লাইলাতুল ক্বদর রামাদানের শেষ দশকে হাজার মাসের চেয়েও সেরা একটি রাত

ভূমিকা: ইবাদতের বসন্তকাল নামে পরিচিত মাহে রামাদানের শেষ দশক খুবই মূল্যবান। এ সময় মুমিনের জন্য বেশি-বেশি ইবাদতে মশগুল থেকে পাপ মোচন ও পুঁজি সংগ্রহের জন্য বিশেষ সুযোগ রয়েছে। কারণ এ দশদিনে একজন মুমিন ই‘তিকাফ ও লাইলাতুল ক্বদর পালন করার সৌভাগ্য অর্জন করে। যারা এ দশকের বিশেষ রাত্রি লাইলাতুল ক্বদরে ইবাদত করা থেকে বঞ্চিত হল, তারা যেন সব ধরনের কল্যাণ এবং মঙ্গল থেকে বঞ্চিত হলো। (সুনানে নাসাঈ, হা/২১০৬)। শেষ দশকের এ রাতগুলো এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এ দশকের জোড় কিংবা বিজোড় যে কোন রাতে লাইলাতুল ক্বদর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এমনকি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমভাবে এ দশদিনে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী, হা/২০২২; সহীহ মুসলিম, হা/১১৬৯)
.
❑ শবে ক্বদরের নাম শবে ক্বদর কেন?
.
আরবীতে ‘লাইলাতুল ক্বাদর’-এর ফারসী, উর্দু, হিন্দী ও বাংলাতে অর্থ হল শবেকদর। আরবীতে ‘লাইলাহ’ এবং ফারসীতে ‘শব’ শব্দের মানে হল রাত। কিন্তু ‘ক্বদর’ শব্দের মানে বিভিন্ন হতে পারে। আর সে জন্যই এর নামকরণের কারণও বিভিন্ন। যেমন:
.
(১). ক্বদর মানে তকদীর। সুতরাং, লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরের মানে তকদীরের রাত বা ভাগ্য-রজনী। যেহেতু এই রাতে মহান আল্লাহ আগামী এক বছরের জন্য সৃষ্টির রুযী, মৃত্যু ও ঘটনাঘটনের কথা লিপিবদ্ধ করে থাকেন। যেমন: তিনি এ কথা কুরআনে বলেন; এই রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।(কুরআনুল কারীম; ৪৪/৪)। আর এই তাকদীর; যা বাৎসরিক বিস্তারিত আকারে লিখা হয়। এ ছাড়া মাতৃগর্ভে ভ্রূণ থাকা অবস্থায় লিখা হয় সারা জীবনের তকদীর। আর আদি তকদীর; যা মহান আল্লাহ আসমান-যমীন সৃষ্টি করার ৫০ হাজার বছর পূর্বে ‘লাওহে মাহফূয’-এ লিখে রেখেছেন।

(২). ক্বদরের আর একটি অর্থ হল; কদর, শান, মর্যাদা, মাহাত্ম্য ইত্যাদি। যেমন বলা হয়ে থাকে, সমাজে অমুকের বড় কদর আছে। অর্থাৎ, তার মর্যাদা ও সম্মান আছে। অতএব এ অর্থে শবে ক্বদরের মানে হবে মহিয়সী রজনী।

(৩). উক্ত ক্বদর যে রাত জেগে ইবাদত করে তারই। এর পূর্বে যে ক্বদর তার ছিল না, রাত জেগে শবে ক্বদর পাওয়ার পর আল্লাহর কাছে সে ক্বদর লাভ হয় এবং তাঁর কাছে তাঁর সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। আর তার জন্যই একে শবে ক্বদর বলে।

(৪). ঐ ক্বদরের রাতে আমলেরও বড় ক্বদর ও মাহাত্ম্য রয়েছে। সে জন্যও তাকে শবেকদর বলা হয়।

(৫). ক্বদরের আর এক মানে হল সংকীর্ণতা। এ রাতে আসমান থেকে যমীনে এত বেশী সংখ্যক ফিরিশতা অবতরণ করেন যে, পৃথিবীতে তাঁদের জায়গা হয় না। বরং তাঁদের সমাবেশের জন্য পৃথিবী সংকীর্ণ হয়। তাই এ রাতকে শবে ক্বদর বা সংকীর্ণতার রাত বলা হয়।
.
❑ লাইলাতুল ক্বদরের মাহাত্ম্য কি? এই রাতটি কেন এত ফজিলত পূর্ণ?
.
