সফরে সিয়াম পালনের হুকুম কি

প্রশ্ন: সফর অর্থ কি? সফরের নির্দিষ্ট দূরত্ব আছে কি? সফরে সিয়াম পালনের হুকুম কি? মুসাফিরের জন্য সিয়াম রাখা ভালো, না কাযা করা ভালো?
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সফর শব্দটি আরবী; যার অনেক অর্থ আছে। যেমন- স্পষ্ট হওয়া, প্রকাশ পাওয়া, অতিক্রম করা, ভ্রমণ করা ইত্যাদি। ভ্রমণে যেহেতু দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয় আর এই ভ্রমণের দ্বারা ভ্রমণ সঙ্গীর আখলাক-চরিত্র, ‍দুুনিয়ার হালত ও আল্লাহ তা’আলার নিদর্শন সফরকারীর কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। তাই সফরকে সফর বলে নামকরণ করা হয়েছে।সহজে বলতে গেলে বাসস্থান ছেড়ে অন্য কোথাও ভ্রমণে বের হওয়াকে বলা হয় সফর। আর যে ব্যক্তি ভ্রমণ বা সফর করে তাকে সফররত অবস্থায় মুসাফির বলে। মুসাফির আরবি শব্দ। এর অর্থ সফরকারী বা ভ্রমণকারী।

◾সফরের নির্দিষ্ট দূরত্ব আছে কি? ________________________________
সফরের নিদিষ্ট দূরত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মাজীদে অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন হাদীসে নির্দিষ্ট কোনো দূরত্ব উল্লেখ করা হয়নি। ফলে এ বিষয়ে উলামায়ে কেরামের অনেক মতবিরোধ রয়েছে। কেউ বলেছেন ৪৮, কেউ ৭২, কেউ ৮০ কিলোমিটার বলেছেন। তবে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট দলিল নেই, যা আছে সবই ওলামাদের মত। তবে জমহুর আলেম সফরের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার; এই মত পোষণ করেছেন। (দেখুন, ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড:৮ পৃষ্ঠা: ৯০ ও ৯৯ ইমাম বিন বায মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ,খণ্ড:১২ পৃষ্ঠা:২৬৭)। তবে সফরের দূরত্ব সম্পর্কে সর্বাধিক সঠিক বক্তব্য এই যে, পরিভাষায় বা প্রচলিত অর্থে যাকে সফর বলা হয়, সেই সফরে সালাত কসর করা; সিয়াম ভঙ্গ করা যাবে।(ইমাম উসাইমীন আশ-শারহুল-মুমত্বি খন্ড:৪ পৃষ্ঠা:৪৯৭-৪৯৮)। ইবনুল মুনযির বলেন যে, সফরের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদ্বীনা শহর ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার পূর্বে ‘ক্বসর’ করেছেন বলে আমি জানতে পারিনি। তিনি বলেন, বিদ্বানগণ একমত হয়েছেন যে- সফরের নিয়তে বের হয়ে নিজ গ্রাম (বা মহল্লার) বাড়ীসমূহ অতিক্রম করলেই তিনি ক্বসর করতে পারেন। (নায়লুল আওত্বার ৪/১২৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৩ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ‘মাজমূ‘উ ফাতাওয়া খন্ড:২৪ পৃষ্ঠা: ১০৬)
.
