। কুনিয়াত ছিল উম্মুল খাইর।(বিস্তারিত দেখুন ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী, আল-ইসাবাহ ফী তামইযিস সাহাবা ৪ র্থ খণ্ড,পৃষ্ঠা: ১৬৯ তিরমিযী, হা/৩৬৭৯; মিশকাত, হা/৬০২২ সহীহ বুখারী, হা/৩৬৭৫ মিশকাত, হা/৬০৭৪; হাকিম, হা/৪৪০৭সূরা আত-তাওবাহ: ৪০; সহীহ বুখারী, হা/৩৬৫৩ সূরা আল-লাইল: ১৭; আবুল ফিদা ইসমা‘ঈল ইবনু কাসীর আদ-দিমাস্কী, তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম ৮ম খণ্ড; পৃষ্ঠা: ৪২২ শাখসিয়াতিহি ওয়া আসরিহি, পৃ. ৩-৪)।
.
▪️ইসলাম গ্রহণ: আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর ইসলাম গ্রহণ ছিল তার জীবনের এক পবিত্র অধ্যায়ের সূচনা। এর মাধ্যমে তিনি লাভ করেছিলেন এক অর্থবহ জীবন। অন্যদিকে ইসলাম গ্রহণ ছিল সত্যের অন্বেষণে আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর দীর্ঘ যাত্রার এক সফল পরিসমাপ্তি। হাদীসে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রত্যেক শিশুই ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে; অর্থাৎ প্রত্যেক নবজাতকই এ পৃথিবীতে তার স্রষ্টার প্রতি অনুগত হিসাবে জন্ম নেয়। এরপর তার পিতামতাই তাকে ইহুদী অথবা খ্রিষ্টান অথবা অগ্নি উপাসকে পরিণত করে’(সহীহ বুখারী, হা/১৩৮৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৫৮; মিশকাত, হা/৯০) আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর ক্ষেত্রে তার এই জন্মগতভাবে প্রাপ্ত পবিত্র বৈশিষ্টটি ইসলাম গ্রহণ পর্যন্ত অক্ষুণ্ন ছিল। এই গোটা সময় ধরেই তিনি সত্যের অন্বেষণে রত ছিলেন; খুঁজে ফিরছিলেন সেই ধর্ম, যা তার পবিত্র ও নিষ্কলুষ সত্তার সাথে সাংঘর্ষিক হবে না। আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন স্বাধীন পুরুষদের মাঝে প্রথম ইসলাম-গ্রহণকারী সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। ইবরাহীম, নাখঈ, হাস্সান বিন ছাবিত, ইবনু আব্বাস এবং আসমা বিনতু আবু বকরের মতে, আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)ই ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম পুরুষ ব্যক্তি। এছাড়া ইউসুফ বিন ইয়াকূব মাজিসুন তার পিতা এবং অন্যান্য জ্ঞানী ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করে বলেন, তারা সকলেই বিশ্বাস করতেন যে, আবু বকরই (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ব্যক্তি’।যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি, উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৬৮ হি.] বলেছেন,নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাড়া প্রথম যে ব্যক্তি সালাত আদায় করা শুরু করেন তিনি হলেন আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)।(আবু বকর সিদ্দীক্ব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) শাখসিয়াতিহি ওয়া আসরিহি, পৃষ্ঠা: ১৩ আবুল ফারয আব্দুর রহমান ইবনু ‘আলী ইবনু মুহাম্মাদ,সিফাতুস সাফওয়াহ ১ম খণ্ড, পৃ. ২৩৭)।
.
আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-ছিলেন তৎকালীন সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন উচ্চ শিক্ষিত ধনী মানুষ। তবুও ইসলাম গ্রহণ ও প্রচারের জন্য তিনি কঠিন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, জুতার আঘাত পর্যন্ত সহ্য করেছেন।আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানানোর সময় রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুধু বলেছিলেন, ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর নবী। আমাকে তিনি তাঁর বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন; আমি তোমাকে সত্যিই আল্লাহর দিকে আহ্বান করছি। আল্লাহর কসম তিনিই একমাত্র সত্য। আবু বকর! আমি তোমাকে এক আল্লাহর দিকে আহ্বান করছি, যার কোন শরীক নেই; তাই তিনি ব্যতীত আর কারও ইবাদত কর না এবং জেনে রেখো, আল্লাহর আনুগত্যের উপরই সকল বন্ধুত্বের ভিত্তি। আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এই আহ্বান পাওয়ার সাথে সাথেই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনুসরণ ও সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করেন। তিনি তার এ অঙ্গীকার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রক্ষা করেছিলেন। বেশ কিছু বছর পর এক দিন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ছাহাবীদেরকে আবু বকর সম্পর্কে বলেন,যখন আমাকে আল্লাহ তোমাদের মাঝে পাঠালেন, তখন তোমরা আমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছো; কিন্ত আবু বকর আমাকে সত্য সাব্যস্ত করেছিলেন। একই সাথে সে আমাকে তার জান-মাল দ্বারা সাহায্য করেছে, সান্ত¦না দিয়েছে। তাহলে কি তোমরা তাকে আমার খাতিরে সে কোন ভুলত্রুটি করলে ছেড়ে দেবে না?’ নবী করীম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) একথাটি দু’বার বললেন’।(সহীহ বুখারী, হা/৩৬৬১ আত-তারীখুল ইসলামী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩২-৩৩)।
.
