স্ত্রী নফল সিয়াম পালনকালে সিয়াম না-থাকা স্বামী তার সাথে সহবাস করেছে বা সহবাস করতে চাচ্ছে শরীয়তের দৃষ্টিতে এর হুকুম কি

উত্তর: বিবাহিত নারীদের নফল (শাওয়াল) কিংবা কাযা সিয়াম পালন সংক্রান্ত বিষয়টি আমরা তিনটি পয়েন্ট আলোচনা করব।
.
▪️প্রথমত: নফল সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি নারী কিংবা পুরুষ উভয়ই নিজের উপর কর্তৃত্বশীল। তার জন্য সিয়াম পূর্ণ করা বা ভেঙ্গে ফেলার অবকাশ রয়েছে। তবে সিয়ামটি না ভেঙ্গে পূর্ণ করাটাই উত্তম। ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনুল কুদামাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যে নফল সিয়াম শুরু করবে, তার জন্য তা পূর্ণ করা মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। সুতরাং তা পরিত্যাগ করলে তার ওপর কাযা নেই। ইবনু ‘উমার ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তারা দু’জনই সিয়াম অবস্থায় সকাল করলেন, অতঃপর সিয়াম ভঙ্গ করলেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, যদি মানতের সিয়াম ও রমাযানের কাযা না হয়, তবে সিয়াম ভঙ্গে কোন সমস্যা নেই। অর্থাৎ- তাতে কোন কাযা নেই। ‘আল্লামা আসকালানী (রহঃ) বলেন, কোন কারণ ছাড়া নফল সিয়াম ভঙ্গ করা জায়িয, এটা জমহূর ‘উলামাগণের মত। আর তারা কাযা ওয়াজিব নয় বরং তা মুস্তাহাব।(মিসকাতুল মাসাবিহ হা/১৯৭৯ ব্যাখ্যা দ্রষ্টব:)
.
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদা আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর জন্য খাবার তৈরী করলাম। তিনি তাঁর অন্যান্য সহচর সহ আমার বাড়িতে এলেন। অতঃপর যখন খাবার সামনে রাখা হল, তখন দলের মধ্যে একজন বলল, ‘আমার রোযা আছে।’ তা শুনে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘তোমাদের ভাই তোমাদেরকে দাওয়াত দিয়ে খরচ (বা কষ্ট) করেছে।’’ অতঃপর তিনি তার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘‘রোযা ভেঙ্গে দাও। আর চাইলে তার বিনিময়ে অন্য একদিন রোযা রাখ।(বাইহাকী ৪/২৭৯, ত্বাবারানী, মু’জাম,আলবানী ইরওয়াউল গালীল হা/১৯৫২)
.
উম্মু হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন ফাতিমা (রাঃ) এলেন এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাম পাশে বসলেন। আর উম্মু হানী (রাঃ) ছিলেন তাঁর ডান পাশে। এ সময় একটি দাসী হাতে একটি পাত্র নিয়ে এলো। এতে কিছু পানীয় ছিল। দাসীটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে পান পাত্রটি রাখল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখান থেকে কিছু পান করে তা উম্মু হানীকে দিলেন। উম্মু হানী (রাঃ)-ও ঐ পাত্র হতে কিছু পান করে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো ইফতার করে ফেলেছি। অথচ আমি সায়িম ছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি রমাযান (রমজান) মাসের কোন সওম বা মানৎ কাযা করছিলে? উম্মু হানী (রাঃ) বললেন, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, নফল সওম হলে কোন অসুবিধা নেই(তিরমিযী ৭৩১, দারিমী ১৭৭৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৩৫০, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৩৫, মুসনাদে আহমাদ হা/ ২৬৮৯৩, সহীহ আল জামি হা/ ৩৮৫৪ সনদ সহীহ)
.
সুতরাং যে ব্যক্তি শাওয়ালের ছয় রোজা রেখেছে সে যদি রোজাটি ভেঙ্গে ফেলতে চায় ভেঙ্গে ফেলতে পারে। ভেঙ্গে ফেলাটা আহার করার মাধ্যমে হতে পারে; সহবাসের মাধ্যমেও হতে পারে; অন্য কোন ভাবেও হতে পারে।এমনকি নফল সিয়াম রাখা অবস্থায় কেউ অসুস্থতা অনুভব করলে তিনিও সিয়াম বঙ্গ করতে পারেন। এবং তারও পরবর্তীতে এই সিয়ামের কাযা আদায় করতে হবেনা।
.
নফল রোজা রাখতে গিয়ে কষ্ট হলে রোজা পূর্ণ করা উত্তম; নাকি ভেঙ্গে ফেলা উত্তম? এমন প্রশ্ন সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ কে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেছেন,নফল রোজাপালনকারীর জন্যে রোজা পূর্ণ করা অথবা ভেঙ্গে ফেলা উভয় সুযোগ রয়েছে। তবে কষ্টকর না হলে রোজা পূর্ণ করাই উত্তম। আর কষ্টকর হলে শরিয়তের সহজতা গ্রহণ করে ভেঙ্গে ফেলা উত্তম।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ২৯৯)
.
শাইখ উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) অপর ফাতওয়ায় বলেন:

” إذا كان الإنسان صائما صيام نفل وحصل له ما يقتضي الفطر فإنه يفطر ، وهذا هو الذي ورد عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه صلى الله عليه وسلم جاء إلى أم المؤمنين عائشة رضي الله عنها فقال ( هل عندكم شيء ؟ ) فقالت : أهدي لنا حيس فقال : ( فأرينيه فلقد أصبحت صائما ). فأكل منه صلى الله عليه وسلم ، وهذا في النفل ، وليس في الفرض . ”

“যদি কোন লোক রোজা রাখে, এরপর এমন কিছু হয় যাতে করে তার রোজা ভাঙ্গাটা পরিস্থিতির দাবী হয়; তাহলে সে রোজা ভেঙ্গে ফেলবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল থেকে এটি জানা যায়। একবার তিনি মুমিনদের মা আয়েশা (রাঃ) এর কাছে এসে বললেন: তোমাদের কাছে কোন খাবার আছে? আয়েশা (রাঃ) বললেন: আমাদেরকে হাইস (একজাতীয় খাবার) হাদিয়া দেয়া হয়েছে। তিনি বললেন: ‘আমাকে দেখাও তো; আমি তো রোজা রেখে ভোর করেছি’। এরপর তিনি খেয়েছেন। এটি নফল রোজার ক্ষেত্রে; ফরজ রোজার ক্ষেত্রে নয়।”(উসাইমীন ফাতওয়া সমগ্র, পৃষ্ঠা-২০)
.
▪️দ্বিতীয়ত: প্রত্যেক মুসলিম নারীর উপর অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে স্বামী বাড়িতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার অনুমতি নিয়ে নফল সিয়াম পালন করা। সুতরাং কোন নারী যদি স্বামীর বিনা অনুমতিতে নফল রোজা রেখে থাকেন তাহলে স্বামীর অধিকার রয়েছে তাকে বিছানায় ডাকার এবং স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া ঐ স্ত্রীর উপর অনিবার্য। আর যদি স্ত্রী অনুমতি নিয়ে নফল রোজা রেখে থাকে তাহলে স্ত্রীর সেই রোজাটি নষ্ট করার অধিকার স্বামীর নেই। তবে স্বামী যদি সেটা করতে চান তাহলে স্ত্রীর জন্য উত্তম হলো স্বামীর আহ্বানে সাড়া দেয়া।
.
আবূ হুরাইরা কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন,لاَ يَحِلُّ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تَصُومَ وَزَوْجُهَا شَاهِدٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ ر যখন স্বামী উপস্থিত থাকবে, তখন স্বামীর অনুমতি ব্যতীত মহিলার জন্য সওম পালন বৈধ নয়।(সহীহ বুখারী হা/৫১৯৫ সহীহ মুসলিম হা/১০২৬)

