যোহরের সালাতের শুরু এবং শেষ সময় কখন হয়

প্রশ্ন: যোহরের শুরু এবং শেষ সময় কখন হয়? “জোহরের সালাতকে ঠাণ্ডা করে আদায় করো কেননা প্রচণ্ড গরম জাহান্নামের নিঃশ্বাস।” (সহীহ মুসলিম) হাদীসটির বিশুদ্ধ অর্থ জানতে চাই।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের উপর দিবানিশি মোট ৫ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। সাথে সাথে এগুলো আদায়ের জন্য তাঁর সুসামঞ্জস্যপূর্ণ হেকমত অনুযায়ী পাঁচটি সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যাতে করে বান্দাহ্‌ এ সময়ানুবর্তিতার মাধ্যমে তার প্রতিপালকের সাথে অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে। এটা মানব অন্তরের জন্য অনেকটা বৃক্ষের গোড়ায় পানি সিঞ্চনের মত বিষয়। বৃক্ষকে যেমন বেড়ে উঠার জন্য নিয়মিত পানি দিতে হয়; মানব অন্তরকেও স্রষ্টার ভালোবাসায় স্থিতিশীল থাকার জন্য নিয়মিত সালাতের আশ্রয় নিতে হয়। একবারে সব পানি ঢেলে দিয়ে যেমন বৃক্ষের সঠিক প্রবৃদ্ধি আশা করা যায় না, মানব হৃদয়ও তদ্রূপ। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সীমা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন,وَقْتُ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ ظِلُّ الرَّجُلِ كَطُوْلِهِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ“যোহরের সময় হলো- যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে তখন থেকে শুরু করে ব্যক্তির ছায়া তাঁর তার একগুণ বা সমপরিমাণ হয়ে আসরের ওয়াক্ত না আসা পর্যন্ত”(সহীহ মুসলিম, হা/৬১২) এই হাদীসের মাধ্যমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোহরের শুরু ও শেষ দুটো সময়ই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।

ওয়াক্তের শুরু: সূর্য যখন মধ্যাকাশ থেকে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়বে তখন যোহরের ওয়াক্ত শুরু হবে। সূর্য হেলে পড়া তথা যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে কিনা, তা বুঝে নেয়ার কৌশল হলো- ‘একটা খুঁটি বা এ জাতীয় অন্য কিছু একটা উন্মুক্ত স্থানে পুঁতে রেখে খুঁটিটির প্রতি লক্ষ্য রাখা। পূর্বাকাশে যখন সূর্য উদিত হবে তখন খুঁটিটির ছায়া পশ্চিম দিকে পড়বে। সূর্য যত উপরে উঠবে ছায়ার দৈর্ঘ্য তত কমতে থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ছায়া কমতে থাকবে বুঝতে হবে যে সূর্য তখনও ঢলে পড়েনি। এভাবে কমতে কমতে এক পর্যায়ে কমা থেমে যাবে। তারপর খুঁটির পূর্বপাশে ছায়া পড়া শুরু হবে। যখন পূর্বপাশে খানিকটা ছায়া দেখা যাবে, তার মানে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে এবং জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে।

ঘড়ির কাঁটার হিসেবে সূর্য হেলে পড়ার সময়:

সূর্য উদিত হওয়া থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময়টাকে সমান দুইভাগে বিভক্ত করুন। ঠিক মধ্যবর্তী সময়টা হবে সূর্য হেলে পড়ার সময়। যেমন যদি সূর্য সকাল ৬ টায় উঠে আর সন্ধ্যা ৬ টায় ডুবে তাহলে মধ্যাকাশ থেকে সূর্য হেলে পড়ার সময়টা হলো ঠিক ১২টা। এমনিভাবে, যদি ৭ টায় উঠে আর সন্ধ্যা ৭ টায় ডুবে, তাহলে মধ্যাকাশ থেকে হেলে পড়া শুরু হওয়ার সময় হলো দুপুর ১টা…[দেখুন: আশ শারহুল মুমতি’ ২/৯৬]

