মুহাররম মাসে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার ও বিদ‘আত যা পরিত্যাগ করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অপরিহার্য

ভূমিকা: আমরা গত পোস্টে আলোচনা করেছি আশুরাকে কেন্দ্র করে আমাদের একমাত্র করণীয় হল মূসা (আলাইহিস সালাম) এর মত আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া স্বরূপ সিয়াম পালন করা আর সেটা মুহাররমের ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ অথবা কমপক্ষে ১০ তারিখ। আশুরাকে কেন্দ্র করে এ ছাড়া আর কোন ধরনের আমল বা আচার-অনুষ্ঠান শরী‘আত সম্মত নয়। কেউ করলে দ্বীনের মধ্যে নতুন সংযোজন হিসেবে বিদআত হবে।(সহীহ মুসলিম, হা/১১৩৪ ২৫৫৭। আবূ দাঊদ, হা/২৪৪৫, সনদ সহীহ ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/১৭০) কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মুহাররম মাসে বিশেষ করে আশুরা উপলক্ষে মুসলিম বিশ্বের কিছু কিছু দেশে বিভিন্ন অপসংস্কৃতি, কুপ্রথা, শিরক ও বিদ‘আতের প্রচলিত হয়ে গিয়েছে। যা অধিকতর শী‘আদের মধ্যে থেকে চলে এসেছে। এগুলো পরিত্যাজ্য, নাজায়েয, ইসলাম সমর্থিত নয়। আমাদের এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। যার কিছু নমুনা দেওয়া হ’ল :

(১) এ মাসকে শোক, মাতম, দুশ্চিন্তা ও দুঃখের মাস বলা হয়।

(২) নারীরা সৌন্দর্যচর্চা থেকে বিরত থাকে।

(৩) এ মাসে জন্মগ্রহণকারী সন্তানকে দুর্ভাগা মনে করা হয়।

(৪) এ মাসের প্রথম দিন থেকে বাড়ি পরিস্কার করা হয় এবং বানেয়াট নতুন নতুন ইবাদত করা হয়।

(৫) কারবালার কারণে আশুরার মর্যাদা মনে করা হয়।

(৬) শাহাদতে হুসাইনের শোক পালনের উদ্দেশ্যে সিয়াম পালন করা।

(৭) চোখে সুরমা লাগানো।

(৮) ১০ই মুহাররমে বিশেষ ফযীলতের আশায় বিশেষ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করা।

(৯) হুসাইনের নামে ভুয়া কবর বানিয়ে তা‘যিয়া বা শোক মিছিল বের করা।

(১০) ওই কবরে হুসাইনের রূহ আসে বলে বিশ্বাস করা, সালাম করা, সেখানে মাথা নত করা, সিজদা করা এবং তাঁর কাছে কিছু চাওয়া

(১১) মিথ্যা শোক প্রদর্শন করে বুক চাপড়ানো, বুকের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা।

(১২) হায় হোসেন! হায় হোসেন! বলে মাতম করা।

(১৩) রক্তের নামে লাল রঙ ছিটানো।

(১৪) লাঠি, তীর, বল্লম নিয়ে যুদ্ধের মহড়া দেয়া।

(১৫) হুসাইনের নামে কেক বানিয়ে বরকতের কেক বলে চালানো।

(১৬) হুসাইনের নামে মোরগ ছেড়ে দিয়ে বরকতের মোরগ বলে চালানো।

(১৭) কালো ব্যাজ ধারণ করা।

(১৮) এ মাসে বিবাহ-শাদী করা অন্যায় মনে করা।

(১৯) এ দিনে পানি পান ও শিশুদের দুধ পান অন্যায় মনে করা।

(২০) উগ্র শী‘আরা ‘ইমাম বাড়া’তে হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নামে বকরি বেঁধে লঠিপেটা করে আনন্দ করা।

(২১) আয়েশা (রাঃ) সহ আরো বড় বড় সাহাবীদের গালি দেয়া।

(২২) অনেক সেমিনারে আশুরাকে মাককনে কারবালা মনে করা ও হুসাইনকে ‘মা‘ছূম’ এবং ইয়াযীদকে ‘মাল‘ঊন’ প্রমাণ করা, যা সত্য থেকে বহু দূরে।

