অনলাইনে নারীদের মুখমণ্ডল উন্মোচিত ছবি অথবা ভিডিও আপলোড করার বিধান

প্রশ্ন: বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া যেমন; ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদিতে নারীদের মুখমণ্ডল উন্মোচিত ছবি অথবা ভিডিও আপলোড করার বিধান কি?
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: কুরআন-সুন্নাহর দলিল এবং চার মাযহাবের আলেম ও অধিকাংশ প্রসিদ্ধ সালাফদের বর্তমান সম্মিলিত অবস্থান হলো- নারীর চেহারা পর্দার অন্তর্ভুক্ত, তা ঢেকে রাখা ফরয। শরীয়ত সম্মত বাধ্যগত কারণ ছাড়া পরপুরুষের সামনে উন্মোচিত করা হারাম।নারীর মুখমন্ডলের পর্দার বিষয়টি ইজমা’র ভিত্তিতে স্থির হয়েছে। চার মাযহাবের কোন উল্লেখযোগ্য আলিম এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেননি। যেমনটি বলা হয়েছে ‘আদিল্লাতিল হিযাব’ নামক গ্রন্থে, نَسْتَطِيْعُ أَنْ نُخَلِّصَ مِّمَّا تَقَدَّمَ بِأَنَّ عُلَمَاءَ الْمَذَاهِبِ الْأَرْبَعَةِ يَكَادُوْنَ يَتَّفِقُوْنَ عَلَى تَغْطِيَةِ المْرَأَةِ جَمِيْعِ بَدَنِهَا عَنِ الْاَجَانِبِ سَوَاءٌ مِنْهُمْ مَنْ يَّرَى أَنَّ الْوَجْهَ وَ الْكَفّيْنِ عَوْرَةٌ وَمَنْ يَّرَى أَنَّهُمَا غَيْرُ عَوْرَةٌ. لَكِنَّهُ يُوْجِبُ تَغْطِيَتُهُمَا فِىْ هَذَا الزَّمَانِ لِفَسَادِ أَكْثَرِ النَّاسِ অর্থাৎ এ বিষয়ে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি যে- চার মাযহাবের ঐকমত্যে, পরপুরুষ থেকে পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা ফরয। তাদের মধ্যে কেউ কেউ চেহারা ও উভয় কব্জি পর্দার অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেন আবার অনেকে তা করেন না। কিন্তু বর্তমানে ফিতনার যুগে হাত ও চেহারা ঢেকে রাখা ওয়াজিব। (মুহাম্মাদ ইবনু আলী আশ-শাওকানী (মৃ. ১২৫০ হি.), নায়লুল আওত্বার (মিশর : দারুল হাদীছ, তাবি), ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৩৭)। বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখ আবদুল্লাহ ইবনে জিবরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি.] একই ফাতাওয়া দিয়েছেন। (দেখুন- রিসালাতুন ফিল-হিজাবি ওয়াস-সুফূর: ১৯; ফাতাওয়া উলামাইল বালাদিল হারাম: ফাতওয়া নং-১১৬৯)।
.
সুতরাং স্যোশাল মিডিয়া যেমন; ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক কিংবা ইউটিউবে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের মুখমণ্ডলের খোলা ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করা সালাফদের প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী হারাম এবং এটি কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এবার উক্ত নারীর ছবি কিংবা ভিডিও ইসলামিক হোক কিংবা মোটিভেশনাল হোক তাতে কিছু যায় আসে না। কেননা নারীদের মুখমন্ডল খোলা রেখে ছবি পোস্ট করা তার নিজের জন্য যেমন ফেতনার কারণ, তেমনি অন্যের জন্যও এটি ফিতনার সদর দরজা উন্মোচন করে দেয়। তাছাড়াও সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন প্রত্যেকেই বুঝতে পারে যে-নারীর সৌন্দর্য ও ফিতনার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মুখ, যা দেখার মাধ্যমে পুরুষ ফিতনায় পড়ে, বিশেষত যখন নারী সুন্দরী হয়। বলা হয়ে থাকে, نظرة … فسلام، فكلام فموعد فلقاء-প্রথমে দর্শন, তারপর সালাম, এরপর বাক্যালাপ, অতঃপর ডেটিং, তারপর সেটিং অতঃপর সাক্ষাৎ‌। আর শয়তান তো মানুষের রক্তে রক্তে চলাচল করে। সুতরাং নারীর চেহারা দেখার মাধ্যমে অনেক বাক্যালাপ, হাসি-তামাসা, আনন্দ-উল্লাসের সাথে পুরুষের হৃদয়কে নারীর প্রতি আকৃষ্ট করে। অনুরূপ নারীর অন্তরকেও পুরুষের প্রতি আকর্ষিত করে। এর মাধ্যমে এমন কিছু অনিষ্টতা বা যিনা সংগঠিত হয় যা অপ্রতিরোধ্য।
.
