মহান আল্লাহ্‌ কোথায় আছেন এবং যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাদের এই আক্বিদা কতটুকু সঠিক

প্রশ্নঃ মহান আল্লাহ্‌ কোথায় আছেন? যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাদের এই আক্বিদা কতটুকু সঠিক দলিল সহ জানতে চাই।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: মহান আল্লাহ্‌ আছেন সাত আসমানের উর্ধে আরশের উপর।তিনি স্রষ্টা, সৃষ্টি থেকে উর্ধে থাকেন। তবুও তিনি বান্দার নিকটবর্তী। তার জ্ঞান ও দৃষ্টি সর্বত্র আছে। মুমিনের হৃদয়ে তার যিকর বা স্মরণ থাকে।কিন্তু তিনি আছেন সাত আসমানের উর্ধে আরশের উপর। তিনি বলেছেন,পরম দয়াময় আরশে সমুন্নত [সূরা ত্বোয়া-হাঃ ২০/৫]।

অতএব, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান’ এধরনের আক্বীদা বাতিল। আল্লাহর সত্তা সর্বত্র বিরাজমান নয়। বরং তাঁর ইল্ম ও কুদরত অর্থাৎ জ্ঞান ও ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান [সূরা ত্বোয়া-হাঃ ২০/৪৬] ।

মহান আল্লাহ বলছেন, তিনি আরশের উপর সমুন্নত এ মর্মে পবিত্র কুরআনে ৭টি আয়াত বর্ণিত হয়েছে।[সূরা ইউনূস : ৩; সূরা আর-রা‘দ : ২; সূরা ত্বহা : ৫; সূরা আল-ফুরক্বান : ৫৯; সূরা আস-সাজদাহ : ৪; সূরা আল-হাদীদ : ৪; সূরা আল-আ‘রাফ : ৫৪ ইমাম ইবনু তায়মিয়া, মাজমূউ ফাতাওয়া ৩/১৩৫]।

মহান আল্লাহ নিজ পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে তাঁর এ গুণটির কথা বার বার বলেছেন। স্পষ্টভাবে আসা এ গুণটিকে যারা অস্বীকার করে বা অপব্যাখ্যা করে, তারা আসলে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে কিনা এ ব্যাপারে একজন ঈমানদারের মনে সন্দেহ হওয়াই স্বাভাবিক।তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও বলেছেন যে, আল্লাহ আসমানে আছেন। ছাহাবী (রাঃ) এবং তাবেঈগণ সকলেই বলেছেন আল্লাহ আসমানে আছেন। তাছাড়া সকল ইমামই বলেছেন, আল্লাহ আসমানে আছেন। এরপরেও যদি বলা হয়, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাহ’লে কি ঈমান থাকবে এবং আমল কবুল হবে?

🔰আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান একথা ঠিক নয়, পবিত্র কুরআন বলছে, আল্লাহ আরশে সমুন্নত
এ মর্মে বর্ণিত পবিত্র কোরআনের দলীলগুলো নিম্নরূপঃ

▪️(১) নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হন’ [সূরা আ‘রাফ ৭/৫৪]।

▪️(২) ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হন’ [সূরা ইউনুস ১০/৩]।

▪️(৩) ‘আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত- তোমরা এটা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হ’লেন’ [সূরা রা‘দ ১৩/২]।

▪️(৪) ‘দয়াময় (আল্লাহ) আরশে
সমুন্নত’ [সূরা ত্ব-হা ২০/৫]।

▪️(৫) ‘তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হন। তিনিই রহমান, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখ’ [সূরা ফুরক্বান ২৫/৫৯]।

▪️(৬) ‘আল্লাহ তিনি, যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হন’ [সূরা সাজদাহ ৩২/৪]।

▪️(৭) ‘তিনিই ছয় দিনে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমুন্নত হয়েছেন’ [সূরা হাদীদ ৫৭/৪]।

