ইমামের সাথে মাত্র একজন মুক্তাদী হলে সালাতে দাঁড়ানোর বিশুদ্ধ নিয়ম

যদি ইমামসহ দুজন ব্যক্তি অর্থাৎ ইমামের সাথে মাত্র একজন মুক্তাদী (পুরুষ বা শিশু) হলে উভয়ে একই সাথে এক কাতারে সমানভাবে দাঁড়াবে; এক্ষেত্রে ইমাম বামে এবং মুক্তাদী তার ডানে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে দাঁড়াবে, ইমামের সামনে বা তার পিছনে আগাপিছা হয়ে নয় এটাই সুন্নাহ এবং জমহুর আলেমগনের মত। কারন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করার সময় এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।ইমাম বুখারী তার সহীহ বুখারীতে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এভাবে:بَاب يَقُومُ عَنْ يَمِينِ الْإِمَامِ بِحِذَائِهِ سَوَاءً إِذَا كَانَا اثْنَيْنِ অর্থ:দু’জন সালাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে।(সহীহ বুখারী আযান অধ্যায়:১০/৫৭ হা/ ৬৯৭)
.
অতঃপর ইমাম বুখারী হাদিস এনেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আমার খালা মায়মুনা (রাযি.)-এর ঘরে রাত কাটালাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত আদায় করে আসলেন এবং চার রাক‘আত সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উঠে সালাতে দাঁড়ালেন। তখন আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডানপাশে নিয়ে নিলেন এবং পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর আরও দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে নিদ্রা গেলেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর তিনি (ফজরের) সালাতের জন্য বের হলেন। সহীহ বুখারী হা/১১৭, ৬৯৭(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৬৩ সিলসিলা সহীহা হা/৬০৬০)

উক্ত হাদীসের আলোকে বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেন: এই হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, সুন্নাত হল যখন একজন ব্যক্তি ইমামের অনুসরণে একাকী সালাত আদায় করে, তখন সে যেন তার ডানদিকে তার পাশে দাঁড়ায়, তার সামনে বা তার পিছনে নয়। এটি হাম্বলীদের মাযহাব,যেমনটি বর্নিত হয়েছে মানার আল-সাবীল: খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ১২৮)

আল-মুওয়াত্তাতে বর্ণিত আছে যে,নাফে’ বলেন, ‘একদা আমি কোন নামাযে আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ)-এর পিছনে দাঁড়ালাম, আর আমি ছাড়া তাঁর সাথে অন্য কেউ ছিল না। তিনি আমাকে তাঁর হাত দ্বারা তাঁর পাশাপাশি বরাবর করে দাঁড় করালেন।(মুঅত্তা ইমাম মালেক,১/১৫৪)

ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, সালাফদের মধ্যে কেউ কেউ বর্ণনা করেছেন যে, ইমামের সাথে একাকী নামায পড়া ব্যক্তি ইমামের ডানদিকে দাঁড়াতে হবে বলে পণ্ডিতদের ঐক্যমত ছিল।(ফাৎহুল বারী: খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ১৯১ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩২৭০)
.
এমনকি মুক্তাদীর সংখ্যা একাদিক হলে এবং জায়গা সংকীর্ণ হলে ইমাম মুক্তাদী একই কাতারে দাঁড়াতে পারে।

সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: কখনও কখনও আমরা পরিখার মধ্যে থাকি এবং এটি সংকীর্ণ, তাই ইমাম নামাজের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাদের সামনে দাঁড়াতে পারেন না; বরং আমরা তাকে প্রথম সারির মাঝখানে দাঁড় করিয়ে দেই। এটা কি বৈধ? যদি তা বৈধ না হয়, তাহলে তার দাঁড়ানোর সঠিক স্থান কোথায়? দয়া করে মনে রাখবেন যে আমরা যদি বাইরে সালাত আদায় করি তবে আমাদের গোলাগুলি হতে পারে এবং মারা যেতে পারে।
.
উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ) উত্তরে বলেন: ইমামের জন্য মুসল্লিদের সামনে দাঁড়ানো সুন্নত, তবে জায়গাটি সঙ্কুচিত হওয়ার কারণে যদি তা সম্ভব না হয় তবে তাদের সাথে কাতারের মাঝখানে দাঁড়ানোতে দোষ নেই।(উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খন্ড: ১৫ পৃষ্ঠা: ১৮৫) তিনি আরো বলেছেন,যদি ইমামের সাথে দুইজন বা তার বেশি মুত্তাদী থাকে তবে তাদের দাঁড়ানোর তিনটি উপায় রয়েছে।

(১). তার পিছনে, যা সর্বাউত্তম

(২). তার উভয় পাশে,এবং

(৩). শুধুমাত্র তার ডান দিকে (উসাইমীন আশ-শারহ আল-মুমতি’খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ২৬৪)
.
জেনে রাখা ভাল যে, একজন মুক্তাদী হলে ইমামের ডানে দাঁড়ানো মুস্তাহাব।কিন্তু কেউ যদি ইমামের বামে দাঁড়িয়ে নামায শেষ করে,তাহলে ইমাম-মুক্তাদী কারো নামাযের কোন ক্ষতি হবে না।(ইমাম উসামীন আশ-শারহুল মুমতি খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ৩৪৫) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।