মুক্বীম অবস্থায় দুই ওয়াক্তের সালাত কখন একসাথে জমা করে আদায় করা জায়েজ

সালাত কসর করা সফরের সাথে সম্পর্কিত এবং দুই ওয়াক্তের সালাত একসাথে জমা করার বিষয়টি সফর এবং মুক্বীম উভয় অবস্থাতেই ব্যক্তি এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল। সুতরাং শারঈ কোন গ্রহণযোগ্য ওজড় থাকলে সফর এবং মুক্বীম উভয় ক্ষেত্রেই দুই ওয়াক্তের সালাত জমা করা জায়েজ রয়েছে।সেটা অগ্রিম একত্রিতকরণ হোক কিংবা বিলম্বিত একত্রিতকরণ হোক (অর্থাৎ প্রথম সালাতেরর ওয়াক্তে হোক কিংবা শেষের সালাতের ওয়াক্তে হোক)। কেননা শারঈ কারন হচ্ছে এমন একটি ওজর যার কারণে দুই ওয়াক্তের সালাত একত্রে আদায় করা বৈধতা পায়। তবে, যদি প্রত্যেকটি সালাত স্ব স্ব ওয়াক্তে আদায় করা ব্যক্তির জন্য কষ্টকর না হয় তাহলে একত্রিত না করাই উত্তম। এক্ষেত্রে একটি বিষয় জেনে রাখা উচিত যে, মুক্বীম অবস্থায় শরীয়ত সম্মত ওজরের কারনে যোহর-আসর কিংবা মাগরিব-এশা দুই ওয়াক্ত সালাত জমা করলেও প্রত্যেক ওয়াক্তের পূর্ণ সালাত আদায় করতে হবে;কসর বা সংক্ষিপ্ত করা যাবে না। কেননা সালাত কসর বা সংক্ষিপ্তকরণ শুধু মুসাফিরের জন্য জায়েয। কেউ কেউ ধারণা করে যে, রোগের কারণে সে তার নিজ বাসস্থানে অবস্থান করাকালে নামায একত্রে আদায় করলে নামায কসরও করতে হবে এই ধারণা সঠিক নয়।(ইসলামি সাওয়াল জবাব ফাতাওয়া নং-৯৭৮৪৪)।
.
মোটকথা শরীয়ত সম্মত ওজর যেমন: ভয়-ভীতি, ঝড়-বৃষ্টি, রোগ-ব্যাধি অথবা অন্য কোন বিশেষ শারঈ কারণবশত শুধু সফর নয় বরং মুক্বীম অবস্থাতেও দুই ওয়াক্তের সালাত ক্বসর ব্যতীত শুধু জমা করে পড়া জায়েয। যেমন: যোহর ও আসরকে পৃথক ইক্বামতের মাধ্যমে চার-চার রাক‘আত করে এবং মাগরিব ও এশাকে অনুরূপভাবে ৩ ও ৪ রাক‘আত করে আদায় করা জায়েয। এই মর্মে একটি দলিল হল:
.
যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি, উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৬৮ হি.] বলেন, কখনো কখনো রাসূল (ﷺ) মদীনায় অবস্থানকালে কোন ভীতিকর পরিস্থিতি কিংবা ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াই যোহর ও আছর এবং মাগরিব ও এশার সালাত একত্রিত করে আদায় করেছেন। ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে জিজ্ঞেস করা হল, এটা কেন? তিনি বললেন, রাসূল (ﷺ) চেয়েছেন তাঁর উম্মতের যেন কোন কষ্ট না হয় (সহীহ মুসলিম, হা/৭০৫) এই হাদীসটি প্রায় কুতুবে সিত্তাহ বা ছয়খানা প্রসিদ্ধ হাদীসের কিতাবে রয়েছে। তবে এই হাদীসের ভুল অর্থ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।যেমনটা অনেকেই নিয়ে থাকে। কিন্তু বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে,এই হাদীসের সুযোগ স্বাভাবিক ভাবে সর্বাবস্থায় এই সুযোগ নেওয়া যাবেনা বরং শুধুমাত্র শরীয়ত সম্মত ওজর থাকলেই নেওয়া যাবে। যেমনটা প্রসিদ্ধ সালাফদের থেকে বর্ণিত হয়েছে।
.
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের অন্যতম ইমাম শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ এবং সৌদি সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথা নিশ্চিত যে সালাতকে ক্বসর করে পড়ার বিশেষ কারণ হচ্ছে সফর। সফর ব্যতীত ক্বসর করা জায়েয নয়। কিন্তু জমা (একত্রিতকরণ) করে আদায় করার বিষয়টি প্রয়োজন ও অজুহাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সুতরাং যখনই তার প্রয়োজন হবে তখনই সফর কিংবা নিজ এলাকায় উভয়াবস্থাতেই দুই সালাতকে একত্রিত করে আদায় করতে পারে। অনুরূপভাবে বৃষ্টি, রোগ-ব্যাধি ও অনুরূপ কাজের জন্যও জমা করে আদায় করা জায়েয। কারণ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, উম্মতের উপর থেকে সমস্যা নিরসণ করা। (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ,খন্ড: ২২ পৃষ্ঠা: ২৯৩; উসাইমীন আশ-শারহুল মুমতি‘ খন্ড: ৪ পৃষ্টা: ৫১৪ ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব ফাতওয়া নং-২০০১৭)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।