হিজামার মাধ্যমে চিকিৎসা করার জন্য প্রতিষ্ঠান খোলা এবং হিজামার বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেওয়া যাবে কি

প্রশ্ন: হিজামার মাধ্যমে চিকিৎসা করার জন্য প্রতিষ্ঠান খোলা এবং হিজামার বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেওয়া যাবে কি? কেউ বলে যাবে আবার অনেকে বলছে পারিশ্রমিক নেওয়া যাবেনা। আসলে সঠিক কোনটি?
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: হিজামা (حِجَامَة) একটি নববী চিকিৎসা ব্যবস্থা। এটি আরবী শব্দ ‘আল-হাজম’ থেকে এসেছে। যার অর্থ চোষা বা টেনে নেওয়া। আধুনিক পরিভাষায় Cupping (কাপিং)। হিজামার মাধ্যমে শরীর দূষিত রক্ত (Toxin) বের করা হয়। এতে শরীরের মাংসপেশী সমূহের রক্ত প্রবাহ দ্রুততর হয়। পেশী, চামড়া, ত্বক ও শরীরের ভিতরের অরগান সমূহের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীর সতেজ ও শক্তিশালী হয়। হিজামা বা Wet Cupping অতি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে আরব বিশ্বে জনপ্রিয়। নির্দিষ্ট স্থান থেকে সূঁচের মাধ্যমে নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে (টেনে/চুষে) নিস্তেজ প্রবাহহীন দূষিত রক্ত বের করে আনা হয়। রাসূল (ﷺ) স্বয়ং হিজামা দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন এবং উম্মাহকে হিজামা দ্বারা চিকিৎসা করতে উৎসাহিত করেছেন।
.
▪️হিজামাকে চিকিৎসা পেশা হিসেবে গ্রহন করা এবং এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেওয়ার বিধান কী?
.
হিজামাকে চিকিৎসা পেশা হিসাবে গ্রহণ করা এবং হিজামার বিনিময় অর্থ গ্রহণ করা জায়েজ কিনা এই মাসালায় আহালুল আলেমগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। যেমন: ইমাম আবু হানিফা, ইমাম লাইস ইবনে সা’দ, ইমাম মালিক প্রমুখ বলেন, শিঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা জায়েয (মাকরূহ বা অপছন্দীয় নয়)। পক্ষান্তরে ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ ইমামগণ বলেন, স্বাধীন ব্যক্তিদের জন্য তা মাকরূহ বা অপছন্দীয়। তবে দাসদের জন্য মাকরূহ নয়। উক্ত মাসালায় ইমামগনের মধ্যে মতানৈক্যের কারণ হল: এ বিষয়ে দুই ধরনের হাদীস লক্ষ করা যায়, এজন্য হাদিসগুলো উপলব্ধি কিংবা বুঝের ক্ষেত্রে ইমামগনের মধ্যে মতের ভিন্নতা ছিল। যেমন:
.
(১). যে সকল হাদীসে হিজামার বিনিময়ে উপার্জনকে মাকরূহ বলে বর্ণনা করা হয়েছে তার মধ্যে নিম্নরূপ:
.
