রুকিয়াহ

প্রশ্ন: রুকিয়াহ শব্দের অর্থ কী? রুকিয়াহ করার আগে বা পরে কি রুকিয়াহকারী অর্থ নিতে পারবে? যদি রোগী সুস্থ না হয় এ ব্যাপারে বিধান কি? অর্থাৎ অর্থ প্রদান করার ক্ষেত্রে রোগীর সুস্থ হওয়ার কি কোন শর্ত করা যাবে? মানুষের উপকার ও কল্যাণের জন্য রুকিয়াহ তথা ঝাড়-ফুঁক চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার বিধান কী?
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ঝাড়-ফুঁককে আরবীতে ‘রুকা’ বলা হয়, যা ‘রুকিয়াহ’ শব্দের বহুবচন। রুকিয়াহ হলো; ঝাড়-ফুঁক ব্যবহার করে জ্বর, বিষাক্ত কিছুর দংশন, বেহুশ হওয়া ইত্যাদি রোগ ব্যাধি নিরাময় বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য যার দ্বারা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রর্থনা করা হয় এবং আরোগ্যের জন্য রোগীকে ফুঁক দেওয়া হয়। ইব্রাহীম মাদকূর (রহ:) বলেন, العوذة التي يرقى بها المريض ونحوه ‘এমন আশ্রয় যা দ্বারা রোগী ও অনুরূপ কোন অসুস্থকে ঝাঁড়া হয়।’ ইবনু মানযূর (রহ:) বলেন, الرُّقية يُرْقى بها الإِنسان من فزع أَو جنون ‘রুক্বিয়াহ হলো এমন বিষয় যা দ্বারা মানুষকে ঝাড়া হয় ভয় বা উন্মাদনা থেকে।’ (লিসানুল আরব,খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ৪৯৮)
.
ঝাড়-ফুঁক শরীআত সম্মত একটি প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা। যা রাসূল (ﷺ)-এর আর্বিভাবের বহু পূর্ব হতে চালু রয়েছে। জাহেলী যুগে আরবরাও বিভিন্ন রোগ, বদ নযর ও অশুভ জিনিসের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য ঝাড়-ফুঁক করত। যখন ইসলামের প্রচার-প্রসার শুরু হলো তখন নবী (ﷺ) এ সম্পর্কে প্রশ্নের সম্মুখীন হলেন। তাতে তিনি কতক ঝাড়-ফুঁককে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিলেন, আবার কতক ঝাড়-ফুঁককে অবৈধ বলে ঘোষণা করলেন। সুতরাং কোন ব্যক্তি নিজে নিজেকে ঝাড়ফুঁক করতে কোন বাধা নেই। যেহেতু সেটা করা তার জন্য মুবাহ (বৈধ); বরং উত্তম সুন্নত। এমনকি অন্য কারো মাধ্যমে বৈধ উপায়ে ঝাড়-ফুঁক কারাতেও কোন আপত্তি নেই। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে নিজেকে ঝাড়ফুঁক করেছেন এবং তিনি তাঁর কোন কোন সাহাবীকেও ঝাড়ফুঁক করেছেন। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন অসুস্থতা অনুভব করতেন তখন তিনি নিজের উপর মুআওয়িযাত (আশ্রয়ণীয় সূরাগুলো) পড়ে ফুঁ দিতেন। যখন তাঁর ব্যথা তীব্র হল তখন আমি পড়ে তাঁকে ফু দিতাম এবং তাঁর হাত দিয়ে মাসেহ করতাম; তাঁর হাতের বরকতের আশায়।(সহিহ বুখারী হা/৪৭২৮ ও সহিহ মুসলিম হা/২১৯২)
.
