স্বামী-স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত না হয়ে হাত দিয় পরস্পর একে অপরকে উপভোগ করলে কী গোসল ফরজ হবে

উত্তর: শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত দুইটি বিষয়ের কোন একটি পাওয়া গেলে গোসল ফরজ হবে।

(১). খতনার স্থানদ্বয় তথা যৌনাঙ্গদ্বয় একত্রিত হওয়া। অর্থাৎ পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ (খাতনার স্থান পর্যন্ত অংশ- এতটুকু পরিমাণও) যদি স্ত্রী লিঙ্গে প্রবেশ করে তবে পুরুষ-মহিলা দু’জনেরই গোসল ফরয হয়ে যাবে। এটাই সঙ্গম বা সহবাস। এমনকি উত্তেজনা ছাড়া বা বীর্যপাত না হলেও।কেননা এক্ষেত্রে বীর্যপাত হওয়া শর্ত নয়।হাদীসে এসেছে যে, পুরুসের লিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গের সাথে একত্রিত হলেই গোসল ফরয হয়ে যায়। আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:إِذَا الْتَقَى الْخِتَانَانِ وَتَوَارَتِ الْحَشَفَةُ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ ‏”‏ ‏.‏ “যদি খতনার স্থানদ্বয় মিলিত হয় এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ ভিতরে ডুবে যায় তাহলে বীর্যপাত হোক বা না-হোক গোসল ফরজ হবে।”(সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৬১১; তিরমিজি হা/১০৯; সহীহ আল-জামি’ হা/৩৮৬) অর্থাৎ নারী পুরুষের দু বিপরীত লিঙ্গ পরস্পর মিলিত হলে এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ অদৃশ্য হয়ে গেলেই গোসল ফরজ হয়। অপর বর্ননায় আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, إِذَا جَلَسَ بَيْنَ شُعَبِهَا الأَرْبَعِ، ثُمَّ اجْتَهَدَ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ وَإِنْ لَمْ يَنْزِلْ.”তোমাদের কেউ স্ত্রীলোকের চার শাখার (দুই হাত ও দুই পায়ের) সম্মুখে বসে এবং সহবাসের চেষ্টা করলে গোসল ফরয হয়, যদিও সে বীর্যপাত না করে”।(সহীহ মুসলিম হা/৩৪৮; মিশকাত হা/৪৩০)
.
(২). বীর্যপাত হওয়া। যদিও তা এক ফোঁটা বের হয়। এমনকি সেটা যদি যৌনাঙ্গদ্বয় একত্রিত হওয়া বা সহবাস ব্যতিরেকে হাত দিয়ে সম্ভোগ করার কারণে সংঘটিত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রেও গোসল ফরজ হবে। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‏ “‏ إِنَّمَا الْمَاءُ مِنَ الْمَاءِ ‏”‏ পানির কারণে পানি অপরিহার্য। [সহিহ মুসলিম, ১৫১; ই.ফা. ৬৬৭, ই.সে. ৬৮২) অর্থাৎ পানি তথা বীর্য নির্গত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গোসল ফরজ হয়। আর এটি সহবাস ছাড়া শুধুমাত্র হাতের সাহায্যে হলেও গোসল করা ওয়াজিব। কিন্তু স্বামী স্ত্রী একে অপরের গোপনাঙ্গ স্পর্শের ফলে বীর্যপাত না হলে অযু ভঙ্গ হবে এক্ষেত্রে সালাতের জন্য অযু করা আবশ্যক।(বিস্তারিত জানতে ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৭৫২৯)
.
জেনে রাখা ভাল যে, স্ত্রী সহবাস, স্বপ্নদোষ ইত্যাদির কারণে গোসল ফরজ হলে তৎক্ষণাৎ গোসল করা অপরিহার্য তথা ওয়াজিব নয়, বরং ঘুম, ব্যস্ততা কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনে বিলম্ব করা জায়েজ রয়েছে ইনশাআল্লাহ। তবে রাতে স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে ঘুমের আগে অযু করে নেওয়া মুস্তাহাব তথা উত্তম। শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেন, যে এই বিষয়ে (অর্থাৎ সহবাসের পর অযু করা মুস্তাহাব) ইমামগনের মধ্যে ঐক্যমত ছিল।(আল কাফী খন্ড; ১ পৃষ্ঠা; ১৭৩ নববী মাজমূ‘ শারহুল মুহায্যাব, খন্ড; ১ পৃষ্ঠা; ৩৩ ইবনে কুদামাহ আল মুগনী; খন্ড; ১ পৃষ্ঠা: ২২৯) তবে ফজরের নামাজ যেন ঠিক সময়ে পড়া যায় সে জন্য দেরি না করে গোসল করে নেয়া কর্তব্য। আর অসুস্থ থাকলে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করতে হবে। কেননা সালাতের জন্য পাক-পবিত্রতা অর্জন করা পূর্বশর্ত। এবং সালাত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সালাত আদায় করা ফরজ।(সূরা নিসা; ৪/১০৩)। আল্লাহই ভাল জানেন।
________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।