▪️সফরে মুসাফিরের সিয়াম পালনের বিধান:
_______________________________________
কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে মুসাফিরের জন্য রোযা কাযা করা বৈধ; চাহে সে মুসাফির রোযা রাখতে সক্ষম হোক অথবা অক্ষম, রোযা তার জন্য কষ্টদায়ক হোক অথবা না হোক। অর্থাৎ মুসাফির যদি ছায়া ও পানির সকল সুবিধা নিয়ে সফর করে এবং তার সাথে তার খাদেমও থাকে অথবা না থাকে, (সফর বিমানে হোক অথবা পায়ে হেঁটে); যেমনই হোক তার জন্য রোযা কাযা করা ও নামায কসর করা বৈধ। তবে তাকে সমসংখ্যক রোযার পরবর্তীতে কাযা করতে হবে। (সাবঊনা মাসআলাহ ফিস-সিয়াম ১৭পৃঃ)। মহান আল্লাহ বলেন, কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে সে অপর কোন দিন গণনা করবে। (সূরা বাকারাহ; ২/১৮৪)। যে ব্যক্তি তার নিজ শহরে অবস্থান করছেন এবং সফর করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করেছেন তিনি নিজ শহরের বাড়িঘরের সীমানা অতিক্রম করার আগ পর্যন্ত ‘মুসাফির’ হিসেবে গণ্য হবেন না। তাই শুধু সফরের নিয়্যত করলেই মুসাফিরের অবকাশসমূহ (রোখসত) যেমন- রোযা ভঙ্গ করা, সালাত সংক্ষিপ্ত করা ইত্যাদি গ্রহণ করা হালাল নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মুসাফিরের জন্য রোযা ভঙ্গ করা বৈধ করেছেন। নিজ শহর অতিক্রম না করা পর্যন্ত কেউ ‘মুসাফির’ বলে গণ্য হবে না।
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে, যিনি সফরের নিয়্যত করেছেন এবং অজ্ঞতাবশতঃ নিজ গৃহে থাকতেই তিনি রোযা ভেঙ্গে ফেলেছেন, তারপর সফরে বের হয়েছেন – তার উপর কাফফারা দেয়া কি ওয়াজিব? তিনি উত্তরে বলেন : “তার জন্য নিজ বাড়িতে রোযা ভঙ্গ করা হারাম। কিন্তু তিনি যদি সফরে বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে রোযা ভেঙ্গে থাকেন তাহলে তাকে শুধু রোযা কাযা করতে হবে। (ইমাম উসাইমীন ফাতাওয়াআস-সিয়াম পৃষ্ঠা:১৩৩)। ইমাম উসাইমীন তার আশ-শারহুল-মুমত্বি গ্রন্থে আরো বলেছেন; রাসূলের সুন্নাহ ও সাহাবীগণ হতে বর্ণিত বাণীসমূহে রয়েছে যে, কেউ দিনের বেলা সফর করলে রোযা ভঙ্গ করতে পারে। এক্ষেত্রে তার নিজ গ্রাম ছেড়ে যাওয়া শর্ত কিনা? নাকিসফরের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে বের হলেই রোযা ভঙ্গ করতে পারবে? উত্তর: সালফে-সালেহীন (সাহাবী, তাবি‘ঈ ও তাবে-তাবি‘ঈ) হতে এ ব্যাপারে দুইটি মত বর্ণিত হয়েছে। আলেমগণের মধ্যে অনেকে এ মত পোষণ করেন যে, কেউ যদি সফরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয় শুধু বাহনে আরোহণ করা বাকি থাকে, তাহলে তার জন্য রোযা ভঙ্গ করা জায়েয। এ ব্যাপারে তাঁরা আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে উল্লেখ করেন যে, তিনি এমনটি করতেন। আপনি যদি আয়াতে কারীমাটি পর্যালোচনা করেন তাহলে দেখবেন যে, এ মতটি শুদ্ধ নয়। কারণ, সে ব্যক্তি এখন পর্যন্ত মুসাফির হয়নি; তিনি এখন পর্যন্ত মুক্বীম (স্বদেশে অবস্থানকারী ব্যক্তি) রয়েছেন। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, তার জন্য নিজ গ্রামের বাড়িঘর অতিক্রম না করা পর্যন্ত রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়। অতএব সঠিক মত হলো, সে নিজ এলাকা ত্যাগ না করা পর্যন্ত রোযা ভঙ্গ করবে না। এ কারণে নিজ শহর থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত সালাত সংক্ষিপ্ত করা বৈধ নয়। একই ভাবে নিজ এলাকা থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়। (সংক্ষিপ্ত ও কিছুটা পরিমার্জিত ইমাম উসাইমীন আশ-শারহুল-মুমত্বি খন্ড:৬ পৃষ্ঠা:২১৮)
.