▪️শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে ঝাড়-ফুঁক দু’প্রকার।
(ক). বৈধ ঝাড়-ফুঁক। (খ). অবৈধ ঝাড়-ফুঁক।

(১). বৈধ বা জায়েয ঝাড়-ফুঁক: শির্ক মুক্ত ঝাড়-ফুঁক যেমন: (১). কুরআনের আয়াত এবং আল্লাহর সুন্দর নাম সমূহ ও গুণাবলী দ্বারা ঝাড়-ফুঁক (২). সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত যিকির-আযকার ও দো‘আ সমূহ দ্বারা ঝাড়-ফুঁক। এটি তিনটি শর্তে জায়েয হবে; (ক). শরীয়তসম্মত আরবী বাক্য দ্বারা বোধগম্য অথবা বৈধ দো‘আর সঠিক ভাবার্থ পাঠ দ্বারা। (খ). আল্লাহর কালাম, আল্লাহর নাম ও গুণ দ্বারা অথবা নবী (ﷺ)-এর হাদীসে উল্লিখিত বাক্য দ্বারা। (গ). যিনি ঝাড়-ফুঁক করবেন এবং যাকে ঝাড়-ফুঁক করা হবে উভয়ে এ বিশ্বাস রাখবেন যে, ঝাড়-ফুঁকের নিজস্ব কোন কার্যকারিতা নেই। বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টির প্রভাবাধীন।
.
(২). অবৈধ বা নাজায়েয ঝাড়-ফুঁক:- পূর্বোক্ত পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো পন্থার ঝাড়-ফুঁক করা নাজায়েয। যেমন: শিরকী কথা, অস্পষ্ট বাক্য, কারো বানানো এমন মন্ত্র দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা, যার অর্থ বুঝা যায় না। যেমনভাবে জাহেলী যুগে করা হতো। এ প্রকার মন্ত্র দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা হারাম এবং এসব হতে দূরে থাকা ওয়াজিব। কেননা ইসলাম পরিপন্থী কথা ও কার্যাবলীর মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক করা নিষেধ।
.
▪️রুকইয়াহ করার আগে বা পরে কি রুকিয়াহকারী অর্থ নিতে পারবে?
.
একজন ব্যক্তি যদি শরীয়ত সম্মত ভাবে কুরআন হাদীসের আলোকে রুকিয়াহ করে যা মানুষদের জন্য সত্যিই প্রয়োজন তাহলে এর বিনিময়ে অর্থগ্রহণ কিংবা অর্থ প্রদানে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন আপত্তি নেই।
আল মাওসুয়াতুল ফিক্বহিয়্যাহতে এসেছে,”ذَهَبَ جُمْهُورُ الْفُقَهَاءِ إِلَى جَوَازِ الْجُعْل عَلَى الرَّقْيِ অর্থাৎ জমহুর ফুকাহাদের মতে রুকিয়াহ করে অর্থ গ্রহণ করা জায়েজ। (আল মাওসুয়াতুল ফিক্বহিয়্যাহ: খন্ড: ২৩ পৃষ্টা: ৯৮)। তবে রুকিয়াহতে জাদু-টোনা, সাধু-সন্নাসী, গনক, ও বিদআতীদের সর্বপ্রকার বাজে কর্মকাণ্ড,
কুসংস্কার এবং বিভ্রান্তি থেকে দূরে থাকতে হবে। টেপরেকর্ডার, মাইক এবং টেলিফোনের মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক করা যাবে না। কেননা বৈধ উপায়ে ঝাড়-ফুঁক করা ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত; যে কোনো কাজ-কর্ম,ইবাদাত বন্দেগী শরীয়ত নির্ধারিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা অপরিহার্য। রুকিয়াহ করে টাকা পয়সা গ্রহণ করা জায়েজ এই মর্মে দলিল হচ্ছে আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন; আমরা এক সফরে এক জায়গায় অবতরণ করলাম। সেখানে একটি মেয়ে এসে বলল, এ গ্রামের প্রধানকে সাপে দংশন করেছে, তোমাদের মধ্যে কেউ কি ঝাঁড়-ফুঁক করার মত আছে? তখন মেয়েটির সাথে এক ব্যক্তি গিয়ে তাকে ঝাঁড়-ফুঁক করে এলো, আমরা তাকে ঝাঁড়-ফুঁক জানে বলে মনে করতাম না। এতে গ্রাম প্রধান আরোগ্য লাভ করেন। ফলে সে তাকে ত্রিশটি বকরী উপহার দিল এবং আমাদেরকে দুধ পান করাল। আমাদের সঙ্গীকে আমরা বললাম তুমি কি ভালো ঝাঁড়-ফুঁক করতে জান? সে বলল, আমি শুধু উম্মুল কুরআন দ্বারা ফুঁক দিয়েছি। আমরা সবাইকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছে জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত তোমরা এগুলোকে কিছু কর না। অতঃপর মদীনা পৌঁছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সব কথা খুলে বললাম। তিনি বললেন, সে কিভাবে জানলো যে- এটি একটি ঝাঁড়-ফুঁক করার বস্তু! তোমরা এগুলো বন্টন করে নাও এবং আমাকে তোমাদের সাথে এক ভাগ দিও। (সহীহ বুখারী হা/২২৭৬; সহীহ মুসলিম হা/২২০১)
.