অপর বর্ননায় আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃلَا تَصُومُ الْمَرْأَةُ وَبَعْلُهَا شَاهِدٌ، إِلَّا بِإِذْنِهِ غَيْرَ رَمَضَانَ، وَلَا تَأْذَنُ فِي بَيْتِهِ وَهُوَ شَاهِدٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ صحيح স্বামীর উপস্থিতিতে তার সম্মতি ছাড়া স্ত্রী রমাযান মাসের সওম ব্যতীত নফল সওম রাখবে না এবং তার উপস্থিতিতে তার সম্মতি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিকে তার ঘরে আসার অনুমতি দিবে না।(মুসনাদে আহমদ ২/২৪৫, ৩১৬,আবূ দাঊদ হা/২৪৫৮,তিরমিযী হা/৭৮২,ইবনে মাজাহ হা/ ১৭৬১) মুসনাদে আহমেদের অপর একটি বর্ননায় রয়েছে, “কোনও মহিলা রমজানের রোজা ছাড়া তার স্বামীর অনুমতি ব্যতীত একদিনও রোজা রাখবেন না।”(মুসনাদে আহমেদ হা/৯৮১৩ আলবানী সহীহ আত তারগীব হা/১০৫২)
.
এই হাদীস দুটি নির্দেশ করে যে, স্বামী বাড়িতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া নফল রোযা রাখা স্ত্রীর জন্য হারাম। এটাই অধিকাংশ আলেমদের অভিমত।এই হাদীগুলো আরো ইঙ্গিত করে যে, স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার স্ত্রীর স্বেচ্ছাকৃত ভাল কাজ করার চেয়ে অগ্রাধিকার পায়, কারণ বৈধ কাজে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর উপর অপরিহার্য কর্তব্য।সুতরাং যদি স্বামী গুনাহ নয় এমন কোন আদেশ করে তাহলে তাকে সেটা মানতে হবে। আল্লাহ তাআলা পুরুষকে সে অধিকার দিয়েছেন। যেহেতু স্বামী পরিবারের কর্তা ও দায়িত্বশীল। পারিবারিক জীবন যাপন সম্ভবপর হবে না যদি পরিবারের কেউ একজনকে কর্তা মেনে তার নির্দেশমতো চলা না হয়। এর অর্থ এ নয় যে, স্বামী চৌকিদার সেজে, এ কর্তৃত্বকে ব্যবহার করে স্ত্রী বা সন্তানদের কষ্ট দিবে। বরং তিনি তাদের কল্যাণের চেষ্টা করবেন। উপদেশ দিবেন, পরামর্শ করবেন।
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,

“إذا صامت نفلاً بإذنه ، فإنه لا يحل له أن يفسد صومها ؛ لأنه أذن لها. ولكن في هذه الحال وهي صائمة صيام نفل بإذنه لو طلب منها أن تأتي للفراش فهل الأفضل أن تستمر في الصوم وتمتنع أو أن تجيب الزوج ؟ الثاني أفضل : أن تجيب الزوج؛ لأن إجابتها الزوج من باب المفروضات في الأصل ، والصوم تطوع من باب المستحبات ، ولأنه ربما لو أبت مع شدة رغبته ، ربما يكون في قلبه شيءٌ عليها فتسوء العشرة بسبب ذلك ”

