কোন নারী যিনা-ব্যাভিচারের মাধ্যমে গর্ভবতী হলে সেই অবৈধ সন্তান সম্পর্কে শরীয়তের বিধান

প্রশ্ন: কোন নারী যিনা-ব্যাভিচারের মাধ্যমে গর্ভবতী হলে, সেই অবৈধ সন্তান সম্পর্কে ইসলামী শরীয়তের বিধান কী?
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: বর্তমান ফিতনার যুগে অবৈধ যিনা-ব্যাভিচার একটি কমন ঘটনা। কেননা বর্তমানে বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীতে অশ্লীলতার প্রতিযোগিতা চলছে। আর এর প্রভাবে সমাজ কলুষিত হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে যুবচরিত্র। দাম্পত্য জীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে, ঘটছে বিবাহ বিচ্ছেদ।অশ্লীলতা ও পর্দহীনতার কারণে অনেক যুবক-যুবতী অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। অতঃপর পিতা-মাতাকে না জানিয়ে পালিয়ে গিয়ে অন্যত্র একত্রে অবস্থান করে। অবশেষে সর্বস্ব হারিয়ে নিজের পরিবারের কাছে প্রত্যাবর্তনে বাধ্য হয়। কারো স্বামী- স্ত্রী থাকা সত্বেও পরকিয়া করে, আবার কেউ গোপনে কাজী অফিসে কিংবা আদালতে গিয়ে বিবাহ করে। এক সময়ে যখন মোহ কেটে যায়, তখন নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়ন সৃষ্টি হয়। ভাঙ্গে ভুল, ভাঙ্গে সংসার, ক্ষয়ে যায় মূল্যবান জীবন।
.
হে আমার মুসলিম ভাই বোন! আসমানের নিচে জমিনের উপরে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় তিনটি পাপের মধ্যে যিনা- ব্যাভিচারের স্থান তৃতীয়। কুরআনে আল্লাহ যিনাকে মূর্তি পূজা অর্থাৎ শিরক এবং হত্যার পাশাপাশি উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,”এবং তারা আল্লাহ্‌র সাথে কোন ইলাহকে ডাকে না। আর আল্লাহ্‌ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর তারা ব্যাভিচার করে না। যে এগুলো করে, সে শাস্তি ভোগ করবে”। (সূরা ফুরকান; ২৫/৬৮)। উক্ত আয়াতে শিরক এবং হত্যার পর তৃতীয় পয়েন্টে ব্যাভিচারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ্ বিন ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় গুনাহ্ কোনটি? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে সমকক্ষ গণ্য কর অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। লোকটি বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, তারপর হলো, তুমি তোমার সন্তানকে এ ভয়ে হত্যা কর যে, সে তোমার সঙ্গে খাদ্য খাবে। লোকটি বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, তারপর হলো, তুমি তোমার প্রতিবেশির স্ত্রীর সঙ্গে যিনা কর। অতঃপর আল্লাহ্ এ কথার সত্যতায় অবতীর্ণ করলেন, ‘‘এবং তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহকে আহবান করে না, আল্লাহ্ যার হত্যা নিষেধ করেছেন উপযুক্ত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে’’।(সূরাহ ফুরক্বান ২৫/৬৮ সহীহ বুখারী হা/৬৮৬১, সহীহ মুসলিম হা/ ৮৬)
.
এই পর্যায়ে আমরা যিনা-ব্যাভিচারের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী অবৈধ সন্তান সম্পর্কে ইসলাম যে কয়েকটি বিধি-বিধান নির্ধারণ করেছে। দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে যতটা সম্ভব সহজভাবে সেগুলো আলাদা আলাদা করে ৬ টি পয়েন্টে তিন পর্বে বিস্তারিত তুলে ধরার করার চেষ্টা করছি আলহামদুলিল্লাহ।
.
❑(১). অবৈধ যিনা-ব্যাভিচারের মাধ্যমে যে সন্তান জন্মলাভ করে তার কি দোষ?
.
(ক). প্রথমেই আমরা একটা বিষয় স্পষ্ট করে বলতে চাই,আর সেটি হলো যিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে যে শিশুটা জন্ম লাভ করে সেই ছেলেটার সাথে তার পিতা-মাতার অপরাধের কোন সম্পর্ক নাই। তাই যিনা-ব্যাভিচারের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী জারজ সন্তানকে তিরস্কার করা কিংবা অপমানসূচক কথা বলা গুনাহের কাজ। কেননা তার জন্মদাতা যিনাকার নারী-পুরুষের অপরাধের কারণে সে পাপী নয়। দলিল হচ্ছে, আল্লাহ বলেন,”কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না”। (সূরা আন‘আম: ৬/১৬৪; ইসরা: ১৭/১৫)। হাদীসেও রাসূল (ﷺ) বলেন, যিনার মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী সন্তান পিতা-মাতার কোন গোনাহ বহন করবে না। (ইমাম হাকেম হা/৭০৫৩; আলবানী সিলসিলা সহীহাহ হা/২১৮৬; হাদীসটি বিশুদ্ধ)। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের যেমনটি হক রয়েছে, ঠিক তার জন্যেও একই রকম হোক রয়েছে। সে পুরুষ হোক কিংবা নারী হোক তার জন্য আবশ্যক হলো সে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করবে এবং দ্বীনের যাবতীয় বিধি নিষেধ অনুসরণ করবে, যাতে করে সে জান্নাত লাভ করতে পারে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, “মুমিন পুরুষ বা নারী যে কোন সৎকর্ম করলে আমি তার বিনিময়ে সর্বোত্তম প্রতিদান দেব”।(সূরা নাহল: ১৬/৯৭)
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণ বলেছেন; অবৈধ সন্তানের ব্যাপারে, ব্যাভিচারের সন্তানকে তার মায়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা হবে,আর যদি তার মা মুসলিম হয়, তাহলে তার হুকুম হবে সকল মুসলিমদের হুকুমের ন্যায়। তার মায়ের অপরাধের কারণে তাকে অপরাধী করা হবেনা, শাস্তিও দেওয়া যাবে না। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,”একজনের পাপের বোঝা অপরজনের উপর চাপানো হবে না”। (সূরা ফাতির ৩৫: ১৮; ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ২২, পৃষ্ঠা: ৩৪)
.
