যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হল বেশি বেশি তাকবির তথা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করা

ভূমিকা: যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন মহান দিন। আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে এ দিনগুলোকে দিয়ে শপথ করেছেন। কোন কিছুকে দিয়ে শপথ করা সে বিষয়ের গুরুত্ব ও মহান উপকারিতার প্রমাণ বহন করে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “শপথ ফজরের ও দশরাত্রির”। ইবনে আব্বাস (রাঃ), ইবনে যুবাইর (রাঃ) ও অন্যান্য পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আলেম বলেন: এ দিনগুলো হচ্ছে- যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন। ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন:“এটাই সঠিক”(তাফসিরে ইবনে কাছির খন্ড:৮ পৃষ্ঠা:৪১৩)এ দিনগুলোর নেক আমল আল্লাহর কাছে প্রিয়। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “অন্য যে কোন সময়ের নেক আমলের চেয়ে এ দশদিনের নেক আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তারা (সাহাবীরা) বলেন: আল্লাহর পথে জিহাদও নয়?! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আল্লাহর পথে জিহাদও নয়; তবে কোন লোক যদি তার জানমাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে এবং কোন কিছু নিয়ে ফেরত না আসে সেটা ভিন্ন কথা।(সহীহ বুখারী হা ৯৬৯ ও সুনানে তিরমিযি হা/৭৫৭)
.
যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিনের আমলগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হল তাকবীর তথা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করা। ঈদুল আযহার তাকবীর দুই ধরনের:

▪️১. মুত্বলাক্ব বা সাধারণ তাকবীর,
▪️২. মুকায়্যাদ বা নির্দিষ্ট সময়ে পঠিতব্য তাকবীর।

◾প্রথমতঃ মুত্বলাক্ব অর্থাৎ সাধারণ বা ব্যাপাক তাকবীর: সাধারণ তাকবীর যিলহজ্জ মাসের দশদিন ও তাশরিকের দিনগুলোর যে কোন সময়ে উচ্চারণ করা সুন্নত। এ তাকবীরের সময়কাল শুরু হয় যিলহজ্জ মাসের প্রথম থেকে (অর্থাৎ যিলক্বদ মাসের সর্বশেষ দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে) তাশরিকের সর্বশেষ দিনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত (অর্থাৎ ১৩ ই যিলহজ্জের সূর্যাস্ত যাওয়া পর্যন্ত) আল্লাহ তাআলা বলেন: “যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে। এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ করতে পারে”(সূরা হজ্জ, আয়াত: ২৮)‘নির্দিষ্ট দিনগুলো’ হচ্ছে- যিলহজ্জের দশদিন। অপর আয়াতে বলেন,মহান আল্লাহ বলেন, আর তোমরা গণনাকৃত দিনগুলিতে আল্লাহকে স্মরণ করবে’ (সূরা বাক্বারাহ ২/২০৩)।উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, وَاذْكُرُوا اللهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ (সূরা বাক্বারাহ ২/২০৩) দ্বারা (যিলহজ্জ মাসের) দশ দিন বুঝায় এবং والأَيَّامٍ المَعْدُودَات দ্বারা ‘আইয়ামুত-তাশরীক’ বুঝায়। ইবনু ওমর ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) এই দশ দিন তাকবীর বলতে বলতে বাযারের দিকে যেতেন এবং তাদের তাকবীরের সঙ্গে অন্যরাও তাকবীর বলত। মুহাম্মাদ ইবনু আলী (রহঃ) নফল সালাতের পরেও তাকবীর বলতেন।(সহীহ বুখারী হা/৯৬৯-এর অনুচ্ছেদ দ্র.)
.
◾দ্বিতীয়তঃ মুকায়্যাদ বা নির্দিষ্ট বা বিশেষ তাকবীর: বিশেষ তাকবীর দেয়া শুরু হয় আরাফার দিনের ফজর থেকে তাশরিকের সর্বশেষ দিনের সূর্যাস্ত যাওয়া পর্যন্ত (এর সাথে সাধারণ তাকবীর তো থাকবেই)। ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পর একাকী বা জামাআতে নামাজ আদায়কারী, নারী অথবা পুরুষ—প্রত্যেকে প্রথমে তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়বে, এরপর ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম,তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ বলবে, এরপর তাকবীর দিবে।পুরুষরা উচ্চ আওয়াজে বলবে,আর নারীরা নিচু আওয়াজে।জেনে রাখা ভাল তাকবীরের সময়কালের এ বিধান যিনি হাজী নন তার জন্য প্রযোজ্য। আর হাজীসাহেব কোরবানীর দিন যোহরের সময় থেকে বিশেষ তাকবীর শুরু করবেন।(ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমু‘উ ফাতাওয়া: ২৪/২২০; ইবনুল কায়্যিম, যাদুল মা‘আদ: ২/৩৬০ মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায,১৩/১৭) ও বিন উসাইমীনের ‘আল-শারহুল মুমতি’,৫/২২০-২২৪)
.
▪️তাকবীরের শব্দাবলী নিম্নরূপ:
.
সাধারণভাবে এই দশ দিন সংক্ষেপে ‘আল্লাহু আকবার’ বেশি বেশি পড়ুন। সাথে, নিচের বাক্যগুলোও সাধ্যানুসারে পড়ুন।
.
اَللّٰهُ أَكْبَرْ اَللّٰهُ أَكْبَرْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرْ اَللّٰهُ أَكْبَرْ وَلِلّٰهِ الْحَمْد
.
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার; ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
.
(আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ; আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ; আল্লাহ ছাড়া কোনও উপাস্য নেই। আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ; আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ; আর আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা)
.
এটি ইবনু মাস‘উদ (রা.) ও অন্যান্য পূর্বসূরিদের থেকে প্রমাণিত। [ দারা কুতনি, আস-সুনান: ১৭৫৬; আলবানি, ইরওয়াউল গালিল: ৬৫৪ যাদুল মা‘আদ ২/৩৬০।সনদ সহিহ]
.
আবার অনেক বিদ্বান পড়েছেন, ‘আল্লা-হু আকবার কাবীরা, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি কাছীরা, ওয়া সুবহানাল্লা-হি বুকরাতাঁও ওয়া আছীলা’ (কুরতুবী ২/৩০৬-৭ পৃঃ)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এটাকে ‘সুন্দর’ বলেছেন (যাদুল মা‘আদ ২/৩৬১ পৃঃ; নায়ল ৪/২৫৭ পৃঃ)
.
আর হাজীগণ ইহরাম বাঁধার পর সাধারণ তাকবীর দিবেন। তবে হজ্জের দিনগুলি তথা ৮-১২ ই যিলহজ্জ বেশী বেশী নিম্নোক্ত তালবিয়া পাঠ করবেন।

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ-

‘আমি হাযির হে আল্লাহ, আমি হাযির। আমি হাযির। তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির। নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা, অনুগ্রহ ও সাম্রাজ্য সবই তোমার; তোমার কোন শরীক নেই’।(সহীন বুখারী হা/১৫৪৯; মুসলিম হা/১১৮৪; আবুদাঊদ হা/১৮১২)এই দিনগুলিতে তাকবীর পুরুষরা উচ্চস্বরে পাঠ করবেন (বুখারী হা/২৬৯৭; আবুদাঊদ হা/৪৬০৬; ইবনু মাজাহ হা/১৪) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
__________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।