আল্লাহ তা‘আলা আসমানের উপর আছেন। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন,তোমরা কি (এ বিষয়ে) নিরাপদ হয়ে গেছ যে, যিনি আকাশের উপর রয়েছেন তিনি তোমাদের সহ ভূমিকে ধসিয়ে দিবেন না? আর তখন ওটা আকস্মিকভাবে থরথর করে কাঁপতে থাকবে। অথবা তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ যে, আকাশের উপর যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদের উপর পাথর বর্ষণকারী বঞ্ঝাবায়ু প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা জানতে পারবে কিরূপ ছিল আমার সতর্কবাণী’? [সূরা মুলক ৬৭/ ১৬-১৭]।

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিছু সৃষ্টিকে উপরে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, بَل رَّفَعَهُ اللهُ إِلَيْهِ ‘বরং আল্লাহ তাকে (ঈসাকে) নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন’ (নিসা ৪/১৫৮)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,‘স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! আমি তোমার কাল পূর্ণ করছি এবং আমার নিকট তোমাকে তুলে নিচ্ছি’ [আলে ইমরান ৩/৫৫]।

উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা আরশে সমুন্নত আছেন। কিভাবে সমুন্নত আছেন, একথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন,الاستواء معلوم والكيف مجهول والإيمان به واجب والسؤال عنه بدعة. ‘ইসতেওয়া বা সমুন্নত হওয়া বোধগম্য, এর প্রকৃতি অজ্ঞাত, এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব এবং এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা বিদ‘আত’। [শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া, আর-রিসালা আত-তাদাম্মুরিয়্যাহ, পৃঃ ২০।]।

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ মাখলূক সৃষ্টির ইচ্ছা পোষণ করলেন, তখন তাঁর কাছে আরশের উপর রক্ষিত এক কিতাবে লিপিবদ্ধ করেন- অবশ্যই আমার করুণা আমার ক্রোধের উপর জয়লাভ করেছে’। [বুখারী হা/৩১৯৪ মিশকাত হা/২৩৬৪]।

মু‘আবিয়া বিন আল-হাকাম আস-সুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আমার একজন দাসী ছিল। ওহুদ ও জাওয়ানিয়্যাহ (ওহুদের নিকটবর্তী একটি স্থান) নামক স্থানে সে আমার ছাগল চরাত। একদিন দেখি, নেকড়ে আমাদের একটি ছাগল ধরে নিয়ে গেছে। আমি একজন আদম সন্তান (সাধারণ মানুষ)। তারা যেভাবে ক্রদ্ধ হয় আমিও সেভাবে ক্রদ্ধ হই। কিন্তু আমি তাকে এক থাপ্পড় মারি। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসলে একে আমি সাংঘাতিক (অন্যায়) কাজ বলে গণ্য করি। তাই আমি বলি যে, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আমি কি তাকে আযাদ করব না? তিনি বললেন, তাকে আমার নিকট নিয়ে আস। আমি তাকে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট নিয়ে আসলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ কোথায়? সে বলল, আসমানে। তিনি (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কে? তখন সে বলল, আপনি আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তাকে মুক্তি দিয়ে দাও, কারণ সে একজন ঈমানদার নারী [ছহীহ মুসলিম হা/১০৮৬ আবু দাউদ ৯৩০]।

ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ)সূরা ত্বহায় ইস্তাওয়া শব্দের ব্যখ্যায় বলেন, اسْتَوى অর্থ উপরে ওঠা। আর এটাই ছহীহ ও সঠিক মত এবং আহলুস সুন্নাহর আক্বীদা। কেননা মহান আল্লাহ নিজেকে উপরে উঠার গুণে গুণান্বিত করেছেন। আর মহান আল্লাহ বলেছেন, তারা যা শরীক করে তা থেকে তিনি মুক্ত। আর এটা তাঁর সত্তাগত ছিফাত। [ইবনু হাজার আল-‘আসক্বালানী, ফাতহুল বারী, ১৩ম খণ্ড (বৈরূত : দারুল মা‘রিফাহ, ১৩৭৯ হি.), পৃ. ৪০৬]।

ইমাম বাগাভী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আহলুস সুন্নাহর (অনুসারীগণ) বলেন, কোন পদ্ধতি ছাড়াই ‘আরশের উপর ওঠা মহান আল্লাহর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এটার উপর ঈমান আনয়ন করা এবং এই জ্ঞান মহান আল্লাহর দিকে ন্যস্ত করা প্রতিটি মানুষের উপর ফরয’। [মা‘আলিমুত তানযীল, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৬]।

ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর উস্তাদ মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, من قَالَ اِنَّ الله لَيْسَ على عَرْشه فَهُوَ كَافِر ‘যে কেউ বলবে, আল্লাহ ‘আরশের উপর নেই সে কাফির’। [ইমাম বুখারী, খলকু আফ‘আলিল ‘ইবাদ (রিয়াদ : দারুল মা‘আরিফিস সঊদিয়্যাহ, তা.বি.), পৃ. ৩৩; আহমাদ ইবনু ইবরাহীম ইবনু হামদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ঈসা, তাওযীহুল মাক্বাছিদ ওয়া তাছহীহুল ক্বাওয়াঈদ ফী শারহি ক্বাছীদাতিল ইমাম ইবনিল ক্বাইয়িম, ১ম খণ্ড (বৈরূত: আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৬ হি.), পৃ. ৪৮]

🔰আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত এই মর্মে চার মাযহাবের ইমামদের বক্তব্যঃ

ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেন,যে বলবে যে, আল্লাহ আসমানে আছেন, না যমীনে আছেন আমি তা জানি না, সে কুফরী করবে। অনুরূপভাবে যে বলবে যে, তিনি আরশে আছেন। কিন্তু আরশ আকাশে, না যমীনে অবস্থিত আমি তা জানি না। সেও কুফরী করবে। কেননা উপরে থাকার জন্যই আল্লাহকে ডাকা হয়; নীচে থাকার জন্য নয়। আর নীচে থাকাটা আল্লাহর রুবূবিয়্যাত এবং উলূহিয়্যাতের গুণের কিছুই নয়’। [ইমাম আবু হানীফা, আল-ফিক্বহুল আবসাত, পৃঃ ৫১]।

ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)আরো বলেছেন,من لم يقر أن الله على العرش قد كفر ‘যে ব্যক্তি স্বীকার করল না আল্লাহ ‘আরশের উপরে, সে কুফুরী করল’। [আবূ হানীফা নু‘মান ইবনু ছাবিত, আল-ফিক্বহুল আকবার, (মাকতাবাতুল ফুরক্বান, ১৪১৯ হি.), পৃ. ১৩৫; আল-‘আরশ, ২য় খণ্ড, পৃ. ২২৫; আল-ঊলুয়্যু লিল ‘আলিয়্যিল গাফ্ফার, পৃ. ১৩৪-১৩৫]।

ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, الله في السماء وعلمه في كل مكان لا يخلو منه مكان- ‘আল্লাহ আকাশের উপর এবং তাঁর জ্ঞানের পরিধি সর্বব্যাপী বিস্তৃত। কোন স্থানই তাঁর জ্ঞানের আওতার বহির্ভূত নয়’। [ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ, পৃঃ৯৯]।

ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, সুন্নাহ সম্পর্কে আমার ও আমি যেসকল আহলেহাদীছ বিদ্বানকে দেখেছি এবং তাদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছি যেমন সুফিয়ান, মালেক ও অন্যান্যরা, তাদের মত হল এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা যে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোন (হক্ব) উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আললাহর রাসূল। আর আল্লাহ আকাশের উপর তাঁর আরশে সমুন্নত। তিনি যেমন ইচ্ছা তাঁর সৃষ্টির নিকটবর্তী হন এবং যেমন ইচ্ছা তেমন নীচের আকাশে অবতরণ করেন’।[ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ, পৃঃ১২২]।

ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেছেন,
لله أسماء وصفات لا يسع أحدا قامت عليه الحجة ردها، فإن خالف بعد ثبوت الحجة عليه فهو كافر
‘আল্লাহর রয়েছে অনেক নাম ও গুণাবলী। দলীল দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার কারো সুযোগ নেই তা প্রত্যাখ্যান করা। দলীল দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পরে কেউ তার বিরোধিতা করলে সে কাফির’। [আল-‘আরশ, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৯৩]।

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর পুত্র আব্দুল্লাহ বলেন, আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি থেকে দূরে সপ্তম আকাশের উপরে তাঁর আরশে সমুন্নত তাঁর ক্ষমতা ও জ্ঞানের পরিধি সর্বত্র বিস্তৃত। এর উত্তরে তিনি (ইমাম আহমাদ) বলেন, হ্যাঁ! তিনি (আল্লাহ) আরশের উপর সমুন্নত এবং তাঁর জ্ঞানের বহির্ভূত কিছুই নেই। [ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ, পৃঃ১৫২-১৫৩।]।