নারীর চেহারা পর্দার অন্তর্ভুক্ত এবং পরপুরুষ থেকে ঢেকে রাখা ফরজ। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ قُلۡ لِّاَزۡوَاجِکَ وَ بَنٰتِکَ وَ نِسَآءِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ یُدۡنِیۡنَ عَلَیۡہِنَّ مِنۡ جَلَابِیۡبِہِنَّ ؕ ذٰلِکَ اَدۡنٰۤی اَنۡ یُّعۡرَفۡنَ فَلَا یُؤۡذَیۡنَ ؕ وَ
‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রী ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের বড় চাদর বা ওড়না তাদের উপর দিয়ে ঝুলিয়ে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু‌।’ (সূরা আল-আহযাব: ৫৯)। উক্ত আয়াতে ‘জালাবীব’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ‘জিলবাব’ শব্দের বহুবচন। আরবী অভিধানের বিখ্যাত গ্রন্থ লিসানুল আরাবে ইমাম মুনজিরি (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু:৬৫৬ হি:] বলেন: ‘জিলবাব’ ওই চাদরকে বলা হয় যা মহিলারা নিজেদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকার জন্য ব্যবহার করে। (লিসানুল আরাব; ১/২৭৩)। অভিধান থেকে সরে গিয়ে মুফাসসিরগণের বক্তব্য দেখলেও জানা যায়, ‘জিলবাব’ এমন কাপড়কে বলে যদ্বারা মহিলারা নিজেদের শরীর ঢাকেন। ‘জিলবাব’ অর্থ বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমণ্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়। (কুরতুবী, আল-জামে লিআহকামিল কুরআন: ১৪/২৪৩)। বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকীহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন: আয়াতে বর্ণিত جلباب হচ্ছে, এক ধরনের লম্বা বিশেষ চাদর, যা সমস্ত শরীরকে আবৃত করে। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল (ﷺ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন, তিনি যেন তার স্ত্রী-কন্যা ও মুমিন নারীদেরকে চাদর দিয়ে তাদের দেহ আবৃত করতে, যাতে তাদের গলা ও মুখমণ্ডলও ঢেকে যায়। পবিত্র কুরআন, সহীহ সুন্নাহ এবং বিশুদ্ধ রায় দ্বারা প্রমাণিত যে- পরপুরুষের সামনে নারীদের মুখ ঢেকে রাখা ওয়াজিব। (বই: মুসলিম পরিবার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর)।
.
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোন প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে, তখন যেন মাথার উপর থেকে বিশেষ চাদর টেনে স্বীয় মুখমণ্ডল আবৃত করে, আর (চলাফেরার সুবিধার্থে) শুধু চোখ খোলা রাখে। (আবু জা‘ফর মুহাম্মাদ ইবনু জারীর আত-ত্বাবারী, জামিঊল বয়ান ফী তা’বীলিল কুরআন, মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪২০ হি./২০০০ খ্রি., ২০তম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩২৪)। ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ৬৭১ হি.) স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে বলেন, ‘জিলবাব বা বড় চাদর দ্বারা জামা-কাপড় সহ সমস্ত শরীর ও চেহারা ঢাকতে হবে।’ (আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ আল-ক্বুরতুবী, আল-জামেঊ লি আহকামিল কুরআন, রিয়াদ: দারু আলিমিল কুতুব, ১৪০৩ হি./২০০৩ খ্রি., ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৭৯)। ইমাম সূয়ুত্বী (রাহিমাহুল্লাহ) এই আয়াত সম্পর্কে বলেন, এটি সকল নারীর জন্য পর্দার নির্দেশ সম্বলিত আয়াত। এর দ্বারা তাদের মাথা ও চেহারা ঢাকা ফরয করা হয়েছে। (আবু আব্দুর রহমান মুহাম্মাদ আশরাফ ইবনু আমীর আল-আযিমাবদী, আওনুল মা‘বূদ শরহু সুনানি আবী দাঊদ, বৈরূত: দারুল কুতুব, ২য় সংস্করণ, ১৪১৫ হি., ১১তম খণ্ড, পৃ. ১০৬)।
.