▪️যে সফরে সিয়াম কাযা করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে কয়েকটি শর্ত রয়েছেঃ-
_______________________________________
সফরে সিয়াম ভঙ্গ করার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আহালুল আলেমগণ ৪ টি শর্ত দিয়েছেন।যেমন:

(ক). এমন দীর্ঘ সফর হতে হবে, যে সফরে নামায কসর করা যায়।
.
অর্থাৎ এমন সফর হতে হবে, যাকে পরিভাষায় সফর বলা হয়। আর সঠিক মত এই যে, সফর চিহ্নিত করার জন্য কোন নির্দিষ্ট মাপের দূরত্ব নেই। এ ব্যাপারে প্রচলিত অর্থ ও পরিভাষার সাহায্য নিতে হবে। (ইমাম উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা:৪৯৭-৪৯৮)
সুতরাং যে ব্যক্তি কোন স্থানে সফর করার পর কিছুকাল বাস করে, কিন্তু সে সেখানে স্থায়ী বসবাসের নিয়ত করে না; বরং যে উদ্দেশ্যে সফর করেছে সে উদ্দেশ্য সফল হলেই স্বগৃহে ফিরে যাওয়ার সংকল্প পোষণ করে, সে ব্যক্তি মুসাফির। সে মুসাফিরের সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি কোন স্থানে সফর করার পর সে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে, সে ব্যক্তিকে মুসাফির বলা যাবে না। সে হলো প্রবাসী এবং তার জন্য রোযা কাযা করা জায়েয নয়। বরং তার জন্য রোযা রাখা ওয়াজিব। বলা বাহুল্য, যে ছাত্ররা বিদেশে পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে সফর করে নির্দিষ্ট কয়েক মাস বা বছর ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, সে ছাত্ররা মুসাফির নয়। তাদের জন্য রোযা কাযা করা বৈধ নয়।
.
(খ). মুসাফির যেন নিজের গ্রাম বা শহরের ঘর-বাড়ি ত্যাগ করে গ্রাম বা শহরের বাইরে এসে রোযা ভাঙ্গে।
.
আনাস (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে (মক্কা যাওয়ার পথে) মদ্বীনায় যোহরের ৪ রাকআত এবং (মদ্বীনা থেকে ৬ মাইল দূরে) যুল-হুলাইফায় গিয়ে আসরের ২ রাকআত পড়তাম।( সহীহ বুখারী হা/১০৮৯; সহীহ মুসলিম হা/৬৯০)।
জেনে রাখা ভালো যে, সফর করতে শহর বা গ্রাম ত্যাগ করার পূর্ব থেকেই নামায কসর করা চলবে না। অনুরূপ রোযাও শহর বা গ্রাম সম্পূর্ণ ত্যাগ করার পূর্বে ভাঙ্গা চলবে না। কারণ, নিজ গ্রাম বা শহরের জনপদে থাকা অবস্থাকে সফর বলা যায় না এবং সফরকারীর জন্য মুসাফির নাম সার্থক হয় না। (ইমাম উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে খন্ড: ৬ পৃষ্ঠা: ৬/৩৫৮-৩৫৯)। বুঝা গেল যে, মুসাফির যখন সফরের উদ্দেশ্যে নিজ গ্রাম বা শহরের আবাসিক এলাকা ত্যাগ করবে, তখনই তার জন্য রোযা ভাঙ্গা বৈধ হবে। তদনুরূপ এয়ারপোর্ট শহরের ভিতরে হলে এরোপ্লেন শহর ছেড়ে আকাশে উড়ে গেলে রোযা ভাঙ্গা বৈধ হবে। অবশ্য এয়ারপোর্ট শহরের বাইরে হলে সেখানে রোযা ভাঙ্গা বৈধ। আর শহরের ভিতরে হলে অথবা শহরের লাগালাগি হলে সেখানে রোযা ভাঙ্গা বৈধ নয়। কারণ, তখনও সফরকারী নিজ শহরের ভিতরেই থাকে। যারা রমাযান মাসে সফর করার ইচ্ছা করে এবং রোযা কাযা করতে চায় তাদের জন্য একটি সতর্কতার বিষয় এই যে, গ্রাম বা শহর ছেড়ে সফর করে না যাওয়া পর্যন্ত যেন তারা রোযা ভাঙ্গার নিয়ত না করে। কারণ, ভাঙ্গার নিয়ত করলে রোযা হবে না। আর নিয়তের পর যদি কোন প্রতিবন্ধকতা বা কারণবশতঃ সফর না করা হয়, তাহলে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা বৈধ হবে না। (সাবঊনা মাসআলাহ ফিস-সিয়াম প্রশ্ন:-১৮)
.
