কোরআন ও সুন্নায় সালামের গুরুত্ব ও আদব

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

আল্লাহ বলেছেন, “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যাতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না।” (সূরা নুরঃ ২৭)

তিনি অন্যত্র বলেন, “যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন। “(সূরা নুরঃ ৬১)

তিনি অন্য জায়গায় বলেন, “যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর। (সূরা নিসা 86 আয়াত)

তিনি আরো বলেছেন, “তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম।’ উত্তরে সে বলল, ‘সালাম’।” (সূরা যারিয়াতঃ ২৪-২৫)

?এই প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হল-

?১) আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ‘সর্বোত্তম ইসলামী কাজ কি?’ তিনি বললেন, “(ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে (ব্যাপকভাবে) সালাম পেশ করবে।”1

?২) হযরত আবু ‍হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যখন আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন। তখন তাঁকে বললেন, ‘তুমি যাও এবং ঐ ফেরেস্তামন্ডলীর একটি দল বসে আছে, তাদের উপর সালাম পেশ কর। আর ওরা তোমার সালামের কী জবাব দিচ্ছে তা মন দিয়ে শোনো। কেননা, ওটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তান-সন্ততির সালাম বিনিময়ের রীতি।’ সুতরাং তিনি (তাঁদের কাছে গিয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’ , তাঁরা উত্তরে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়ারাহমাতুল্লাহ’ , অতএব তাঁরা ওয়ারাহমাতুল্লাহ’ শব্দটা বেশি বললেন।” (বুখারী ও মুসলিম)2

?৩) হযরত আবু উমারা বারা ইবনে আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সাতটি (কর্ম করতে) আদেশ করেছেনঃ

ক) রোগী দেখতে যাওয়া, খ) জানাযার অনুসরণ করা, গ) হাঁচির (ছিঁকের) জবাব দেয়া, ঘ) দুর্বলকে সাহায্য করা, ঙ) নির্যাতিত ব্যক্তির সাহায্য করা, চ) সালাম প্রচার করা, এবং ছ) শপথকারীর শপথ পুরা করা। (বুখারী ও মুসলিম)3

?৪) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্য়ন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ না তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে উঠবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেব না, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসতে লাগবে? (তা হচ্ছে) তোমরা আপোসের মধ্যে সালাম প্রচার কর।” (মুসলিম)4

?৫) আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘হে লোক সকল! তোমরা সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) অন্নদান কর, আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখ এবং লোকে যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে তখন তোমরা নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (তিরমিযী হাসান সহীহ)5

?৬) তুফাইল ইবনে উবাই ইবনে কা’ব হতে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাঃ)-এর কাছে আসতেন এবং সকালে তাঁর সঙ্গে বাজারে যেতেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা সকালে বাজারে যেতাম, তখন তিনি প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতা, স্থায়ী ব্যবসায়ী, মিসকীন, তথা অন্য কোন ব্যক্তির নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাকে সালাম দিতেন।’ তুফাইল বলেন, সুতরাং আমি একদিন (অভ্যাসমত) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে তাঁর সঙ্গে বাজারে যেতে বললেন। আমি বললাম, ‘আপনি বাজারে গিয়ে কী করবেন? আপনি তো বেচাকেনার জন্য কোথাও থামেন না, কোন পণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন না, তার দরদাম জানতে চান না এবং বাজারের কোন মজলিসে বসেনও না। আমি বলছি, এখানে আমাদের সাথে বসে যান, এখানেই কথাবার্তা বলি।’ (তুফাইলের ভুঁড়ি মোটা ছিল, সেই জন্য) তিনি বললেন, ‘ওহে ভুঁড়িমোটা! আমরা সকাল বেলায় বাজারে একমাত্র সালাম পেশ করার উদ্দেশ্যে যাই; যার সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়, আমরা তাকে সালাম দিই।’ (মুয়াত্তা মালিক, বিশুদ্ধ সূত্রে)6

??সালাম দেওয়ার পদ্ধতিঃ??