▪️আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুর মর্যাদা ও ফজিলত:

আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ সর্বসম্মতভাবে একমত যে,নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর এই উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন আবু বকর সিদ্দীক, তারপর উমর, তারপর উসমান,তারপর আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) (ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৮৭৫২৭) শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন: তারা – অর্থাৎ, আহলে সুন্নাহ –আমিরুল মুমিনীন, আলী ইবনে আবী তালিব (রা.) এবং অন্যান্যদের থেকে মুতাওয়াতির পর্যায়ে যা বর্ণিত হয়েছে তা প্রমান করে যে, এই উম্মতের মধ্যে তার নবীর পরে সর্বোত্তম হলেন আবু বকর, তারপরে উমর……(আল-আকিদাহ আল-ওয়াসিতিয়াহ (পৃষ্ঠা: ১১৭)।

রাসূল (ﷺ) বলেছেন: লোকেদের মধ্যে নিজস্ব সম্পদ ও সাহচর্য দ্বারা আমার প্রতি সর্বাধিক ইহসান করেছেন আবূ বাকর (রাঃ) (বুখারী: ৪৬৬, ৩৯০৪ মিশকাত হা/৬০১৯)।

প্রখ্যাত সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেছেন, রাসূল (ﷺ) বলেন, যদি আমি কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তাহলে আবূ বাকরকেই অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। তবে তিনি আমার (দীনী) ভাই ও সাথি। (সহীহ মুসলিম হা/২৩৮৩ মুসনাদে আহমাদ ৪১৮২, আবূ ইয়া’লা ৫২৪৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৮৫৬, মিশকাত হা/৬০২০)।
.
প্রখ্যাত সাহাবী আলী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৪০ হি.] -এর ছেলে মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে অর্থাৎ (আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-কে প্রশ্ন করলাম,নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পর কোন লোকটি সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, আবূ বাকর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) আমি আবার প্রশ্ন করলাম, তারপর কোন লোক? তিনি বললেন, ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-(সহীহ বুখারী হা/ ৩৬৭১, আবূ দাউদ হা/ ৪৬২৯, আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী হা; ৮০৫৩)।
.
আমর ইবনুল আস (রাঃ) নবী (সা.) -এর কাছ এসে প্রশ্ন করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার কাছে সর্বাধিক প্রিয়? তিনি (সা.) বললেন, আয়িশা। আমি বললাম পুরুষদের মধ্য থেকে? তিনি বললেন তাঁর পিতা [আবূ বাকর (রাঃ) (বুখারী ৩৬৬২, ৪৩৫৮ মুসলিম ৮-(২৩৮৪), তিরমিযী ৩৮৮৫, ইবনু মাজাহ ১০১ সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৮৮৫, মিশকাতহস/৬০২৩)
.
উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) -এর যামানায় আমরা কাউকেও আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর সমতুল্য মনে করতাম না। তারপর ‘উমার (রাঃ)-কে এবং তারপর ‘উসমান (রাঃ)-কে মর্যাদা দিতাম। অতঃপর নবী (সা.) -এর অন্যান্য সাহাবীদের সম্মান সম্পর্কিত আলোচনা পরিহার করতাম। তাদের মাঝে একের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিতাম না।(বুখারী ৩৬৯৭, আবূ দাউদ ৪৬২৭, ৪৬২৮) আর আবূ দাউদ-এর এক বর্ণনাতে আছে, ইবনু উমার (রাঃ) বলেছেন: নবী (সা.) -এর জীবদ্দশায় আমরা বলতাম, নবী (সা.) -এর উম্মতের মধ্যে তাঁর পরে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান লোক হলেন আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) তারপর ‘উমার, তারপর ‘উসমান।(আবূ দাউদ ৪৬২৭, ৪৬২৮)।
.
আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৭/৫৮ হি.] বলেন, রাসূল (ﷺ) তাঁর রোগশয্যায় আমাকে বললেন, তোমার পিতা আবূ বাকর এবং তোমার ভাইকে আমার কাছে ডেকে আন, আমি তাদেরকে বিশেষ একটি লেখা লিখে দেব। কেননা আমার ভয় হচ্ছে যে, আমিই হকদার, অথচ সে তার হকদার নয়। আল্লাহ তা’আলা এবং ঈমানদার লোকেরা আবূ বাকর ছাড়া কাউকে খলীফাহ্ হিসেবে মেনে নেবেন না।(মুসনাদে আহমাদ ২৫১৫৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৫৯৮, মিশকাতা/৬০২১)।
.
জুবায়র ইবনু মুত্বইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক মহিলা রাসূল (ﷺ) এর কাছে আসলো এবং তার সাথে কোন বিষয়ে কথাবার্তা বলল। তিনি (ﷺ) তাকে আবার আসতে বললেন। তখন মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আচ্ছা বলুন তো, আমি আবার এসে যদি আপনাকে না পাই তখন কি করব? মহিলাটি যেন তাঁর [নবী রাসূল (ﷺ) -এর] ইন্তিকালের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন। উত্তরে তিনি বললেন, তুমি যদি আমাকে না পাও তবে আবূ বাকর এর কাছ এসো।(সহীহ বুখারী ৩৬৫৯, মুসলিম হা/২৩৮৬ মুসনাদে আহমাদ হা/১৬৮০১, সিলসিলাতুস সহীহাহ হা/৩১১৭ সহীহ ইবনু হিব্বান হা/ ৬৬৫৬, মিশকাত হা/৬০২২)।
.
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে কোন লোক আমাদের প্রতি যে কোন ধরনের দয়া করেছে, আমরা তার প্রতিদান দিয়েছি, আবূ বাকর-এর দয়া ছাড়া। তিনি আমাদের প্রতি যে দয়া করেছেন, আল্লাহ তা’আলাই কিয়ামতের দিন তাঁকে তার প্রতিদান প্রদান করবেন। আর কারো ধন-সম্পদ আমাকে ততখানি উপকৃত করতে পারেনি, যতখানি আবূ বাকর এর মাল আমাকে উপকৃত করেছে। আর আমি যদি (আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কাউকে) খলীল বা অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তাহলে আবূ বাকরকেই অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম।(তিরমিযী ৩৬৬১, ইবনু মাজাহ ৯৪, সহীহুল জামি ৫৬৬১ মিশকাত হা/৬০২৬)।
.
উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বাকর (রাঃ) আমাদের সরদার, আমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম এবং আমাদের সকলের চেয়ে রাসূল (ﷺ)-এর কাছে অধিক প্রিয় ছিলেন।(তিরমিযী ৩৬৫৬, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩১৯৬৬, বুখারী ৩৭৫৪ মিশকাত হা/৬০২৭)।
.
উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত করার জন্য নির্দেশ করলেন। (সৌভাগ্যবশত) সে সময় আমার কাছে প্রচুর সম্পদ ছিল। তখন আমি (মনে মনে) বললাম, (দানের প্রতিযোগিতায়) যদি আমি কোনদিন আবূ বাকর -এর উপর পারি, তবে আজকের দিনেই আবূ বাকর -এর উপরই জিতে যাব।“উমার (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি আমার সমস্ত সম্পদের অর্ধেক নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে উপস্থিত হলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রশ্ন করলেন, পরিবার-পরিজনের জন্য কি (পরিমাণ) রেখে এসেছ? আমি বললাম, এর সমপরিমাণ অর্থাৎ এর অর্ধেক। আর আবূ বাকর -এর কাছে যা কিছু ছিল তিনি সম্পূর্ণ নিয়ে উপস্থিত হলেন।এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবূ বাকর! পরিবার-পরিজনের জন্য আপনি কি রেখে এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, তাদের জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে রেখে এসেছি। উমার (রাঃ) বলেন, তখন আমি (মনে মনে বললাম, আর আমি কখনো কোন ক্ষেত্রে তার উপর জিততে পারব না।(তিরমিযী ৩৬৭৫, আবূ দাউদ ১৬৭৮, সহীহ আবূ দাউদ ১৪৭৩, মিশকাত হা/৬০৩০)।
.
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে উপস্থিত হলে তিনি তাঁকে (লক্ষ্য করে) বললেন, আপনি জাহান্নামের আগুন হতে আল্লাহর ‘আতীক (আযাদপ্রাপ্ত)। সেদিন হতে তিনি আতীক উপাধিতে প্রসিদ্ধ হন।(তিরমিযী ৩৬৭৯, সহীহুল জামি ১৪৮২, সিলসিলাতুস সহীহাহ ১২৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৮৬৪, মিশকাত হা/৬০৩১)
.