(গ). এ সফর কোন গুনাহর কাজে না হওয়া।
.
মুসাফিরের সফরটি বৈধ কাজের উদ্দেশ্যে হতে হবে। আর এটাই জমহুর আলেমের নিকট স্বীকৃত মত। কেননা, রোযা না-রাখার অনুমতি একটি রুখসত (ছাড়) ও সহজীকরণ। তাই পাপে লিপ্ত মুসাফির ব্যক্তির এই সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার অধিকার নেই। যেহেতু ঐ সুযোগ-সুবিধা হল ভারপ্রাপ্ত বান্দার উপর কিছু ভার সহজ ও হালকা করার নামান্তর। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানী করে হারাম কাজের জন্য সফর করে; সে ব্যক্তি আল্লাহর দেওয়া ঐ সুযোগ-সুবিধা ভোগের অধিকার পেতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ: কারো ভ্রমণের ভিত্তি যদি গুনাহর উপর হয়; যেমন- ডাকাতি করার জন্য সফর করা। (ইমাম উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা:৪৯৭-৪৯২)
.
(ঘ). সফরের উদ্দেশ্য যেন রোযা না রাখার একটা বাহানা না হয়।
.
যদি কোন মানুষ সিয়াম পালন থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে সফর করে তাহলে এমন সফরে সিয়াম ভঙ্গ করা জায়েজ হবেনা। কারণ, ছল-বাহানা করে আল্লাহর ফরয বাতিল হয় না। (ফুসূলুন ফিস-সিয়ামি অত্-তারাবীহি অয-যাকাহ, ইবনে উসাইমীন পৃষ্ঠা:১০)।মোটকথা, যে সফরে রোযা কাযা করার অনুমতি আছে সে সফর হজ্জ, উমরাহ, কোন আপনজনকে দেখা করার উদ্দেশ্যে কিংবা ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে সাময়িক হোক, অথবা (ভাড়া গাড়ির ড্রাইভারের মত) সার্বক্ষণিক হোক, তাতে কোন পার্থক্য নেই। বলা বাহুল্য, যে সর্বক্ষণ সফরে থাকে, তার যদি ফিরে এসে আশ্রয় নেওয়ার মত বাসভূমি থাকে, অর্থাৎ, (উড়িয়া যাযাবরদের মত) তার পরিবার-পরিজন তার সাথে না থাকে, যেমন; পিওন, যে মুসলিমদের ডাক বহন করার উদ্দেশ্যে সফর করে। যেমন, ভাড়া গাড়ির ড্রাইভার, ট্রেন বা প্লেনের পাইলট ও খালাসী-হোস্টেস ইত্যাদি – যদিও তাদের সফর প্রাত্যহিক হয়, তবুও তাদের জন্য রোযা কাযা করা বৈধ। অবশ্য এ রোযা তারা সময় মত পরিশোধ করতে বাধ্য হবে। তদনুরূপ পানি-জাহাজের মাল্লা, যার স্থলে বাসস্থান আছে (অর্থাৎ, জাহাজই তার স্থায়ী বাসস্থান নয়), সেও কাযা করতে পারে। উপরে উল্লেখিত ব্যক্তি সকলের কাজ যেহেতু নিরবচ্ছিন্ন ও বিরতিহীন, সেহেতু তারা শীতকালে কাযা করে নিতে পারে। কারণ, শীতের দিন ছোট ও ঠান্ডা। সে সময় কাযা তুলতে কষ্ট হবে না। কিন্তু তারা যদি রমাযান মাসে স্বগৃহে ফিরে আসে তাহলে সেখানে থাকা কালে তাদের জন্য রোযা রাখা জরুরী।
.
