হাদিস থেকে বাছাইকৃত উচ্চারণ ও অর্থসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি দুআর মধ্যে ১৬তম দুআ

আজকের দু’আটি খুবই অর্থবহ এবং গুরুত্বপূর্ণ। সবার মুখাস্ত করে নিয়মিত পড়া উচিত।
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: আজকের দু’আটি শুরু করার পূর্বে দু’আটি সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই, ঈমানের অন্যতম রুকন হচ্ছে তাক্বদীরে বিশ্বাস।বিভিন্ন বর্ননায় এসেছে,নেক আমল ও দু‘আর মাধ্যমে মানুষের তাক্বদীরের পরিবর্তন হয়। আল্লাহ বলেন,‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা করেন তা বহাল রাখেন’ (সূরা রা‘দ ৩৯)। রাসূল (ﷺ) বলেন, দো‘আর মাধ্যমে তাকদীর পরিবর্তন হয় এবং সৎ আমলের মাধ্যমে বয়স বৃদ্ধি হয়।(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ হা/৯০, ৪০২২; মিশকাত হা/২২৩৩, ৪৯২৫; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৫৪)। তাকদির পরিবর্তন হয় কিনা এবং হলেও সেটা কি ধরনের পরিবর্তন হয়! এই বিষয়ে অন্য একটি পোস্টে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।আজকের পোস্টের মূল বিষয় হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ একটি দু’আ। আর তা হচ্ছে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর) নিকট একজন পাঠক কুরআন তেলাওয়াত করলেন: মহান আল্লাহ বলেন:أفلا يتدبرون القرآن أم علي قلوب أقفالها “তারা কি কুরআন গবেষণা করে দেখেনা নাকি তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছে”?। (সূরা মুহাম্মদ: ৪৭/২৪) তখন তার নিকট একজন যুবক ছিল সে বলে উঠলো:-اللهم عليها أقفالها ، ومفاتيحها بيدك ، لا يفتحها سواك . فعرفها له عمر وزادته عنده خيرا অর্থ: “হে আল্লাহ তার অন্তরের ওপর মোহর মেরে দেওয়া হয়েছে অথচ তার চাবি রয়েছে তোমার হাতে, তুমি ছাড়া কেউ তা খুলতে পারবে না”। অতঃপর ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং তার নিকটে তাকে আরো কল্যাণ বৃদ্ধি করে দিল।(ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩০৪৯৪১)
.
প্রখ্যাত সাহাবী ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ২৩ হি.] কাবাঘর প্রদক্ষিণ করার সময় আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বলতেন:
.
اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ كَتَبْتَنِي فِي أَهْلِ السَّعَادَةِ، فَأَثْبِتْنِي فِيهَا. وَإِنْ كُنْتَ كَتَبْتَ عَلَيَّ الذَّنْبَ وَالشِّقْوَةَ ، فَامْحُنِي وَأَثْبِتْنِي فِي أَهْلِ السَّعَادَةِ ، فَإِنَّكَ تَمْحُو مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ ، وَعِنْدَكَ أُمُّ الْكِتَابِ ”

মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইং কুংতা কাতাবতানী ফি আহলিস সাআদাহ,‌ ফাআসবিতনী ফীহা ওয়া ইং কুংতা কাতাবতা আলাইয়্যায যানবা ওয়াস সিক্বওয়াহ, ফামহুনী ওয়া আসবিতনী ফি আহলিস সাআদাহ, ফাইন্নাকা তামহু মা তাসা-উ ওয়া তুসবিতু ওয়া ইংদাকা উম্মুল কিতাব।(আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন, না হয় ভুল শিখতে হবে)।
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি যদি আমাকে সৌভাগ্যশালীদের মধ্যে অন্তভুক্ত করে থাকেন, তাহলে আমাকে এই পথে অটল রাখুন, আর যদি আপনি আমার ব্যপারে পাপ এবং দুর্ভাগ্য লিখে রাখেন, তাহলে তা আমার থেকে মুচে দিন, এবং আমাকে সৌভাগ্যশালীদের পথে অবিচল রাখুন। কারণ আপনি যা ইচ্ছে মুচেন এবং যা ইচ্ছে স্থির রাখেন। আর আপনার কাছেই রয়েছে মূল কিতাব (লওহে মাহফুজ)(আসারটি বর্ননা করেছেন ইমাম তাবারী তার তাফসীরে তাবারীর খন্ড:১৩ পৃষ্ঠা: ৫৬৪ ইবনে কাসীর ইবনে “মুসনাদ আল-ফারুক” খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৫৪৯,দলাবী বর্ণনা করেছেন,আল-কুনা ওয়াল আসমা-৬৩৫ ইবনু বাত্তা বর্ণনা করেছেন, আল ইবানা,১৫৬৫),আর ইমাম লালাকায়ী বর্ণনা করেছেন,শারহু উসুলি ইতিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ-১২০৬ ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩০৪৯৪১ আসারটি বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন:
.
اللَّهُمَّ
(আল্লাহুমা) অর্থ: হে আল্লাহ!
.
إِنْ كُنْتَ كَتَبْتَنِي فِي أَهْلِ السَّعَادَةِ،
(ইং কুংতা কাতাবতানী ফি আহলিস সাআদাহ) অর্থ: (হে আল্লাহ!) আপনি যদি আমাকে সৌভাগ্যশালীদের মধ্যে অন্তভুক্ত করে থাকেন,
.
فَأَثْبِتْنِي فِيهَا.
(ফাআসবিতনী ফীহা) অর্থ:তাহলে আমাকে এই পথে অটল রাখুন,
.
.
وَإِنْ كُنْتَ كَتَبْتَ عَلَيَّ الذَّنْبَ وَالشِّقْوَةَ
(ওয়া ইং কুংতা কাতাবতা আলাইয়্যায যানবা ওয়াস সিক্বওয়াহ)

অর্থ: আর যদি আপনি আমার ব্যপারে পাপ এবং দুর্ভাগ্য লিখে রাখেন,
.
فَامْحُنِي وَأَثْبِتْنِي فِي أَهْلِ السَّعَادَةِ
(ফামহুনী ওয়া আসবিতনী ফি আহলিস সাআদাহ) অর্থ:তাহলে তা আমার থেকে মুচে দিন, এবং আমাকে সৌভাগ্যশালীদের পথে অবিচল রাখুন,
.
فَإِنَّكَ تَمْحُو مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ
(ফাইন্নাকা তামহু মা তাসা-উ ওয়া তুসবিতু) অর্থ: (কারণ) আপনি যা ইচ্ছে মুচেন এবং যা ইচ্ছে স্থির রাখেন।
.
وَعِنْدَكَ أُمُّ الْكِتَابِ
(ওয়া ইংদাকা উম্মুল কিতাব) অর্থ: এবং আপনার নিকটে আমলনামা রয়েছে।
.
প্রিয় পাঠক! দু’আটি সামান্য বড় হলেও খুবই সুন্দর এবং চমৎকার একটি দু’আ। দু’আটির অর্থও খুবই সুন্দর ও ব্যাপক-পৃথিবীর এমন কোন মানুষ নেই যে সফলতা চায় না। এ সফলতা একেকজন একেক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্ধারণ করে। কেউ দুনিয়ার প্রচুর সম্পদ, নারী, গাড়ী-বাড়ী, ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ইত্যাদির মাধ্যমে নির্ধারণ করে। কেউ আবার সুস্বাস্থ্যকে নির্ধারণ করে। কেউ আবার অন্যকিছু। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানুষের সফলতা কিসে তা আল্লাহ তা’আলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন তিনি বলেছেন:”সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী”।(সূরা আলে ইমরান: ৩/১৮৫) এ আয়াতে আল্লাহ বলে দিয়েছেন যে, যাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে সেই সফলকাম। সেই সফলতা অর্জনের জন্য খলিফা উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কাবাঘর তাওয়াফ করার সময় কান্না করতে করতে উপরোক্ত দু’আটি পড়তেন। তাই প্রত্যেকের দু‘আটি মুখস্থ করা উচিত এবং নিয়মিত পড়া উচিত। এটি সালাতর সিজদায় পড়তে পারেন এবং বিভিন্ন সময় যখন দু’আ করবেন তখন পড়তে পারেন। নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন। এবং অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রাখবেন। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুক।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।