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল ‘আর-রাদ্দু ‘আলাজ জাহমিয়্যাহ ওয়ায যানাদিক্বাতি’ গ্রন্থে আরো বলেন, ‘জাহমিয়্যারা আল্লাহর ‘আরশের উপরে থাকাকে অস্বীকার করে। আমি তাদেরকে বললাম, তোমরা আল্লাহর ‘আরশের উপরে থাকাকে অস্বীকার করো। অথচ মহান আল্লাহ বলেন, ‘পরম করুণাময় ‘আরশের উপর উঠেছেন’। তারা বলল, আল্লাহ সাত যমীনের নিচে যেমনটি তিনি ‘আরশের উপরে, আসমানে, যমীনে। আমরা বললাম, মুসলিমরা এমন অনেক স্থান জানে যেখানে রবের মহত্ত্বের কিছুই নেই। তোমাদের দেহে, তোমাদের ভিতরে, পায়খানায় ও খারাপ স্থানে আল্লাহর মহত্ত্বের কিছুই নেই। আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন, তিনি আসমানের উপরে [আহমাদ ইবনু হাম্বল, আর-রাদ্দু ‘আলাজ জাহমিয়্যাহ ওয়ায যানাদিক্বাতি, (দারুছ ছাবাত, তা.বি.), পৃ. ১৪২-১৪৩; আল-‘আরশ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩১৯।]।

উল্লেখ্য যে, মু‘আত্ত্বিলাগণ ‘আরশে অবস্থান’ সম্পর্কিত সর্বমোট সাতটি আয়াতের অর্থ করেছেন ‘মালিক হওয়া’, কেউ করেছেন ‘আরশ সৃষ্টির ইচ্ছা করা’ ইত্যাদি। এইভাবে এঁরা ২৫ প্রকারের সম্ভাব্য অর্থ ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) এসবের প্রতিবাদে ৪২টি যুক্তি পেশ করেছেন [ইবনুল ক্বাইয়িম, মুখতাছার ছাওয়ায়েকুল মুরসালাহ ২/১২৬-১৫২]।

ইমাম যাহাবী উক্ত আয়াত সমূহের ব্যাখ্যায় ৯৬টি হাদীছ, ২০টি আছার ও আহলে সুন্নাত বিদ্বানগণের ১৬৮টি বক্তব্য সংকলন করেছেন [যাহাবী, ‘মুখ্তাছারুল ‘উলু’]।

মূলতঃ তাদের কল্পিত উক্ত অর্থগুলো রূপক। আর আল্লাহর ছিফাতের বিষয়ে বর্ণিত আয়াতের এরূপ রূপক ও কাল্পনিক অর্থ করা অন্যায়। তাই এ সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের জওয়াবে ইমাম মালিক বিন আনাস (রহঃ) বলেছিলেন, ‘সমুন্নীত’ শব্দের অর্থ সুবিদিত, কিভাবে সেটা অবিদিত, এর উপরে ঈমান আনা ওয়াজিব এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা বিদ‘আত’ [ইমাম লালকাঈ, ‘উছূলু ই‘তিক্বাদ’ ৩/৩৮৭ টীকা-২; শাহরাস্তানী, ‘আল-মিলাল’ ১/৯৩; দ্রঃ থিসিস পৃঃ ১১৫-১১৭।]।

অতএব, আল্লাহ্‌ আছেন সাত আসমানের উর্ধে আরশের উপর আছেন এটি রবের ছিফাত, আর আল্লাহর ছিফাতের ব্যাপারে সালাফদের মানহাজ হল, পবিত্র কুরআন ও সুন্নাতে যেভাবে মহান রবের গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে, ঐভাবেই বিশ্বাস করা আর এতেই বান্দার কল্যাণ নিহিত রয়েছে,মুমিন তো তারাই যারা বলে আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি।[সূরা বাকারা:২৮৫] মহান আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক আমীন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬❂▬▬▬
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।