মৃত ব্যক্তিরা নিজেদের কিংবা অন্য কারো জন্য কিছু করার ক্ষমতা রাখে না

সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেনঃ

📖১। হে নবী! মৃত ব্যক্তিকে তুমি কোন কথা (কোন আহ্বানে) শুনাতে পারবে না। (সূরা নামল, ২৭ঃ৮০)

📖২। হে নবী! তোমার সাধ্য নেই যে, তুমি মৃত ব্যক্তিকে কিছু শোনাবে। (সূরা রুম, ৩০ঃ৫২)

📖৩। জীবিত ও মৃত সমান হতে পারে না, আল্লাহ যাকে চান শুনার, হে নবী! তুমি সেই লোকদেরক শুনাতে পার না যারা ক্ববর সমূহে দাফন হয়ে রয়েছে। (সূরা ফাতির, ৩৫ঃ২২)

📖৪। তার চেয়ে বেশী গোমরাহী কে হতে পারে যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাকে ডাকছে সি কিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিবে না, আর তাদের (জীবিতদের) দোয়া সম্পর্কে তারা (মৃতরা) খবরও রাখে না। (সূরা আহকাফ, ৪৬ঃ৫)

📖৫। সমস্ত সত্য আহ্বান একমাত্র তাঁরই (আল্লাহর) জন্য, বস্তুত তাঁকে (আল্লাহকে) ছেড়ে অন্য যাদেরকেই তারা অহ্বান করে, তারা তাদের সে আহ্বান কিছুমাত্র সাড়া দিতে পারে না। (সূরা রা’আদ, ১৩ঃ১৪)

📖৬। যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদেরকে ডেকে থাকে, তারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারেনি বরং তাদেরকেও সৃষ্টি করা হয়েছে। মরা লাশ, জীবিত নয়, তারা এও জানে না যে, কখন তাদেরকে উত্থিত করা হবে। (সূরা নাহল, ১৬ঃ২০, ২১)

📖৭। আল্লাহ ওজাইরকে একশত বছর মৃত অবস্থায় ফেলে রাখলেন, আবার তাকে বাচিয়ে তুললেন। তাকে জিজ্ঞেসা করা হলো, এভাবে কত দিন কাটালে? সে বলল, একদিন কিংবা তার চেয়ে কম সময়। আল্লহ বলেনঃ না, তুমি একশত বছর কাটিয়েছ। (সূরা বাকারা, ২ঃ২৫৯)

📖৮। আল্লাহ যেদিন রাসূল ও নবীগণকে একত্রিত করবেন আর তাঁদেরকে জিজ্ঞেসা করবেনঃ তোমর উত্তর পেয়েছিলে কি? তাঁরা বলবেন, আমরা কিছুই জানি না। আপনি অবশ্যই গায়েবের খবর ভাল জানেন। (সূরা মায়েদা, ৫ঃ১০৯)

📖৯। বল (হে রাসূলুল্লাহ)ঃ আমি তোমাদের জন্য না কোন তি করার মতা রাখি, না কোন কল্যাণ করার। (সূরা জ্বীন, ৭২ঃ২১)

📖১০। (নবী বলেন) আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমিই তাদের খোঁজ খবর নিয়েছি। তারপর যখন আমাকে দুনিয়া থেকে তুলে নিলেন তখন আপনি (আল্লাহ) তাদের খোঁজ খবর রেখেছেন। আপনিই সব কিছুর খবর রাখেন। (সূরা মায়েদা, ৫ঃ১১৭)

📖১১। প্রত্যেক প্রাণীই মরণশীল। তারপর তোমরা আমারই নিকট ফিরে আসবে। (সূরা আকাবুত, ২৯ঃ৫৭)