প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের চেহারায় পুরুষের অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি চালনার কুফল সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে নাবী কারীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন; النظرة سهم مسموم من سهام ابليس ‘‘অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি ইবলীসের বিষাক্ত বাণ বিশেষ।’’ (মুসনাদ আশ-শিহাব ১ম খন্ড ১৯৫-১৯৬ পৃষ্ঠা) আল্লামাহ ইবনে কাসীর (রহ.) এ প্রসঙ্গে লিখেছেন; النظرة سهم سم إلى القلب ‘‘দৃষ্টি হচ্ছে এমন একটি তীর, যা মানুষের হৃদয়ে বিষের উদ্রেক করে।’’ (ইবনু কাসীর, ৩য় খন্ড, ৩৭৬ পৃষ্ঠা)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন; غًضُّوا أَبْصَارَكُمْ وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ ‘‘তোমাদের দৃষ্টিকে নীচু কর, নিয়ন্ত্রিত কর এবং তোমাদের লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করো।’’ (মু‘জামুল কাবীর, ৮ম খন্ড ২৬২ পৃষ্ঠা, হা/ ৮০১৮, মাজমূ‘আ ফাতাওয়া, ১৫শ খন্ড, ৩৯৫ পৃষ্ঠা)। এ দু’টো যেমন আলাদা আলাদা নির্দেশ, তেমনি প্রথমটির অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে শেষেরটি। অর্থাৎ দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত হলেই লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ সম্ভব। অন্যথায় তাকে চরম নৈতিক অধঃপতনে নিমজ্জিত হতে হবে। এবং নিঃসন্দেহে এতে নারী-পুরুষ উভয় ফিতনায় পতিত হবে। এজন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা বানী আদমের জন্য যিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যই জড়িত হবে। চোখের যিনা হলো দেখা, জিহ্বার যিনা হলো কথা বলা, কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খাহেশ সৃষ্টি করা এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে।(সহীহ বুখারী ৬২৪৩, মুসলিম ২৬৫৭, আবু দাঊদ ২১৫২)। সহীহ মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে, আদম সন্তানের জন্য তাক্বদীরে যিনার অংশ যতটুকু নির্ধারণ করা হয়েছে, সে ততটুকু অবশ্যই পাবে। দুই চোখের যিনা তাকানো, কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের যিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের যিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশে) স্পর্শ করা আর পায়ের যিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের যিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। আর গুপ্তাঙ্গ তা সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। (সহীহ মুসলিম হা/ ২৬৫৭, মিশকাত হা/৮৬)। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা খাত্তাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন; দেখা ও কথা বলাকে যিনা বলার কারণ এই যে- দু’টোই হচ্ছে প্রকৃত যিনার ভূমিকা- যিনার মূল কাজের পূর্ববর্তী স্তর। কেননা দৃষ্টি হচ্ছে মনের গোপন জগতের উদ্বোধক আর জিহ্বা হচ্ছে বাণী বাহক, যৌনাঙ্গ হচ্ছে বাস্তবায়নের হাতিয়ার- সত্য প্রমাণকারী। (মা‘আলিমুস সুনান খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ২২৩)।
.