উক্ত হাদীসের আলোকে শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, هَذَا تَصْرِيح بِجَوَازِ أَخْذ الْأُجْرَة عَلَى الرُّقْيَة بِالْفَاتِحَةِ وَالذِّكْر , وَأَنَّهَا حَلَال لَا كَرَاهَة فِيهَا সূরা ফাতিহা এবং অন্যান্য দুয়ার মাধ্যমে রুকিয়াহ করার জন্য পারিশ্রমিক নেওয়া অর্থাৎ অর্থ গ্রহণ করা জায়েজ। এটা হালাল; মাকরুহ নয়। (নববী শরহে সহিহ মুসলিম; খন্ড: ১৪ পৃষ্ঠা: ১৮৮)
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন; لَا بَأْسَ بِجَوَازِ أَخْذِ الْأُجْرَةِ عَلَى الرُّقْيَةِ ، وَنَصَّ عَلَيْهِ أَحْمَدُ রুকিয়াহ করার জন্য অর্থ গ্রহণ করাতে কোন সমস্যা নাই অর্থাৎ জায়েজ। এ বিষয়ে ইমাম আহমাদের নস রয়েছে। (ইবনে তাইমিয়া ফাতাওয়া আল-কুবরা; খন্ড: ৫ পৃষ্ঠা: ৪০৫ )
.
রুহায়বানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন; وَلَا يَحْرُمُ أَخْذُ الْأُجْرَةِ عَلَى رُقْيَةٍ , نَصَّ عَلَيْهِ الْإِمَامُ أَحْمَدُ رحمه الله تعالى , وَاخْتَارَ جَوَازَهُ ، وَقَالَ : لَا بَأْسَ بِهِ ، لِحَدِيثِ أَبِي سَعِيدٍ রুকিয়াহ করার জন্য অর্থ নেওয়া হারাম নয়। এ বিষয়ে ইমাম আহমদের নস রয়েছে। তিনি এটাকে জায়েজ বলে মন্তব্য করেছেন এবং আবু সাঈদ (রা.)-এর হাদিসের ভিত্তিতে বলেছেন এটা অর্থাৎ অর্থ নেওয়াতে কোনো দোষ নেই। (মাতালিব আওলান নাহি; খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ৬৩৯)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]) -কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল; আমরা এমন কিছু লোকের কথা শুনেছি যারা কুরআনের মাধ্যমে অন্যদের চিকিৎসা করে,তারা জাদুবিদ্যা, কুদৃষ্টি এবং পাগলামি (শয়তানের স্পর্শ) এর প্রতিকার হিসাবে পানি বা জলপাই তেলের উপর শরীয়তে নির্দেশিত কোরআন এবং দুআ পাঠ করে এবং এর বিনিময়ে তারা টাকা- পয়সা পায়। এটা কি শরীয়ত অনুযায়ী জায়েয? পানি বা অলিভ অয়েলের উপর তেলাওয়াত করা কি অসুস্থ ব্যক্তির উপর তেলাওয়াত করার মতো একই হুকুমের আওতায় আসবে?
.