মৃত্যুর পরে কারো আত্মা কবরে থাকে না, আল্লাহর নিকট ফিরে যায়। ফিরে যাওয়ার অর্থ হল, পূর্বে যেখানে ছিল সেখানে যাওয়া। জন্মের পূর্বে আমরা আল্লাহর নিকট ছিলাম, কোনখানে ছিলাম, কেমন ছিলাম, কি করতাম, এসব যেমন আমরা এখন জানি না তেমন, মৃত্যুর পরে যেখানে যাব সেখান থেকে পৃথিবীর কিছুই জানা যাবে না।

আল্লাহ পাকের বর্ণিত পবিত্র বাণীর আলোকে, হে পাঠক মুসলিম ভাই ও বোনেরা! ক্ববর ও মাজার সম্পর্কিত বর্তমান যে কু-প্রথা চলছে, সে সম্পর্কে আমাদের চিন্তা করতে হবে। মাজারে শায়িত ব্যক্তি (লাশ) যত বড় কামেল দরবেশ বা বুজুর্গ ব্যক্তিই হোক না কেন, আল্লাহর বাণী মোতাবেক জীবিত মানুষের কোন কথাই তারা শুনে না। যদি কোন কথাই তাদের শুনানো না যায়, তারা অন্যের জন্য উসিলা হয়ে আল্লাহর নিকট সুপারিশ কিভাবে করতে পারেন? মৃত্যুর সাথে সাথেই মৃত ব্যক্তির আমলনামা বন্ধ হয়ে যায় এবং রাসূলুল্লাহ-নবীগণও আল্লাহর এই বিধানের ব্যতিক্রম নন। সেখানে কামেল বা দরবেশগণ কিভাবে মৃত্যুর পর অন্যকে সাহায্য করতে পারেন? যেখানে স্বয়ং আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) কারো ভাল-মন্দ করার মতা রাখেন না, সেখানে কামেল বা দরবেশগণ কিভাবে মৃত্যুর পরে অন্যের সাহায্য করতে পারবেন। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য কুরআন পাকে এরশাদ করেনঃ

📖১। আমাকে (আল্লাহকে) ছাড়া আর কাউকেও নিজেদের মধ্যস্ততাকারী (উকিল) বানিওনা। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭ঃ২)

📖২। আল্লাহ হচ্ছেন তোমাদের মাওলা এবং তিনিই সর্বোত্তম সাহায্যকারী। (সূরা আল ইমরান, ৩ঃ১৫০)

📖৩। যে আমাকে ডাকে, আমি (আল্লাহ) তার ডাক শুনি এবং তার ডাকের উত্তর দিয়ে থাকি। (সূরা বাকারা, ২ঃ১৮৬)

অতএব, হে পাঠক ভাই ও বোনেরা যা কিছু চাইতে হয় সবই মহান আল্লাহর নিকট চাইতে হবে, কোন উকিল বা মধ্যস্ততাকারীর মাধ্যমে চাওয়ার জন্য আল্লাহ পাক কোথাও নির্দেশ দেননি।

কেহ কেহ বলেন, “খাজা বাবার দরবার হতে কেউ আসে না খালি হাতে”। আল্লাহর উদ্বৃত আয়াতে বুঝা গেল, কোন নবী-রাসূল মৃত্যুর পর আর কিছুই জানেন না। যত বড় কামেল বুজুর্গান, নেক বান্দা হোক না কেন, মৃত্যুর পর তাদের কোন কিছুই করার মতা থাকে না। খাজা বাবা নিশ্চয়ই আমাদের রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর চেয়ে উচ্চ মর্যাদাশীল ছিলেন না। আল্লাহ আমাদের রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে বলতে বললেনঃ ”আমি তোমাদের কোন তি বা কল্যাণ করার মতা রাখি না।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) জীবিত থাকা অবস্থায় যা পারতেন না, খাজাবাবা মরার পর তা কি করে পারছেন বলুন তো? এ ধরণের কথা ও কাজ ইবলিসের, খাজা বাবার নয়। কারণ ইবলিসের আয়ু কিয়ামত পর্যন্ত এবং সে আল্লাহর কাছ থেকে অনেক কিছু করার মতাপ্রাপ্ত হয়েছে, ধোকা দিয়ে সে অনেক কিছু দেখানোর ও করার মতা রাখে।