[প্রথম যে সালাম দেবে তার এরূপ বলা (উচিত), ‘আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’, এটা মুস্তাহাব। সে বহুবচন সর্বনাম ব্যবহার করবে; যদিও যাকে সালাম দেয়া হয় সে একা হোক না কেন। আর সালামের উত্তরদাতা বলবে ‘ওয়াআলাইকুমুস সালামু ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ, অর্থাৎ সে শুরুতে সংযোজক অব্যয় ‘অ’ বা ‘ওয়া’ শব্দ ব্যবহার করবে।]

?১) ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে এভাবে সালাম করল ‘আসসালামু আলাইকুম’ আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জবাব দিলেন। অতঃপর লোকটি বসে গেলে তিনি বললেন, ‘‘ওর জন্য দশটি নেকী।” তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে ‘আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম পেশ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন এবং লোকটি বসলে তিনি বললেন, “ওর জন্য বিশটি নেকী।” তারপর আর একজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’ বলে সালাম দিল। তিনি তার জবাব দিলেন। অতঃপর সে বসলে তিনি বললেন, “ওর জন্য ত্রিশটি নেকী।” (আবু দাউদ, তিরমিযী হাসান সূত্রে)7

?২ ) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, “এই জিব্রীল আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে সালাম পেশ করেছেন।” তিনি বলেন, আমিও উত্তরে বললাম, ‘ওয়ালাইহিস সালামু অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ।’(বুখারী ও মুসলিম)8

এই গ্রন্থদ্বয়ের কোন বর্ণনায় ‘অবারাকাতুহ’ শব্দ এসেছে, আবার কোন কোন বর্ণনায় তা আসেনি। তবুও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর অতিরিক্ত বর্ণনা গ্রহণীয়।

?৩) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন কথা বলতেন, তখন তা তিনবার বলতেন; যাতে তাঁর কথা বুঝতে পারা যায়। আর যখন কোন গোষ্ঠীর কাছে আসতেন তখনও তিনি তিনবার করে সালাম পেশ করতেন। (বুখারী)8

?৪) মিক্বদাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি স্বীয় দীর্ঘ হাদিসে বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য তাঁর অংশের দুধ রেখে দিতাম। তিনি রাতের বেলায় আসতে এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যে, তাতে কোন ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগিয়ে দিতেন না এবং জাগ্রত ব্যক্তিদের শুনাতেন। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তাঁর অভ্যাসমত)এসে সালাম দিলেন, যেমন তিনি সালাম দিতেন। (মুসলিম)10

?৫) আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের একদল মহিলার নিকট দিয়ে পার হওয়ার সময় আমাদেরকে সালাম দিলেন। (আবু দাউদ)11

(প্রকাশ থাকে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাতের ইশারায় মহিলাদেরকে সালাম দেয়ার তিরমিযীর হাদিসটি সহিহ নয়।)

?৬) আবু উমামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর সর্বাধিক নিকটবর্তী মানুষ সেই, যে প্রথম সালাম করে।” (আবু দাউদ সহীহ সনদ যোগে, তিরমিযীও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ও বলেছেন হাদীসটি হাসান)12

?৭) আবু জুরাই হুজাইমী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট হাজির হয়ে বললাম, ‘আলাইকাস সালাম’ ইয়া রাসুলুল্লাহ। তিনি বললেন, “আলাইকাস সালাম’ বলো না। কেননা, ‘আলাইকাস সালাম’ হচ্ছে মৃত ব্যক্তিদেরকে জানানো অভিবাদন বাক্য।’’ (আবু দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)13

?সালামের বিভিন্ন আদব-কায়দা?

?১) আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আরোহী পায়ে হাঁটা ব্যক্তিকে, পায়ে হাঁটা ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোককে সালাম দেবে।” (বুখারী ও মুসলিম)14

বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘ছোট বড়কে সালাম দেবে।’’

?২) আবু উমামাহ সুদাই ইবনে আজলান বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “লোকেদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহর নিকটবর্তী সেই, যে লোকদেরকে প্রথমে সালাম করে।” (আবু দাউদ উত্তম সূত্রে)15

?৩) তিরমিযীও আবু উমামাহ কর্তৃক বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসুল! দু’জনের সাক্ষাৎকালে তাদের মধ্যে কে প্রথমে সালাম দেবে?’ তিনি বললেন, “যে মহান আল্লাহর সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে।” (তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান)