শবে ক্বদর বা লাইলাতুল ক্বদরের রয়েছে বিশাল মর্যাদা ও মাহাত্ম্য। লাইলাতুল ক্বদর অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ হওয়ার অন্যতম কারণ হল এ রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “নিশ্চয় আমরা কুরআন অবতীর্ণ করেছি এক মহিমান্বিত রজনীতে। আর আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রজনী কী? মহিমান্বিত রজনী হল- হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জি্বরীল) অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। (এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর শান্তি, রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’’ (সূরা আল-ক্বদর: ১-৫)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমরা তো এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে; আমরা তো সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় ফয়সালা হয়। (সূরা আদ-দুখান: ৩-৫)। আর এ রাতের নেক আমল সমূহের সওয়াব তুলনাহীন। তাছাড়া এ রাতে সর্বাধিক মর্যাদামন্ডিত কিতাব সর্বাধিক মর্যাদামন্ডিত রাসূলের নিকট অবতীর্ণ হয়েছে। সেকারণেও এ রাতকে লায়লাতুল ক্বদর বা মহিমান্বিত রজনী হিসাবে অভিহিত করা হয়ে থাকতে পারে। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, মানবজাতির হেদায়াতের জন্য আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ এলাহী গ্রন্থ আল-কুরআন নাযিলের সূচনা হয়েছে ক্বদরের রাত্রিতে। এ রাত্রিটা কোন্ মাসে? সে বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, রামাযান মাস। যে মাসে নাযিল হয়েছে কুরআন, মানবজাতির জন্য হেদায়াত ও হেদায়াতের স্পষ্ট ব্যাখ্যা হিসাবে এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসাবে। (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৮৫)।
.
রামাদান মাসে লাইলাতুল ক্বদরের রাতে আল-কুরআন নাযিলের ফলে এ রাতের মর্যাদা শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার পরিমাপ করা সম্ভব নয়। সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলেন, ‘আপনি কি জানেন ক্বদরের রাত্রি কী? অতঃপর তিনি বলেন- ‘ক্বদরের রাত্রি হাযার মাস অপেক্ষা উত্তম।’ অর্থাৎ লায়লাতুল ক্বদর যাবতীয় সময়কালের চেয়ে উত্তম, যাতে লাইলাতুল ক্বদর নেই। আরবরা الف বা ‘হাযার’ শব্দ ব্যবহার করে থাকে ‘কোন বস্তুর চূড়ান্তসীমা’ বুঝানোর জন্য। যেমন; সূরা আল-বাক্বারাতে (৯৬ নং আয়াতে) আল্লাহ বলেছেন, الف سنة-এখানে ‘হাযার বছর’ অর্থ চিরকাল, অনন্তকাল। (তাফসীরে কুরতুবী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪; সূরা আল-বাক্বারার ৯৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)। অর্থাৎ কেবল এক হাযার মাসের নয়, বরং এ রাতের ইবাদত ও নেক আমল হাযার হাজার মাসের ইবাদতের তুলনায় উত্তম। তিনটি আয়াতে পরস্পর তিনবার ‘লায়লাতুল ক্বদর’ উল্লেখ করার পর বলা হচ্ছে এটি হাযার মাসের চেয়ে উত্তম। বারবার বলার মাধ্যমে এ রাতের মর্যাদা আরও উন্নীত হয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবী, ২০তম খণ্ড, পৃ. ১৩১)। অনেকে হাযার মাসের ব্যাখ্যা ৮৩ বছর ৪ মাস করেছেন। অতএব, এক হাজার মাস সমান ৩০ হাজার রাত্রি । অর্থাৎ এই রাতের মর্যাদা ৩০,০০০ গুণ অপেক্ষাও বেশী! সুতরাং বলা যায় যে, এই রাতের ১টি তাসবীহ অন্যান্য রাতের ৩০, ০০০ তাসবীহ অপেক্ষা উত্তম। এই রাতের ১ রাক‘আত সালাত অন্যান্য রাতের ৩০,০০০ রাক‘আত অপেক্ষা উত্তম। বলা বাহুল্য, এই রাতের আমল শবে ক্বদর বিহীন অন্যান্য ৩০ হাজার রাতের আমল অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ। সুতরাং যে ব্যক্তি এই রাতে ইবাদত করল, আসলে সে যেন ৮৩ বছর ৪ মাস অপেক্ষাও বেশী সময় ধরে ইবাদত করল । যদিও এ হিসাব একটি কল্পনা মাত্র।
.
(২). শবে ক্বদরের রাত হল মুবারক রাত, অতি বর্কতময়, কল্যাণময় ও মঙ্গলময় রাত।
.