তিনি জবাব দিলেন; لا حرج في أخذ الأجرة على رقية المريض ، لما ثبت في الصحيحين ( أن جماعة من الصحابة رضي الله عنهم وفدوا على حي من العرب فلم يقروهم ( أي : لم يضيفوهم ) ولدغ سيدهم وفعلوا كل شيء ؛ لا ينفعه , فأتوا الوفد من الصحابة رضي الله عنهم فقالوا لهم : هل فيكم من راق فإن سيدنا قد لدغ ؟ فقالوا : نعم , ولكنكم لم تقرونا فلا نرقيه إلا بجُعْلٍ ( أي : أجرة ) فاتفقوا معهم على قطيع من الغنم , فرقاه أحد الصحابة بفاتحة الكتاب فشفي فأعطوهم ما جعل لهم فقال الصحابة فيما بينهم : لن نفعل شيئا حتى نخبر النبي صلى الله عليه وسلم فلما قدموا المدينة أخبروه صلى الله عليه وسلم بذلك فقال : قد أصبتم ) ولا حرج في القراءة في الماء والزيت في علاج المريض والمسحور والمجنون ، ولكن القراءة على المريض بالنفث عليه أولى وأفضل وأكمل ، وقد خرج أبو داود رحمه الله بإسناد حسن أن النبي صلى الله عليه وسلم قرأ لثابت بن قيس بن شماس في ماء وصبه عليه . وقد قال النبي صلى الله عليه وسلم : ( لا بأس بالرقى ما لم تكن شركا) وهذا الحديث الصحيح يعم الرقية للمريض على نفسه وفي الماء والزيت ونحوهما ، والله ولي التوفيق অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রুকিয়াহ পাঠ করার জন্য অর্থ গ্রহণে কোন দোষ নেই, কারণ আল-সহীহাইন গ্রন্থে প্রমাণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একদল সাহাবী এক সফরে বের হন এবং এক পর্যায়ে তারা আরব গোত্রগুলির একটি গোত্রের কাছাকাছি পৌঁছে যাত্রা বিরতি করলেন (এই লোকেরা হয় কাফির ছিল বা খুব কৃপণ ছিল, যেমনটি ইবনুল কাইয়িম তার মাদারিজুস সালেকীনে উল্লেখ করেছেন)। তারা মহল্লার লোকদের কাছে মেহমানদারির আবদার করলেন। তারা মেহমানদারি করতে অস্বীকৃতি জানাল। ইতোমধ্যে মহল্লার সর্দারকে কোন কিছু কামড় দিল। তাকে সুস্থ করার জন্য তারা সব ধরণের চেষ্টা চালাল; কিন্তু কোন কাজ হলো না। অবশেষে তাদের একজন বলল; এখানে যারা যাত্রা বিরতি করেছে আমরা তাদের কাছে যাই, হতে পারে তাদের কারো কাছে কোন কিছু থাকতে পারে। প্রস্তাবমত তারা এসে বলল; ওহে কাফেলা! আমাদের সর্দারকে কিছু একটা কামড় দিয়েছে। আমরা সব চেষ্টা করেছি; কাজে আসেনি। তোমাদের কারো কাছে কি কিছু আছে? সাহাবীদের একজন বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ! হ্যাঁ। আমি ঝাড়ফুঁক করি। তবে আমরা তোমাদের কাছে মেহমানদারির আবদার করেছি, কিন্তু তোমরা আমাদের মেহমানদারি করনি। আল্লাহ্‌র কসম! আমি ঝাড়ফুঁক করব না; যদি না তোমরা আমাদের জন্য কোন সম্মানি নির্ধারণ না কর। অবশেষে একপাল মেষ দেওয়ার ভিত্তিতে উভয় পক্ষ একমত হলো। সেই সাহাবী গিয়ে الحمد لله رب العالمين (তথা সূরা ফাতিহা) পড়ে তার গায়ে থুথুসমেত ফুঁ দিতে লাগলেন। এক পর্যায়ে সর্দার লোকটি যেন বন্ধন থেকে মুক্ত হলো, সে উঠে হাঁটা শুরু করল, যেন তার কোন রোগ নাই। বর্ণনাকারী বলেন; মহল্লাবাসী যে সম্মানি দেওয়ার চুক্তি করেছিল সেটা তাদেরকে প্রদান করল। তখন এক সাহাবী বললেন; বণ্টন করে ফেল। কিন্তু