দ্বিতীয়বার সত্বর সাক্ষাৎ হলেও পুনরায় সালাম দেয়া মুস্তাহাব
[যেমন কোথাও প্রবেশ করার পর বের হয়ে গিয়ে পুনরায় তৎক্ষণাৎ সেখানে প্রবেশ করলে কিম্বা দু’জনের মাঝে কোন গাছ তথা অনরূপ কোন জিনিসের আড়াল হলে, তারপর আবার দেখা হলে পুনরায় সালাম দেয়া মুস্তাহাব।]

?১) আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নামায ভুলকারীর হাদিসে এসেছে যে, সে ব্যক্তি এসে নামায পড়ল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে সালাম দিল। তিনি তার সালামের জবাব দিয়ে বললেন, “ফিরে যাও, এবং নামায পড়। কেননা, তোমার নামায পড়া হয়নি।’’ কাজেই সে ফিরে গিয়ে আবার নামায পড়ল। তারপর পুনরায় এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম দিল। এভাবে সে তিনবার করল। (বুখারী ও মুসলিম)16

?২) উক্ত রাবী আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেই বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে দেখা করবে, তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। অতঃপর যদি তাদের দু’জনের মাঝে গাছ বা দেয়াল অথবা পাথর আড়াল গয়, তারপর আবার সাক্ষাৎ হয়, তাহলে সে যেন আবার সালাম দেয়।” (আবু দাউদ)17

নিজ গৃহে প্রবেশ করার সময় সালাম দেয়া উত্তম
আল্লাহ্ বলেন,

فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً

“যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। “(সূরা নূরঃ ৬১)

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমাকে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে বৎস! তোমার বাড়িতে যখন তুমি প্রবেশ করবে, তখন সালাম দাও, তাহলে তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য তা বর্কতময় হবে।” (তিরমিযী হাসান সহীহ)18

?শিশুদেরকে সালাম করা?

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি কতিপয় শিশুর নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাদেরকে সালাম দিলেন এবং বললেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)19

নারী-পুরুষের পারস্পরিক সালাম
[নিজ স্ত্রীকে স্বামীর সালাম দেয়া, অনুরূপভাবে কোন পুরুষের তার ‘মাহরাম’ (যার সাথে বৈবাহিক-সম্পর্ক চিরতরে নিষিদ্ধ এমন) মহিলাকে সালাম দেয়া, অনুরূপ ফিতনা-ফাসাদের আশঙ্কা না থাকলে ‘গায়র মাহরাম’ (যার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কোন সময় বৈধ এমন) মহিলাদেরকে সালাম দেয়া বৈধ। যেমন উক্ত মহিলাদেরও উক্ত পুরুষদেরকে ঐ শর্ত সাপেক্ষে সালাম দেয়া বৈধ।]

?১) সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এক মহিলা ছিল। অন্য বর্ণনায় আছে আমাদের একটি বুড়ি ছিল। সে বীট (কেটে) হাঁড়িতে রেখে তাতে কিছু যব দানা পিষে মিশ্রণ করত। অতঃপর আমরা যখন জুমআর নামায পড়ে ফিরে আসতাম, তখন তাকে সালাম দিতাম। আর সে আমাদের জন্য তা পেশ করত।’ (বুখারী)20

?২) উম্মে হানী ফাখেতাহ বিন্তে আবী তালেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মক্কা বিজয়ের দিন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট হাজির হলাম। তখন তিনি গোসল করছিলেন। ফাতেমা তাঁকে একটি কাপড় দিয়ে আড়াল করছিলেন। আমি (তাঁকে) সালাম দিলাম।…’ অতঃপর তিনি সম্পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেছেন। (মুসলিম)21

?৩) আসমা বিনতে য়্যাযিদ (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, ‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমাদের) একদল মহিলার নিকট অতিক্রম করার সময় আমাদেরকে সালাম দিলেন।’ (আবু দাউদ)22

তিরমিযীর শব্দগুচ্ছ এরূপঃ ‘একদা রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদ অতিক্রম করছিলেন, মহিলাদের একটা দল বসেছিল, তিনি তাদেরকে হাতের ইঙ্গিতে সালাম দিলেন। (এটি সহীহ নয়)