পক্ষান্তরে, শহরের ভিতরে চলমান ট্রেন, বাস, ট্যাক্সি, অটো-রিক্সা প্রভৃতির ড্রাইভার মুসাফির নয়। কারণ, তারা সফরের দূরত্ব অতিক্রম করে না। তাই তাদের জন্য যথাসময়ে রোযা রাখা ওয়াজিব। (ইমাম উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা:৫৩৯-৫৪০- ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ খন্ড:২ পৃষ্ঠা:১৪৪)। তবে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সৈনিক ও মুজাহিদ সফরের সেই পরিমাণ দূরত্ব সফর করলে রোযা কাযা করতে পারে, যে পরিমাণ সফর করলে নামায কসর করা বৈধ। অবশ্য তারাও রমাযান পরে কাযা তুলতে বাধ্য হবে। আর যদি তারা মুসাফির না হয়, বরং শত্রু তাদেরকে তাদের অবস্থান ক্ষেত্রে আক্রমণ করে, তাহলে যে জিহাদের সাথে রোযা রাখতে সক্ষম হবে তার জন্য রোযা রাখা ওয়াজিব। কিন্তু যে রোযা রাখার সাথে সাথে জিহাদের ‘ফর্যে আইন’ আদায় করতে সক্ষম নয়, তার জন্য কাযা করা বৈধ। তবে রমাযান শেষ হওয়ার পর ছুটে যাওয়া রোযা অবশ্যই সে রেখে নেবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ খন্ড:২ পৃষ্ঠা:১৪১)

▪️পাশাপাশি আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখা ভালো, আহসলুল আলেমগনের সর্বসম্মতিক্রমে দুইটি কারণে সফর অবস্থার ছাড় প্রযোজ্য হবে না। যেমন:-
.
(১). যদি মুসাফির তার নিজ দেশে ফেরত আসে ও নিজ এলাকায় প্রবেশ করে; যে এলাকায় সে স্থায়ীভাবে বসবাস করে।
.
(২). যদি মুসাফির ব্যক্তি কোন স্থানে সাধারণ ভাবে স্থায়ীভাবে থাকার নিয়ত করে, কিংবা মুকীম সাব্যস্ত হয়ে যাওয়ার মত সময়কাল অবস্থান করার নিয়ত করেন এবং সে স্থানটি অবস্থান করার উপযুক্ত স্থান হয়; তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি মুকীম হয়ে যাবেন। তখন তিনি নামাযগুলো পরিপূর্ণ সংখ্যায় আদায় করবেন, রোযা রাখবেন; রোযা ছাড়বেন না; যেহেতু তার সফরের হুকুম শেষ হয়ে গেছে। (আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৭৩)

▪️পরিশেষে, মুসাফিরের জন্য রোযা রাখা উত্তম, নাকি কাযা করা উত্তম?
_______________________________________
শরীয়তের দিক থেকে চিন্তা করলে একজন মুসাফিরের সফরে ৩ অবস্থা হতে পারেঃ-
.