ঝাড়ফুঁককারী সাহাবী বললেন; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে যা ঘটেছে সেটা বর্ণনা করার আগে বণ্টন করবে না। আমরা দেখি, তিনি আমাদেরকে কী নির্দেশ দেন। তারা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসার পর তাঁকে ঘটনাটি জানাল। তখন তিনি বললেন; কীসে তোমাকে জানাল যে, এটি (সূরা ফাতিহা) ঝাড়ফুকের উপকরণ (রুকিয়াহ)। এরপর বললেন; তোমরা ঠিকই করেছ। (সহিহ বুখারী হা/২১৫৬ ও সহিহ মুসলিম হা/২২০১)। যার উপর মন্ত্র করা হয়েছে বা যে পাগল হয়ে গেছে এমন অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য পানি বা অলিভ অয়েলের উপর তেল পড়াতে কোন দোষ নেই, তবে রোগীর উপর তেলাওয়াত করা এবং তার উপর ফুঁ দেওয়া উত্তম ও পছন্দনীয়। আবু দাউদ (রহঃ) একটি হাসান সনদ সহ বর্ণনা করেছেন, যে একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবিত ইবনু কায়িস ইবনু সাম্মাসের জন্য পানির উপর তেলাওয়াত করেছিলেন এবং তার উপর ঢেলে দিয়েছিলেন। (আবু দাউদ হা/৩৮৮৫)। এবং রাসূল (ﷺ) বলেছেন; যেসব ঝাড়ফুঁক শির্কের পর্যায়ে পড়ে না, তাতে কোনো দোষ নেই। (সহীহ মুসলিম হা/৪০৭৯)। এই সহীহ হাদীসটি সাধারণ অর্থে এবং এতে রোগীর নিজের উপর রুকিয়াহ পাঠ করা এবং পানি ও অলিভ অয়েল ইত্যাদির উপর রুকিয়াহ পাঠ করা অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহই ভাল জানেন। (ইমাম বিন বায রাহিমাহুল্লাহ, মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/১৯; পৃষ্ঠা: ৩৩৮)
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণকে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যিনি অর্থের বিনিময়ে মানুষের জন্য রুকিয়াহ করেছেন এবং তিনি নবী (ﷺ) থেকে প্রমাণিত ব্যতীত আর কিছুই জানতেন না এবং তিনি এ বিষয়ে বিশ্বস্ত আলেমদের কিতাব উল্লেখ করেছেন।
.
স্থায়ী কমিটির আলেমগন উত্তরে বলেন; যদি পরিস্থিতি এমন হয় যা আপনি বর্ণনা করেছেন এবং আপনি অসুস্থদের সাথে শরীয়তে নির্ধারিত রুকইয়াহের সাথে চিকিৎসা করেন এবং আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত ব্যতীত অন্য কোন রুকিয়াহ পাঠ করেন না এবং আপনি ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) তার সুপরিচিত গ্রন্থসমূহে যা বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম ইবনুল কাইয়িম আল-জাওযিয়াহ তার যাদুল মাআদ এবং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুরূপ অন্যান্য বইয়ে যা লিখেছেন,তাহলে আপনার কাজটি জায়েজ।এবং আপনার প্রচেষ্টা প্রশংসিত। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আপনাকে পুরস্কৃত করবেন। এবং আপনার প্রশ্নে আবু সাঈদ আল-খুদরির যে হাদিসটি আপনি উল্লেখ করেছেন এবং এর জন্য আপনার অর্থ গ্রহণে কোন ভুল নেই। (ফাতওয়া ল-লাজনাতুদ দাইমাহ এবং ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৬০১৬২)
.
▪️যদি রোগী সুস্থ না হয় এ ব্যাপারে বিধান কি? অর্থাৎ অর্থ প্রদান করার ক্ষেত্রে রোগীর সুস্থ হওয়ার কি কোন শর্ত করা যাবে?
.
