সাদাক্বাহ অর্থ কী এবং হারাম বা অবৈধ সম্পদ সাদাক্বাহ করলে সওয়াব হবে কি

ভূমিকা: ইসলামী শরীয়তে দান-সাদাক্বাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হালাল জীবিকা মুমিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। শারীরিক ও আর্থিক সকল প্রকার ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হলো হালাল জীবিকা। হালালকে গ্রহণ ও হারামকে বর্জনের মধ্যেই রয়েছে মুমিনের দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা। সাদাক্বাহ শব্দের অর্থ হল যাকাত, দান, খয়রাত এবং নেকীর কাজ। শরীয়তের পরিভাষায়, অন্যের জন্য কল্যাণ, উপকার বা সুবিধা পৌঁছে দেয়াকে সাদাক্বাহ বলা হয়। (ইবনু তায়মিয়াহ, শারহুল আরবাঈন আন-নাবুবিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২০৩)। সাদাক্বাহ শব্দটি ফরয যাকাত এবং সাধারণ সাদাক্বাহ (দান) দু’টিকেই শামিল করে। (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ২৬তম খণ্ড, পৃ. ৩২৩)
.
প্রত্যেক মুমিনের জন্য হালাল-হারাম সম্পর্কে জানা জরূরী। আহমাদ বিন আহমাদ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বলেন, শরীআতের বিধান প্রযোজ্য এমন মুসলিমের জন্য হারাম-হালাল জানা ফরজ। যাতে তিনি দ্বীনের ব্যাপারে এমন জাগ্রত জ্ঞানসম্পন্ন হন যেন নিষিদ্ধ বিষয়ে পতিত না হন এবং ইসলামী বিধানের বিরোধিতা না করেন।’ (মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ, ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবুহাত ফী তালাবির রিযক, রিয়াদ: দারু কুনুয ইশবিলিয়া, প্রথম সংস্করণ ১৪৩০ হিঃ/২০০৯ খ্রীঃ, পৃঃ ১১)
.
দান সাদাক্বাহ কবুলের অন্যতম শর্ত হল যেসব বস্ত্ত দান করা হবে তা হালাল হতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় যা কিছু দান করা হয় তা যদি পবিত্র না হয়, শারীআতের দৃষ্টিতে হালাল না হয় এবং নিয়্যাতের মধ্যে অসৎ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আল্লাহ তাআলা ঐ দান গ্রহণ করেন না। মহান আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং যা আমরা তোমাদের জন্য জমিতে উৎপন্ন করি, সেখান থেকে পবিত্র বস্ত্ত ব্যয় কর।’(সূরা বাক্বারাহ ২/২৬৭)
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বিনা ওযুতে সালাত কবুল হয় না এবং খেয়ানত বা হারাম মালের সাদাক্বাহ কবুল হয় না।’(সহীহ মুসলিম হা/২২৪; মিশকাত হা/৩০১)।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর বর্ননায় বলেন—إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ব্যতীত কোন কিছু গ্রহণ করেন না।(সহীহ মুসলিম হা/১০১৫; সহীহ আল জামি ২৭৪৪,
মিশকাত হা/২৭৬০)। উক্ত হাদীসের আলোকে ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, অত্র হাদীসে হালাল উপার্জন থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং অসদোপায়ে উপার্জন করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করা থেকে পরোক্ষভাবে নিষেধ করা হয়েছে। (শারহে মুসলিম ৭/৮ খন্ড,হা/১০১৫)
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন—

,مَنْ أَصَابَ مَالًا مِنْ مَأْثَمٍ فَوَصَلَ بِهِ رَحِمًا، أَوْ تَصَدَّقَ بِهِ، أَوْ أَنْفَقَهُ فِي سَبِيلِ اللهِ، جُمِعَ ذَلِكَ جَمِيعًا، ثُمَّ قُذِفَ بِهِ فِي جَهَنَّمَ

যে ব্যক্তি পাপের মাধ্যমে কোন সম্পদ লাভ করল, অতঃপর তা দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করল কিংবা তা দান করল অথবা তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করল। আল্লাহ তা একত্রিত করে জাহান্নামে ছুড়ে মারবেন। (সহীহ আত-তারগীব হা/১৭২১)
.
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তুমি তোমার সম্পদের যাকাত আদায় করবে, তখন তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করলে। আর যে ব্যক্তি হারাম মাল জমা করবে এবং তা থেকে সাদাক্বাহ করবে, সে ব্যক্তি কোন প্রতিদান পাবে না। বরং তার উপর শাস্তি আরোপ করা হবে। (সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৩২১৬, সহীহ আত-তারগীব হা/৮৮০ সনদ হাসান)। অর্থাৎ সাদাক্বাহ যেমন উত্তম মাল দ্বারা হতে হবে তেমনি তা যেন পাপাচারের সহায়তায় ব্যয়িত না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। অন্যথায় উক্ত সাদাক্বাহ দান করার জন্য গুনাহগার হতে হবে।
.
হারাম উপায়ে উপার্জিত সম্পদ খেলে জাহান্নামে যেতে হবে। জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন- ‘যে দেহের গোশত হারাম মালে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের জন্য জাহান্নামই সমীচীন।’
(মুসনাদে আহমাদ ১৪৪১, বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান ৮৯৭২ মিশকাত হা/২৭৭২)। আবু বকর (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন- ‘যে দেহ হারাম দ্বারা প্রতিপালিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সিলসিলা সহীহাহ্ ২৬০৯, বায়হাক্বী শুআবুল ঈমান, ৫৭৫৯ মিশকাত হা/২৭৮৭)।
.
পরিশেষে, উপরোক্ত দলিলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা কি হালাল জীবিকা গ্রহণ করতে পারি না? যাতে আমাদের জীবন হবে কল্যাণকর। আর যাবতীয় হারাম জীবিকা ও হারাম উপার্জন, যেমন সূদী কারবার ও সূদের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চাকরী করা, ওযনে কম দেওয়া, অন্যের হক নষ্ট করা, চুরি করা ইত্যাদি হারাম ও নিষিদ্ধ কর্ম হতে বিরত থাকা জরূরী। কারণ পরকালে আল্লাহ মানুষের উপার্জিত সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন—وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيْمَا أَنْفَقَهُ ‘তার সম্পদ সম্পর্কে (জিজ্ঞেস করা হবে) সে কোথা থেকে উপার্জন করেছে ও কোথায় ব্যয় করেছে।'(তিরমিযী হা/২৪১৬; মিশকাত হা/৫১৯৭,সনদ সহীহ)। মহান আল্লাহ আমাদের হালাল জীবিকার উপর সন্তুষ্ট থাকার তাওফীক দান করুন-আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
___________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।