মহান আল্লাহ বলেন, আমি এ কুরআনকে বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা আদ-দুখান; ৪৪/৩)।উক্ত বর্কতময় রাত্রি হলো ‘লাইলাতুল ক্বাদর’ বা শবেক্বদর। আর শবে ক্বদর নিঃসন্দেহে রামাদানে। বলা বাহুল্য, ঐ রাত্রি শবে বরাতের রাত্রি নয়; যেমন অনেকে মনে করে থাকে এবং ঐ রাত্রে বৃথা মনগড়া ইবাদত করে থাকে। কারণ, কুরআন (লাওহে মাহফূয থেকে) অবতীর্ণ হয়েছে (অথবা তার অবতারণ শুরু হয়েছে) রমাযান মাসে। কুরআন বলে, রমাযান মাস; যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। (সূরা বাকারাহ; ২/১৮৫)
.
(৩). এ রাত হল সালাম ও শান্তির রাত।
.
মহান আল্লাহ বলেন, সে রজনী ফজর উদয় পর্যন্ত শান্তিময়। (সূরা ক্বদর; ৯৭/৫)‌। অর্থাৎ সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সারাটা রাত শুধু শান্তিই শান্তি, মঙ্গলই মঙ্গল তথা কল্যাণে পরিপূর্ণ। তার মধ্যে কোন প্রকার অশান্তি নেই। রাত্রি জাগরণকারী মুমিন নারী-পুরুষের জন্য এ হলো শান্তির রাত্রি। শয়তান তাদের মাঝে কোন প্রকার অশান্তি আনয়ন করতে পারে না। অথবা সে রাত্রি হলো নিরাপদ। শয়তান সে রাত্রে কোন প্রকার অশান্তি ঘটাতে পারে না। অথবা সে রাত হলো সালামের রাত। এ রাতে অবতীর্ণ ফিরিশ্তাকুল ইবাদতকারী মুমিনদেরকে সালাম জানায়। (তাফসীর ফাতহুল ক্বাদীর ৫/৬৮০-৬৮১, শারহুস সাদর বিযিক্রি লাইলাতিল ক্বাদর, ইমাম শাওকানী ২৪-২৫পৃঃ)
.
(৪). এ রাত্রি হল কিয়াম ও গোনাহ-খাতা মাফ করাবার রাত্রি।
.
এ রাতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيْمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় ক্বদরের রাত্রি ইবাদতে কাটায় তার পূর্ববর্তী (সগীরা) গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়’। (সহীহ বুখারী, হা/৩৭, ৩৮, ২০০৯ সহীহ মুসলিম, হা/৭৫৯, ৭৬০)। ‘’অর্থাৎ যে ব্যক্তি কদরের রাতে কিয়াম করে’’ অর্থাৎ- এ রাতে জেগে ইবাদাত করে। চাই সে তা অবহিত হোক বা না হোক। ঐ ব্যক্তির যদি সগীরাহ্ গুনাহ থেকে থাকে তবে তা মুছে ফেলা হয়। আর যদি তার কাবীরাহ্ গুনাহ থাকে তবে তা হালকা করে দেয়া হয়। তার যদি কোন গুনাহ না তাকে তবে জান্নাতে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হয়। (মিশকাতুল মাসাবিহ হা/১৯৫৮ ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)। অপর বর্ণনায় রামাদানের আগমনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রামাদান মাস এসেছে। তার সিয়াম আল্লাহ তোমাদের উপর ফরয করেছেন। তাতে আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। অবাধ্য শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়। আল্লাহর বিশেষ রহমতের জন্য তাতে এমন একটি রাত আছে, যা হাযার মাস (৮৩ বছর ৪ মাস) অপেক্ষাও উত্তম। যে তা হতে বঞ্চিত হয়েছে সে সর্বপ্রকার মঙ্গল হতে বঞ্চিত হয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৯৩; নাসাঈ, হা/২১০৬, সনদ সহীহ)। সুতরাং, এ রাত্রি হলো ইবাদতের রাত্রি। এ রাত্রি ধুমধাম করে পান-ভোজনের, আমোদ-খুশীর রাত্রি নয়। আসলে যে ব্যক্তি এ রাত্রের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সেই সকল প্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।
.
(৫). এটা হল সেই রাত; যে রাতে প্রত্যেক কাজের জন্য সকল ফিরিস্তা তাঁদের প্রতিপালকের আদেশে অবতীর্ণ হন।
.