মানুষের উপকার ও কল্যাণের জন্য ঝাড়-ফুঁক করে একজন ব্যক্তির জন্য রুকইয়াহ করার বিনিময়ে কিছু (অর্থ) নেয়া এবং প্রয়োজনের শর্তারোপ করা জায়েয। সুতরাং যে ব্যক্তি রুকইয়াহ করবে তার কাছে রুকিয়াহ করার জন্য অর্থ নেওয়ার শর্ত করা যাবে। এটি পারিশ্রমিকের অন্তর্ভুক্ত হবে। শরীয়তের কোন কিছু পরিবর্তন করা ছাড়াই এটা করলে তার পারিশ্রমিক সে পাবে। কেননা পরিশ্রমের (কাজের) পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েজ। তবে যদি ডাক্তার সুস্থ হওয়ার শর্ত দেয়, তাহলে সুস্থ না হলে অর্থ গ্রহণ করা তার জন্য উচিত নয়।কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিমদের একে অপরের সাথে সন্ধি স্থাপন করা জায়েয। কিন্তু বৈধকে অবৈধ অথবা অবৈধকে বৈধ করার মতো সন্ধি চুক্তি জায়েয নেই। মুসলিমগণ তাদের একে অপরের মধ্যে স্থিরকৃত শর্তাবলি মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু হালালকে হারাম অথবা হারামকে হালাল করার মতো শর্ত বৈধ নয় (তা বাতিল বলে গণ্য হবে)’ (তিরমিযী, হা/১৩৫২; ইবনু মাজাহ, হা/২৩৫৩)। তাছাড়া ছাহাবায়ে কেরাম এক সফরে ছিলেন। তখন উক্ত এলাকার গোত্রপতিকে বিচ্ছুতে দংশন করলে তারা ঝাড়-ফুঁকের বিনিময়ে একপাল বকরীর শর্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটার বৈধতাও দিয়েছিলেন (সহীহ বুখারী, হা/২২৭৬)।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন; قَالَ ابْنُ أَبِي مُوسَى : لَا بَأْسَ بِمُشَارَطَةِ الطَّبِيبِ عَلَى الْبُرْءِ ; لِأَنَّ أَبَا سَعِيدٍ حِينَ رَقَى الرَّجُلَ , شَارَطَهُ عَلَى الْبُرْءِ ، وَالصَّحِيحُ إنْ شَاءَ اللَّهُ أَنَّ هَذَا يَجُوزُ , لَكِنْ يَكُونُ جَعَالَةً لَا إجَارَةً , فَإِنَّ الْإِجَارَةَ لَا بُدَّ فِيهَا مِنْ مُدَّةٍ , أَوْ عَمَلٍ مَعْلُومٍ , فَأَمَّا الْجَعَالَةُ , فَتَجُوزُ عَلَى عَمَلٍ مَجْهُولٍ , كَرَدِّ اللُّقَطَةِ وَالْآبِقِ , وَحَدِيثُ أَبِي سَعِيدٍ فِي الرُّقْيَةِ إنَّمَا كَانَ جَعَالَةً , فَيَجُوزُ هَاهُنَا مِثْلُهُ ইবনে আবু মুসা বলেছেন, সুস্থ হওয়ার বিষয়ে ডাক্তারের সাথে চুক্তি করাতে কোন ক্ষতি নেই। কারণ আবু সাঈদ খুদরি (রা:) যখন লোকটির উপর রুকিয়াহ করেছিলেন, তখন তিনি তাকে শর্ত দিয়েছিলেন। ইনশাআল্লাহ এটা করাতে কোনো সমস্যা নাই। এটা পারিশ্রমিক হবে কিন্তু ইজারা হবে না। কারণ ইজারাটির মাঝে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট সময়কাল এবং নির্দিষ্ট কাজ হতে হবে৷ আর পারিশ্রমিক বা পুরস্কারের জন্য অনির্দিষ্ট কাজ হয়ে থাকে। আবু সাঈদ খুদরি (রা:)-এর রুকিয়াহর ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক বা পুরস্কার ছিল ফলে এটা জায়েজ। (ইবনে কুদামাহ আল মুগনী; খন্ড: ৫ পৃষ্ঠা: ৩১৪, হাশিয়াতুশ সাবী; খন্ড: ৯ পৃষ্ঠা: ৯৮ )
.