(২৩) বুকে ব্লেড মেরে রক্ত বের করা।

(২৪) এ দিনে কবর জিয়ারত করা ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ভুয়া কবর জিয়ারত করা শিরক, শোক করা, শোক মিছিল করা ইসলামে হারাম এবং সাহাবীদের গালি দেওয়া কাবীরা গুনাহ।

◾আশুরা সম্পর্কিত কতিপয় বিভ্রান্তি:

১০ই মুহাররমের ঐতিহাসিক পটভূমি সম্পর্কে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। যেমন বলা হয়ে থাকে:
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
(১) এ দিনে আসমান-যমীন সৃষ্টির কাজ সম্পন্ন হয়েছিল।

(২) এ দিনে আল্লাহ রব হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন।

(৩) এ দিনে আরশ, কুরসী এবং লাওহে মাহফুয সৃষ্টি হয়।

(৪) এ দিনে আদম (আঃ) কে সৃষ্টি ও পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয় এবং এ দিনে হাওয়ার সাথে মিলন হয়।

(৫) নূহ (আঃ)-এর সময় প্লাবন হয় এবং নূহ (আঃ) এ দিনে মুক্তি পান।

(৬) এ দিনে আল্লাহ তা’য়ালা ঈসা (আঃ) কে ঊর্দ্ধাকাশে উঠিয়ে নিয়েছিলেন।

(৭) এ দিনে আইয়ূব (আঃ) দুরারোগ্য ব্যাধি হতে মুক্ত ও সুস্থতা লাভ করেছিলেন।

(৮) এ দিনে মূসা (আঃ) তাওরাত লাভের জন্য তূর পাহাড়ে যান।

(৯) এ দিনে ইবরাহীম (আঃ) নমরুদের আগুন থেকে মুক্তি লাভ করেন।

(১০) এ দিনে ইয়াকুব (আঃ) দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান ও ইউসুফ (আঃ)-এর সাথে মিলিত হন।

(১১) এ দিনে সুলাইমান (আঃ) রাজত্ব ফিরে পান।

(১২) এ দিনে ইদরীস (আঃ) কে আকাশে তুলে নেয়া হয়।

(১৩) এ দিনে ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেন।

(১৪) এ দিনে আসিয়া মূসাকে লালনের ভার গ্রহণ করেন।

(১৫) এ দিনে দাঊদ (আঃ)-এর তওবা কবুল হয়েছিল।

(১৬) এ দিনে কাবাঘর নির্মাণ হয়েছিল।

(১৭) এ দিনে জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হয়েছিল।

(১৮) এ দিনে দাঊদ (আঃ) জালূতকে হত্যা করেন।

(১৯) এ দিনে ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। ইত্যাদি আরও কত কিছু প্রচলিত রয়েছে যা কুরআন ও সহীহ হাদীস ভিত্তিক তথ্য নয়।[আশুরায়ে মহারম সম্পর্কে ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মিনহাজুস সুন্নাহ বইটি পড়ুন]