❑(২). অবৈধ যিনা-ব্যাভিচারের মাধ্যমে যে সন্তান গর্ভে আসে তাকে শরীয়ত সম্মত কারণ ছাড়া হত্যা করা যাবে না।
.
(খ). অবৈধ মেলামেশার (যিনা-ব্যাভিচার) কারণে গর্ভে যদি কোন সন্তান এসে যায় তাহলে রূহ আসার পর শরীয়তসম্মত কারণ ব্যতীত গর্ভপাত করা জায়েজ নয়, বরং সম্পূর্ণ হারাম। কেননা, যদি বৈধ বিয়ের মাধ্যমে আসা গর্ভস্থ সন্তানের মধ্যে রূহ এসে যায় তাহলে গর্ভপাত ঘটানোর ফলে যদি বাচ্চাটি মারা যায় তাহলে এটা অন্যায়ভাবে হত্যার শামিল, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। আল্লাহ বলেন,”তোমরা অভাব ও দরিদ্রতার আশংকায় তোমাদের সন্তানদের হত্যা কর না”। (সূরা ইসরা; ১৭/৩১)। অন্য আয়াতে বলেন, “তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা কর না দারিদ্রের কারণে, আমিই তোমাদের রিযিক দান করি এবং তাদেরও আমিই রিযিক দান করব”। (সূরা আন‘আম; ৬/১৫১)। স্বাভাবিক ভাবে বৈধ সন্তান হত্যা করা যেমন হারাম তেমনি অবৈধ সন্তান হত্যা করাও তেমনি হারাম। এই মর্মে হাদীস থেকে দলিল হচ্ছে- গামিদিয়া মহিলা, যে নবী কারীম ﷺ-এর খেদমতে হাজির হয়ে ব্যাভিচারের স্বীকৃতি দিয়েছিল। তখন নবী কারীম (ﷺ) ওই মহিলাকে এই বলে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন যে, যেন সে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আসে। তারপর যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মহিলাটি আসল তখন এই বলে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন যে, যেন সে সন্তানকে দুধ পান করানোর মেয়াদ পূর্ণ করে আসে। তারপর দুধ পান করানোর মেয়াদ পূর্ণ করার পর যখন মহিলাটি আসল, তখন ওই সন্তানের হাতে ছিল রুটির একটি টুকরো। এরপর এই মহিলাকে প্রস্তরাঘাত করা হয়েছিল। (সহীহ মুসলিম হা/১৬৯৫, মিশকাত হা/৩৫৬২)। এই হাদীসে লক্ষণীয় বিষয় হলো- রাসুলুল্লাহ (ﷺ) উক্ত মহিলাকে গর্ভপাত করার অনুমতি দেন নি এবং এই অবস্থায় তার উপর ইসালামের দণ্ডবিধি প্রস্তরাঘাতও প্রয়োগ করেন নি; বরং তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যখন শিশুটি দুগ্ধ পান থেকে বিরত হয়েছিল তখন তাকে প্রস্তরাঘাত করা হয়েছিল। এতে প্রমাণিত হলো, অবৈধ মেলামেশার কারণে যদি সন্তান এসে যায় তাহলে রূহ আসার পর গর্ভপাত করা সম্পূর্ণ হারাম। আসলে এভাবে অবৈধ গর্ভ নষ্ট করার সুযোগ দেয়া হলে মানুষের মাঝে ব্যাভিচার আরো বেড়ে যাবে। তা ছাড়া গর্ভস্থ সন্তানের কী দোষ যে, তাকে হত্যা করা হবে? অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন, وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ “কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না”। (সূরা ইসরা: ১৭/১৫)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে একজন বিবাহিত মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল; যার তিনটি সন্তান ছিল এবং সে যিনার মাধ্যমে চতুর্থ সন্তানের জন্য গর্ভবতী হয়েছিল। তার জন্য ভ্রূণ গর্ভপাত করা জায়েজ, নাকি রাখা উচিত? রাখলে তার স্বামীকে বলা উচিত নাকি? আর এক্ষেত্রে স্বামীর করণীয় কি?
.
তিনি উত্তরে বলেন, لا يجوز لها إجهاض الجنين. والواجب عليها التوبة إلى الله سبحانه، وعدم إفشاء الأمر، والولد لاحق بالزوج ؛ لقول النبي صلى الله عليه وسلم : (الولد للفراش ، وللعاهر الحجر) أصلح الله حال الجميع

“তার জন্য ভ্রূণ গর্ভপাত করা জায়েয নয়,তাকে যা করতে হবে তা হলো- আল্লাহর কাছে তাওবা করা এবং এই বিষয়টি প্রকাশ না করা। শিশুটি তার স্বামীর,কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; সন্তান বৈধ শয্যাধারীর (স্বামীর) এবং ব্যাভিচারির জন্য রয়েছে পাথর। আল্লাহ আমাদের সকল বিষয় ঠিক করে দিন”।(ইমাম বিন বায মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ খন্ড: ২১ পৃষ্ঠা: ২০৫)
.
