অসুস্থতার সময় নিজেকে কিংবা অন্যকে ঝাড়-ফুঁক করার অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দু’আ।
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: প্রিয় পাঠক! একটি বিষয়টি আমাদের জানা থাকা উচিত যে, মানুষের উপর যাদু কিংবা জ্বিনের প্রভাব বাস্তব। এটি অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু একজন মুসলিম তার জিন্দেগীতে যেসব সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয় সে সবগুলোকে যাদু বা জ্বিনের প্রভাবের সাথে সম্পৃক্ত করাটা উচিত নয়।কারণ এটি করার ফলে ব্যক্তি নানা সংশয় ও কল্পনার মধ্যে বাস করবে এবং দিনের পর দিন এটি বাড়তে থাকবে ও সুদৃঢ় হবে। একজন মুসলিমের কর্তব্য প্রথমে নিজের অবস্থা বিচার করা। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য সবকিছুর মূলধন এবং সকল কল্যাণের কারণ। আর আল্লাহ্র অবাধ্যতা সকল অকল্যাণের কারণ। তাই একজন মুসলিমের উচিত আল্লাহ্র আনুগত্যের ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকা। কারণ উত্তম জীবন হচ্ছে মুমিনদের জন্য যারা নেক আমল করে: “যে পুরুষ বা নারী ঈমানদার অবস্থায় সৎকাজ করবে তাকে আমি উত্তম জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদেরকে তাদের শ্রেষ্ঠ কাজের পুরস্কার দেব।”(সূরা আন-নাহল, ১৬: ৯৭) আর দুর্দশাগ্রস্ত জীবন হচ্ছে তার জন্য যে আল্লাহ্র যিকির (স্মরণ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়: “আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে তার জন্য রয়েছে কষ্টের জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠাব।”(সূরা ত্বহা,২০: ১২৪) অবাধ্যতা ও বিমুখতা যত তীব্র হবে কষ্ট ও সংকট তত তীব্র হবে।
.
পাশাপাশি এ কথাও অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে,বর্তমানে অসংখ্য মানুষ জ্বীন সয়তান এবং বদনজরে আক্রান্ত হচ্ছে। সুস্থতার জন্য হসপিটাল ও ডাক্তারের কাছে গিয়ে হাজার-লাখ টাকা খরচ করেও কোনো সুফল আসছে না। এমতাবস্থায় শরিয়সম্মত ঝাড়-ফুঁকের আমল করে দেখাতে পারেন। আজ আমরা ঝাড়-ফুঁকের গুরুত্বপূর্ণ একটি দু’আ তুলে ধরবো যেটা সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা জিব্রাইল (আ:) পাঠ করে রাসূল (ﷺ)-এর ঝাড়-ফুঁক করেছেন। হাদীসটি বর্ননা করেছেন প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ খুদরি (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তিনি বলেন,জিবরাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর কাছে আগমন করেন (তখন রাসূল (ﷺ) জ্বরাক্রান্ত ছিলেন)। জিবরাঈল (আঃ) বলেন, মুহাম্মাদ,আপনি কি অসুস্থ? তিনি বলেন: হ্যাঁ। তখন জিবরাঈল (আঃ) নিচের কথাগুলো বলেন।— দু’আটির মূল আরবি হচ্ছে:
.
যখন কেউ অন্যকে ঝাড়-ফুঁক করবেন, তখন এটি ৩ বার বলবেন ও ঝাড়-ফুঁক করবেন।
.
بِسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْئٍ يُؤْذِيْكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اَللّٰهُ يَشْفِيْكَ بِسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيْكَ
.
মোটামুটি উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আরক্বি-কা, মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুঅ-যি-কা, মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও ‘আইনি হা-সিদিন, আল্লাহু ইয়াশফি-কা, বিসমিল্লাহি আরক্বি-কা।
.
অর্থ: আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাড়-ফুঁক করছি—সেসব বিষয় থেকে, যা তোমাকে কষ্ট দেয়; সকল প্রাণের অনিষ্ট থেকে অথবা হিংসুকের বদনজর থেকে; আল্লাহ তোমাকে শিফা (আরোগ্য) দিন; আল্লাহর নামেই তোমাকে ঝাড়-ফুঁক করছি।
.
আর যখন নিজের ঝাড়-ফুঁক নিজেই করবেন, তখন এভাবে বলবেন—
.
بِسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيْنِيْ، مِنْ كُلِّ شَيْئٍ يُؤْذِيْنِيْ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اَللّٰهُ يَشْفِيْنِيْ، بِسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيْنِيْ
.
মোটামুটি উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আরক্বি-নি, মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুঅ-যি-নি, মিন শাররি কুল্লি নাফস, আও ‘আইনি হা-সিদ, আল্লাহু ইয়াশফি-নি, বিসমিল্লাহি আরক্বি-নি।(আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন, না হয় ভুল শিখতে হবে)
.
অর্থ: আল্লাহর নামে আমার ঝাড়-ফুঁক করছি—সেসব বিষয় থেকে, যা আমাকে কষ্ট দেয়; সকল প্রাণের অনিষ্ট থেকে অথবা হিংসুকের বদনজর থেকে; আল্লাহ আমাকে শিফা (আরোগ্য) দিন; আল্লাহর নামেই আমাকে ঝাড়-ফুঁক করছি।(সহীহ মুসলিম,হা/২১৮৫-২১৮৬ তিরমিজি হা/৯৭২, ইবনে মাজা হা/৩৫২৩, মুসনাদে আহমেদ হা/১১৫৫৭)
.
#নোট: দুটি দু’আ একই রকম। দু’আ দুটির মধ্যে বাক্যগত কোন পার্থক্য নেই, শুধু বর্নের মাঝে সামান্য পার্থক্য রয়েছে আর তা হচ্ছে, নিজের ক্ষেত্রে শেষে “নি” এবং অন্যের ক্ষেত্রে “কা”। আমি দ্বিতীয়টি অনুবাদ করে দিচ্ছি, আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন— .
.
بِسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيْنِيْ
(বিসমিল্লাহি আরক্বি-নি) অর্থ:আল্লাহর নামে আমার ঝাড়-ফুঁক করছি,
.
مِنْ كُلِّ شَيْئٍ يُؤْذِيْنِيْ،
(মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুঅ-যি-নি) অর্থ: সেসকল বিষয় থেকে, যা আমাকে কষ্ট দেয়;
.
مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ
(মিন শাররি কুল্লি নাফস) অর্থ: সকল প্রাণের অনিষ্ট থেকে
.
أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ،
(আও ‘আইনি হা-সিদ) অর্থ: অথবা হিংসুকের বদনজর থেকে;
.
اَللّٰهُ يَشْفِيْنِيْ،
(আল্লাহু ইয়াশফি-নি) অর্থ: আল্লাহ আমাকে শিফা (আরোগ্য) দিন;
.
بِسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيْنِيْ
(বিসমিল্লাহি আরক্বি-নি) অর্থ: আল্লাহর নামেই (আমি) আমাকে ঝাড়-ফুঁক করছি।
.
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত দু’আটি ঝাড়-ফুঁকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দু’আ। যখন রুকইয়া বা ঝাড়-ফুঁক করবেন তখন কুরআনের আয়াত ও দু‘আগুলো পড়ার আগে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন এবং রাসূল (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ করবেন, এরপর আয়াত ও এই দু‘আটি তিনবার পড়বেন,শেষে আবার দরুদ পড়বেন। এই পদ্ধতিটি সাধারণত দু‘আ কবুলের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া, আলেমগন বলেছেন, ঝাড়-ফুঁক অজু অবস্থায়,পাক কোনো স্থানে বসে করা উত্তম, তবে এগুলো জরুরি নয়। বিনা অযুতেও পড়া যায়। ঝাড়-ফুঁককারী ব্যক্তি রোগীর মাথায় অথবা ব্যথার স্থানে হাত রেখে সব আয়াত এবং দু‘আ পড়বেন। পড়ে পড়ে তার দুই হাতের তালু একত্র করে তাতে ফুঁ দিয়ে যথাসাধ্য পুরো শরীর স্পর্শ করবেন। তাই সবার উচিত দু’আটি মুখস্ত করে নেওয়া। আপনারা উপরোক্ত বাক্যগুলোর অর্থ খেয়াল করে, অসুস্থতার সময় নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন অবস্থাকে অন্তরে ধারণ করে দু‘আ কবুলের বিশেষ সময়ে কিংবা যেকোনো দু‘আর মধ্যে পড়তে পারেন। আনুষ্ঠানিক দু‘আ ছাড়াও সাধারণভাবে এসব বাক্য পড়তে পারি। দু’আটি পড়ার সময় অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রাখবেন।আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুক। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।