রাসূল (ﷺ) শিঙ্গা লাগিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণকে خَبِيثٌ অর্থাৎ ঘৃণ্য বলেছেন। রাফি’ বিন খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুকুর বিক্রয়লব্ধ মূল্য ঘৃণিত বস্তু, যিনা-ব্যভিচারের বিনিময়ও ঘৃণিত, শিঙ্গা লাগানোর (রক্তমোক্ষণের) ব্যবসা ঘৃণিত।(সহীহ মুসলিম হা/১৫৬৮, আবূ দাঊদ হা/ ৩৪২১, তিরমিযী ১২৭৫, আহমাদ ১৫৮২৭, দারিমী ২৬৬৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০৭৭,সহীহ ইবনু হিব্বান হা/ ৫১৫২) অপর বর্ননায় আবূ মাসউদ ‘উকবা ইবনে ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তমোক্ষকের উপার্জন ভোগ করতে নিষেধ করেছেন।(মুসনাদে আহমেদ হা/৭৬৩৫ ইবনু মাজাহ হা/২১৬৫)
. ‏
(২). আবার যেসকল হাদীসের মধ্যে ছাড়ের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে নিম্নরূপ:

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ তায়বা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে শিঙ্গা লাগালেন তখন তিনি তাকে এক সা‘ পরিমাণ খেজুর দিতে আদেশ করলেন এবং তার মালিককে তার দৈনিক পারিশ্রমিকের হার কমিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। (সহীহ বুখারী হা/২১০২,২২১০, ২২৭৭, ২২৮০, ২২৮১, ৫৬৯৬) (আ: প্র: হা/১৯৫৭ ,ই: ফা:হা/১৯৭২) অপর বর্ননায় ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম, (ﷺ) শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং তাকে মজুরী দিয়েছেন। যদি এটি হারাম হ’ত বা তিনি নিকৃষ্ট মনে করতেন, তবে তিনি মজুরী দিতেন না।(সহীহ বুখারী হা/২১০৩; আবুদাঊদ হা/৩৪২৩) আনাস (রাঃ)-কে শিঙ্গাকারীর উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, আবূ ত্বয়বাহ রাসূল (ﷺ)-কে শিঙ্গা লাগিয়ে দিলে তিনি তাকে দুই সা‘ খাদ্য প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।(সহীহ মুসলিম হা/১৫৭৭)। আরেক বর্ননায় ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) জনৈক শিঙ্গাকারীকে ডেকে শিঙ্গা লাগালেন। অতঃপর বললেন, ‘তোমার পারিশ্রমিক কত? সে বলল, তিন “সা”। তিনি এক “সা” পারিশ্রমিক হ্রাস করলেন এবং তার মজুরী দিলেন।(মুখতাছারুশ শামায়েল হা/৩১২,সনদ সহীহ)। অপর বর্ননায় মুহাইয়্যাসাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যে শিঙ্গা লাগায় তার কাজের পারিশ্রমিক ভোগ করার অনুমতি চাইলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে নিষেধ করলেন; তিনি বারবার অনুমতি চাইতে থাকলেন। পরিশেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ওই রোজগার তোমার পানি বহনের উট ও তোমার ক্রীতদাসের খাবারের খাতে ব্যয় কর।(আবূ দাঊদ ৩৪২২,তিরমিযী হা/১২৭৭,ইবনু মাজাহ হা/২১৬৬,সহীহাহ ৪০০০ মিশকাত হা/২৭৭৮)
.
উক্ত হাদীসের আলোকে শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাইয়্যাসাহ্-কে যে এ অর্থ খেতে নিষেধ করলেন- এ নিষেধ দ্বারা হারাম উদ্দেশ্য নয়। যদি তা উদ্দেশ্য হত তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাস ও আযাদের মধ্যে পার্থক্য করতেন না। কেননা যা হালাল নয় সেক্ষেত্রে মুনীবের জন্য বৈধ নয় যে, তা তার দাসকে খাওয়াবে। বরং এ নিষেধ এজন্য ছিল যে, লোকজন এ ধরনের নিম্নমানের পেশা নিজের জন্য বেছে না নিয়ে মর্যাদাপূর্ণ পেশার দিকে অগ্রসর হয়। আর দাসের তো কোনো মর্যাদা নেই। তাই তার পক্ষে এ নিম্নমানের পেশা দ্বারা উপার্জিত খাবার খেতে কোনো সংশয় নেই।(শরহ নববী, উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা আরো দেখুন মিরকাতুল মাফাতীহ হা/২৭৭৮ ব্যাখ্যা দৃষ্টব্য)
.