তবে হ্যাঁ! ইচ্ছাকৃতভাবে শরীয়তসম্মত কারণ ছাড়া গর্ভপাত করা হারাম ও কবিরা গুনাহ হলেও উপযুক্ত কারণ অর্থাৎ গর্ভপাত করার মধ্যে যদি কোন শরয়ী কল্যাণ থাকে কিংবা অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শের আলোকে যদি মায়ের জীবনের হুমকি থাকে এবং গর্ভস্থিত ভ্রুণটি যদি প্রথম ধাপে থাকে; (প্রথম ধাপ হলো চল্লিশ দিনের সময়সীমায়) তাহলে গর্ভস্থিত ভ্রূণ ফেলে দেয়া জায়েয। অন্যথায় শরী‘আতের দৃষ্টিতে গর্ভপাত করে সন্তান নষ্ট করা হারাম। (বিস্তারিত সূরা আনআম: ৬/১৫১, ইবনুল জাওযী, আহকামুন নিসা; খন্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১০৮-১০৯; ইবনু জুযাই, আল- কাওয়ানীন; খন্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৭; ইবনু হাযম, আল মুহাল্লা; খন্ড: ১১, পৃষ্ঠা: ২৩৯, ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খন্ড: ২১, পৃষ্ঠা: ৪৫০)
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণ বলেছেন, নারীর গর্ভস্থিত ভ্রুণকে কোন শরয়ী কারণ ব্যতীত গর্ভপাত করা নাজায়েয। যদি গর্ভস্থিত ভ্রুণটি বীর্যের অবস্থায় থাকে; আর তা থাকে চল্লিশদিন বা তার চেয়ে কম সময়ের মধ্যে এবং সেটি ফেলে দেয়ার মধ্যে কোন শরয়ী কল্যাণ থাকে কিংবা মায়ের উপর থেকে সম্ভাব্য কোন ক্ষতি রোধ করার বিষয় থাকে; তাহলে এমতাবস্থায় সেটি ফেলে দেয়া জায়েয আছে। তবে সন্তানদের প্রতিপালনের কষ্ট, তাদের ব্যয়ভার বহন বা প্রতিপালনের অক্ষমতা কিংবা যে কয়জন সন্তান আছে তারাই যথেষ্ট ইত্যাদি অ-শরয়ী কারণগুলো এর মধ্যে পড়বে না। আর যদি ভ্রুণের বয়স চল্লিশ দিন পার হয়ে যায়, তাহলে সেটি নষ্ট করা হারাম। কেননা চল্লিশ দিন পর সেটি রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়; যা মানবাকৃতির সূচনা। তাই এ স্তরে পৌঁছার পর বিশ্বস্ত কোন ডাক্তার গর্ভধারণ চলমান রাখা মায়ের জীবনের জন্য বিপদজনক এবং চলমান রাখলে মায়ের জীবন বিপন্ন হতে পারে মর্মে সিদ্ধান্ত দেয়া ব্যতীত সেটি নষ্ট করা জায়েয নয়।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ২১ পৃষ্ঠা: ৪৫০)
❑(৩). অবৈধ যিনা ব্যাভিচারের মাধ্যমে যে সন্তান গর্ভে আসে তাকে কার দিকে সম্বোধন করতে হবে?
.
(গ). যিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী শিশুটিকে কার দিকে সম্বোধন করা হবে এই বিষয়ে আমাদের সালাফগণ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং তারা বলেছেন যে, অবৈধ সন্তানের ক্ষেত্রে অবশ্যই দুটি পরিস্থিতির একটি সেই মহিলার জন্য প্রযোজ্য হবে, যার সাথে যিনা-ব্যাভিচার করা হয়েছে:
.
(I). ব্যভিচারকারী নারী যদি বিবাহিত হয় এবং বিবাহের কমপক্ষে ৬ মাস বা তার বেশি সময় পরে সন্তান জন্মগ্রহণ করে সেক্ষেত্রে তার গর্ভ থেকে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে সে সন্তানটি তার স্বামীর বলে গন্য হবে, অন্য কারো নয়। এমনকি যদি সে নারী নিশ্চিত হয় যে সন্তানটি তার যার সাথে সে যিনা করেছে, কিংবা কোন ব্যক্তি দাবি করে যে সে এই নারীর সাথে যিনা করেছে এবং এই ছেলেটি সেই যেনার ফলেই হয়েছে তবুও আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে সেই কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবে না। বরং সন্তানটি স্বামীর হবে। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,”বিছানা যার সন্তান তার; আর যেনাকারীর জন্য পাথর (রজব)”।(সহীহ বুখারী হা/৬৭৫০, ৬৮১৮; সহীহ মুসলিম হা/১৪৫৮; তিরমিযী হা/১১৫৭; নাসায়ী হা/৩৪৮২)। তবে হা! স্বামী যদি লিয়ানের মাধ্যমে সন্তানকে অস্বীকার করতে চায়, সেটা তিনি করতে পারেন। আর এমনটি করা হলে সেক্ষেত্রে সন্তানটি স্বামীর দিকে সম্বোধন করা যাবেনা; বরং তাকে তার মায়ের দিকে সম্বোধন করতে হবে। যার সাথে এই নারী যিনা করেছে সে পুরুষের দিকে নয়। আর এই বিষয়ে আলেমগণ সর্বসম্মতিক্রমে একমত।
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল; একজন বিবাহিত মহিলা যিনি বিবাহিত অবস্থায় যিনা করেছেন? ফলস্বরূপ তিনি গর্ভবতী হন এবং একটি সন্তানের জন্ম দেন,এখনসেই শিশুটি কার কাছে থাকবে? “সন্তান বিছানার মালিকের জন্য এবং ব্যভিচারীর জন্য পাথর” এই হাদীসের ভিত্তিতে তার স্বামীর সাথে থাকা উচিত কিনা? যদি সে তার মায়ের স্বামীর সাথে থাকে, তবে তাকে কি দত্তক নেওয়া উচিত এবং সমস্ত অধিকারের বিষয়ে তাকে নিজের সন্তানের একজন হিসাবে বিবেচনা করা উচিত, নাকি সে কেবলমাত্র তার যত্নের অধীনে থাকবে? কিন্তু যদি সে ব্যভিচারিণীর প্রতি আরোপিত হয়, তাহলে কি তাকে তার প্রকৃত সন্তান হিসেবে গণ্য করা উচিত বা তাকে কি নিজের কাছে রাখা উচিত যদিও সে এখনও অবৈধ?
.
তাঁরা উত্তর দিয়েছেন,”যদি কোন বিবাহিত মহিলা যিনা করে এবং গর্ভবতী হয়, তাহলে সহীহ হাদীস অনুযায়ী শিশুটি বিছানার (স্বামীর) মালিকের হবে।বিছানার মালিক যদি লিয়ানে লিপ্ত হয়ে শিশুটিকে অস্বীকার করতে চান তবে তিনি শরয়ী (ইসলামী) বিচারকের সামনে তা করতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে মুসলমানদের ঐক্যমত অনুসারে শিশুটি সেই স্বামীর অন্তর্ভুক্ত নয়। কিন্তু দত্তক নেওয়া জায়েয নয়, এবং দত্তক নেওয়া সন্তান প্রকৃতপক্ষে যে তাকে দত্তক নিয়েছে তার সন্তান হয় না।আল্লাহই ভাল জানেন”। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খন্ড: ২০ পৃষ্ঠা: ৩৩৯)
.