অমুসলিমকে আগে সালাম দেয়া হারাম ও তাদের সালামের জবাব দেয়ার পদ্ধতি
কোন সভায় যদি মুসলিম-অমুসলিম সমবেত থাকে, তাহলে তাদের (মুসলিমদের)কে সালাম দেয়া মুস্তাহাব

?১) আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদেরকে প্রথমে সালাম দিয়ো না। যখন পথিমধ্যে তাদের কারো সাথে সাক্ষাৎ হবে, তখন তাকে পথের এক প্রান্ত দিয়ে যেতে বাধ্য কর।” (মুসলিম)23

?২) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কিতাবধারীরা (ইয়াহুদী-খ্রিস্টানরা) যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়, তখন তোমরা জবাবে বল, ‘ওয়া আলাইকুম।” (বুখারী-মুসলিম)24

?৩) উসামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে এমন সভা অতিক্রম করেন, যার মধ্যে মুসলিম, মুশরিক (মূর্তিপূজক) ও ইয়াহুদীর সমাগম ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে সালাম করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)25

সভা থেকে উঠে যাবার সময়ও সাথীদেরকে ত্যাগ করে যাবার পূর্বে সালাম দেয়া উত্তম
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ সভায় পৌঁছবে তখন সালাম দেবে। আর যখন সভা ছেড়ে চলে যাবে, তখনও সালাম দেবে। কেননা, প্রথম সালাম শেষ সালাম অপেক্ষা বেশি উত্তম নয়।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, হাসান হাদীস)26

বাড়িতে প্রবেশ করার অনুমতি গ্রহণ ও তার আদব-কায়দা
মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّىٰ تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَىٰ أَهْلِهَا ۚ

অর্থাৎ, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। (সূরা নূরঃ ২৭)

তিনি আরো বলেন,

وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ

অর্থাৎ, তোমাদের শিশুরা বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তারাও যেন তাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের মতো (সর্বদা) অনুমতি প্রার্থনা করে। (সূরা নূরঃ ৫৯)

?১) আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ‍সাল্লাম বলেছেন, “অনুমতি তিনবার নেয়া চায়। যদি তোমাকে অনুমতি দেয় (তাহলে ভেতরে প্রবেশ করবে) নচেৎ ফিরে যাবে।” (বুখারী ও মুসলিম)27

?২) সাহল ইবনে সাদ (রাঃ)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ‍সাল্লাম বলেছেন, “দৃষ্টির কারণেই তো (প্রবেশ) অনুমতির বিধান করা হয়েছে।” (অর্থাৎ দৃষ্টি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে ঐ নির্দেশ।) (বুখারী ও মুসলিম)28

?৩) রিবয়ী ইবনে গিরাশ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন বনু আমেরের একটা লোক আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, সে একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ‍সাল্লামের নিকট (প্রবেশ) অনুমতি চাইল। তখন তিনি বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। সুতরাং সে নিবেদন করল, ‘আমি কি প্রবেশ করব?’ রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ‍সাল্লাম স্বীয় খাদেমকে বললেন, ‘বাইরে গিয়ে এই লোকটিকে অনুমতি গ্রহণের পদ্ধতি শিখিয়ে দাও এবং তাকে বল, তুমি বল ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব?’ সুতরাং লোকটা ঐ কথা শুনতে পেয়ে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব?’ অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ‍সাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন এবং সে প্রবেশ করল। (আবু দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্রে)29

?৪) কিলদাহ ইবনে হাম্বাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ‍সাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁর কাছে বিনা সালামে প্রবেশ করলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ‍সাল্লাম বললেন, “ফিরে যাও এবং বল, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি ভেতরে আসব কি?” (আবু দাউদ, তিরমিযী, হাসান)30

????রেফারেন্স????