অপরদিকে যদি ডাক্তার সুস্থ হওয়ার শর্ত দেয়, তাহলে সুস্থ না হলে অর্থ গ্রহণ করা তার জন্য উচিত নয়। এই মর্মে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ)বলেন;
إذَا جَعَلَ لِلطَّبِيبِ جُعْلًا عَلَى شِفَاءِ الْمَرِيضِ جَازَ كَمَا أَخَذَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِينَ جُعِلَ لَهُمْ قَطِيعٌ عَلَى شِفَاءِ سَيِّدِ الْحَيِّ ، فَرَقَاهُ بَعْضُهُمْ حَتَّى بَرِئَ فَأَخَذُوا الْقَطِيعَ ؛ فَإِنَّ الْجُعْلَ كَانَ عَلَى الشِّفَاءِ لَا عَلَى الْقِرَاءَةِ
অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থ হয়ে যাওয়ার উপর ভিত্তি করে ডাক্তারকে পুরস্কার বা হাদিয়া দেওয়া বা গ্রহণ করা জায়েজ যেমনভাবে সাহাবীরা গ্রহণ করেছিলেন। যারা গোত্রের নেতাকে সুস্থ করার কারণে তাদেরকে একটি ছাগলের পাল দেওয়া হয়েছিল। তবে তারা সুস্থ হওয়ার জন্য এই পুরস্কারটি নিয়েছিলেন কিন্তু সূরা ফাতিহা বা অন্যান্য দোয়া পাঠ করার জন্য নেননি।(মাজমুউল ফাতাওয়া, খন্ড: ২০ পৃষ্ঠা: ৫০৭)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ) এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখ আবদুল্লাহ ইবনে জিবরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি.] বলেন; لا مانع من أخذ الأجرة على الرقية الشرعية بشرط البراءة من المرض وزوال أثره অসুস্থ থেকে সুস্থ হওয়া বা না হওয়ার শর্তে শরয়ী রুকইয়াহর জন্য অর্থ নিতে কোন আপত্তি নেই।
.
সুতরাং উক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, রুকিয়ার জন্য অর্থ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন দোষ নেই। এর দুটি রূপ রয়েছে। (১). প্রথমত: এটি একটি হাদিয়া/পারিশ্রমিক। রোগী সুস্থ হোক আর নাই হোক যে রুকিয়াহ করবে তাকে তার মজুরি দিতে হবে। উভয়ে মিলে সমাধান করে।(অর্থাৎ তারা উভয় যে বিষয়ে সম্মত হবে) তাকে তা কাজের আগে কিংবা পরে দেওয়া যাবে। (২). দ্বিতীয়ত: এটা একটা পুরষ্কার। যা রোগী সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তার পারিশ্রমিক গ্রহণ করা উচিত নয়।
.
তবে জেনে রাখা ভালো যে, রুকিয়াহকারী ব্যক্তির উচিত কুরআন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী শরীয়ত সম্মতভাবে রুকিয়াহ করা। যার মাঝে কোন বিদআত এবং শিরক প্রবেশ করবে না। তাতে নিয়ত পরিশুদ্ধ করতে হবে এবং সর্বপ্রকার বাজে কর্মকাণ্ড, কুসংস্কার এবং বিভ্রান্তি থেকে দূরে থাকতে হবে। টেপরেকর্ডার, মাইক কিংবা দূর থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক করা যাবে না। কেননা বৈধ উপায়ে ঝাড়-ফুঁক করা ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত। যে কোনো কাজ-কর্ম, ইবাদাত-বন্দেগী শরীয়ত নির্ধারিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা অপরিহার্য। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবাদের অনুসরণের মধ্যে বহুবিধ কল্যাণ নিহিত। পাশাপাশি এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, ডাক্তার বা রুকিয়াফকারী কাউকে সুস্থ করতে পারে না বরং আল্লাহ তাআলা সুস্থ করেন।যেমন মহান আল্লাহ বলেন, وَ اِذَا مَرِضۡتُ فَهُوَ یَشۡفِیۡنِ