অতএব মুখমণ্ডল উন্মোচিত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের ছবি বা ভিডিও পোস্ট করা, অতঃপর পুরুষের জন্য এমন ছবি দেখা, ছবিতে লাইক,কমেন্ট ও শেয়ার করা নিষিদ্ধ। কেননা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোডকৃত এমন ছবিতে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করার মাধ্যমে তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে ফলে নিজে যেমন গুনাগার হয় তেমনি অন্য মানুষও পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। যা পাপ ও অন্যায়ের প্রচার-প্রসারের শামীল। অথচ এমন কাজ থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখবে।’ (আলে-ইমরান, ৩/১১০)। রাসূল (ﷺ) পুরুষকেও বেপর্দা নারী থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে আদেশ করেছেন। আব্দুলাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নারীদের প্রতি হঠাৎ দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন; اصرف بصرك “তোমার চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নাও।’’ (সহীহ মুসলিম, হা/২১৫৯; আবু দাউদ হা/২১৪৮, তিরমিযী, হা/২৭৭৬; মিশকাত, হা/৩১০৪)। তাছাড়া এ ধরনের বেপর্দা বা অশ্লীল ছবি আপলোডকারী এবং তাতে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারকারী সকলেই সমান অপরাধী। রাসূল ( ﷺ) বলেন; যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো মন্দ রীতির প্রচলন করবে, তার জন্য তার কাজের গুনাহ রয়েছে এবং তাঁর পরবর্তীতে যারা এ কাজ করবে, তাদেরও গুনাহ রয়েছে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কিছুই কম করা হবে না।’ (সহীহ মুসলিম, হা/১০১৭; মিশকাত, হা/২১০)।শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন; পরপুরুষ দেখতে পারে এমনভাবে মহিলাদের মুখমণ্ডল খোলা রাখা জায়িয নেই। স্বামী, পিতা, ভাই প্রমুখের উচিত ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধে’র অংশ হিসেবে তাদেরকে এমন কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হওয়া। অধীনস্থ নারীদের পর্দাহীনতা থেকে বিরত না রাখাও দায়িত্বশীল পুরুষদের জবাবদিহিতা মূলক অপরাধ। এজন্য তাদেরকে শাস্তিও দেয়া যেতে পারে। (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ, খন্ড: ২৪,পৃষ্ঠা: ৩৮২)।
.
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে- মহিলাদের চেহারা পর্দার অন্তর্ভুক্ত, যা পরপুরুষ থেকে ঢেকে রাখতে হবে। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে ইসলামের সোনালী সময়ের মর্যাদাবান মহিলাগণ সৌন্দর্য প্রকাশ না করার ব্যাপারে যদি এতটাই সতর্ক থাকেন, তাহলে বর্তমান ফিতনার যুগে মুসলিম মহিলাগণ কিভাবে তাদের শারঈ পর্দা অক্ষুণ্ণ রাখবেন সে ব্যাপারে এখনই তাদেরকে সতর্ক হওয়া উচিত। অতএব, মুসলিম নারীর উপর আবশ্যক হলো- সে তার নিজের ব্যাপারে ও মেয়ের ব্যাপারে ভয় করবে। আল্লাহ তা‘আলা তার উপর যা আবশ্যক করেছেন তার হেফাযত করবে। যদি তা না করে তাহলে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হবে। যেমন নবী (ﷺ) বলেছেন, سَيَكُوْنُ آخِرُ أُمَّتِيْ نِسَاءً كَاسِيَاتٍ عَارِيَاتٍ عَلَى رُؤُسِهِنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْعَنُوْهُنَّ فَإِنَّهُنَّ مَلْعُوْنَاتٌ আমার উম্মতের শেষ জামানায় কিছু নারী হবে যারা পোশাক পরেও বিবস্ত্র থাকবে। তাদের মাথার উপর কুমতি উটের কুঁজের মত থাকবে। তাদেরকে অভিশাপ দিবে কেননা তারা অভিশপ্ত। (মুসতাদরাকু আলাস সহীহাইন হা/৮৩৪৬, সনদ সহীহ)। সুতরাং হে মুসলিম বোন! আপনি নিজেকে নিজে শয়তান হতে দূরে রাখুন যাতে আপনাকে কোন প্রতারণার দিকে নিতে না পারে, তা নাহলে শয়তান আপনাকে সেই বেপর্দার মধ্যে ফেলে দিবে, যা আল্লাহ তা’আলা আপনার জন্য হারাম করেছেন। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, لَا تَرْتَكِبُوْا مَا ارْتَكَبَتِ الْيَهُوْدُ فَتَسْتَحِلُّوْا مَحَارِمَ اللهِ بِأَدْنَى الْحِيَلِ ‘তোমরা সে পাপ করো না, যে ধরনের পাপ ইহুদীরা করেছে। সামান্য অযুহাতে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়কে তারা হালাল করেছে। (ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৯৩)। আল্লাহ আমাদের সকল মুসলিম নারীদের ফেতনা থেকে হেফাযত করুন এবং শারঈ পর্দা যথাযথ নিয়মে পালন করার তাওফীক দান করুন,,,আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।