আমরা মুখে বলি, সর্বময় মতার অধিকারী মহান আল্লাহ, আর সন্তান পাবার জন্য ছুটে যাই আজমীরের মৃত ও রুহবিহীন খাজা বাবার কবরের কাছে সাহায্য নিতে। “সব কিছু দেবার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ” এ কথা স্বীকার করেও মাজারে শায়িত ব্যক্তির নিকট দৌড়িয়ে যাই তার সাহায্য পাবার আশায়। আল্লাহর পরিবর্তে মাজারে শায়িত ব্যক্তির সাহায্য পাবার আশা করাই হল শির্ক। তাহলে ভেবে দেখুন, আমাদের ঈমানের কি অবস্থা দাঁড়ালো?

আল্লাহ বান্দার ডাকে সাড়া দেন, তিনি সর্বোত্তম সাহায্যকারী, আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে উকিল বানানো যাবে না- এই আয়াতগুলির উপর বিশ্বাস নেই বলেই খাজা বাবাকে উকিল বানিয়ে নিজেকে কাফির বানালেন এবং পুরোপুরি ইবলিসের খপ্পরে পড়ে গেলেন। কারণ, এ ব্যাপারে খাজা বাবার কোন দায় দায়িত্ব নেই, যেহেতু আল্লাহর কথায় বুঝা গেল যে, খাজা বাবা কিছুই জানেন না বা শুনেন না। বরং আখিরাতে পার পাওয়ার জন্য খাজা বাবা আল্লাহর দয়া এবং দুনিয়ার মানুষের দোয়ার মুখাপেক্ষী হয়ে আছেন।

কুরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেনঃ

📖১। যারা কুফরী পথ অবলম্বন করেছে পৃথিবীর জীবন তাদের জন্য বড়ই প্রিয় ও লোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। (সূরা, বাকারা, ২ঃ২১২)

📖২। লোকদের মধ্যে এমন আছে যে বলে, হে আমাদের রব! দুনিয়ায় আমাদের সব কিছু দান কর। বস্তুত এরূপ লোকদের জন্য পরকালে কোন অংশই প্রাপ্য হতে পারে না। (সূরা বাকারা, ২ঃ২০০)

📖৩। যে লোকেরা শুধু এই দুনিয়ার জীবন এবং উহার চাকচিক্যের অনসন্ধানী হয় তাদের কাজকর্মের যাবতীয় ফল আমি (্আল্লাহ) এখানেই তাদেরকে দান করি, আর তাতে তাদের প্রতি কোনরূপ কমতি করা হয় না। (সূরা হুদ, ১১ঃ১৫)

📖৪। যে কেহ নগদ পাইতে ইচ্ছুক, তাকে আমি (আল্লাহ) এখানেই দিয়ে দেই, যাকে যা দিতে চাই। অতঃপর তার ভাগ্যে জাহান্নাম লিখে দেই যা তাকে উত্তপ্ত করবে, সে হবে লাঞ্ছিত ও রহমত হতে বঞ্চিত্ (সূরা বানী ইসরাঈল আয়াত- ১৭ঃ১৮)

আল্লাহর কুরআনের বাণী যারা অমান্য করে বা অবিশ্বাস করে, তারা কুফুরীতে নিমজ্জিত। অবিশ্বাসী বা আমান্যকারীদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেনঃ

📖১। ধবংস নিশ্চিত সেদিন (কিয়ামত) অমান্যকারীদের জন্য।

📖২। যে সকল লোক কুফরী করছে এবং নিজেদেরকে আল্লাহর পথ হতে বিরত রেখেছে, আল্লাহ তাদের সমস্ত ’আমলকে নিস্ফল ও ধবংশ করে দিবেন।” (সূরা মুহাম্মদ, ৪৭ঃ১)