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত দুই ধরনের হাদীসের মাঝে সমন্বয় করতে গিয়ে জুমহুর বা অধিকাংশ মুহাদ্দিস বলেন, নিষেধের হাদিসগুলো দ্বারা كراهت বা অপছন্দনীয় অর্থ উদ্দেশ্য (হারাম উদ্দেশ্য নয়)। অর্থাৎ এ শিঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা মাকরূহ তথা অছন্দনীয় কাজ; হারাম নয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং তিনি যে ব্যক্তি শিঙ্গা লাগিয়েছে তাকে পারিশ্রমিক দিয়েছেন। (যেমন পূর্বোক্ত হাদিস সমূহ)

মুহাদ্দিসগণ বলেন, শিঙ্গা লাগিয়ে তার পারিশ্রমিক দেয়ার হাদিসগুলোর কারণে কোন কোন আলেম পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত হাদিসগুলোকে মনসুখ বা রহিত হওয়ার দাবি করেন। কিন্তু এ দাবী ঠিক নয়। কারণ রহিত হওয়া তখনি প্রমাণিত হবে যখন হাদিসের তারিখ জানা যাবে যে, কোনটা আগের এবং কোনটা পরের। তারিখ জানা গেলে আগেরটা রহিত হয়ে যাবে পরেরটা দ্বারা। কিন্তু এখানে কোনটা আগের আর কোনটা পরের তা জানা যায় না। অনুরূপভাবে কোন কোন হাদীস বাহ্যত সংঘর্ষিক মনে হলে রহিত হওয়ার বিষয়টি তখন আসবে যখন দুটি হাদিসের মাঝে কোনভাবেই সমন্বয় সাধন করা সম্ভব হয় না। কিন্তু এখানে মুহাদ্দিসগণ সমন্বয় সাধন করেছেন (যা পরের ফাতওয়ায় আমরা দেখব)। সুতরাং আগের হাদিসগুলো রহিত হওয়ার দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেনويجوز أن يستأجر حجاما ليحجمه , وأجره مباح ، وهذا اختيار أبي الخطاب ، وهذا قول ابن عباس . وبه قال مالك والشافعي وأصحاب الرأي . وقال القاضي [أي : أبو يعلى من الحنابلة] : لا يباح أجر الحجام ، وذكر أن أحمد نص عليه في مواضع وقال : أُعطي شيئا من غير عقد ولا شرط فله أخذه ويصرفه في علف دوابه وطعمة عبيده ومؤنة صناعته ولا يحل له أكله ، وممن كره كسب الحجام عثمان وأبو هريرة والحسن والنخعي وذلك لأن النبي صلى الله عليه وسلم قال : ( كسب الحجام خبيث ) رواه مسلم وقال عن أجرة الحجام : ( أطعمه ناضحك ( أي : البعير ) ورقيقك ) رواه أحمد والترمذي (1277) وصححه الألباني في صحيح الترمذي .ويدل على أنه مباح وليس حراماً : ما روى ابن عباس قال : ( احتجم النبي صلى الله عليه وسلم وأعطى الحجام أجره ولو علمه حراما لم يعطه ) متفق عليه . وفي لفظ : ( لو علمه خبيثا لم يعطه ) ، وقول النبي صلى الله عليه وسلم في كسب الحجام : ( أطعمه رقيقك ) دليل على إباحة كسبه ؛ إذ غير جائز أن يُطعم رقيقه ما يحرم أكله ، فإن الرقيق آدميون يحرم عليهم ما حرمه الله تعالى كما يحرم على الأحرار ، وتسميته كسبا خبيثا لا يلزم منه التحريم فقد سمى النبي صلى الله عليه وسلم الثوم والبصل خبيثين مع إباحتهما .وإنما كره النبي صلى الله عليه وسلم ذلك للحر تنزيها لدناءة هذه الصناعة . وأمرُه صلى الله عليه وسلم بإطعام الرقيق منها دليل على الإباحة ، فيتعين حمل نهيه عن أكلها على الكراهة دون التحريم

হিজামার চিকিৎসার জন্য একজন ব্যক্তি ভাড়া করা জায়েয এবং হিজামার বিনিময়ে তার উপার্জনও জায়েয।এটি ইবনু ওমর ইবনু আববাস,আনাস বিন মালেক,ইমাম শাফাঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতামত। হাম্বলি মাযহাবের প্রখ্যাত আলেম আল-কাদ্বি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: হিজামার বিনিময়ে মজুরি গ্রহন করা জায়েজ নয়, এবং তিনি উল্লেখ করেছেন যে ইমাম আহমদ (রাহিমাহুল্লাহ) একাধিক জায়গায় এটি উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন: যদি হিজামাকারীকে (আনুষ্ঠানিক) চুক্তি বা শর্ত ছাড়াই কিছু দেওয়া হয়,তাহলে সে তা গ্রহণ করতে পারে এবং তার পশুদের খাওয়ানোর জন্য বা তার ক্রীতদাসদের খাওয়ানোর জন্য বা তার ব্যবসার সরঞ্জামগুলিতে এটি ব্যবহার করতে পারে, তবে তার নিজের জন্য এটি খাওয়া জায়েয নয়। যারা হিজামার বিনিময়ে উপার্জন করা মাকরূহ মনে করতেন তাদের মধ্যে ছিলেন উসমান (রা;) আবু হুরায়রা (রা:), হাসান বসরি এবং ইমাম নাখায়ী (রাহিমাহুল্লাহ)। কারন রাসূল (ﷺ) শিঙ্গা লাগিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণকে خَبِيثٌ অর্থাৎ ঘৃণ্য বলেছেন।(সহীহ মুসলিম হা ১৫৬৮) অপর বর্ননায় মুহাইয়্যিসা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি রক্তক্ষরণের মজুরি নেওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অনুমতি চাইলে তিনি তাকে তা নিতে নিষেধ করেন। তিনি তার নিকট বারবার কাকুতি-মিনতি করতে থাকলেন। অবশেষে তিনি বললেনঃ এই আয় তোমার পানি বহনকারী উট এবং তোমার গোলামের খাবারের জন্য খরচ কর।(তিরমিজি হা/১২৭৭ ইবনু মা-জাহ হা/২১৬৬)
.