(II). ব্যাভিচারী নারী যদি বিবাহিত না হয়, তাহলে তার সন্তানকে তার সাথে সংযুক্ত করা উচিত কিনা সে সম্পর্কে আলেমদের দুটি মতভেদ রয়েছে। এর ব্যাখায় এভাবে বলা যায় যে, কোন মহিলা যখন বিবাহ করে এবং তার কমপক্ষে ছয় মাস বা তার বেশি সময় পর বাচ্চা হয় তখন তার সেই বাচ্চাকে তার স্বামীর দিকে সম্বোধন করা হবে যদিও কোন ব্যক্তি দাবি করে যে সে তার সাথে যিনা করেছে এবং এই ছেলেটি সে যিনার ফলেই হয়েছে তবুও সর্বসম্মতিক্রমে সেই কথার প্রতি লক্ষ্য করবে না। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “বিছানা যার, সন্তান তার, ব্যভিচারী যে,বঞ্চিত সে”।(সহীহ বুখারী হা/২০৫৩, মুসলিম হা/১৪৫৭)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,”সকল আলেম সর্বসম্মতভাবে একমত পোষণ করেছেন যে, যখন কোন শিশু কোন ব্যক্তির বিছানায় (বিবাহিত অবস্থায়) জন্ম লাভ করবে তখন সেই শিশুটি তার হবে। যদিও অন্য কেউ শিশুটি তার দাবি করে তবুও তার সাথে মেলানো হবে না। তবে আলেমগণের মধ্যে এই বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে যে, যখন কোন শিশু কারো বিছানা ছাড়াই (বিবাহ ছাড়াই ব্যাভিচারের ফলে) জন্ম লাভ করে। অর্থাৎ যদি মহিলাটি বিবাহিত মহিলা (স্ত্রী) না হয়ে থাকে এবং ব্যাভিচারের ফলে কোন সন্তান লাভ করে আর যিনাকারী পুরুষ যদি সেই সন্তানকে তার বলে দাবী করে তাহলে কি সে সন্তানকে সে যিনাকারী পুরুষের সাথে সংযুক্ত করা হবে?
.
এই মাসালায় সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্থাৎ জমহুর আলেম বলেছেন যে, সে সন্তানকে তার দিকে (যিনাকার পুরুষের দিকে) সম্মোধন করা হবে না।বরং তার মায়ের দিকে সম্মোধন করা হবে। তবে ইমাম হাসান বসরি, ইবনে সিরিন, উরওয়া, নাখঈ, ইসহাক এবং সুলায়মান ইবনে ইয়াসার (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত আছে যে, পুরুষের দিকে সম্মোধন করা যাবে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) এই মতটি পছন্দ করেছেন। ইবনে কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন। আলি ইবনে আসেম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণনা করে বলেছেন, لا أرى بأسا إذا زنى الرجل بالمرأة فحملت منه ,أن يتزوجها مع حملها ,ويستر عليها ,والولد ولد له ) “যদি কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে ব্যাভিচার করে এবং সে তার দ্বারা গর্ভবতী হয়, অর্থাৎ অবৈধ মেলামেশার কারণে যদি গর্ভে সন্তান এসে যায় তারপর তারা যদি একে অপরকে বিয়ে করে নেয় তাহলে বিষয়টি গোপন রাখা ও সন্তানটির পিতা উক্ত স্বামী; একথা বলার মাঝে আমি মন্দ কিছু দেখি না”।(ইবনে কুদামাহ আল মুগনী; খন্ড: ৯ পৃষ্ঠা: ১২২)
.
ইবনে মুফলিহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমাদের শাইখ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,”যে ব্যক্তি যিনা করেছে তার সাথে তার সন্তানকে যদি মিলাতে চাই, সে যদি বিবাহ নাও করে তারপরেও তার সাথে মিলানো যাবে”। (ফুরু: খন্ড: ৬ পৃষ্ঠা: ৬২৫)।

ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, জমহুর আলেমদের মতামত হলো যিনা করে যে সন্তান জন্ম লাভ করে, তাকে যিনাকারি পুরুষের সাথে সম্পৃক্ত করা যাবে না। অর্থাৎ যিনাকারি পুরুষ সে সন্তানের দায়িত্ত্বভার নেওয়া থেকে মুক্ত। ইমাম হাসান ও ইমাম ইবনু সিরিন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,”যিনাকারি পুরুষকে যদি হদ্দ তথা শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত দন্ড বা শাস্তি দেওয়া হয়, তাহলে সন্তান যিনাকারি পুরুষের অধীনে থাকবে এবং তার উত্তরাধিকারী হবে”।ইমাম ইব্রাহীম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,”যদি যিনাকারী ব্যক্তিকে হাদ্দ বা বেত্রাঘাত করা হয় অথবা সে যদি সহবাসের মালিক হয়,অর্থাৎ বিবাহ করে তাহলে সন্তানটি তার সাথে যুক্ত করা হবে। এবং ইসহাক (রাহিমাহুল্লাহ)ও বলেছেন; শিশুটিকে তার সাথে যুক্ত করা হবে,তিনি উরওয়া এবং সুলাইমান বিন ইয়াসার এবং অনুরূপদের বর্ণনা করেছেন”।
.
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, নারী যদি বিবাহিত না হয় তাহলে যিনাকারীর (পুরুষের) সাথে অবৈধ সন্তানকে মিলানোর ক্ষেত্রে আহলুল ইলমদের দুটি মতামত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বিছানা যার, সন্তান তার। আর যিনাকারীর জন্য পাথর। অর্থাৎ (মহিলা যে পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে, সন্তান তার বলে গণ্য হবে। আর যেনাকারিকে শরীয়ত কর্তৃক শাস্তি দিতে হবে)। অতএব মহিলা যদি বিবাহিত না হয়, তাহলে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত হবে না”।(আল-ফাতওয়া আল- কুবরা; খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ১৭৮)।
.
জামহুরুল উলামা ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ ও ইবনু মাজাহ-এ বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলিল গ্রহণ করেছেন, যে যিনাকারি পুরুষের সাথে যিনা করার জন্য যে সন্তান জন্ম হয়, সে সন্তান তার সম্পৃক্ত হবে না। অর্থাৎ যিনাকারী পুরুষ সেই সন্তানের দায়িত্ত্বভার গ্রহণ করবে না। দলিল হচ্ছে,আমর ইবনু শু‘আইব (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফায়সালা দিয়েছেন যে, সন্তান যদি তার মালিকানাহীন কোন দাসীর গর্ভজাত হয়ে থাকে অথবা কোন স্বাধীন নারীর সাথে তার যেনার পরিণতিতে হয়ে থাকে, তাহলে উক্ত সন্তান তার সাথে (যিনাকার পুরুষের সাথে) সম্পৃক্ত হবে না এবং সে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তিও পাবে না, যদিও সে তাকে তার সন্তান বলে দাবি করে। বরং সে হবে জারজ সন্তান। সে তার মায়ের বংশের সাথে সম্পৃক্ত হবে, সে স্বাধীন নারী হোক বা ক্রীতদাসী। (মুসনাদে আহমাদ হা/৭০০২, আবু দাউদ হা/২২৬৫ ও ইবনু মাজাহ হা/২৭৪৬)। ইমাম আলবানি, মহাক্বিক শুয়াইব আরনাবুত আবু দাউদের হাদীসটি হাসান বলেছেন। ইবনে মুফলিহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এই হাদীস দ্বারা জামহুরুল উলামাগন দলিল গ্রহণ করেছেন। মোটকথা হাদীসটি হাসান।
.