📖৩। হে নবী, তুমি এই লোকদের জন্য মা প্রার্থনা কর আর না’ই কর, তুমি যদি সত্তর বারও তাদেরকে মা করার আবেদন কর, তবুও আল্লাহ তাদেরকে কখনও মা করবেন না। কেননা, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অমান্যকারী। (সূরা, তওবা, ৯ঃ৮০)

📖৪। আর ভবিষ্যতে তাদের কোন লোক মারা গেলে তাঁর জানাযাও তুমি কখনই পড়বে না, তাঁর ক্ববরের পাশে কখনও দাঁড়াবে না। কেননা, তাঁরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাসী। (সূরা তওবা, ৯ঃ৮৪)

মহান আল্লাহ যেহেতু অতীব দয়াবান সেহেতু তিনি বান্দাদের জন্য মুক্তির বিধান রেখেছেন। হে পাঠক ভাই ও বোনেরা! নিরাশ হওয়ার কোন কারণ নেই, কেননা পরম দয়ালু আল্লাহ পাক কুরআনে এরশাদ করেনঃ

📖১। অবশ্য যে তওবা করবে ও ঈমান আনবে, নেক ’আমল করবে এবং পরে সঠিক সোজা পথে চলবে তার জন্য আমি অনেক কিছুই মা করে দিব। (সূরা, ত্বাহা, ২০ঃ৮২)

📖২। জেনে রেখ, আল্লাহর নিকট তওবা গৃহিত হবার অধিকার তারাই লাভ করতে পারে যারা অজ্ঞতার করণে কোন অন্যায় কাজ করে এবং উহার পর অবিলম্বে তওবা করে নেয়, এমন লোকদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহের দৃষ্টি পুনরায় ফিরিয়ে থাকেন। (সূরা নিসা, ৪ঃ১৭)

📖৩। অবশ্য যে সব লোক মুর্খতা বশতঃ খারাপ কাজ করেছে এবং তওবা করে নিজেদের আমল সংশোধন করে নিয়েছে, নিশ্চিতই তওবা ও সংশোধনের পর তোমার রব তাদের জন্য মাশীল ও দয়াবান। (সূরানাহাল, ১৬ঃ১১৯)

📖৪। ইহা হতে বাঁচবে তারা, যারা তওবা করে এবং ঈমান আনার পর নেক আমল করে। এই লোকদের দোষত্র“টি ও অন্যায়কে আল্লাহ ভালো দ্বারা বদলে দিবেন, আর তিনি বড়ই মাশীল, অতীব দয়াবান। (সূরা, ফুরকান, ২৫ঃ৭০)

📖৫। এখন যদি তারা নিজেদের এই আচরণ হতে তওবা করে ফিরে আসে, তাহলে তাদের পইে ভাল, অন্যথায় আল্লাহ তাদেরকে অত্যন্ত পীড়াদায়ক শাস্তি দিবেন, দুনিয়ার এবং আখেরাতেও ইহারা নিজেদের কোন সাহায্যকারী ও সমর্থক পাবে না। (সূরা, তওবা, ৯ঃ৭৪)

অতএব হে মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আসুন আমরা আমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে মহান আল্লাহর দরবারে তওবা করে কুরআন ও সহীহ হাদীস মোতাবেক ‘আমল সঠিক করতঃ ইসলামী জীবন যাপন করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করি।’ সবশেষে মহান আল্লাহর কথা দিয়ে শেষ করছি।

“তোমাদের নিকট যে জ্ঞান পৌঁছেছে, তার পরও যদি তোমরা (রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে ছাড়া) তাদের মনের ইচ্ছা ও বাসনার অনুসরণ কর, তাহলে নিশ্চিত তোমরা যালেমদের মধ্যে গণ্য হবে। (সূরা বাবারা, ২ঃ১৪৫)