(১). রোযা তার জন্য কষ্টকর নয়: এমন অবস্থায় রোযা রাখা বা কাযা করার মধ্যে যেটা তার জন্য সহজ ও সুবিধা হবে, সেটাই সে করবে। মহান আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং তিনি তোমাদের জন্য কঠিন কিছু চান না। (সূরা বাকারাহ, ২/১৮৫) হামযাহ বিন আম্র আসলামী মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-কে সফরে রোযা রাখা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘তোমার ইচ্ছা হলে তুমি রোযা রাখ, আর ইচ্ছা না হলে রেখো না।’’ (সহীহ বুখারী হা/১৯৪৩, সহীহ মুসলিম হা/১১২১)
.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে ১৭ই রমাযান এক যুদ্ধ-সফরে ছিলাম। আমাদের মধ্যে কারো রোযা ছিল, কারো ছিল না। কিন্তু যার রোযা ছিল সে তার নিন্দা করেনি যার রোযা ছিল না এবং যার রোযা ছিল না সেও তার নিন্দা করেনি যার রোযা ছিল।’ আর এক বর্ণনায় আছে, তাঁরা মনে করতেন যে- যার ক্ষমতা আছে, তার জন্য রোযা রাখা ভালো। আর যার দুর্বলতা আছে তার জন্য রোযা না রাখা ভালো। (সহীহ মুসলিম হা/১১১৬)। কিন্তু যদি উভয় এখতিয়ার সমান হয়; অর্থাৎ, রোযা রাখার উপর কাযা করাকে প্রাধান্য দেওয়ার মত কোন বৈশিষ্ট্য না থাকে এবং রোযা কাযা করার উপর রাখাকে প্রাধান্য দেওয়ার মত কোন বৈশিষ্ট্য না থাকে, তাহলে এমতাবস্থায় নিম্নে উল্লেখিত দলীলের ভিত্তিতে তার জন্য রোযা রাখাই উত্তম। কারণ এটি রাসূল (ﷺ)-এর আমল। যেমন: বিখ্যাত সাহাবী আবু দারদা (রাঃ) বলেন, ‘আমরা এক রমাযান মাসের কঠিন গরমের দিন (সফরে) ছিলাম। এমনকি আমাদের কেউ কেউ গরমের কারণে মাথায় হাত রেখেছিল। আর আমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এবং আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহাহ ছাড়া অন্য কারো রোযা ছিল না। (সহীহ বুখারী হা/১৯৪৫, মুসলিম হা/১১২২)। তাছাড়া সফরে রোযা রাখলে সত্বর দায়িত্ব পালন হয়। কারণ, পরে কাযা করাতে বিলম্ব হয়। আর রমাযানে রোযা রেখে নিলে আগে আগে ফরয আদায় হয়ে যায়। মুসলিমের জন্য রামাদানে রোযা রাখাটাই সাধারণতঃ বেশী সহজ। কেননা, পরে একাকী নতুন করে রোযা রাখার চাইতে লোকেদের সাথে রোযা ও ঈদ করে নেওয়াটাই বেশী সহজ। যেমন এ কথা সকলের নিকট পরীক্ষিত ও বিদিত। রোযা রাখলে মাহাত্ম্যপূর্ণ সময় পাওয়া যায়; আর তা হল রামাদান। পরন্তু রমাযান হল অন্যান্য মাসের তুলনায় শ্রেষ্ঠতর। যেহেতু সেটাই হল রোযা ওয়াজেব হওয়ার সময়।
.
(২). রোযা তার জন্য কষ্টকর, তবে বেশী নয়: বরং রোযা না রাখাটাই তার জন্য সুবিধা ও আরামদায়ক। এমন অবস্থায় মুসাফিরের রোযা রাখা মকরূহ এবং রোযা না রাখা উত্তম। কারণ, অনুমতি থাকা সত্ত্বেও কষ্ট স্বীকার করার অর্থ হলো, মহান আল্লাহর অনুমতিকে উপেক্ষা করা। সফরে কখনো রোযা না রাখাটা উত্তম ও অধিক সওয়াব লাভের কারণ হতে পারে; যদি মুসাফির কোন কর্ম-দায়িত্ব পালন করে তাহলে। আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সাহাবা সহ) এক সফরে ছিলেন। তাঁদের কিছু লোক রোযা রাখল এবং কিছু রাখল না। যারা রোযা রাখেনি তারা বুদ্ধি করে রোযা ভাঙ্গল এবং কাজ করল। আর যারা রোযা রেখেছিল তারা কিছু কাজ করতে দুর্বল হয়ে পড়ল। তা দেখে তিনি বললেন, ‘‘আজ যারা রোযা রাখেনি তারাই সওয়াব কামিয়ে নিল।’’ (সহীহ বুখারী হা/২৮৯০; সহীহ মুসলিম হা/ ১১১৯)
.