এ রাতে রহমত ও বরকতের ডালি নিয়ে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম)-এর নেতৃত্বে অগণিত ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করে আল্লাহর বিশেষ অনুমতি ক্রমে। (সূরা ক্বদর; ৯৭/৪)। হাদীসে আছে, “লাইলাতুল ক্বদরের রাত্রিতে পৃথিবীতে ফেরেশতারা এত বেশী অবতরণ করে যে, তাদের সংখ্যা পাথর কুচির চেয়েও বেশী।” (মুসনাদে আহমাদঃ ২/৫:১৯, মুসনাদে তায়ালাসী: ২৫৪৫)। ক্বাতাদাহ ও অন্যান্য বিদ্বান (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, ‘যাতে বিভিন্ন বিষয়ের সিদ্ধান্ত থাকে এবং মৃত্যু ও রূযির হিসাব নির্ধারিত থাকে।’ (ইবনু কাছীর, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪৪৪)। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আল্লাহর ঐ সকল নির্দেশসহকারে (ফেরেশতা আগমন করে) যা তিনি আগামী এক বছরের জন্য নির্ধারিত করেছেন ও ফায়সালা করেছেন। (তাফসীরে কুরতুবী, ২০তম খণ্ড, পৃ. ১৩১)। ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ রাতে ফেরেশতাগণ অধিক সংখ্যায় অবতরণ করে অধিক বরকতের কারণে। অধিকহারে বরকত ও রহমতের অবতরণের সাথে সাথে ফেরেশতাগণও অধিকহারে অবতরণ করে থাকে। যেমন তারা কুরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহকে স্মরণ করার মজলিসসমূহ ঘিরে রাখে। সেখানে প্রশান্তির বিশেষ রহমত নাযিল করে। তারা ইলম অন্বেষণকারীর প্রতি সম্মানের জন্য তাদের ডানাসমূহ বিছিয়ে দেয়।’ (ইবনু কাছীর, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪৪৪)।ক্বাতাদাহ ও ইবনু যায়েদ (রাহিমাহুমাল্লাহ) বলেন, ‘এ রাতে কেবলই মঙ্গল। ফজর পর্যন্ত কোন অমঙ্গল নেই।’ যাহ্হাক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ রাতে আল্লাহ শান্তি ব্যতীত অন্য কিছুই নির্ধারণ করেন না।’ মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এটি নিরাপদ রাত্রি। এ রাতে শয়তান কোন মন্দ বা কষ্টদায়ক কাজ করতে সক্ষম হয় না।’ শা‘বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ রাতে মাগরিব হতে ফজর পর্যন্ত ফেরেশতাগণ মসজিদের মুসল্লীদের উপরে এবং প্রত্যেক মুমিনের উপরে সালাম করে বলে, ‘হে মুমিন! আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হোক! (তাফসীরে কুরতুবী, ২০তম খণ্ড, পৃ. ১৩১; ইবনু কাসীর, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪৪৪)
.
(৬). এই রাতে শয়তান বের হয়না:
.
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «لَا يَخْرُجُ شَيْطَانُهَا حَتَّى يُضِيءَ فَجْرُهَا».“ক্বদরের রাতে ফজর উদিত না হওয়া পর্যন্ত শয়তান বের হয় না।” (সহীহ ইবন খুযাইমা, হা/২১৯০; আলবানী রহ.নং শাওয়াহেদের ভিত্তিতে সহীহ বলেছেন হা/২১৯২ ও ২১৯৩; শু‘আইব আরনাঊত হাদীসটিকে শাওয়াহেদের ভিত্তিতে সহীহ বলেছেন)। অপর বর্ননায়, ইবনে মাসউদ বলেন, লাইলাতুল কদরের সকাল ব্যতীত প্রতিদিন শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে সূর্য উদিত হয়। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সময় শয়তানও উদিত হয়; তবে ক্বদরের দিন ব্যতীত। আর সেদিন সূর্য উদিত হয় তবে এতে আলোকরশ্মি থাকে না। মুজাহিদ (سلامٌ هي) এর ব্যাখ্যায় বলেন, এ সময় কোন রোগ-ব্যাধি থাকবে না, শয়তান কোন কাজ করতে সক্ষম হবে না। তিনি আরও বলেন; ক্বদরের রাত শান্তির রাত, এ রাতে কোন দুর্ঘটনা ঘটে না এবং শয়তানও প্রেরিত হয় না। তিনি আরও বলেন, এ রাত নিরাপদ, শয়তান এ রাতে খারাপ কাজ করতে পারে না এবং ক্ষতিকর কিছু সংঘটিত হয় না। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, সে রাতে বিতাড়িত জীন শয়তানকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়, খবিশ শয়তানদেরকে আবদ্ধ করা হয়, আসমানে দরজা খুলে দেওয়া হয়, সকল তাওবাকারীদের থেকে তাওবা কবুল করা হয়। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন; শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত। (সূরা আল-ক্বদর, আয়াত: ৪-৫)।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।