সহীহুল বুখারী 12,28,6236, মুসলিম 39, তিরমিযী 1855, নাসায়ী 5000, আবূ দাউদ 5194, ইবনু মাজাহ 3253, 3694, আহমদ 6545, দারেমী 2081.
সহীহুল বুখারী 3326, 6227, মুসলিম 2841, আহমদ 8092, 10530,27388
সহীহুল বুখারী 1239,2445,5175,5635,5660,5838,5849,5836,6222, 6235,6654, মুসলিম 2066, তিরমিযী 1760, 2809, নাসায়ী 1939, 3778, 5309, ইবনু মাজাহ 2115 আহমাদ 18034, 18061, 18170,
মুসলিম 54, তিরমিযী 2688, আবু দাউদ 5193, ইবনু মাজাহ 68, 3692, আহমাদ 8841, 9416, 9821, 10272, 27314
তিরমিযী 2485, ইবনু মাজাহ 1334, 3251, দারেমী 1460
মুয়াত্তা মালিক 1793
তিরমিযী 2689, আবু দাউদ 5195, আহমাদ 19446, দারেমী 2460
সহীহুল বুখারী 3117, 3768, 6201, 6249, 6253, মুসলিম 2447, তিরমিযী 2963, 3881, 3882, নাসায়ী 39.52, 39536, 3954, আবু দাউদ 5232, আহমাদ 32760, 23941, 24053, 25352
সহীহুল বুখারী 94,95, তিরমিযী 2723, 3640, আহমাদ 12809, 12895
মুসলিম 2055, তিরমিযী 2719, আহমাদ 23300, 23310
তিরমিযী 2697, আবু দাউদ 5204, ইবনু মাজাহ 3701, আহমাদ 27041, দারেমি 2637
আবু দাউদ 5197, তিরমিযী 2694, আহমাদ 21688, 21776, 21814
তিরমিযী 2721, 2722, আবু দাউদ 5029
সহীহুল বুখারী 6231, 6232, 6234, 31, 32, 34, মুসলিম 2160 তিরমিযী 2703, আবু দাউদ 5198, আহমাদ 27379, 8116, 10246
তিরমিযী 2694, আবু দাউদ 5197, আহমাদ 21688, 21749, 21776, 21814
সহীহুল বুখারী 757, 793, 6251, 6667, মুসলি, 397, তিরমিযী 303, নাসায়ী 884, আবু দাউদ 856, ইবনু মাজাহ 1060, 3695, আহমাদ 9352
আবু দাউদ 5200
তিরমিযী 2698
সহীহুল বুখারী 6247, মুসলিম 2168, তিরমিযী 2696, আবু দাউদ 5202, ইবনু মাজাহ 3700, আহমাদ 11928, 12313, 12485, 12610, দারেমি 2636
সহীহুল বুখারী 938, 939, 941, 5403, 2349, 6248, 6279, মুসলিম 856, তিরমিযী 525, ইবনু মাজাহ 1099
সহীহুল বুখারী 357, 280, মুসলিম 336, তিরমিযী 474, 2734, নাসায়ী 225, আবু দাউদ 1104, 1176, 3171, 4292, 6158, ইবনু মাজাহ 465, 614, 1323, 1379, আহমাদ 26347, 26356, 26833, মালেক 359, দারেমী 1452, 1453
আবু দাউদ 5204, দারেমি 2637, তিরমিযী 2697, ইবনু মাজাহ 3701, আহমাদ 27014
মুসলিম 2167, তিরমিযী 2700, আবু দাউদ 149, আহমাদ 7513, 7562, 8356, 9433, 9603, 104418
সহীহুল বুখারী 6258, 6926, মুসলিম 2163, তিরমিযী 3301, আবু দাউদ 5207, ইবনু মাজাহ 3697, আহমাদ 11537,11705,11731,12019,12583,12674,13345
সহীহুল বুখালী 5663,4556,6207,6254 মুসলিম 1798, তিরমিযী 2702, আহমাদ 21260
আবু দাউদ 5208, তিরমিযী 2706, আহমাদ 7793,7102,9372
সহীহুল বুখারী 6245,2062,7353, মুসলিম 2154, আবু দাউদ 5181, আহমাদ 19016,19062,19084, মুওয়াত্তা মালিক 1798
সহীহুল বুখারী 6242,6889,6900 মুসলিম 2157, তিরমিযী 2708, নাসায়ী 4858, আবু দাউদ 5171, আহমাদ 11848,11644,12017,12418,13131
আবু দাউদ 5177, আহমাদ 22617
আবু দাউদ 5176, তিরমিযী 2710, আহমাদ 14999}।

 

***সৌজন্যেঃ শাহেদ কাজী***