হে আমার রব আমাকে বানিয়ে দাও তোমার প্রতি চির কৃতজ্ঞ চমৎকার একটি দুআ

ভূমিকা: মহান আল্লাহ অনেক আমলের প্রতিদান তাঁর ইচ্ছার সাথে যুক্ত করে রেখেছেন। চাইলে তিনি সওয়াব দিবেন, না চাইলে না দিবেন। যেমন দু‘আ কবুল করা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, بَلْ إِيَّاهُ تَدْعُونَ فَيَكْشِفُ مَا تَدْعُونَ إِلَيْهِ إِنْ شَاءَ “বরং তখন তো তোমরা কেবল তাঁকেই ডাকবে। অতঃপর তোমরা যে বিপদের জন্য তাঁকে ডেকেছিলে তিনি ইচ্ছা করলে তা দূরও করে দেন”।(সূরা আন‘আম ৬/৪১)। আবার ক্ষমা করা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, يَغْفِرُ لِمَنْ يَشَاءُ “তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন”(সূরা আলে ইমরান ৩/১২৯)। রিজিক প্রদান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, وَاللهُ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ “আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিজিক দান করে থাকেন” (সূরা বাক্বারাহ ২/২১২)। তওবা সম্পর্কে বলা হয়েছে,وَيَتُوبُ اللهُ عَلَى مَنْ يَشَاءُ “আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার তওবা কবুল করেন” (সূরা তওবা ৯/১৫)। অপরদিকে আল্লাহ ইচ্ছা যুক্ত করা ছাড়াই শোকরকে নিঃশর্তভাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, سَنَجْزِي الشَّاكِرِينَ “আমরা সত্বর কৃতজ্ঞ বান্দাদের পুরস্কৃত করব” (আলে ইমরান ৩/১৪৫)। অন্য আয়াতে আছে, وَسَيَجْزِي اللهُ الشَّاكِرِينَ ‘আল্লাহ সত্বর তার কৃতজ্ঞ বান্দাদের পুরস্কৃত করবেন’ (আলে ইমরান ৩/১৪৪)। তিনি আগের মতো বলেননি যে,سيجزي الشاكرين إن شاء ‘তিনি চাইলে শোকরকারীদের অচিরেই প্রতিদান দিবেন’। অথবা বলেননি, سيجزي إن شاء الشاكرين ‘অচিরেই তিনি ইচ্ছা হ’লে শোকরকারীদের প্রতিদান দিবেন। আজ আমরা এমন একটি চমৎকার দোয়া শিখব যার শুরুতেই রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার কথা বলে গেছে, হাদীসটি বর্ননা করেছেন,যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি, উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) [মৃত: ৬৮ হি.] তিনি বলেন, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আয় বলতেন:
.
رَبِّ اجْعَلْنِيْ لَكَ شَكَّارًا لَكَ ذَكَّارًا لَكَ رَهَّابًا لَكَ مُطِيْعًا إِلَيْكَ مُخْبِتًا إِلَيْكَ أَوَّاهًا مُنِيْبًا
.
কাছাকাছি উচ্চারণ: রাব্বিজ‘আলনি লাকা শাক্কা-রা, লাকা যাক্কা-রা, লাকা রাহহা-বা, লাকা মুত্বী‘আ, ইলাইকা মুখবিতা, ইলাইকা আওয়া-হাম মুনীবা। (আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, অন্যথায় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে)।
.
অর্থ: হে আমার রব! আমাকে বানিয়ে দাও—তোমার প্রতি চির কৃতজ্ঞ; তোমাকে সদা স্মরণকারী; তোমার ভয়ে সদা ভীত; তোমার অত্যন্ত অনুগত; তোমার প্রতি বিনয়ী এবং তোমার দিকে আন্তরিকভাবে প্রত্যাবর্তনকারী।(মুসনাদে আহমেদ হা/১৯৯৮; তিরমিযি,হা/ ৩৫৫১; আবু দাউদ হা /১৫১০; ইবনে মাজাহ হা/৩৮৩০; হাদিসটি সহিহ]
.

এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন:
.
رَبِّ اجْعَلْنِيْ
(রাব্বিজ‘আলনি)

অর্থ: হে আমার রব! আমাকে বানিয়ে দাও,
.
لَكَ شَكَّارًا لَكَ ذَكَّارًا
(লাকা শাক্কা-রা, লাকা যাক্কা-রা)

অর্থ: তোমার প্রতি চির কৃতজ্ঞ, তোমাকে সদা স্মরণকারী।
.
لَكَ رَهَّابًا لَكَ مُطِيْعًا
(লাকা রাহহা-বা, লাকা মুত্বী‘আ)

অর্থ: তোমার ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত, তোমার অনুগত,
.
إِلَيْكَ مُخْبِتًا
(ইলাইকা মুখবিতা)

অর্থ: তোমার প্রতি বিনয়ী,
.
إِلَيْكَ أَوَّاهًا مُنِيْبًا
(ইলাইকা আওয়া-হাম মুনীবা)

অর্থ: তোমার দিকে আন্তরিকভাবে প্রত্যাবর্তনকারী।
.
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত দু’আটি আরো একটু বড় ছিল সেখান থেকে চমৎকার ও অর্থবহ অংশটুকু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই চাইলে সুন্দর এই দু’আটি মুখস্ত করে (বিশেষত নফল) নামাজের সিজদায়, নামাজের সালাম ফেরানোর আগে, দু‘আ কবুলের বিশেষ সময়ে কিংবা যেকোনো দু‘আর মধ্যে পড়তে পারি। আনুষ্ঠানিক দু‘আ ছাড়াও সাধারণভাবে এসব বাক্য পড়তে পারি। নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন দু’আ পড়ার সময় অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখবেন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।