হাদিস থেকে বাছাইকৃত উচ্চারণ ও অর্থসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি দুআর মধ্যে ১৪তম দুআ

আজকের দু’আটি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) পছন্দ করতেন এবং সমস্যার সম্মুখীন হলে দু’আটি পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন।
▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: আজকের দু’আটি শুরু করার পূর্বে দু’আটি সম্পর্কে চমৎকার কিছু তথ্য জেনে নেব। হাদীসটি বর্ননা করেছেন রাসূল (ﷺ) এর প্রখ্যাত সাহাবী আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এবং আবূ সালামাহ রহ: তারা বলেন: আমি উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিঞ্জেস করলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা যখন (তাহাজ্জুদ) সলাত আদায় করতেন তখন কীভাবে শুরু করতেন অর্থাৎ (তাকবীরে তাহরীমার পর এবং ফাতিহার আগে কি পাঠ করতেন) জবাবে আম্মাজান আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ রাতে যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতে উঠতেন তখন এ (নিচে উল্লেখ করেছি) দু’আটি পড়ে সলাত শুরু করতেন। দু’আটি সালাতে বিশেষ করে তাহাজ্জুদসহ যাবতীয় নফল সালাতে সানা হিসেবে পড়া যায়। এবং আলেম উলামাহ, মুফতি, ছাত্র-ছাত্রীরা যখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন: কুরআন হাদীসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ফিকহী ফাতওয়া, কিংবা বইপত্রের পড়া ভুলে গেলে তা স্মরণে আনার জন্য এই দু’আটি পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। আমাদের সালাফ শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) যখন কঠিন সমস্যায় পড়তেন তখন দু’আটি পড়তেন। দু’আটির মূল আরবী হচ্ছে:
.
‏ “‏ اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ ‏”‏
.
মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রব্বা জিবরাঈলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইসরাফীলা ফাত্বিরাস সামাওয়াতি ওয়ার আরদি আলিমাল গাইবি ওয়াশ্ শাহাদাতি আন্তা তাহকুমু বাইনা ইবা-দিকা ফীমা কা-নূ ফীহি ইয়াখতালিফূন, ইহদিনী লিমা উখতুলিফা ফীহি মিনাল হাক্বি বিইযনিকা, ইন্নাকা তাহদী মানতাশা-ঊ ইলা সিরাতিম মুস্তাক্বীম। (আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন, না হয় ভুল শিখতে হবে)।

অর্থ: হে আল্লাহ! জিবরাঈল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের রব্ব, আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, গায়েব ও প্রকাশ্য সব কিছুর জ্ঞানী, আপনার বান্দাগণ যেসব বিষয়ে মতভেদে লিপ্ত আপনিই তার মীমাংসা করে দিবেন। যেসব বিষয়ে মতভেদ হয়েছে তন্মধ্যে আপনি আপনার অনুমতিক্রমে আমাকে যা সত্য সেদিকে পরিচালিত করুন। নিশ্চয় আপনি যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করেন। (সহীহ মুসলিম হা/১৬৯৬ আবু দাউদ হা/ ৭৬৭ ইবনে মাজা হা/১৩৫৭)
.
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন,আমাদের শাইখ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) অধিকাংশ সময়:-
“اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ……
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! জিবরাঈল,মীকাঈল ও ইসরাফীলের রব্ব, আসমান ও যমীনের স্রষ্টা,…দু’আটি প্রায়ই পড়েতেন এবং শাইখুল ইসলাম যখন কোন বড় ধরনের বিপদে পড়তেন তখন বলতেন:
يا معلم إبراهيم! علمني ويكثر الاستعانة بذلك اقتداء بمعاذ بن جبل رضى الله عنه
“হে ইব্রাহিমের শিক্ষক,আপনি আমাকে শিখিয়ে দেন। এর মাধ্যমে তিনি মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা:)-এর অনুসরণ করে অধিক সাহায্য প্রার্থনা করতেন”।(সংক্ষেপিত ইবনুল ক্বাইয়িম ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন খন্ড: ৬ পৃষ্ঠা: ১৯৭)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন:

‏ “‏ اللَّهُمَّ
(আল্লাহুমা) অর্থ: হে আল্লাহ!
.
رَبَّ جِبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ
(রব্বা জিবরাঈলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইসরাফীলা) অর্থ: জিবরাঈল,মীকাঈল ও ইসরাফীলের রব্ব,
..
فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ
(ফাত্বিরাস সামাওয়াতি ওয়ার আরদি) অর্থ: আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা।
.
عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ
(আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাতি) অর্থ: প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়সমূহের জ্ঞানের অধিকারী।
.
أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ
(আন্তা তাহকুমু বাইনা ইবা-দিকা) অর্থ: আপনি মীমাংসা করে দিবনে (যখন) আপনার বান্দারা
.
فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ
(ফীমা কা-নূ ফীহি ইয়াখতালিফূন) অর্থ: যখন/যেসব বিষয়ে (তারা) মতভেদে লিপ্ত।

اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ
(ইহদিনী লিমা উখতুলিফা ফীহি) অর্থ: (সত্যের দিকে) আপনি আমাকে পরিচালিত করুন যেসব বিষয়ে মতভেদ (হয়েছে)
.
مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ
(মিনাল হাক্বি বিইযনিকা) অর্থ: আপনার অনুমতিক্রমে সত্যের দিকে।
.
إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ
(ইন্নাকা তাহদী মানতাশা-ঊ) অর্থ: নিশ্চয় আপনি যাকে ইচ্ছা পরিচালিত করেন।
.
إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ ‏”‏
(ইলা সিরাতিম মুস্তাক্বীম) অর্থ: সরল পথ প্রদর্শন করেন।(নোট: আরবি বাক্য ভেঙ্গে ভেঙ্গে হুবহুব অনুবাদ করা কঠিন তাই বুঝে পড়বেন ইনশাআল্লাহ।)
.
প্রিয় পাঠক! দু’আটি একটু বড় হলেও খুবই সুন্দর এবং চমৎকার একটি দু’আ। দু’আটির অর্থও খুবই সুন্দর ও ব্যাপক দু’আটিতে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয় চাওয়া হয়েছে। দু’আটিতে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
দু’আটি রাসূল (ﷺ) তাহাজ্জুদে সানা হিসেবে পড়তেন। তাই প্রত্যেকের দু‘আটি মুখস্থ করা উচিত এবং নিয়মিত পড়া উচিত। এটি শুধু সানা হিসেবেই নয় বরং সালাতর সিজদায়, যেকোন সমস্যায় কিংবা শত্রু কর্তৃক কথার আক্রমণের শিকার হলে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য দু’আটির মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে পারেন। সালাতের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন। এবং অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রাখবেন। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুক। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।