যোহরের ওয়াক্তের শেষ: সূর্য মধ্যাকাশে থাকাকালীন সময়ে কোন বস্তুর যে সামান্যটুকু ছায়া থাকে সে ছায়াকে বাদ দিয়ে কোন বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ তথা ১ গুণ হওয়া পর্যন্ত।জোহরের ওয়াক্তের সমাপ্তি অনুধাবনের বাস্তব কৌশল: আগের উদাহরণ তথা পুঁতে রাখা খুঁটির কাছে ফিরে যাই। ধরে নিলাম যে, খুঁটিটির উচ্চতা এক মিটার। লক্ষ্য করুন, সূর্য হেলে পড়ার আগ পর্যন্ত খুঁটির ছায়া কমতে কমতে একটা ছোট্ট নির্দিষ্ট বিন্দুতে এসে ঠেকেছে। (এ বিন্দুটাকে চিহ্নিত করে রাখুন) আবার যখন ছায়া (পূর্বে) বাড়তে শুরু করল যোহরের ওয়াক্তও তখন শুরু হল। এভাবে ছায়া বাড়তে বাড়তে এক সময় খুঁটির সমপরিমাণ হয়ে যাবে। (অর্থাৎ আপনার চিহ্নিত বিন্দু থেকে এক মিটার। এ বিন্দুর পূর্বের ছায়াকে আরবিতে ফাঈ বলে। এ ক্ষেত্রে ছায়ার এ অংশটুকু ধর্তব্য নয়) আর তখনি যোহরের ওয়াক্ত শেষ হবে এবং তারপরই শুরু হবে আসরের সময়। তবে প্রথম ওয়াক্তে দ্রুত যোহরের সালাত আদায় করাই শরী‘আত সম্মত। রাসূল (ﷺ)-এর আমল এমনই ছিল যোমন জাবির ইবনু সামুরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত,كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الظُّهْرَ إِذَا دَحَضَتِ الشَّمْسُ.রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের সালাত আদায় করতেন, যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ত।(সহীহ মুসলিম, হা/৬১৮; আবূ দাঊদ, হা/৪০৩; ইবনে মাজাহ, হা/৬৭৩) অর্থাৎ আকাশের মধ্যভাগ থেকে পশ্চিম দিকে ঝুঁকে যেত। অনুরূপ পূর্বে বর্ণিত আবূ বারযাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন …عَنْ أَبِىْ بَرْزَةَ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّى الظُّهْرَ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ “যখন সূর্য ঢলে পড়ত তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের সালাত আদায় করতেন…।(সহীহ বুখারী, হা/৫৪১ ও ৭৭১; আবূ দাঊদ, হা/৩৯৮)
.
▪️এবার যে হাদীসে বলা হয়েছে,”যোহরের সালাতকে ঠাণ্ডা করে আদায় করো; কেননা প্রচণ্ড গরম জাহান্নামের নিঃশ্বাস।” এই হাদীসটির ব্যাখ্যা কী?
.
রাসূল ﷺ থেকে প্রমানিত কিছু হাদীস ইঙ্গিত করে গ্রীষ্মকাল বা অত্যধিক গরমে যোহরের সালাত বিলম্বে পড়া মুস্তাহাব। এই মর্মে দলিল হচ্ছে,আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,أَبْرِدُوْا بِالظُّهْرِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ “তোমরা যোহরকে ঠাণ্ডা কর। কারণ গরমের প্রকোপ জাহান্নামের উত্তাপের কারণে হয়ে থাকে”।(সহীহ বুখারী, হা/৫৩৮, (ইফাবা, হা/৫১১, ২/১০ পৃ.), ‘সালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯) অপর বর্ননায় আবূ যার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তিনি বলেন, আমরা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। মুয়াযযিন যোহরের আযান দেয়ার ইচ্ছা করলেন। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, থাম, একটু ঠাণ্ডা হোক। মুয়াযযিন কিছুক্ষণ পর আবারও আযানের প্রস্তুতি নিলেন। রাসূল (ﷺ) বললেন, থাম, একটু ঠাণ্ডা হোক। তিনি দু’বার অথবা তিনবার এরূপ করলেন। এমনকি আমরা টিলাসমূহের ছাঁয়া দেখতে পেতাম। অতঃপর তিনি বলেন, অত্যধিক গরম জাহান্নামের অংশবিশেষ। অতএব প্রচণ্ড গরমে (যোহরের সালাত) বিলম্বে আদায় করবে।(সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯, সহীহ মুসলিম, হা/৬১৬; আবূ দাউদ, হা/৪০১)
.
উপরোক্ত হাদীস দুটির সরল অর্থ হচ্ছে,”যোহরের সালাতকে ঠাণ্ডা করে আদায় করো অর্থাৎ প্রচণ্ড গরমের মৌসুমে তোমরা যোহরের সালাত আবহাওয়া শীতল হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করো)। কেননা প্রচণ্ড গরম জাহান্নামের নিঃশ্বাস।” সুতরাং হাদীসের আলোকে দেরী করে যোহর সালাত আদায় তখনই প্রযোজ্য যখন অত্যধিক গরমের ওযর পাওয়া যাবে। আবার এতটাও দেরি করা জায়েজ হবেনা যখন আছরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। যেমন:হাদীসে এসেছে,আবূ মাস‘ঊদ আনছারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, صَلَّى الظُّهْرَ حِيْنَ تَزُوْلُ الشَّمْسُ وَرُبَّمَا أَخَّرَهَا حِيْنَ يَشْتَدُّ الْحَرُّ ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে গেলে যোহরের সালাত আদায় করতেন। প্রচণ্ড গরমের কারণে কখনো কখনো তিনি দেরী করতেন…।(আবু দাউদ হা ৩৯৪) তাছাড়া গরমের সময়ও সাহাবীদেরকে নিয়ে রাসূল ﷺ সালাত আদায় করেছেন, যেমন আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা যখন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে যোহরের সালাত আদায় করতাম, তখন আমরা উত্তাপ হতে বাঁচার জন্য আমাদের কাপড়ের উপর সিজদা করতাম”।(সহীহ বুখারী, হা/৫৪২; সহীহ মুসলিম, হা/৬২০) অপর বর্ননায় আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আরো বলেন, প্রচণ্ড গরমের সময়ও আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে (যোহরের) সালাত আদায় করতাম। আমাদের কেউ যখন (গরমের প্রচণ্ডতার কারণে সিজদার সময়) কপাল মাটিতে স্থাপন করতে পারত না, তখন সে কাপড় বিছিয়ে তার উপর সিজদা করত”।(সহীহ মুসলিম, হা/১২৯৪)