(৩). অসহ্য গরম, খারাপ বা দূরবর্তী রাস্তা অথবা অবিশ্রাম পথ চলার কারণে রোযা তার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়। এ অবস্থায় তার জন্য রোযা রাখা হারাম। কারণ, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কা-বিজয় অভিযানে রোযা রেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর কাছে খবর এলো যে- লোকেরাও রোযা রেখেছে, আর এর ফলে তারা কষ্ট ভুগছে এবং তিনি কি করছেন তা জানার অপেক্ষা করছে। সুতরাং আসরের পর তিনি এক পাত্র পানি আনিয়ে পান করলেন। লোকেরা এ দৃশ্য তাকিয়ে দেখতে লাগল। তাঁকে বলা হলো, কিছু লোক রোযা অবস্থায় আছে। তিনি বললেন, ‘‘তারা নাফরমান, তারা অবাধ্য।’’ (সহীহ মুসলিম হা/১১১৪)। কখনো কোন ইমারজেন্সী কারণে রোযা ভাঙ্গা ওয়াজিবও হতে পারে। যেমন; আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা রোযা রাখা অবস্থায় আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে মক্কা সফর করলাম। এক মঞ্জিলে নেমে তিনি বললেন, ‘‘তোমরা এখন শত্রুর সম্মুখীন হয়েছ, আর রোযা না রাখাতে তোমাদের শক্তি বেশী হবে।’’ এ কথার ফলে রোযা না রাখাতে অনুমতি হলো। তখন আমাদের মধ্যে কেউ রোযা বাকী রাখল, কেউ ভেঙ্গে ফেলল। অতঃপর আমরা আর এক মঞ্জিলে অবতরণ করলাম। সেখানে তিনি বললেন, ‘‘সকালে তোমাদের শত্রুদের সাথে সাক্ষাৎ হবে। আর রোযা না রাখাতে তোমাদের ক্ষমতা বেশী থাকবে। অতএব তোমরা রোযা ভেঙ্গে দাও।’’ এক্ষণে তা বাধ্যতামূলক ছিল। ফলে আমরা সকলে রোযা ভেঙ্গে দিলাম। আবু সাঈদ (রাঃ) আরো বলেন, কিন্তু এর পরে আমরা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সফরে রোযা রাখতাম। (সহীহ মুসলিম হা/১১২০)
.
▪️পরিশেষে, উপর সংক্রান্ত কয়েকটি মাসয়ালা জেনে রাখা ভালো;
_________________________________
(১). সফর অবস্থায় স্বামী স্ত্রী সহবাস করা:
.
রোযা রেখে স্বামী-স্ত্রী এক সাথে সফর করে সফরে দিনের বেলায় সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে পড়লে কোন ক্ষতি নেই। কারণ, মুসাফিরের জন্য রোযা ভাঙ্গা বৈধ। অতএব সে কিছু খেয়ে, অথবা পান করে অথবা সঙ্গম করে রোযা ভাঙ্গতে পারে। এ সব কিছুই তার জন্য হালাল। বলা বাহুল্য, ঐ রোযা কাযা করা ছাড়া তার জন্য অন্য কিছু ওয়াজিব নয়।
.
(২). দিন থাকতে মুসাফির নিজ ঘরে ফিরে আসা:
.