তবে ইবেন আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া যায়,যে হিজামার বিনিময়ে অর্থ গ্রহন করা জায়েয এটি হারাম নয়। তিনি বলেছেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হিজামা দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছিল এবং তিনি তাকে মজুরী দিয়েছেন। যদি এটি হারাম হ’ত বা তিনি নিকৃষ্ট মনে করতেন, তবে তিনি মজুরী দিতেন না।অন্য বর্ননা অনুযায়ী:“যদি তিনি তা অপছন্দ করতেন তবে তাকে (পারিশ্রমিক) দিতেন না।”[ সহীহ বুখারী – ২১৩৫ ] হিজামার বিনিময়ে উপার্জন সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেন: এই আয় তোমার গোলামের খাবারের জন্য খরচ কর।(তিরমিজি হা/১২৭৭) এই হাদীস ইঙ্গিত করে যে তার উপার্জন জায়েজ, কারণ তার জন্য তার দাসদেরকে এমন খাবার খাওয়ানো জায়েয নয় যা খাওয়া হারাম।কেননা দাসরা মানুষ,আর আল্লাহ যে জিনিসগুলো হারাম করেছেন সেগুলো তাদের জন্যও হারাম যেমন স্বাধীন ব্যক্তিদের জন্য হারাম।সুতরাং এটাকে খাবীত (খারাপ) উপার্জন বলার অর্থ এই নয় যে এটা হারাম, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রসুন ও পেঁয়াজকে হাদীসে খাবীত বলেছেন যদিও এগুলো জায়েজ। বরং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বাধীন ব্যক্তির জন্য এটা অপছন্দ করতেন কারণ এই ধরনের কাজ একজন স্বাধীন মানুষের জন্য শোভনীয় নয়। আর এটা খাওয়ার নিষেধের অর্থ হল এটা মাকরূহ,হারাম নয়।(ইবনে কুদামাহ আল মুগনি খন্ড; ৬ পৃষ্ঠা: ১৩৩)
.
আধুনিক যুগের বড় আলমগণ যেমন,ইমাম বিন বায,ইমাম উসাইমীন,ইমাম সালেহ আল ফাওযান, ও ইমাম আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদ (রাহিমাহুমুল্লাহ) প্রমুখ সকলেই হিজামা বা শিঙ্গা লাগানোকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করাকে অপছন্দ করেছেন,কারণ এই কাজটি মজুরী ছাড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, যাতে এর মাধ্যমে তার মুসলিম ভাইকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করার মাধ্যমে অধিক সওয়াব অর্জন করতে পারে তবে মানুষের প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে এর মাধ্যম উপার্জিত অর্থকে বৈধ হিসেবে ফাতওয়া প্রদান করেছেন যা পূর্ববর্তী অধিকাংশ আলেমদের ফতোয়ার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। বিস্তারিত দেখতে পারেন উসাইমীন লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১৭/১৮৯শরহ বুলুগুল মারাম হা/৯১০)।
.
পরিশেষে বলব, কেউ যদি বিনা পরিশ্রমিকে মানুষের উপকারের উদ্দেশ্যে হিজামা বা শিঙ্গা লাগায় তাতে তিনি সওয়াব পাবেন। কিন্তু পেশা হিসেবে এটি অপছন্দনীয় ও নিম্নশ্রেণীর পেশা। কিন্তু তারপরেও যদি কেউ প্রয়োজনে জীবিকা অবলম্বনের উপায় হিসেবে হিজামাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে এবং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে তাহলে তা নিষিদ্ধ নয় বরং জায়েয রয়েছে ইনশাআল্লাহ। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
____________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।