অর্থ: এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই (আল্লাহ) আমাকে আরোগ্য দান করেন।(সূরা শুয়ারা:২৬/৮০) একটি সুপ্রসিদ্ধ হাদীস যেমন:- বালক এবং যাদুকরের হাদিসে বলা হয়েছে। বাদশাহ পরিষদবর্গের এক লোক অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারা এক যুবকের সংবাদ শুনতে পেয়ে বহু হাদিয়া ও উপঢৌকন নিয়ে তার নিকট আসলো এবং তাকে বলল, তুমি যদি আমাকে আরোগ্য দান করতে পার তবে এসব মাল আমি তোমাকে দিয়ে দিব। এ কথা শুনে যুবক বলল, আমি তো কাউকে আরোগ্য দান করতে পারিনা। আরোগ্য তো দেন আল্লাহ তা‘আলা। তুমি যদি আল্লাহর উপর ঈমান আনো তবে আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করব, আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। তারপর সে আল্লাহর উপর ঈমান আনলো। আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে রোগ মু্ক্ত করে দিলেন। (সহীহ মুসলিম হা/৭৪০১)। অপর বর্ননায় আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোন রোগীর কাছে আসতেন কিংবা তাঁর নিকট যখন কোন রোগীকে আনা হত, তখন তিনি বলতেন; أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا ‏”‏‏.‏ কষ্ট দূর করে দাও। হে মানুষের রব, আরোগ্য দান কর, তুমিই একমাত্র আরোগ্যদানকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া অন্য কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দান কর যা সামান্যতম রোগকেও অবশিষ্ট না রাখে। (সহীহ বুখারী হা/৫৭৪৩, ৫৭৪৪, ৫৭৫০; সহীহ মুসলিম ৩৯/১৯, হা/২১৯১, আহমাদ ২৪২৩০)। উক্ত হাদীসের আলোকে হাফিজ ইবনে হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন; [ فيه ] إِشَارَة إِلَى أَنَّ كُلّ مَا يَقَع مِنْ الدَّوَاء وَالتَّدَاوِي إِنْ لَمْ يُصَادِف تَقْدِير اللَّه تَعَالَى وَإِلَّا فَلَا يُنْجِع [এটি] নির্দেশ করে যে, ওষুধ এবং চিকিৎসার প্রভাব-প্রতিক্রিয়ায় রোগ দূর করার ক্ষমতা আল্লাহরই নির্দেশে। তাঁর নির্দেশ ছাড়া ঔষধ কোন কাজ দেয় না। (“ফাতহাুল বারী” খন্ড: ১০ পৃষ্ঠা: ২০৭)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, উপরে উল্লিখিত আবু সাঈদ আল-খুদরীর হাদিস এবং প্রসিদ্ধ সালাফদের বক্তব্য অনুযায়ী শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে রুকিয়াহ করা জায়েজ এবং এর জন্য অর্থ গ্রহণ করাও জায়েয, এটি একজনের বাড়িতে হোক বা ভাড়ার জায়গায় হোক বা আলাদা প্রাঙ্গনে হোক তাতে কোনও পার্থক্য নেই। কারণ চাকরি জায়েজ এবং এর জন্য অর্থ গ্রহণ করা জায়েয বলে প্রমাণিত হলে, এটিকে হারাম বলে মনে করার অর্থ হলো জ্ঞান ছাড়া শরীয়ত সম্পর্কে কথা বলার নামন্তর। তবে হা! রুকিয়াহ কে শুধুমাত্র টাকা উপার্জনের পেশা হিসেবে গ্রহন করা এবং এর জন্য রুকিয়া সেন্টার খোলা উচিত নয়।কারণ সেক্ষেত্রে এটি এক প্রকার ব্যবসা হয় যায়। অনেক আলেম এটি করতে নিষেধ করেছেন। স্বাভাবিক ভাবে রুবিয়ার বিনিময়ে অর্থ নিতে কোন আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ।
.
ইমাম বুখারী তার সহীহ বুখারীতে কিতাবুল ইজারাহ নামে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন এবং সেখানে তিনি বলেছেন: بَاب مَا يُعْطَى فِي الرُّقْيَةِ عَلَى أَحْيَاءِ الْعَرَبِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ অর্থাৎ কোন আরব গোত্রে সূরা ফাতিহা পড়ে ঝাড়-ফুঁক করার বিনিময়ে কিছু দেয়া হলে। (সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ৩৭ অনুচ্ছেদ: ১৬ কিতাবুল ইজারাহ হা/২২৭৬)। অতঃপর তিনি ইবনে আব্বাস রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন; مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَابُ اللَّهِ ‘যে সকল জিনিসের উপর তোমরা বিনিময় গ্রহণ করে থাক, তন্মধ্যে পারিশ্রমিক গ্রহণ করার সবচেয়ে বেশি হক রয়েছে আল্লাহর কিতাবের ক্ষেত্রে। (সহীহ বুখারী, হা/২২৭৬ ও হা/৫৭৩৭)। সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রশংসা, তিনি আমাদেরকে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_____________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।