‘যদি কোন নারী স্বামীর অনুমতি নিয়ে রোজা রাখে তাহলে স্বামীর পক্ষে স্ত্রীর রোজা নষ্ট করা জায়েয হবে না। কারণ সে-ই তো রোজা রাখার অনুমতি দিয়েছে। তবে স্ত্রী যখন স্বামীর অনুমতি নিয়ে নফল রোজা রাখে এরপর স্বামী স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে এমতাবস্থায় স্ত্রীর জন্য কোনটা উত্তম: রোজা পালন করা; নাকি স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া? দ্বিতীয়টি অর্থাৎ স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া উত্তম। কারণ স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া মূলতঃ ফরজ পর্যায়ের আমল। আর নফল রোজা পালন করা মুস্তাহাব পর্যায়ের আমল। তাছাড়া স্বামীর তীব্র ইচ্ছা সত্ত্বেও স্ত্রী যদি এতে সাড়া না দেয় তাহলে তাদের দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হতে পারে।(উসাইমীন,মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড, ২১পৃষ্ঠা: ১৭৪)
.
▪️তৃতীয়ত: যিনি নারী হোক কিংবা পুরুষ কোন ওয়াজিব রোযা শুরু করেন (যেমন: রমজানের কাযা রোযা বা কসম ভঙ্গের কাফফারাস্বরূপ রোযা) তার জন্য কোন ওজর (শরিয়ত অনুমোদিত অজুহাত) ছাড়া রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়। ওজরের উদাহরণ হচ্ছে রোগ বা সফর। যদি নারী অথবা পুরুষ কোনো ওজরবশত অথবা ওজর ছাড়া রোযা ভঙ্গ করে থাকেন তবে সে রোযাটি পালন করা তার দায়িত্বে বাকি থেকে যাবে এবং যে দিনের রোযা বিনষ্ট করেছিলেন সেই দিনের পরিবর্তে অন্য একদিন তাকে রোযা পালন করে নিতে হবে। যদি তিনি কোন ওজর ছাড়া রোযাটি ভঙ্গ করে থাকেন তবে এ রোযাটি পুনরায় পালন করার সাথে তাকে এই হারাম কাজ থেকে তওবা করতে হবে।তাকে কোন কাফ্‌ফারা দিতে হবে না। কেননা কাফ্‌ফারা ফরয হয় শুধুমাত্র রমযান মাসের দিনের বেলায় সহবাস করার কারণে।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, وَمِنْ دَخَلَ فِي وَاجِبٍ، كَقَضَاءِ رَمَضَان، أَوْ نَذْرٍ، أَوْ صِيَامِ كَفَّارَةٍ؛ لَمْ يَجُزْ لَهُ الْخُرُوجُ مِنْهُ، وَلَيْسَ فِي هَذَا خِلافٌ بِحَمْدِ اللَّهِ.” أ.هـ باختصار. “যে ব্যক্তি কোন ফরয রোযা শুরু করেছে যেমন- রমযানের কাযা রোযা বা মানতের রোযা বা কাফ্‌ফারার রোযা তার জন্য এর থেকে বেরিয়ে যাওয়া জায়েয নয়। আলহামদু লিল্লাহ; এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই।[সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ৪১২)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,”لَوْ جَامَعَ فِي صَوْمِ غَيْرِ رَمَضَانَ مِنْ قَضَاءٍ أَوْ نَذْرٍ أَوْ غَيْرِهِمَا فَلا كَفَّارَةَ، وَبِهِ قَالَ الْجُمْهُورُ , وَقَالَ قَتَادَةُ: تَجِبُ الْكَفَّارَةُ فِي إفْسَادِ قَضَاءِ رَمَضَانَ.”কেউ যদি রমযান ব্যতিত অন্য কোন রোযা পালনকালে সহবাসে লিপ্ত হয়; যেমন- রমযানের কাযা রোযা বা মানতের রোযা কিংবা অন্য কোন রোযা সেক্ষেত্রে কাফ্‌ফারা দিতে হবে না। এটি সংখ্যা গরিষ্ঠ আলেমের অভিমত। কাতাদা বলেন: রমযানের কাযা রোযা নষ্ট করার কারণে তার উপর কাফ্‌ফারা আবশ্যক হবে।(ইমাম নববী আল-মাজমু‘ খন্ড: ৬ পৃষ্ঠা: ৩৮৩ আরো দেখুন: আল-মুগনি, খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ৩৭৮)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে একবার জিজ্ঞেস করা হয়:”একবার আমি রমযানের কাযা রোযা পালন করছিলাম। জোহরের পরে আমার ক্ষুধা লেগে গেল বিধায় আমি ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করে ফেললাম; ভুলে নয়, অজ্ঞতাবশতঃ নয়। আমার এ কর্মের হুকুম কী?

