মোবাইল থেকে কুরআন পড়ার জন্য কি পবিত্রতা শর্ত এবং অপবিত্র অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে কি

উত্তর: প্রথম কথা হলো আমাদের একটি বিষয় পরিস্কার ভাবে জানা উচিত আর তা হচ্ছে, মোবাইলগুলোতে লিখিত বা রেকর্ডকৃত যে কুরআন আছে সেগুলো মুসহাফের হুকুমের আওতায় পড়বে না। তাই পবিত্রতা ছাড়া সেগুলো স্পর্শ করা যাবে এবং এগুলো নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা যাবে। কারণ মোবাইলে লিখিত কুরআন মুসহাফে লিখিত কুরআনের মত না। এগুলো এমন কিছু তরঙ্গ যেগুলো আসে; আবার চলে যায়। এগুলো স্থায়ী কোনো হরফ না। আর মোবাইলে কুরআন ছাড়া অন্যান্য জিনিসও রয়েছে।
.
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে- মোবাইল ফোন, কম্পিউটার কিংবা অন্য কোন ডিভাইস থেকে অপবিত্র অবস্থায় কুরআন তেলোয়াত করা জায়েজ কিনা এই মাসয়ালায় আহালুল ইমামগনের মধ্যে কিছুটা মতানৈক্য থাকলেও, বিশুদ্ধ কথা হল লঘু অপবিত্রতা (পেশাব-পায়খানা করার কারণে নাপাক হওয়া) নিয়ে ওযু ছাড়া মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটার কিংবা অন্য কোন ডিভাইস থেকে কুরআন পড়া জায়েয আছে। তবে সরাসরি মুসহাফ (লিখিত কুরআন) স্পর্শ করতে চাইলে ওযু থাকা জরুরি। পাশাপাশি যদি গোসল ফরয হয় যেমন; স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের মাধ্যমে শরীর নাপাক হলে কিংবা ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাতের কারণে গোসল ফরয হলে সালাফদের সর্বসম্মতিক্রমে গোসল দ্বারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত কুরআন স্পর্শ করে পড়া জায়েজ নয়, এমনকি জমহুর আলেমগনের শক্তিশালী মত অনুযায়ী মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি ডিভাইস থেকে থেকে দেখে দেখে কুরআন তিলাওয়াত করাও জায়েয নয়। আর ঋতুস্রাব জনিত কারণে মহিলারা নাপাক হলে সে সময় কুরআন পড়া যাবে কি না সে বিষয়েও আহালুল ইমামগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। তাই সতর্কতা হিসেবে এ অবস্থায় একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া না পড়াই উত্তম। তবে খুব প্রয়োজন অনুভব করলে (যেমন, ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা, শিক্ষকতা, কুরআন পরীক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে) পড়া যাবে। তবে সরাসরি হাত দ্বারা কুরআন স্পর্শ না করে কাপড় বা পর্দার আবরণ সহকারে কুরআন স্পর্শ করা উচিৎ বলে একদল সালাফ মতামত দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে,”হায়েযগ্রস্ত ও নিফাসগ্রস্ত নারীর ব্যাপারে ইবনে উমর (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, “হায়েযগ্রস্ত ও নিফাসগ্রস্ত নারী কুরআনের কোন কিছু পড়বে না”। কিন্তু, সে হাদিসটি দুর্বল। কেননা হাদিসটি ইসমাঈল বিন আইয়াশ কর্তৃক হিজাযীদের থেকে বর্ণিত। হিজাযীদের থেকে তার বর্ণনা দুর্বল”।(বিন বায ফাতওয়া ইসলামিয়া খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ২৩৯)
.
বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম, সৌদি আরবের ইমাম মুহাম্মাদ বিন সা‘ঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অনুষদ সদস্য ও অধ্যাপক, আকিদা ও ফিকহের প্রাজ্ঞ পণ্ডিত, আশ-শাইখুল আল্লামাহ আব্দুর রহমান বিন নাসির আল-বাররাক (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫২ হি./১৯৩৩ খ্রি.]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: পবিত্রতা ছাড়া মোবাইল থেকে কুরআন পড়ার হুকুম কী?
.
তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেন: الجواب: الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبي بعده أما بعد. فمعلوم أن تلاوة القرآن عن ظهر قلب لا تشترط لها الطهارة من الحدث الأصغر ، بل من الأكبر ، ولكن الطهارة لقراءة القرآن ولو عن ظهر قلب أفضل ، لأنه كلام الله ومن كمال تعظيمه ألا يقرأ إلا على طهارة .وأما قراءته من المصحف فتشترط الطهارة للمس المصحف مطلقاً ، لما جاء في الحديث المشهور : (لا يمس القرآن إلا طاهر) ولما جاء من الآثار عن الصحابة والتابعين ، وإلى هذا ذهب جمهور أهل العلم ، وهو أنه يحرم على المحدث مس المصحف ، سواء كان للتلاوة أو غيرها ،وعلى هذا يظهر أن الجوال ونحوه من الأجهزة التي يسجل فيها القرآن ليس لها حكم المصحف ،لأن حروف القرآن وجودها في هذه الأجهزة تختلف عن وجودها في المصحف ، فلا توجد بصفتها المقروءة ، بل توجد على صفة ذبذبات تتكون منها الحروف بصورتها عند طلبها ، فتظهر الشاشة وتزول بالانتقال إلى غيرها ، وعليه فيجوز مس الجوال أو الشريط الذي سجل فيه القرآن ، وتجوز القراءة منه ، ولو من غير طهارة والله أعلم “সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য, দরূদ ও সালাম এমন নবীর প্রতি, যার পরে কোনো নবী নেই। অতঃপর: মুখস্থ কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য ছোট অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার শর্ত নেই; শুধু বড় অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত। যদিও মুখস্থ কুরআন তেলাওয়াতের জন্যেও পবিত্র থাকা উত্তম। কারণ এটা আল্লাহর বাণী। আর আল্লাহর বাণীর পূর্ণ সম্মান হলো কেবল পবিত্র অবস্থাতেই সেটা পাঠ করা। আর মুসহাফ থেকে পড়ার ক্ষেত্রে শর্ত হলো মুসহাফ স্পর্শ করার জন্য পবিত্রতা শর্ত। কারণ প্রসিদ্ধ হাদীস আছে: “পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না।” এছাড়া সাহাবী-তাবেয়ীদের থেকেও এই মর্মে আছার (তাদের কথা, কাজ বা অনুমোদন) বর্ণিত হয়েছে। অধিকাংশ আলেম এই অভিমতের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের অভিমত হলো: ওযুবিহীন ব্যক্তির জন্য মুসহাফ স্পর্শ করা নিষিদ্ধ; হোক সেটা তেলাওয়াতের জন্য স্পর্শ করা বা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে। এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মোবাইলসহ অন্যান্য যে সব যন্ত্রে কুরআন ধারণ করা হয় সেগুলো মুসহাফের হুকুমে পড়বে না। কারণ এই সব যন্ত্রে কুরআনের হরফের উপস্থিতি মুসহাফে হরফের উপস্থিতি থেকে ভিন্ন। হরফগুলো এসব যন্ত্রে পাঠযোগ্য ফরমেটে থাকে না; বরং তরঙ্গ আকারে কুরআন আছে। যখন চাওয়া হয় তখন তরঙ্গের সাহায্যে হরফগুলো গঠিত হয়ে স্ক্রীনে ভেসে উঠে। আবার অন্য কিছু চালু করলে হরফগুলো স্ক্রীন থেকে সরে যায়। তাই মোবাইল বা ক্যাসেটে কুরআন ধারণ করা হলে সেগুলো স্পর্শ করা বৈধ। অপবিত্র অবস্থায়ও সেগুলো থেকে কুরআন পড়া জায়েয। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ। (নূরুল ইসলাম ওয়েবসাইট থেকে সংকলিত,আরো দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০৬৯৬১)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: আমি কুরআন পড়ার ব্যাপারে আগ্রহী। সাধারণতঃ আমি আগেভাগে মসজিদে যাই। আমার সাথে আপডেট ভার্সনের মোবাইল আছে। যে মোবাইলে সম্পূর্ণ কুরআনের প্রোগ্রাম আছে। মাঝে মাঝে আমার ওযু থাকে না। তখনও যতটুকু পারি পড়ি। আমি কয়েক পারা পড়ি। মোবাইল থেকে কুরআন পড়ার ক্ষেত্রে আমার জন্য কি পবিত্রতা অর্জন করা আবশ্যক?
.