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আবূ বাকর এবং ‘উমার নবী-রাসূলগণ ছাড়া দুনিয়ার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল জান্নাতবাসী পরিণত বয়সী সকল জান্নাতীদের সরদার হবেন।(তিরমিযী ৩৬৬৪, ইবনু মাজাহ ৯৫, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৮২৪, সহীহুল জামি ৫১, মিশকাত হা/৬০৫৯)অতএব নবী-রাসূলগণের পরে তাঁরা দু’জন যেমন জান্নাতে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, তেমনি দুনিয়াতেও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।
.
হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) – বলেছেন: আমি জানি না কতদিন আমি তোমাদের মাঝে থাকব। অতএব আমার পরে তোমরা আবূ বাকর এবং ‘উমার-এর অনুকরণ কর।(তিরমিযী ৩৬৬৩, ইবনু মাজাহ ৯৭, সহীহুল জামি ২৫১১, মুসনাদে আহমাদ ২৩৪৬৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৯০২। মিশকাত হা/৬০৬১)।
.
ইমাম সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) এ প্রসঙ্গে জামিউস্ সগীরে বলেন, আবূ বাকর ও ‘উমার আমার নিকট তেমনি মর্যাদাবান যেমনি মানুষের মাথায় কর্ণ ও চক্ষু মর্যাদাবান। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৯/৩৬৮০)
.
আবূ বাকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলল, আমি স্বপ্নে দেখেছি, আকাশ হতে যেন একটি পাল্লা অবতীর্ণ হলো। তাতে আপনাকে ও আবূ বাকর (রাঃ) -কে ওযন করা হলো, এতে আপনার দিক ভারী হলো। এরপর আবূ বাকর (রাঃ) এবং ‘উমার (রাঃ)-কে ওযন করা হলো, এতে আবূ বাকর-এর দিক ভারী হলো।…(তিরমিযী ২২৮৭, আবূ দাউদ ৪৬৩৪, মুসনাদে আহমাদ ২০৪৬৩, মিশকাত হা/৬০৬৬)।
.
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী (সা.) ও আবূ বাকর, ‘উমার এবং উসমান (রাঃ)-সহ উহুদ পাহাড়ের উপর আরোহণ করলেন, (খুশিতে) পাহাড় তাদেরকে নিয়ে দুলতে লাগল। তখন নবী (সা.) পা দ্বারা আঘাত করে বললেন, উহুদ স্থির থাক। কেননা একমাত্র তোমার ওপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও দু’জন শহীদ রয়েছেন।(বুখারী ৩৬৭৫, ৩৬৮৬ তিরমিযী ৩৬৯৭, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৮৭৫, মিশকাত হা/৬০৮৩)।
.
রাসূল ﷺ আবুবাকর সিদ্দীক (রাঃ) কে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন (বুখারী ৩৬৯৩, মুসলিম হা/২৪০৩), তিরমিযী ৩৭১০, মুসনাদে আহমাদ ১৯৬৬০ মিশকাত হা ৬০৮৪) তিরমিযী ৩৭৪৭, আবূ দাউদ ৪৬৪৯।
.
রাসূল (ﷺ) বললেন, আল্লাহ্ যখন আমাকে তোমাদের নিকট রাসূলরূপে প্রেরণ করেছেন তখন তোমরা সবাই বলেছ, তুমি মিথ্যা বলছ আর আবূ বকর বলেছে, আপনি সত্য বলেছেন। তাঁর জান-মাল সবকিছু দিয়ে আমাকে সহানুভূতি জানিয়েছে।(বুখারী হা/৩৬৬১ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাহাবীদের ফযীলত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫)।
.
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, أَبُوْ بَكْرٍ سَيِّدُنَا وَأَعْتَقَ سَيِّدَنَا يَعْنِيْ بِلَالًا ‘আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাদের নেতা এবং তিনি আমাদের আরেক নেতা বিলাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে মুক্ত করেছিলেন।(সহীহ বুখারী, হা/৩৭৫৪ ‘ছাহাবীগণের মর্যাদা’ অধ্যায়-৬২, ‘বিলাল (রা.)-এর মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ-২৩; মিশকাত, হা/৬২৫০; ত্বাবাক্বাতুল কুবরা, হা/৩৬৪০, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩২)।
.
▪️আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুর মৃত্যু: আবু বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তের (১৩) হিজরী জুমাদাল আখেরা মাসের আটদিন অবশিষ্ট থাকতে মঙ্গলবার রাতে মাগরিব ও ‘ইশার মধ্যবর্তী সময়ে ৬৩ বছর বয়সে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার স্ত্রী আসমা বিনতু ‘উমায়স-কে গোসলের জন্য ওয়াসিয়্যাত করেন। উমার ইবনুল খত্তাব (রাঃ) তার জানাযার সালাত আদায় করান। তার খিলাফতকাল ছিল দুই বছর চার মাস ১০ দিন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ হা/৬০৩১) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।