◾(ক) আশুরা সম্পর্কে কিছু জাল হাদীস:
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
▪️১. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, [দীর্ঘ জাল হাদীস] নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলদের প্রতি বছরে একটি সিয়াম ফরয করেছিলেন সেটি হ’ল আশুরার দিন। ইহা মুহাররমের দশ তারিখ।এ দিনে তোমরা সিয়াম রাখ এবং পরিবারের জন্য খানাপিনায় পর্যাপ্ততা ঘটাও; কারণ যে এ দিনে নিজের পরিবার-পরিজনের প্রতি খাদ্যে প্রশস্ত করবে আল্লাহ তা‘আলা তার সারা বছরে প্রাচুর্যতা দান করবেন। এটি এমন দিন যে দিনে আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-এর তওবা কবুল করে তাকে শফিউল্লাহ বানিয়েছেন, এ দিনে ইদ্রিস (আঃ) কে উঁচু স্থানে উঠিয়েছেন, নূহ (আঃ) কে কিশতী হতে বের করেন, ইবরাহীম (আঃ) কে নমরুদের আগুন থেকে নিস্কৃতি দেন, মূসা (আঃ) এর প্রতি এ দিনে তাওরাত নাজিল করেন, ইউসুফ (আঃ) কে জেলখানা হতে বের করেন, এ দিনে ইয়াকুব (আঃ)-এর চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে দেন, এ দিনে আইয়ূব (আঃ)-এর বিপদ দূর করেন, ইউনুস (আঃ) কে মাছের পেট থেকে বের করেন, এ দিনে বনী ইসরাঈলদের জন্য সাগরকে দ্বিখন্ডিত করেন, এ দিনে দাঊদ (আঃ) কে মাফ করেন এবং সুলাইমান (আঃ) কে বাদশাহী দান করেন, এ দিনেই মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগের-পরের সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। ইহাই প্রথম দিন যে দিনে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন, এ আশুরার দিনে আসমান থেকে সর্বপ্রথম বৃষ্টি নাজিল হয়, আশুরার দিনে সর্বপ্রথম রহমত নাজিল হয়। অতএব,যে আশুরার দিন সিয়াম রাখবে সে যেন সারা বছর সিয়াম রাখল। আর ইহা হ’ল সমস্ত নবীদের সিয়াম।যে আশুরার রাত্রি ইবাদতের মাধ্যমে জাগবে সে যেন সাত আসমানবাসীর ন্যায় ইবাদত করল। আর যে এ রাতে চার রাকাত সালাত আদায় করবে,যার প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহা একবার ও সূরা ইখলাস একান্নবার তার পঞ্চাশ বছরের পাপসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। যে আশুরার দিনে কাউকে পানি পান করাবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে রোজ ক্বিয়ামতের দিন এমন পানি পান করাবেন যার পরে তার কখনো পিপাসা লাগবে না এবং সে যেন এক চোখের পলকও আল্লাহর নাফরমানি করেনি বলে বিবেচিত হবে। যে এ দিনে দান-খায়রাত করবে সে যেন কখনো কোন ভিক্ষুককে ফেরত দেয়নি। আর যে এ দিনে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করবে সে মৃত্যু ছাড়া এ বছরে আর কোন রোগে আক্রান্ত হবে না। যে এ দিনে ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাবে সে যেন বনী আদমের সমস্ত ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাবে। আর যে আশুরার দিনে কোন রোগী পরিদর্শন করল,সে যেন সকল বনী আদমের রোগীদের পরিদর্শন করল। এ দিনেই আল্লাহ তা‘আলা আরশ,
লাওহে মাহফূয ও কলম সৃষ্টি করেছেন। এ দিনেই আল্লাহ তা‘আলা জিবরীল (আঃ) কে সৃষ্টি করেছেন, ঈসা (আঃ) কে আসমানে উঠিয়েছেন এবং এ দিনেই ক্বিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে’। [ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ ২৫/২২০-৩০০]।

▪️২. নূহ (আঃ) এর কিশতী ছয় মাস চলার পর আশুরার দিন জূদী পাহাড়ে পৌঁছে। সেদিন নূহ (আঃ) ও তাঁর সাথে যারা ছিল এবং জীবজন্তু আল্লাহর শুকরিয়ার জন্য সিয়াম রাখে’। [সিলসিলা যঈফাহ-আলবানী: ১১ খ- দ্র:।]

▪️৩. ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, مَنِ اكتحلَ يومَ عاشوراءَ بالإثمدِ لمْ ترمدْ عيناهُ أبدًا، ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিবসে ইছমিদ নামক পাথরের সুরমা ব্যবহার করবে, সে কখনও ঝাপসা দেখবে না’।[বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৩৭৯৭। হাদীসটি জাল। ছহীহাহ হা/৬২৪, মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (মৃত. ১০১৪) হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। আসরারুল মারফু‘আত হা/৩২০।]

▪️৪. যে আরাফাতের দিন সিয়াম রাখবে তার জন্য দুই বছরের গুনাহ মাফের কাফফারা হবে। আর যে মুহাররম মাসের একদিন সিয়াম রাখবে তার জন্য প্রতি দিনের ত্রিশ দিনে সওয়াব মিলবে’।[আল-মাওযুআত: ২/১০৯, তানজিহুশ শারী‘আহ: ২/১৫০ ও ছিয়ামু ইয়াওমে আশূরা পৃ: ১৬৮-১৭১]

▪️৫. কল্যাণকর কাজ হ’ল: ঈদুল আযহা, ঈদুল ফিতর, শবেবরাত ও আশুরার রাত্রি জাগা।[মীযানুল ই‘তিদাল-ইবনে হাজার: ২/৩৯৪, ৪৬৪।]