তিনি উত্তর দেন:هذا من الترف الذي ظهر على الناس ، المصاحف والحمد لله متوفرة في المساجد وبطباعة فاخرة ، فلا حاجة للقراءة من الجوال ، ولكن إذا حصل هذا فلا نرى أنه يأخذ حكم المصحف.المصحف لا يمسه إلا طاهر ، كما في الحديث : (لا يمس القرآن إلا طاهر) وأما الجوال فلا يسمى مصحفا ” ا “এটা মানুষের মাঝে প্রকাশ পাওয়া বিলাসিতার অন্তর্ভুক্ত। আলহামদুলিল্লাহ, মসজিদগুলোতে মুসহাফের উন্নত ছাপা পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। মোবাইল থেকে পড়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি এমনটা (প্রশ্নের মত) হয়, তাহলে সেটা মুসহাফের হুকুমে পড়বে বলে আমরা মনে করি না। মুসহাফ কেবল পবিত্র ব্যক্তিই স্পর্শ করে, যেমনটা হাদীস আছে- “পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ যেন কুরআন স্পর্শ না করে।” মোবাইল মুসহাফ অভিধায় পড়ে না”।(ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০৬৯৬১)
.
শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন,
وقراءة القرآن من الجوال فيها تيسير للحائض ، ومن يتعذر عليه حمل المصحف معه ، أو كان في موضع يشق عليه فيه الوضوء ، لعدم اشتراط الطهارة لمسه كما سبق .
“মোবাইল থেকে কুরআন পড়া ঋতুবতী নারীর জন্য সহজতা। এছাড়া যার পক্ষে কুরআন বহন করা অসম্ভব অথবা যে ব্যক্তি এমন স্থানে আছে যেখানে অযু করা কঠিন তার জন্যও শিথিলতা। কারণ মোবাইলে পড়ার সময় স্পর্শ করার ক্ষেত্রে পবিত্রতার শর্ত নেই যেমনটা আগে উল্লেখ করা হয়েছে”।(ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০৬৯৬১)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে অযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা ও তেলাওয়াত করার বিধান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল
.
জবাবে তিনি বলেছিলেন,”অধিকাংশ আলেমদের মতে, একজন মুসলমানের জন্য অযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা বৈধ নয়। এটি চার ইমামসহ অধিকাংশ আলেমগনের অভিমত এবং এটিই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবায়ে কেরামের ফতোয়ায় প্রকাশিত অভিমত। আমর ইবনু হাযম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে একটি সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ামানবাসীদের জন্য লিখে পাঠিয়েছিলেন, لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কেউ যেন কুরআন স্পর্শ না করে। (এটি একটি জায়িদ হাদিস যার আরও অনেক সনদ রয়েছে যা এটিকে শক্তিশালী করে। (মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৬৮০; দারাকুৎনী, হা/৪৪৯; শু‘আবুল ঈমান, হা/২১১১ মিশকাত, হা/৪৬৫; ইরওয়াউল গালীল, হা/১২২,তামামুল মিন্নাহ, পৃ. ১০৭)। তাই জানা যায় যে, বড় ও ছোট উভয় প্রকার অপবিত্রতা থেকে পবিত্র অবস্থায় ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা জায়েয নয়। একই কথা ব্যক্তি যদি পবিত্র না হয় সে ক্ষেত্রে (কুরআনের মুসহাফ) এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরানোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু যদি সে (অপবিত্র ব্যক্তি) এটিকে (কুরআন) সরাসরি স্পর্শ না করে পৃথক কোনো বস্তু দ্বারা যেমন কাপড়ের পবিত্র টুকরা, অথবা হাত মোজা পড়ে পর্দার আবরণ সহকারে কুরআন স্পর্শ করে তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু পবিত্র না থাকা অবস্থায় যদি সে সরাসরি তা স্পর্শ করে তবে উপরোক্ত কারণে অধিকাংশ আলেমদের বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী এটি জায়েজ নয়। আর তিলাওয়াত করার ব্যাপারে, তার জন্য ওযু ছাড়া স্মৃতি থেকে মুখস্ত তিলাওয়াত করা জায়েজ রয়েছে, যাতে করে তারা কুরআনে কারীম ভুলে না যায়।অথবা যদি কুরআন এমন কারো হাতে থাকলে তিনি তা পড়তে পারেন যিনি তার ভুল সংশোধন করতে সাহায্য করবেন। কিন্তু যে ব্যক্তি জুনুব,(ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাতের কারণে যার উপর গোসল ফরয) ব্যক্তির ব্যাপারে। এক্ষেত্রে জুনুবী অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে না।কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, জুনুবী (বড় অপবিত্রতা) অবস্থা ছাড়া আর কোন কিছু তাঁকে কুরআন তেলাওয়াত থেকে দূরে রাখত না। ইমাম আহমাদ কর্তৃক একটি ‘জায়্যিদ সনদসহ আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) টয়লেট থেকে বের হয়ে কুরআন থেকে কিছু তেলাওয়াত করলেন। তিনি বললেন, “এটি তার জন্য যে জুনুব নয়; কিন্তু জুনুবী ব্যক্তি পড়বে না; এমনকি একটি আয়াতও না” মোদ্দাকথা হলো- যে জুনুব সে গোসল না করা পর্যন্ত মুসহাফ বা স্মৃতি থেকে কুরআন তিলাওয়াত করবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি তার ওজু ভঙ্গ করেছে এবং সামান্য অপবিত্রতার অর্থে অপবিত্র সে স্মৃতি থেকে মুখস্ত কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে কিন্তু মুসহাফ স্পর্শ করবে না”।(বিন বায মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/১০; পৃষ্ঠা: ১৫০)
.