উক্ত হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাধান করে দিয়েছেন যে- যিনা করার কারণে যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, সে সন্তান যিনাকারীর সাথে সম্পৃক্ত করা যাবে না। (অর্থাৎ সে সন্তান থেকে যিনাকারি পুরুষ মুক্ত, মহিলা যার অধীনে থাকবে, সন্তান তার বলে গণ্য হবে)। আর তার উত্তরাধিকারী হবে না। যদিও যিনাকারি পুরুষ সন্তানটি তার দাবী করে। নিঃসন্দেহে সন্তানকে সম্পৃক্ত করা যে কোন পুরুষের সাথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার উপর উত্তরাধিকারির অনেক বিধিমালা বা হুকুম আহকাম সাব্যস্ত হবে এবং তার জন্য ও তার নিকটাত্মীয়তার জন্য হালাল-হারাম বিধিমালা সাব্যস্ত হবে। আলোচনা থেকে এটি সম্পূর্ণ ভাবে স্পষ্ট যে, যিনা করার কারণে যিনাকারীর পক্ষ থেকে ভূমিষ্ঠ সন্তান যিনাকারীর সাথে সম্পৃক্ত করা যাবে না। অর্থাৎ যিনাকারী পুরুষ তার থেকে দায়িত্ব মুক্ত। এটি জমহুর ওলামাদের মত এটি যিনাকারীর সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক যিনাকারীর দিকে সম্মোধন করা হবে না। বরং তার মায়ের দিকে সম্মোধন করা হবে। তার মা তার জন্য মাহরাম হবে এবং তার ওয়ারিশ হিসেবেও থাকবে অন্যান্য ছেলেদের মতোই।
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,(وأما الولد الذي يحصل من الزنا ، يكون ولدا لأمه ، وليس ولدا لأبيه ؛ لعموم قول الرسول صلى الله عليه وسلم : ” الولد للفراش وللعاهر الحجر ” العاهر : الزاني ، يعني ليس له ولد . هذا معنى الحديث . ولو تزوجها بعد التوبة فإن الولد المخلوق من الماء الأول لا يكون ولدا له ، ولا يرث من هذا الذي حصل منه الزنا ولو ادعى أنه ابنه ، لأنه ليس ولدا شرعييا) “যে শিশু ব্যভিচারের মাধ্যমে হয়ে থাকে, সে শিশুকে তার বাবার দিকে সম্বোধন করা যাবে না। বরং তার মায়ের দিকে সম্বোধন করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাধারণ কথার প্রতি লক্ষ্য রেখে সেটার অর্থ হলো- যার বিছানা, তার সন্তান। আর যে যিনাকারী তার জন্য রয়েছে পাথর। এখানে ব্যাভিচারী দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- যার সন্তান নেই। এমনকি যদি সে তওবা করার পরে বিয়ে করে তাকে তবুও সে সন্তান তার হবে না। কেননা সেটা তার জন্য তার অবৈধ সন্তান ছিল। সে তার ওয়ারিশও হবে না, যদিও সে তার সন্তান বলে দাবি করে। কারণ সে বৈধ সন্তান নয়”। (ফাতাওয়ায়ে ইসলামিয়া; খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ৩৭০)
.
সৌদি স্থায়ী কমিটির সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম (রাহিমাহুল্লাহ) তার ফাতাওয়ায় বলেন,”ব্যাভিচারীর (পুরুষের) বীর্য থেকে সৃষ্ট শিশুকে ব্যভিচারীর সন্তান বলা হয় না”।(ফাতাওয়া ইব্রাহিম; খন্ড: ১১ পৃষ্ঠা: ১৪৬)। শাইখ ইবনে জিবরীন (রাহিমাহুল্লাহ)-এর ব্যাপারে বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠের দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে, অবৈধ সন্তান পুরুষ হোক বা মহিলা হোক তাকে যিনাকার পুরুষের দিকে সম্মোধন করা উচিত নয়, এবং তার সন্তান হিসাবে বর্ণনা করাও উচিত নয়। বরং তাকে তার মায়ের দিকে সম্মোধন করা উচিত; সে তার জন্য একজন মাহরাম এবং তার অন্যান্য সন্তানদের মত তার থেকে উত্তরাধিকারী হতে পারে।
.
❑(৪). অবৈধ যিনা ব্যাভিচারের মাধ্যমে যদি কোন নারী গর্ভবতী হয়, তাহলে যার সাথে সে যিনা করেছে সমাধান হিসাবে উভয়ের মধ্যে বিবাহ কি শরীয়ত সম্মত?
.