◾(খ) আশুরা সম্পর্কিত জয়ীফ ও মিথ্যা হাদিসের বর্ণনা:
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
▪️১. আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন,যে ব্যক্তি আশুরার দিন নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য উদার হস্তে খরচ করবে আল্লাহ তা‘আলা সারা বছর উদারহস্তে তাকে দান করবেন। সুফিয়ান ছাওরী বলেন, আমরা এর পরীক্ষা করেছি এবং কথার সত্যতার প্রমাণ পেয়েছি’।[বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৩৭৯৫; মিশকাত হা/১৯২৬। হাদীছটি যঈফ।]

▪️২. যে ব্যক্তি আশুরার দিন গোসল করবে সে এই বছর রোগাক্রান্ত হবে না। আর যে ব্যক্তি আশুরার দিন চোখে সুরমা লাগাবে তার এই বছর চোখের কোন রোগ হবে না। [শায়খ বিন বায (মৃত. ১৪১৯ হিঃ) হাদীসটিকে জাল বলেছেন। মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৬/২৪৯, ইবনে বায, আত-তুহফাতুল কারীমা পৃ: ৯০।]

ইবনু তায়মিয়া (রঃ) বলেন,আমাদের কোন আলেম আশুরার দিন গোসল করাকে পছন্দ করতেন না এবং চোখেও সুরমা লাগাতেন না।… আর রাসূল (ﷺ) ও এরূপ করেননি। এরূপ করেননি আবু বকর, ওমর, ওসমান ও আলী (রাঃ)।[মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ৪/৫১৩-৫১৪]

▪️৩. আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত- ‘আশুরা হ’ল তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের ঈদের দিন। সুতরাং তোমরা এই দিন সিয়াম পালন কর’।[সুয়ূতী, জামেউছ ছাগীর হা/৫৩৪৭; বায্যার হা/৯৮১৩; দায়লামী, আল-ফেরদৌস হা/৮৯৮৯। আলবানী হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন। যঈফাহ হা/৩৮৫১; যঈফুল জামে‘ হা/৩৬৭০। হায়ছামী হাদীসটি কে যঈফ বলেছেন। মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ৩/১৮৮।]

▪️৪. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত,‘যে আশুরার দিন সিয়াম পালন করবে আল্লাহ তার জন্য সত্তর বছরের সিয়াম ও ক্বিয়ামের নেকী লিখে দিবেন। যে আশুরার দিন সিয়াম পালন করবে তার জন্য দশ হাযার ফেরেশতার সমান সওয়াব দেওয়া হবে। আর যে আশুরার দিন সিয়াম পালন করবে তাকে হজ্জ ও ওমরার সওয়াব দেওয়া হবে’।[ইবনুল ক্বাইয়িম এটাকে জাল বলেছেন। মাওযূ‘আত ইবনে জাওযী ২/৫৭০। বায়হাক্বী এটাকে মুনকার বলেছেন। ফাযায়েলুল আওক্বাত পৃঃ ১০৫। যাহাবী এটাকে মিথ্যা হাদীস বলেছেন। মীযানুল ই‘তিদাল ১/৪৫১]

▪️৫. আশুরার দিন সিয়াম রাখ এবং এক দিন আগে ও এক দিন পরে সিয়াম রেখে ইহুদীদের বিপরীত কর’।[যঈফুল জামে‘-আলবানী হা/৩৫০৬।]

▪️৬. ‘আশুরার দিন সিয়াম রাখ;কারণ এ দিনে সমস্ত নবী ছিয়াম রেখেছেন’।[যঈফুল জামে‘-আলবানী হা/৩৫০৭।]

▪️৭. ‘আশূরা হলো নবম দিন’।[যঈফুল জামে’-আলবানী হা/৩৫৭১ ]

▪️৮. আশূরার দিনে যে পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খানাপিনার ব্যবস্থা করবে তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা সারা বছরে স্বচ্ছলতা দান করবেন।’[যঈফুল জামে’-আলবানী হা/৫৮৭৩]

▪️৯. তোমাদের কেউ এ দিনে সিয়াম রেখেছ? তাঁরা (সাহাবাগণ) বললেন: না, তিনি বললেন: তোমাদের দিনের বাকি সময় সিয়াম পূর্ণ কর এবং কাযা করবে। অর্থাৎ আশুরার দিন এভাবে বর্ণনা মুনকার।’[সিলসিলা যঈফাহ-আলবানী হা/৫২০১]