প্রিয় পাঠক! বুঝা যাচ্ছে, গরমের উত্তাপ থাকাবস্থায়ও নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে ছাহাবীগণ যোহরের ছালাত আদায় করতেন। এ পর্যায়ে পূর্বের বর্ণিত হাদীছগুলোর দাবি হলো সফরে বা গরম কালে সূর্যের তাপ বেশি হলে, যোহরের সালাত তুলনামূলক ঠাণ্ডার সময় আদায় করা মুস্তাহাব। নীচের হাদীছটিও এক্ষেত্রে অপর একটি প্রমাণ।খাব্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গিয়ে প্রচণ্ড গরমের (ছালাত আদায়ের ব্যাপারে) অভিযোগ করলাম। কিন্তু তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করলেন না। বর্ণনাকারী যুহায়র বললেন, আমি আবূ ইসহাককে জিজ্ঞেস করলাম, তারা (খাব্বাব ও অন্য ছাহাবীগণ) কি যোহরের ছালাত (প্রচণ্ড গরমের মধ্যে) আদায় করা সম্পর্কে অভিযোগ করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি (যুহায়র) আবারও জিজ্ঞেস করলাম (যোহরের ছালাত) আগে ভাগে অর্থাৎ ওয়াক্তের প্রথম দিকে আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন? তিনি এবারও বললেন, হ্যাঁ।(সহীহ মুসলিম, হা/৬১৯) অতএব, প্রচন্ড গরমের কারণে যুহর বিলম্বিত করা যায় ততটুকুই যতটুকু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে দেখিয়েছেন। অর্থাৎ- কোন জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত। যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, সহীহ মুসলিমে খাব্বাব (রাঃ) এর হাদীসে এসেছে, খাব্বাব (রাঃ) বলেন যে,আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যুহর বিলম্ব করার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করেননি। উত্তর হচ্ছে এই যে, তাঁরা আরো বেশী বিলম্বিত করার জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁদের আবেদন গ্রহণ করলে যোহরের সময় পার হয়ে যেত সেজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের আবেদন কবূল করেননি। প্রকৃত সত্য আল্লাহর নিকট।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,

” الأفضل الإبراد بالظهر عند شدة الحر فقط ، وفيما عدا ذلك تبقى على الأصل ، فخير لكم أن تهتدوا بهدي رسول الله صلى الله عليه وسلم فتؤخروا الأذان في شدة الحر إلى الإبراد ، وتعجلوا به أول الوقت في غير ذلك ؛ حرصا على الفضيلة وكثرة الأجر ، وتخفيفا على الناس ، وعلى تقدير وقوع الأذان أول الوقت في شدة الحر : فعلى الجميع أن يبادروا إلى الجماعة ، ويحرصوا على الصلاة مجتمعين ، ولا تفرقوا ، فإن الجماعة واجبة ، والفرقة محرمة ، فلا يرتكب ذلك من أجل الحرص على فضيلة الإبراد ( ولا تنازعوا فتفشلوا وتذهب ريحكم )” .عبد العزيز بن باز – عبد الرزاق عفيفي – عبد الله بن غديان – عبد الله بن قعود .