জবাবে তিনি বলেন: الواجب عليك إكمال الصيام، ولا يجوز الإفطار إذا كان الصوم فريضة كقضاء رمضان وصوم النذر، وعليك التوبة مما فعلت، ومن تاب تاب الله عليه.”আপনার কর্তব্য ছিল রোযা পূর্ণ করা। ফরয রোযা (যেমন- রমযানের কাযা রোযা, মানতের রোযা) ভেঙ্গে ফেলা জায়েয নেই। এখন আপনার কর্তব্য হচ্ছে-আপনি যা করেছেন এর থেকে তওবা করা। যে ব্যক্তি তওবা করে আল্লাহ্‌ তার তওবা কবুল করেন।”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/১৫; পৃষ্ঠা: ৩৫৫)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়: “ইতিপূর্বের বছরগুলোতে আমি কাযা রোযা আদায়কালে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ভেঙ্গে ফেলেছি। পরবর্তীতে ঐ দিনের বদলে অন্য একদিন রোযা রেখেছি। আমি জানি না এভাবে একদিন রোযা রাখার মাধ্যমে কাযা পালন হয়েছে; নাকি আমাকে লাগাতার দুইমাস রোযা রাখতে হবে? আমার উপরে কি কাফ্‌ফারা আবশ্যক? দয়া করে জানাবেন।

জবাবে তিনি বলেন:

“إذا شرع الإنسان في صوم واجب كقضاء رمضان، وكفارة اليمين، وكفارة فدية الحلق في الحج إذا حلق المحرم قبل أن يحل، وما أشبه ذلك من الصيام الواجب، فإنه لا يجوز له أن يقطعه إلا لعذر شرعي، وهكذا كل من شرع في شيء واجب فإنه يلزمه إتمامه، ولا يحل له قطعه إلا بعذر شرعي يبيح قطعه، وهذه المرأة التي شرعت في القضاء ثم أفطرت في يوم من الأيام بلا عذر، وقضت ذلك اليوم، ليس عليها شيء بعد ذلك، لأن القضاء إنما يكون يوماً بيوم، ولكن عليها أن تتوب وتستغفر الله عز وجل لما وقع منها من قطع الصوم الواجب بلا عذر.”

“কোন মানুষ যদি ফরয রোযা রাখা শুরু করেছে যেমন রমযানের কাযা রোযা, শপথ ভঙ্গের কাফ্‌ফারার রোযা, হজ্জের মধ্যে ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার আগে মাথা মুণ্ডন করে ফেলার ফিদিয়াস্বরূপ কাফ্‌ফারার রোযা ইত্যাদি; তার জন্য কোন শরয়ি ওজর ছাড়া রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয নয়। তেমনিভাবে কেউ যদি কোন ফরয আমল শুরু করে তাহলে সে আমল শেষ করা তার উপর আবশ্যক। আমলটি কর্তন করাকে বৈধকারী কোন শরয়ি ওজর ছাড়া সে আমল ছেড়ে দেয়া জায়েয নয়। এই নারী যিনি কাযা রোযা পালন করা শুরু করেছিলেন, এরপর কোন ওজর ছাড়া রোযাটি ভেঙ্গে ফেলেছেন এবং অন্যদিন রোযাটির কাযা পালন করেছেন তার উপর কোন কিছু আবশ্যক নয়। কেননা কাযা শুধু একদিনের বদলে একদিন হয়ে থাকে। কিন্তু, তার কর্তব্য হচ্ছে-বিনা ওজরে ফরয রোযা ভঙ্গ করার কারণে তওবা করা এবং আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।”(উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড, ২০ পৃষ্ঠা: ৪৫১)।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।