যখন কোন কিছু কঠিন মনে হবে তখন আল্লাহর কাছে তার সহজতার জন্য প্রার্থনা করুন

ভূমিকা: দুনিয়াবী জীবনে বিপদ-আপদ মানুষের নিত্যসঙ্গী। পৃথিবীতে মুমিনদের উপর বিপদ আপদ এসে থাকে। বিপদ-আপদসমূহও গোনাহ মাফের অন্যতম কারণ। রাসূল ﷺ বলেছেন,মুমিনের জীবনে কোন বিপদ, কোন রোগ, কোন ভাবনা, কোন দুশ্চিন্তা, কোন কষ্ট, কোন দুঃখ, এমনকি তার দেহে কোন কাঁটাও বিদ্ধ হয় না, যা দ্বারা আল্লাহ তার গোনাহ সমূহ ক্ষমা করেন না।(সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৩৭) বিপদ বলে-কয়ে আসে না।কখন কার ওপর সমস্যা, দুর্বিপাক নেমে আসে তা কেউ জানে না। স্বাভাবিকত বিপদ বা সঙ্কটে পড়লে মানুষ হতবিহ্বল হয়ে যায়।ফলে মানুষের চিন্তা-ভাবনা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে।দিশেহারা হয়ে করণীয় ভুলে যায়।বিপদে পড়লে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হয়। তিনিই একমাত্র উদ্ধারকারী।তিনি চাইলে মুহূর্তেই বিপদ থেকে মুক্তি দিতে পারেন। পেরেশানির কুহেলিকা হটিয়ে দিতে পারেন।বিপদাপদ থেকে পরিত্রাণের জন্য কুরআন হাদীসে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা রয়েছে,বিভিন্ন প্রকার আযাব-গযব ও বিপদাপদ থেকে রক্ষার অন্যতম উপায় হচ্ছে আল্লাহর নিকটে বিনীতভাবে দু‘আ করা। কাকুতি-মিনতি সহকারে তাঁর নিকটে পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাঁর সন্তোষ কামনা করা। তাহলে আল্লাহ দু‘আ কবুল করবেন এবং বান্দার বিপদ আপদ দূর করবেন। যাবতীয় বিপদ-আপদ ও কঠিন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সুন্দর একটি দু’আ শিখব। হাদীসটি বর্ননা করেছেন প্রখ্যাত সাহাবী আনাস বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
.
اللَّهُمَّ لاَ سَهْلَ إِلاَّ مَا جَعَلْتَهُ سَهْلاً وَ أَنْتَ تَجْعَلُ الْحَزْنَ إِذَا شِئْتَ سَهْلً.
.
মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জা’আলতাহু সাহলান, ওয়া আনতা তাজ’আলুল হাযনা ইযা শিঅতা সাহলান।(আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন,পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন, না হয় ভুল শিখতে হবে)।
.
অর্থ: হে আল্লাহ্! আপনি যা সহজ করেন, তা ছাড়া আর কিছুই সহজ নয়। আর আপনিই যখন চান,পেরেশানিকে/কঠিনকে সহজ করে দেন।(সহীহ ইবনু হিব্বান: হা/৯৭০;বায়হাকী দাওয়াতুল কাবীর হা/২৬৬; ইবনু আল্লানের বর্ণনানুসারে ইবনু হাজার আসকালানী বিরচিত আমালিল আযকার: ৪/২৫; ইবনুস সুন্নী: ৩৫৩।ইমাম আলবানী সিলসিলা সহিহাহ,হা/২৬৪৩;আল্লামা শুআইব আল আরনাঊত রহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী রহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
.
এবার মুখস্থ করতে পারেন এভাবে—
.
اللَّهُمَّ لاَ سَهْلَ
(আল্লাহুম্মা লা সাহলা) অর্থ: হে আল্লাহ! কোনো কিছুই সহজ নয়,
.
إِلاَّ مَا جَعَلْتَهُ سَهْلاً
(ইল্লা মা জা’আলতাহু সাহলান) অর্থ:তুমি যেটি সহজ করে দাও,সেটি বাদে,
.
وَ أَنْتَ تَجْعَلُ الْحَزْنَ
(ওয়া আনতা তাজ’আলুল হাযনা) অর্থ: আর তুমি পেরেশানিকে করে দাও,
.
إِذَا شِئْتَ سَهْلً
(ইযা শিঅতা সাহলান) অর্থ:সহজ, যখন তুমি চাও,
.
প্রিয় পাঠক! মনে করুন, আপনি কোনো একটি টার্গেটে কাজ করছেন বা বিপদে পড়েছেন। সেখানে আপনার নিকট পর্যাপ্ত উপকরণ নেই, ফলে কাজটি সমাপ্ত করা কঠিন হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর আগে বা যেকোনো দু’আর মধ্যে খুব দরদ দিয়ে এই দু’আটি অর্থের দিকে লক্ষ রেখে বেশি করে পড়বেন।আল্লাহ দু‘আ কবুলের মালিক, আর আমরা তার ইবাদতকারী বান্দা। সিজদায় বেশী বেশী দু‘আ করতে হবে, তাহলে আমাদের দু’আ কবুল হবে এবং আমরা ক্ষমা লাভ করব। যে সমস্যায় পতিত হয়েছে তার উচিত স্বীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা, যাতে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। কেননা তাঁরই হাতে সমস্ত ক্ষমতা, তাঁরই দুই আঙ্গুলের মাঝে রয়েছে মানুষের অন্তর, যেমন খুশি তেমনভাবে তিনি তা উলট-পালট করেন। হাদীছে এসেছে, আদম সন্তানের অন্তর আল্লাহ তা‘আলার দুই আঙ্গুলের মাঝে একটি অন্তরের মত। তিনি যেভাবে খুশী সেভাবে তা উলট-পালট করেন। তাই মুসলিম বান্দার উচিত তার সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য সালাতের মাধ্যমে দো‘আ করা।দু’আ করার সময় নিজেকে আল্লাহর সামনে খুবই তুচ্ছ,ফকির-মিসকিন হিসেবে উপস্থাপন করবেন, সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবেন এবং অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রেখে দু’আটি পাঠ করবেন। নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন। এবং অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রাখবেন। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।