▪️১০. নবী (ﷺ) এ দিনের গুরুত্ব দিতেন এবং তাঁর ও ফাতেমার দুগ্ধপোষ্যদের ডেকে তাদের মুখে তাঁর থুথু মোবারক দিয়ে দিতেন। আর তাদের মাতাদেরকে রাত্রি পর্যন্ত তাদের দুধ না পান করানোর জন্য নির্দেশ করতেন’ হাদীসটি যঈফ।[ইবনু খুযায়মা হা/২০৮৯।]

▪️১১. যদি তুমি রমাযানের পর কোন পুরো মাস সিয়াম রাখতে চাও, তাহ’লে মুহাররম মাসের রাখ; কারণ ইহা আল্লাহর মাস, যাতে আল্লাহ তা‘আলা এক জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।[যঈফ সুনানে তিরমিযী-আলবানী হা/১২০]

◾মুহাররম মাসের বানোয়াট সালাত:
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
মুহাররম মাসের কোনো দিবসে বা রাত্রে এবং আশুরার দিবসে বা রাত্রে কোনো বিশেষ সালাত আদায়ের কোনো প্রকার নির্দেশনা বা উৎসাহ কোনো হাদীসে বর্ণিত হয় নি। এ বিষয়ক সকল কথাই বানোয়াট। আমাদের দেশে প্রচলিত কোনো কোনো পুস্তকে মুহাররম মাসের ১ম তারিখে দুই রাক‘আত সালাত আদায় করে বিশেষ দোয়া পাঠের বিশেষ ফযীলতের বিবরণ দেয়া হয়েছে। এগুলো সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।[মুফতী হাবীব ছামদানী, বার চান্দের ফযীলত, পৃ. ১১-১২; অধ্যাপিকা কামরুন নেসা দুলাল, নেক কানুন, পৃ. ২৯৮।]

◾আশুরার দিনে বা রাতে বিশেষ বানোয়াট সালাত:
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
আশুরার সিয়ামের উৎসাহ দেয়া হলেও, হাদীসে আশুরার দিনে বা রাত্রে কোনো বিশেষ সালাত আদায়ের বিধান দেওয়া হয় নি। তবে জালিয়াতগণ অনেক কথা বানিয়েছে।যেমন,যে ব্যক্তি আশুরার দিবসে যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে …অথবা আশুরার রাত্রিতে এত রাকআত সালাত অমুক অমুক সূরা এতবার পাঠ করে আদায় করবে … সে এত পুরস্কার লাভ করবে। সরলপ্রাণ মুসলিমদের মন জয় করার জন্য জালিয়াতগণ এ সকল কথা বানিয়েছে, যা অনেক সময় সরলপ্রাণ আলিম ও বুযুর্গকেও ধোঁকা দিয়েছে।[ইবনুল জাওযী, মাওদূ‘আত ২/৪৫-৪৬; সুয়ূতী, লাআলী ২/৫৪; ইবন আর্রাক, তানযীহ ২/৮৯; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ১/৭৩; আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার, পৃ. ৯০, ১১০-১১১।] এছাড়াও ওয়ায-মাহফিলে, জুম‘আর খুৎবায় বিভিন্ন আলোচকের মুখে আশুরাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঘটনা শোনা যায়। যার সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
.
উপসংহার: কারবালার শাহাদাতে হুসাইন (রাঃ) সত্যিই খুবই মর্মান্তিক ও মর্মস্পর্শী ঘটনা। সকল মুমিন অন্তরই ব্যথিত। আমাদেরকে কারবালার ঘটনা সম্পর্কে সকল প্রকার আবেগ ও বাড়াবাড়ি হ’তে দূরে থাকতে হবে। শুধুমাত্র নাজাতে মূসা (আঃ)-এর নিয়তেই দু’দিন ৯,১০ তারিখে সিয়াম পালন করতে হবে। এবং আশুরা উপলক্ষে প্রচলিত শিরক ও বিদ‘আতী আক্বীদা-বিশ্বাস ও রসম-রেওয়াজ হ’তে বিরত থাকতে হবে। সাথে সাথে নিজেদের ব্যক্তি জীবন ও বৈষয়িক জীবন এবং সর্বোপরি আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিখুঁত ইসলামী ছাঁচে ঢেলে সাজাবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কথা, কলম ও সংগঠনের মাধ্যমে জামা‘আত বদ্ধভাবে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।আল্লাহ আমাদের সহায় হোন- আমীন!(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।