মূলত যিনা-ব্যভিচার হদযোগ্য কবীরা গুনাহ। আল্লাহ তা‘আলা বার বার এই জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।(সূরা বানী ইসরাঈল: ৩২; সূরা আন-নূর: ২)। যিনা করা তো দুরের কথা আল্লাহ তার কাছে যেতেও নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন,وَ لَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ کَانَ فَاحِشَۃً ؕ وَ سَآءَ سَبِیۡلًا “আর যিনার ধারে-কাছেও যেও না, নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ”। (সূরা বনি ইসরাইল: ১৭/৩২)। এই আয়াতে “যিনার কাছেও যেয়ো না” এ হুকুম ব্যক্তির জন্য এবং সামগ্রিকভাবে সমগ্র সমাজের জন্যও। আয়াতে ব্যাভিচার হারাম হওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ,

(এক). এটি একটি অশ্লীল কাজ। মানুষের মধ্যে লজ্জা-শরম না থাকলে সে মনুষ্যত্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। অতঃপর তার দৃষ্টিতে ভালো-মন্দের পার্থক্য লোপ পায়।

(দুই). সামাজিক অনাসৃষ্টি। ব্যাভিচারের কারণে এটা এত প্রসার লাভ করে যে, এর কোন সীমা-পরিসীমা থাকে না। এর অশুভ পরিণাম অনেক সময় সমগ্ৰ গোত্র ও সম্প্রদায়কে বরবাদ করে দেয়। এ কারণেই ইসলাম এ অপরাধটিকে সব অপরাধের চাইতে গুরুতর বলে সাব্যস্ত করেছে। এবং এর শাস্তি ও সব অপরাধের শাস্তির চাইতে কঠোর বিধান করেছে। কেননা, এই একটি অপরাধ অন্যান্য শত শত অপরাধকে নিজের মধ্যে সন্নিবেশিত করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যিনাকারী ব্যক্তি যিনা করার সময় মুমিন থাকে না। চোর চুরি করার সময় মুমিন থাকে না। মদ্যপায়ী মদ্যপান করার সময় মুমিন থাকে না”। (সহীহ মুসলিম হা/৫৭)। তাই অবৈধ যিনা-ব্যাভিচার থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক।
.
দ্বিতীয়ত: ইসলামী শরী‘আতে যিনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই অবিবাহিত কোন পুরুষ যদি ব্যভিচার করে, তাহলে তাকে একশ বেত্রাঘাত করা হবে এবং এক বছরের জন্য এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে হবে।(দেখুন সূরা আন-নূর: ২; সহীহ মুসলিম হা/১৬৯০; আবু দাঊদ হা/৪৪১৫; তিরমিযী হা/১৪৩৪)। আর বিবাহিত নারী-পুরুষ যিনায় লিপ্ত হলে তাকে রজম করতে হবে। তথা পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে।(সহীহ বুখারী হা/৫২৭০-৫২৭১, ৬৮২৫; সহীহ মুসলিম হা/১৬৯১)। এতদ্ব্যতীত আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা না করলে ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবে।যেমন:সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আমরা সম্মুখের দিকে অগ্রসর হলাম। সেখানে একটি গর্তের নিকটে এসে পৌঁছলাম, যা তন্দুরের মতো ছিল। এটার উপরাংশ ছিল সংকীর্ণ ও ভিতরের অংশটি ছিল প্রশস্ত। তার তলদেশে আগুন জ্বলছিল। আগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরের দিকে উঠছে, তখন তার ভিতরে যারা রয়েছে তারাও উপরে উঠে আসছে এবং গর্ত হ’তে বাইরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। আর যখন অগ্নিশিখা কিছু স্তিমিত হচ্ছে তখন তারাও পুনরায় ভিতরের দিকে চলে যাচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে কিছু সংখ্যক উলঙ্গ নারী-পুরুষ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা বললেন,وَالَّذِيْ رَأَيْتَهُ فِي الثَّقْبِ فَهُمُ الزُّنَاةُ، “আর (আগুনের) তন্দুরে যাদেরকে দেখেছেন তারা হল ব্যভিচারী (নারী-পুরুষ)।(তিরমিযী হা/৭০৪৮; মিশকাত হা/৪৬২১ আরো দেখুন সহীহ বুখারী হা/৭০৪৭; সহীহ মুসলিম হা/২২৭৫)। আর ধর্ষণের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড দেয়া এটাই বিশুদ্ধ মত।(সূরা আল-মায়েদাহ: ৩৩)। তবে এই শাস্তি বাস্তবায়ন করবে মুসলিম শাসক কিংবা তার কোন প্রতিনিধি।কোন ব্যক্তি বা সামাজিক দায়িত্বশীল তা বাস্তবায়ন করবে না।(দেখুন ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ, ২২তম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৫)। যেহেতু আমাদের দেশে ইসলামী শাসক নেই আর যিনা-ব্যভিচার যেহেতু কাবীরা গুনাহ, সেহেতু তওবা ব্যতীত এ গুনাহ মাফ হয় না। তাই ব্যাভিচারী ব্যক্তি ঐ গর্হিত কর্ম থেকে ফিরে আসার জন্য অনুতপ্ত হয়ে খালেস অন্তরে তওবা করবে তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। এমতাবস্থায় কর্তব্য হলো, যিনাকার নারী-পুরুষের দ্রুত উত্তম তওবাহ করা। আর তওবার শর্ত হচ্ছে,ই জঘন্যকর্ম পরিত্যাগ করা
লজ্জিত হওয়া, অনুতপ্ত হওয়া এবং এ। আর ভবিষ্যতে কখনো এ ধরনের হারাম কর্মে জড়িত না হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। যে ব্যক্তি স্বচ্ছ ও পবিত্র অন্তরে একনিষ্ঠ ও একাগ্রতার সাথে খালেস তওবা করে আল্লাহ তাঁর তওবা কবুল করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “(হে নবী!) আপনি বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু”।(সূরা আয-যুমার: ৫৩; সূরা আল-ফুরক্বান: ৬৮-৭০; ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ৯ম খণ্ড,পৃষ্ঠা: ৩৬৪; ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-২৭১১৩)
.
তৃতীয়ত: এখন যিনাকার নারী পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে কিনা এ মাসআলায় প্রসিদ্ধ দুটি মত রয়েছে। সেগুলো হলো-
.
(১). অধিকাংশ সালাফদের বিশুদ্ধ মতে, স্বাভাবিক অবস্থায় এই বিবাহ জায়েয নয়। কেননা গর্ভবতী নারীর সাথে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বৈধ নয়, এবং যিনার সন্তান হওয়ায় উক্ত সন্তানও বৈধ নয়। (উসাইমীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়া; খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ৩৩০, ফাতওয়াটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে)
.
(২). অপর একদল আলেমদের মতে,যিনাকার নারী- পুরুষ যদি একনিষ্ঠ ভাবে তওবা করে তাহলে তাদের বিবাহ বৈধ। হাম্বলী মাজহাবের মতে যদিও তারা তওবা না করে তবুও বিবাহ বৈধ।(আল ইনসাফ; খন্ড: ৮ পৃষ্ঠা: ১৩২, কাশশাফুল কিনা; খন্ড: ৫ পৃষ্ঠা: ৮৩)। দলিল হচ্ছে- আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করবে না এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া বিয়ে করবে না। আর মুমিনদের ওপর এটা হারাম করা হয়েছে।”(সূরা আন-নূর: ৩)
.
ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতে সন্তানও পিতা-মাতার দিকে সম্পৃক্ত হবে। কারণ এই সন্তানের দাবীদার অন্য কেউ নয়। (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৯/১২২; ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৫/৩৮১-৮২)। এরূপ পরিস্থিতিতে বিবাহ বৈধ হওয়ার পক্ষে কতিপয় সাহাবী ও তাবেঈ থেকে আসার বর্ণিত হয়েছে। আর তাদের মাঝে বিবাহের বিষয়টি এমন যে, বিচারক তাদের মাঝে বৈবাহিক বন্ধন সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করবে বা বিবাহের প্রস্তাব প্রদান করবে। তবে যদি তাদের কেউ বিবাহে অসম্মতি ব্যক্ত করে তাহলে, জোরপূর্বক তাদের মাঝে বিবাহ করানো যাবে না। উবায়দুল্লাহ ইবনু ইয়াযিদ (রাহিমাহুল্লাহ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন,”একজন ছেলে একজন মেয়ের সাথে অপকর্ম করল। অতঃপর উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) যখন মক্কায় আগমণ করলেন তখন তার সামনে এই মামলাটি পেশ করা হলো। তিনি তাদের দুইজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, তারা দুইজন এই অপকর্মের স্বীকারক্তি প্রদান করল। তিনি তাদের দুইজনকে (যেনার শাস্তি) বেত্রাঘাত করলেন এবং তাদেরকে একত্রিত করার (বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার) আশা ব্যক্ত করলেন। ছেলেটি তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন”। (মুসনাদ আশ-শাফেঈ, হা/৩৮; সুনানুল কুবরা, হা/১৩৬৫৩)। অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে,উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাদের সম্মান ও ইজ্জতের বিষয়টি ভেবে তাদের মাঝে বিবাহ করানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন কিন্তু ছেলে অসম্মতি থাকায় তিনি আর কিছু বলেননি।(আরো বিস্তারিত জানতে বায়হাক্বী হা/২১২৬৩; মুওয়াত্ত্বা হা/২২, ২৮৮৯; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৭৪১৭; মাওয়ার্দী, আল-হাবিল কাবীর ৯/১৮৯)। ইবনু তায়মিয়াহ, হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) প্রমুখও উক্ত অভিমত সমর্থন করেছেন।(মাজমূ‘উল ফাতাওয়া; খন্ড: ৩২পৃষ্ঠা: ১১০; যাদুল মা‘আদ ৫/৩৮১-৮২; উসাইমীন আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/১২৭)
.
সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইব্রাহীম (রাহিমাহুল্লাহ)-কে ব্যাভিচারিণী নারীর সাথে বিবাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
.
উত্তরে তিনি বলেছিলেন; لا يجوز الزواج من الزانية حتى تتوب … وإذا أراد رجل أن يتزوجها وجب عليه أن يستبرأها بحيضة قبل أن يعقد عليها النكاح وإن تبين حملها لم يجز له العقد عليها إلا بعد أن تضع حملها …”তাওবা না করা পর্যন্ত ব্যভিচারিণীর সাথে বিবাহ বৈধ নয়। যদি কোনো পুরুষ তাকে বিয়ে করতে চায় তাহলে বিবাহের পূর্বে একটি ঋতুস্রাব অতিক্রম হতে দেবে। পেটে বাচ্চা আছে বলে প্রমাণিত হলে প্রসবের আগ পর্যন্ত বিবাহ বৈধ হবে না”। (আল ফাতওয়া ওয়াল জামেয়া লিল মারআতিল মুসলিমা; খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৫৮৪)
.
❑(৫). অবৈধ যিনা ব্যাভিচারের মাধ্যমে যে সন্তান জারজ বলে সাব্যস্ত হবে তার পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা বা অধিকার কী হবে?
.
ইসলামি শরীয়তে বংসগত সম্পর্ক স্থাপিত হলে পরস্পরের মধ্যে কতিপয় বিধান সাবস্ত হয় যেমন: বুকের দুধ পান কারনো, রক্ষনাবেক্ষন, অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার, ইত্যাদি। যেহেতু ব্যবিচারী পুরুষের সাথে জারজ সন্তানের বংশ সাব্যস্ত হচ্ছে না, সেহেতু শরীয়তের দলিল ছাড়া তাকে তার পিতার দিকে সম্মোধন করাও উচিত নয়। তাই অবৈধ সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিপালনসহ ধর্মীয় প্রায় সকল বিধান বৈধ সন্তানের অনুরূপ। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাতা সেই সন্তানের দায়িত্ববার বহন করবে। কেননা, এখানে সন্তানের কোনো দোষ নেই; বরং দোষ তার মা-বাবার, তাই তার বৈধ অধিকার ইসলামে সাব্যস্ত রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে অন্য সন্তানদের থেকে জারজ সন্তানের বিধি বিধানে পার্থক্যও রয়েছে। যেমন:- তার বংশ মায়ের সাথে সাব্যস্ত হবে। যেহেতু বাবা অবৈধ, তাই অবৈধ বাবার সঙ্গে সম্পর্কিত হবে না। কেননা রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ “বিছানা যার সন্তান তার”। (সহীহ বুখারী,হা/২০৫৩) সুতরাং জারজ সন্তানের ভরণ-পোষণ ও লালন-পালনের দায়িত্বশীল হবে তার মা।মা তার আকিকা ব্যবস্তা করবে।তবে জারজ সন্তানের আকিকার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা উত্তম, যাতে সন্তানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন না হয়। সবশেষ এই সন্তানের বংশ যেহেতু মায়ের থেকে সাব্যস্ত, তাই সে মা ও মায়ের নিকটাত্মীয়দের উত্তরাধিকারী হবে।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মায়ের জন্য তার ব্যভিচারজাত সন্তানের আকিকা দেয়া কি জায়েয আছে? এবং এ সন্তানের কি ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার আছে?
.
জবাবে তিনি বলেন,نعم ، لها أن تعق ، يستحب لها أن تعق عن ولدها ، وعليها أن تنفق عليه ، إذا قدرت ، فإذا ما قدرت : يسلم للحاضنات في الدولة ، وإذا قدرت : تربيه وتحسن إليه ، وتعق عنه ، ويلزمها أن تربيه وأن تتوب إلى الله مما فعلت ، وهو منسوب إليها .والذي زنا بها : عليه التوبة ، وليس عليه شيء من النفقة ، وليس هو ولدا له ، ولد زنا ، عليه التوبة إلى الله ، والولد لها هي ، ينسب إليها ، وعليها نفقته”.