কেবলমাত্র প্রখর/প্রচন্ড গরমের সময় যোহরের সালাত বিলম্ব করে আদায় করা উত্তম।এছাড়া অন্যান্য সালাত মূলের অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের ওপর অবশিষ্ট থাকবে। সুতরাং তোমাদের জন্য উত্তম হলো যে, তোমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেখানো পথ অনুসরণ করবে। অতএব প্রচণ্ড গরমের সময়ে আযান বিলম্বিত করবে অর্থাৎ আজান দিতে দেরী করবে। আর অন্যান্য (প্রচন্ড গরম ছাড়া) ক্ষেত্রে সালাতের প্রথম ওয়াক্তে আযান দিবে। অধিক ফজিলত ও সওয়াবের আশায় এবং মানুষের জন্য সহজকরণ অর্থে আওয়াল ওয়াক্তে যোহরের আজান দিবে। কিন্তু যদি প্রচন্ড গরমের সময় প্রথম ওয়াক্তে আযান হয়ে যায় তাহলে উচিত হচ্ছে জামাতের দিকে তাড়াতাড়ি অগ্রসর হওয়া এবং জামাতবদ্ধভাবে সালাতের প্রতি আগ্রহ থাকা ও জামাআত হতে বিচ্ছিন্ন না হওয়া। কারণ জামাতবদ্ধ ভাবে থাকা ওয়াজিব এবং বিচ্ছিন্ন হওয়া হারাম। সুতরাং বিলম্ব করে সালাত আদায়ের ফজিলত অর্জন করতে গিয়ে হারামে লিপ্ত হবেনা। তোমরা জগড়া করোনা ফলে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের শক্তি হারাবে।(আব্দুল আজিজ বিন বা’য, আব্দুর রাজ্জাক আফিফী, আব্দুল্লাহ বিন গুদয়্যান ও আব্দুল্লাহ বিন ক্বু’য়ুদ। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা:১২০)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,

” إذا لم يكن في شدة الحر : فإن الأفضل أن يصلى صلاة الظهر إذا دخل وقتها ، ولو كانت قصراً في السفر ؛ لأن تقديم صلاة الظهر في غير شدة الحر أفضل ”

আর যখন প্রচন্ড গরমে হবে না, তখন আওয়াল ওয়াক্তে (প্রথম সময়ে) যোহরের সলাত আদায় করা উত্তম।যখন তার সময় প্রবেশ করবে।যদিও উক্ত ফরজ স্বালাত সফরে ক্বসর করা যায়। কারণ যোহরের সালাত প্রচন্ড গরম ছাড়া অন্য সময়ে এগিয়ে নেওয়া উত্তম”। (উসাইমীন; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব: ২/৮)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: যোহরের সালাত বিলম্ব করার কোন সীমারেখা রয়েছে কি? যেমন উদাহরণস্বরূপ সময় হওয়ার পর এক ঘন্টা অথবা দু’ঘণ্টা?

তিনি উপরে বলেন,

المشروع للإمام أن يبرد بالظهر في حال شدة الحر، ولو في السفر؛ لقول النبي ﷺ: إذا اشتد الحر فأبردوا بالصلاة فإن شدة الحر من فيح جهنم وليس له حد محدود فيما نعلم، وإنما يشرع للإمام التحري في ذلك، فإذا انكسرت شدة الحر وكثر الظل في الأسوار كفى ذلك، والله ولي التوفيق

“ইমামের জন্য শরীয়ত সম্মত হল প্রচন্ড গরমের সময় যোহরের সালাত বিলম্ব করা। এমনকি যদিও সফরে হয়। কারণ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,”তোমরা যোহরকে ঠাণ্ডা কর। কারণ গরমের উত্তাপ জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা থেকে হয়”।(সহীহ মুসলিম হা/১২৮২) আমরা যতদূর জানি এর কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই,বরং ইমামের জন্য তা অনুসন্ধান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাই যদি গরমের তীব্রতা কমে যায় এবং দেওয়ালের ছায়া পর্যাপ্ত আকারে দেখা যায় তবে এটিই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ তাওফিক দাতা।(বিন বায; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/১০ পৃষ্ঠা: ৩৮৫) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।