হাদিস থেকে বাছাইকৃত উচ্চারণ ও অর্থসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি দুআর মধ্যে ১৯তম দুআ

আজকের দু’আটি ভীষণ উপকারী একটি দু‘আ, যা হতাশা থেকে মুক্তি এবং কল্যাণকর জীবনযাপনের জন্য পড়তে পারেন।
▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: আজকের দু’আটি একটু বড় হলেও ভীষণ উপকারী একটি দু‘আ, যা হতাশা থেকে মুক্তি এবং কল্যাণকর জীবনযাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দু’আটিতে আল্লাহর কাছে দ্বীন, দুুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণ চাওয়া হয়েছে, হাদীসটি বর্ননা করেছেন প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৫৯ হি.] তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেকদিন বলতেন। দু’আটির মূল আরবি হচ্ছে:
.
اَللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دِينِيَ الَّذِي هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِي، وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتِي فِيهَا مَعَاشِي، وَأَصْلِحْ لِي آخِرَتِي الَّتِي فِيهَا مَعَادِي، وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِي فِي كُلِّ خَيْرٍ، وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لِي مِنْ كُلِّ شَرٍّ
.
মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, আস্বলি’হ লী দীনিয়াল লাযী হুওয়া ‘ইস্ব্‌মাতু আমরী। ওয়া আস্বলি’হ লী দুন্‌ইয়া- ইয়াল‌ লাতী ফীহা- মা’আ-শী। ওয়া আস্বলি’হ লী আ-খিরাতি‘ল‌‌ লাতী ফিহা- মাআ’-দ্বি ওয়াজ-আলিল ‘হায়া-তা ঝিয়া-‘দাতান লী ফি কুল্লি খাইরিন ওয়াজ-আলিল মাওতা র-হাতান লী মিন কুল্লি শাররীন। (আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন, না হয় ভুল শিখতে হবে)।
.
অর্থ: হে আল্লাহ্‌! আমাকে সঠিকভাবে দ্বীন পালনের সুযোগ দিন, যা হলো আমার যাবতীয় বিষয়ের হিফাযতকারী। আমাকে দুনিয়ায় সঠিকভাবে চলার সুযোগ দিন, যেখানে আছে আমার জীবনোপকরণ। পরকালের জন্য আমাকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করুন, যেখানে রয়েছে আমার প্রত্যাবর্তন, প্রত্যেক কল্যাণময় ব্যাপারে আমার জীবনে আধিক্য দান করুন, আর মৃত্যুকে বানিয়ে দিন সকল অনিষ্ট থেকে প্রশান্তি লাভের মাধ্যম। (সহীহ মুসলিম হা/২৭২০, বুলুগুল মারাম,হা/১৫৬৪, রিয়াদুস সালেহীন হা/১৪৪৯)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন:
.
اَللَّهُمَّ
َ(আল্লা-হুম্মা) অর্থ: হে আল্লাহ
.
أَصْلِحْ لِي دِينِيَ الَّذِي
(আস্বলি’হ লী দীনিয়াল লাযী) অর্থ: (আপনি) আমাকে সঠিকভাবে দ্বীন পালনের সুযোগ দিন।
.
هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِي
(হুওয়া ‘ইস্বমাতু আমরী) অর্থ: যা হলো আমার যাবতীয় বিষয়ের রক্ষাকবচ বা হিফাযতকারী।
.
وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتِي
(ওয়া আস্বলি’হ লী দুন্‌ইয়া- ইয়াল‌ লাতী) অর্থ: এবং আমাকে দুনিয়ায় সঠিকভাবে চলার সুযোগ দিন।
.
فِيهَا مَعَاشِي
(ফীহা- মা’আ-শী) অর্থ: যেখানে আছে আমার জীবনোপকরণ / জীবিকা লাভের উপকরণ।
.
وَأَصْلِحْ لِي آخِرَتِي الَّتِي
(ওয়া আস্বলি’হ লী আ-খিরাতি‘ল‌‌ লাতী) অর্থ: এবং পরকালের জন্য আমাকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করুন।
.
فِيهَا مَعَادِي
(ফিহা- মাআ’-দ্বি) অর্থ: যেখানে রয়েছে আমার প্রত্যাবর্তন।
.
وَاجْعَلِ الحَيَاةَ
(ওয়াজ‘ আলিল হায়াতা) এবং আমার হায়াতকে করে দিন,
.
زِيَادَةً لِّيْ
(যিয়াদাতাল্লী) অর্থ: আমার জন্য আধিক্য/ বৃদ্ধি।
.
فِيْ كُلِّ خَيْرٍ،
(ফি কুল্লি খাইরিন) অর্থ: সকল কল্যাণকর কাজে,
.
وَاجْعَلِ الْمَوْتَ
(ওয়াজ‘আলিল মাওতা) অর্থ: এবং (আমার) মরণকে করে দিন,
.
رَاحَةً لِّيْ
(রা-‘হাতাল্লী) অর্থ: আমার জন্য প্রশান্তি,
.
مِنْ كُلِّ شَرٍّ
মিন কুল্লি শাররিন) অর্থ: প্রত্যেক অনিষ্ট/ খারাপি থেকে,
.
প্রিয় পাঠক! খেয়াল করে দেখুন এই দু‘আটি একটু বড় হলেও এখানে গুরুত্বপূর্ণ সবই চাওয়া হয়ে যাচ্ছে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেকদিন যেসব দু‘আ পাঠ করতেন এটি তন্মধ্যে অন্যতম। এ দু‘আতে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতের কল্যাণ তলব ও প্রার্থনা করা হয়েছে। এ দু‘আতে দুনিয়ার যাবতীয় অকল্যাণ ও অনিষ্ট থেকে এবং কবরের কঠিন আযাব থেকে মৃত্যুকে আরাম দায়ক করার প্রার্থনা রয়েছে, যেহেতু দু‘আটি কবরের আগে ও পরের যাবতীয় অকল্যাণকে শামিল করে। এবং তিনি যেন তার হায়াত-কে তার পছন্দনীয় বস্তুতে দীর্ঘায়িত করেন এবং তাকে বিরত রাখুন সেসব থেকে যা তিনি ঘৃণা ও অপছন্দ করেন। সবার উচিত দু’আটি মুখস্ত করে নেওয়া।অতএব আপনারা উপরোক্ত বাক্যগুলোর অর্থ খেয়াল করে, নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন অবস্থাকে অন্তরে ধারণ করে দু‘আটি পড়বেন। দু‘আটি আমরা (বিশেষত নফল) নামাজের সিজদায়, নামাজের সালাম ফেরানোর আগে, দু‘আ কবুলের বিশেষ সময়ে কিংবা যেকোনো দু‘আর মধ্যে পড়তে পারি। আনুষ্ঠানিক দু‘আ ছাড়াও সাধারণভাবে এসব বাক্য পড়তে পারি।নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন। এবং অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রাখবেন।আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুক। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।