অর্থাৎ দিন থাকতে মুসাফির ঘরে ফিরে এলে এবং অনুরূপ সেই সকল ওযর-ওয়ালা মানুষ যাদের যে ওযরের কারণে রোযা ভাঙ্গা বৈধ ছিল তাদের সেই ওযর দূর হলে দিনের বাকী অংশটা পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে কি না- এ বিষয়ে উলামাদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কিছু উলামা মনে করেন, ওয়াজিব হওয়ার কারণ নতুনভাবে দেখা দিলে রোযা ভঙ্গকারী জিনিস থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। আর সেই দিনের রোযা কাযা করা ওয়াজিব নয়। যেমন; রোযার দিনে কোন কাফের মুসলিম হলে, নাবালক সাবালক হলে অথবা পাগল সুস্থ হলে, সে বাকী দিন পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে এবং তাকে ঐ দিনটি কাযা করতে হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন প্রতিবন্ধকতার ফলে রোযা রাখেনি তার সে সে প্রতিবন্ধকতা দিনের মধ্যে দূর হলে তাকে বাকী দিন পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব নয়; অবশ্য ঐ দিনের রোযা কাযা ওয়াজেব। যেমন- দিন থাকতে নিফাস বা ঋতুমতী মহিলা পবিত্রা হলে, মুসাফির রোযা না রেখে ঘরে ফিরলে, রোগী সুস্থ হলে এবং নিরপরাধ প্রাণ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে যে রোযা ভেঙ্গেছিল তার সে কাজ শেষ হলে বাকী দিন পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব নয়। কিন্তু ঐ দিনের কাযা অবশ্যই ওয়াজিব। (ইমাম উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে খন্ড:৪ পৃষ্ঠা: ৫৪০-৫৪১, ৬/৩৪৭, ৩৬৩, ৪২০)। আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের প্রথম ভাগে রোযা রাখেনি, তার উচিৎ দিনের শেষভাগে রোযা না রাখা।’ (পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত না হওয়া)। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হা/৯৩৪৩)। অন্য দিকে অপর কিছু উলামা মনে করেন, উপর্যুক্ত সকল প্রকার লোকের জন্য বাকী দিন পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। (ইবনে জিবরীন ফাসিঃ মুসনিদ পৃষ্ঠা: ৭৪)। অবশ্য উত্তম ও পূর্বসতর্কতামূলক কাজ এই যে, ঐ শ্রেণীর সকল লোকই রমাযান মাসের মর্যাদার কথা খেয়াল রেখে এবং উক্ত মতভেদ থেকে দূরে থেকে বাকী দিনটি পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে। (সাবঊনা মাসআলাহ ফিস্-সিয়াম ২৩)
.
(৩). রমাযান মাসে কোন মুসলিম যদি এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তরিত হয়। যে দেশ দুটি ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা রাখা শুরু করেছে সে ক্ষেত্রে তিনি কি করবেন?
.
কোন মুসলিম যদি কোন এলাকাবাসীকে রোযা অবস্থায় পান তাহলে তার উপর তাদের সাথে রোযা রাখা ফরয। কেননা এক্ষেত্রে আগন্তুক ব্যক্তির বিধান স্থানীয়দের অনুরূপ। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “রোযা হচ্ছে যেদিন তোমরা সকলে রোযা রাখ। ঈদুল ফিতর হচ্ছে যেদিন তোমরা সকলে রোযা ভাঙ্গ। আর ঈদুল আযহা হচ্ছে যেদিন তোমরা সকলে কোরবানী কর।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিসটির সনদ ‘জায়্যিদ’। সুনানে আবু দাউদে ও অন্যান্য হাদিসের গ্রন্থে এ হাদিসের সমর্থনকারী আরও হাদীস রয়েছে)। ধরে নিই, এক ব্যক্তি যে দেশে রোযা রাখা শুরু করেছে সে দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তরিত হয়েছে; তাই এ ব্যক্তির রোযা অব্যাহত রাখা ও ঈদ করার ক্ষেত্রে তিনি যে দেশে স্থানান্তরিত হয়েছে সে দেশবাসীর বিধান প্রযোজ্য। তিনি তাদের সাথেই ঈদ পালন করবেন; এমনকি ঐ দেশবাসী যদি তিনি যে দেশ থেকে এসেছেন সে দেশের আগে ঈদ পালন করে সেক্ষেত্রেও। তবে, এক্ষেত্রে তার রোযা যদি ২৯টি পূর্ণ না হয়; তাহলে একদিনের রোযা কাযা করা তার উপর আবশ্যক হবে। কেননা কোন মাসের দিন সংখ্যা ২৯ এর কম হয় না। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড:১০ পৃষ্ঠা:১২৪)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।