“হ্যাঁ; মা তার আকিকা দিবেন। তার সন্তানের আকিকা দেয়া তার জন্য মুস্তাহাব এবং এ সন্তানের ভরণপোষণ বহন করা তার উপর ওয়াজিব; যদি তিনি সামর্থ্যবান হন। যদি সামর্থ্য না রাখেন তাহলে রাষ্ট্রীয় প্রতিপালনাগারে হস্তান্তর করবেন। আর সক্ষম হলে তাকে প্রতিপালন করবে, তার প্রতি অনুগ্রহ করবে, তার পক্ষ থেকে আকিকা দিবে। তাকে প্রতিপালন করা তার উপর আবশ্যক। এবং যা করে ফেলেছেন সেটা থেকে আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা করবেন। এই সন্তানকে তার দিকেই সম্বন্ধিত করা হবে। আর যে পুরুষ তার সাথে ব্যাভিচার করেছে তার উপর আবশ্যক তাওবা করা। তবে তার উপর ভরণপোষণ দেয়া আবশ্যক নয় এবং এটি তার বাচ্চা নয়; জারজ বাচ্চা। সন্তানটি এই মহিলার এবং ভরণপোষণের দায়িত্ব তার”। (বিন বায, মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড/২৮; পৃষ্ঠা: ১২৪ এবং ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২২৮৫৩৮)
.
❑ (৬). নিজের ব্যাভিচারে জন্মগ্রহণ করা মেয়েকে বিবাহ করার বিধান কী?
.
নিজের ব্যাভিচারে জন্মগ্রহণ করা মেয়েকে বিবাহ করা যাবে কিনা এই মাসআলায় কিছুটা মতানৈক্য থাকলেও কুরআন-হাদীস এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ইমামদের অধিক বিশুদ্ধ মতে নিজের ব্যাভিচারের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করা কন্যাকে বিবাহ করা যাবে না। কেননা যিনার ফলে যে সন্তান জন্ম লাভ করেছে সেই মেয়েটি জারজ হলেও মূলত সে তারই অংশবিশেষ। পিতৃপরিচয় গোপন থাকলেও মেয়েটি তারই সন্তান। তাই তার বাবা, তার আত্মীয়-স্বজনের মাঝেই বিবাহের ক্ষেত্রে হারামের বিধান জারি থাকবে। এটাই অধিকাংশ আলেমদের মত। এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষনীয় আর তা হচ্ছে, নিজ ব্যাভিচারের ফলে জন্মগ্রহণকারী সন্তানকে বিবাহ করা হারাম। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সে অবৈধ পিতার জন্য মাহরাম এবং তার সামনে পর্দা করতে হবেনা বরং সঠিক কথা হচ্ছে, সে তার নন-মাহরাম। তার সামনে তাকে পরিপূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,الحرام المحض : وهو الزنا : يثبت به التحريم ، ولا تثبت به المحرمية ولا إباحة النظر “যিনার মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে বিবাহে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু এটি তাকে মাহরাম করে না বা (একে অপরের দিকে তাকানোর অনুমতি দেয়না)” (ইবনে কুদামাহ আল-মুগনী; খন্ড: ৭ পৃষ্ঠা: ৪৮২)। তিনি আরোও বলেছেন, ويحرم على الرجل نكاح بنته من الزنا ، وأخته ، وبنت ابنه ، وبنت بنته ، وبنت أخيه ، وأخته من الزنا ، وهو قول عامة الفقهاء “একজন ব্যক্তি একজন নারীর সাথে যিনা করেছে তার জন্য সেই নারীর মেয়েকে, তার বোনকে, তার ছেলের মেয়েকে, তার মেয়ের মেয়েকে, তার ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করা হারাম। এটা অধিকাংশ ফকীহের মত”।(ইবনে কুদামাহ আল মুগনী; খন্ড: ৭ পৃষ্ঠা: ৪৮৫)
.
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮]-কে যিনাকারী কন্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, সে কি তার বাবাকে বিয়ে করতে পারবে?
উত্তরে বলেছেন: الحمد لله ، مذهب الجمهور من العلماء أنه لا يجوز التزويج بها ، وهو الصواب المقطوع به. “আলহামদুলিল্লাহ। জমহুর আলেমগনের নিকটে তার সাতে বিবাহ জায়েজ নাই। আর এটাই চুড়ান্ত এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি”।(ইবনে তাইমিয়া মাজমুউল ফাতাওয়া; খন্ড: ৩২ পৃষ্ঠা: ১৩৪)
.
মাওসুয়াতুল ফিক্বহিয়্যাহ এ বর্ণিত হয়েছে,ويحرم على الإنسان أن يتزوّج بنته من الزّنا بصريح الآية : حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ ) لأنّها بنته حقيقةً ولغةً , ومخلوقة من مائه , ولهذا حرّم ابن الزّنا على أمّه . وهذا هو رأي الحنفيّة وهو المذهب عند المالكيّة , والحنابلة. “একজন ব্যক্তির জন্য ব্যভিচার থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য তার মেয়েকে বিয়ে করা হারাম। যা এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহ বলেন, তোমাদের মা ও কন্যারা তোমাদের জন্য হারাম”..(সূরাতুন নিসা: ২৩)। কারণ, সে তার বাস্তবে মেয়ে। তার বীর্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এটা হানাফী,মালেকী এবং হাম্বলী মাজহাবের মত। (মাওসুয়াতুল ফিক্বহিয়্যাহ; খন্ড: ৩৬ পৃষ্ঠা: ২১০)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে আশা করি জারজ সন্তান সম্পর্কে ইসলামি শরীয়তের যাবতীয় বিধি বিধান সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। যিনা ব্যভিচার বড় ধরনের কবিরা গুনাহ। এতে কেবল ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না; বরং পুরো সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যাবতীয় অবৈধ সম্পর্ক থেকে বাঁচতে পরিবারে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলতে হবে এবং যথার্থ আল্লাহভীরু হ’তে হবে। আল্লাহ সবাইকে এই জঘন্য পাপ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দিন-আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।

______________________
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল আল মাদানী। দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার সৌদি আরব।