▪️অপবিত্র অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শোনা কিংবা তাফসীর গ্রন্থ, হাদিসের দু’আ পড়া যাবে কি?
.
গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করা না গেলেও অন্যের কুরআন তেলাওয়াত শুনা, কানে হেডফোন লাগিয়ে বা লাউড স্পিকারের সাহায্যে কুরআন তিলাওয়াত শোনা কিংবা তাফসীর গ্রন্থ অথবা হাদিস থেকে দু’আ পাঠ করা জায়েয আছে ইনশাআল্লাহ।
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, জুনুব ব্যক্তি কি স্মৃতি থেকে মুখস্থ আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করতে পারে? আর যদি তা জায়েয না হয়, তাহলে সে তা শুনতে পারবে কি? তিনি জবাব বলেন, الجنب لا يجوز له قراءة القرآن , لا من المصحف ، ولا عن ظهر قلب ، حتى يغتسل ; لأنه قد ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه كان لا يحجزه شيء عن القرآن إلا الجنابة .أما الاستماع لقراءة القرآن فلا حرج في ذلك ؛ لما فيه من الفائدة العظيمة من دون مس المصحف ، ولا قراءة منه للقرآن “জুনুব ব্যক্তির জন্য গোসল না করা পর্যন্ত মুসহাফ থেকে কুরআন পড়া বা স্মৃতি থেকে মুখস্ত কুরআন তেলাওয়াত করা জায়েজ নয়। কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত যে, জানাবাত ছাড়া আর কিছুই তাঁকে কুরআন তেলোয়াত থেকে বিরত রাখেনি।
.
কুরআন তিলাওয়াত শোনার ক্ষেত্রে এতে কোন সমস্যা নেই, কারণ এতে অনেক উপকারিতা রয়েছে।কুরআনের মুসহাফ স্পর্শ করা ছাড়াই বা কুরআন তেলোয়াত করা ছাড়াই ফায়দাহ গুলো রয়েছে”। (বিন বায মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/১০; পৃষ্ঠা: ১৫২)।
.
ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে আরো জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,প্রশ্ন: আমি অপবিত্র অবস্থায় উদাহরণত মাসিক অবস্থায় কিছু কিছু তাফসিরগ্রন্থ পড়ি। এতে কি কোন অসুবিধা আছে? এতে কি আমার গুনাহ হবে?
.
উত্তরে শাইখ বলেন,”আলেমগণের অভিমতগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সঠিক হচ্ছে- হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারী তাফসিরগ্রন্থগুলো পড়তে কোন অসুবিধা নেই এবং কুরআন-গ্রন্থটি স্পর্শ না করে কুরআনে কারীম পড়তেও কোন অসুবিধা নেই। তবে, জুনুবী ব্যক্তির জন্য গোসল করার আগ পর্যন্ত কুরআনে কারীম পড়া জায়েয নেই। জুনুবী ব্যক্তি তাফসির, হাদিস ও অন্যান্য গ্রন্থগুলো পড়তে পারেন; তবে সেসব গ্রন্থগুলোতে যে সকল আয়াত রয়েছে সেগুলো পড়বেন না। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে সাব্যস্ত হয়েছে যে, জুনুবী অবস্থা ছাড়া আর কোন কিছু তাঁকে কুরআন তেলাওয়াত থেকে দূরে রাখত না। ইমাম আহমাদ কর্তৃক ‘জায়্যিদ সনদে’ বর্ণিত অন্য এক হাদিসের ভাষ্যে রয়েছে যে, “তবে, জুনুবী ব্যক্তি পড়বে না; এমনকি একটি আয়াতও না”।(ফাতওয়া ইসলামিয়া, খন্ড,২ পৃষ্ঠা: ২৩৯, ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৫০৪৮) আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে দ্বীন বুঝার তওফিক দান করুন। আমীন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।