প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের ফজিলত

প্রশ্ন: প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের ফজিলত কি? সালাতে প্রথম কাতারে নিজের জন্য একটি স্থান সংরক্ষিত রাখা এবং দীর্ঘ সময় তা থেকে দূরে থাকার বিধান কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: কুরআন সুন্নার আলোকে যা প্রমানিত তা হল প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের গুরুত্ব অত্যধিক।কারন রাসূল (ﷺ) বলেছেন,‘মানুষ যদি জানত আযান দেয়া ও সালাতের প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কী সাওয়াব রয়েছে এবং লটারী করা ছাড়া এ সুযোগ না পেত, তাহলে লটারী করতো। আর যদি জানতো সালাত আদায় করার জন্য আগে আগে আসার সাওয়াব, তাহলে তারা এ (যুহরের) সালাতে অন্যের আগে পৌঁছার চেষ্টা করতো। যদি জানতো ‘ইশা ও ফজরের সালাতের মধ্যে আছে, তাহলে (শক্তি না থাকলে) হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সালাতে উপস্থিত হবার চেষ্টা করতো।(সহীহ বুখারী হা/৬১৫ মুসলিম হা/৪৩৭ মিশকাত হা/৬২৮) রাসূল (ﷺ) আরো বলেন,সালাতের প্রথম কাতার ফেরেশতাদের কাতারের মত। তোমরা যদি প্রথম কাতারের ফযীলত জানতে তাহ’লে অবশ্যই দৌঁড়ে যেতে।(আবূদাঊদ হা/৫৫৪; মিশকাত হা/১০৬৬)। তিনি আরো বলেন, প্রথম কাতারের (মুছল্লীদের) উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন’(ইবনু মাজাহ হা/৯৯৭)। তিনি আরো বলেন, পুরুষদের জন্য সর্বোত্তম কাতার হ’ল প্রথম কাতার।(সহীহ মুসলিম হা/৪৪০ মিশকাত হা/১০৯২)।
.
▪️সালাতে প্রথম কাতারে নিজের জন্য একটি স্থান সংরক্ষিত রাখা।
.
যে ব্যক্তি মসজিদে অবস্থান করছে সে চাইলে কাতারের নিদিষ্ট স্থানে একটি জায়নামাজ ও অনুরূপ জিনিস রাখতে পারে এবং প্রয়োজনে মসজিদের পিছনে ঘুমাতে পারে অথবা সে যদি অযু করতে যাওয়ার অজুহাতে মসজিদ থেকে বের হয়,অতঃপর সালাতের ইকামতের পূর্বে নিজের জায়গায় ফিরে আসে এটি তার জন্য জায়েজ। এবং সে তার রেখে যাওয়া স্থানের অধিক হকদার যদিও তার জায়নামাজ প্রথম কাতারে থাকে।পক্ষান্তরে যদি সালাতের একামত দেওয়া হয় এবং সে ব্যক্তি যদি কাতারে উপস্থিত না হয় তাহলে সেই স্থানে তার আর কোন অধিকার নাই এবং তখন তার রেখে যাওয়া জায়নামাজটা উঠিয়ে নিতে হবে এবং সেখানে উপস্থিত কেউ দাঁড়াবে কেননা সে যথাসময়ে ফিরে আসার ব্যাপারে অবহেলা বা বিলম্ব করেছে। এ ব্যাপারে দলিল হলো: আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ তার বসার স্থান থেকে উঠে গিয়ে আবার ফিরে এলে সে-ই উক্ত স্থানের অধিক হকদার।(সহীহ মুসলিম হা/ ২১৭৯ আবূ দাউদ ৪৮৫৩ মুসনাদে আহমাদ হা/ ৭৫১৪, ৭৭৫১, ৮৩০৪, ৮৮১০, ৯৪৬৩, ৯৪৮২, ৯৮৯৪, ১০৪৪২, ১১৫৫৯)।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,যদি কোন ব্যক্তি মসজিদের কোন একটা স্থানে বসে থাকেন তারপরে তার যদি মসজিদ থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন হয় অথবা উযু করার প্রয়োজন হয় তাহলে সে বের হতে পারবে অতঃপর সে যদি সেই জায়গাতে অর্থাৎ যে জায়গাতে বসেছিল সেই জায়গাতে ফিরে আসে তাহলে সেই ওই স্থানের বেশি হকদার।কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: (যে ব্যক্তি তার আসন থেকে উঠে পুনরায় সেখানে ফিরে আসে, সে হল বেশি হকদার।(ইবনু কুদামা আল মুগনী: খন্ড: ২ পৃষ্ঠা:১০১)।

তিনি (ইবনু কুদামা) মাতালিব আওলান নুহা ফী শারহি গায়াতুল মুনতাহা গ্রন্থে বলেছেন :যদি কেউ পবিত্রতা অর্জনের জন্য মসজিদ থেকে সামান্য একটু দূরে যায় অর্থাৎ যেখানে বসেছিল তার থেকে নিকটবর্তী থাকলে যে জায়গাতে বসেছিল সেই জায়গাতেই ফিরে এসে বসার অধিকার বেশি রাখবে। যদি তার সেই জায়গাতে অন্য কেউ বসে যায় তাহলে তার উঠে যাওয়া উচিত। (মাতালিব আওলান নুহা ফী শারহি গায়াতুল মুনতাহা খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৭৮৬)।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] মসজিদে একটি স্থান সংরক্ষিত করার পরে মসজিদ থেকে বের হওয়া নিষেধ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন:এ মাসয়ালার ক্ষেত্রে সঠিক কথা হল : মসজিদের কোনো জায়গা দখল করা অত:পর মসজিদ ত্যাগ করা জায়েজ নয়। কেউ এমনটি করলে তার নামাজের মসল্লা অপসারণ করা যেতে পারে,কারণ মূলনীতি হল: “যা অবৈধভাবে রাখা হয়েছিল,তা সরিয়ে ফেলাই ঠিক। তবে যদি বৈধ কোন অজুহাত অব্যাহত থাকার কারণে মসজিদ থেকে বের হয় এবং দীর্ঘ সময় পরে সে ফিরে আসে তবে ঐ স্থানের উপর তার অধিক অধিকার রয়েছে,কিন্তু যদি অজুহাত শেষ হয়ে যায়।আর সে অলসতা করে কিংবা দেরি করে। তাহলে সে ঐ স্থানের হক রাখেনা….।(উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে খন্ড: ৫ পৃষ্ঠা: ১৩৫ থেকে সংক্ষেপিত)।
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের অত্যাধিক ফজিলত রয়েছে, তাই সকল মুসলিমদের উচিত আগে ভাগে মসজিদের চলে আসা এবং প্রথম কাতারে সালাত আদায়ে সর্বদা সচেষ্ট থাকা। এখন প্রথম কাতারে নিজের জন্য একটি স্থান সংরক্ষণ করে কোন ব্যক্তি যদি মসজিদের বারিন্দায় অবস্থান করে অথবা জরুরি প্রয়োজনে যেমন: প্রস্রাব-পায়খানা অথবা ওযু করার জন্য মসজিদ থেকে বের হয় অতঃপর যথা সময়ে জামাআতে হাজির হয় তাহলে সংরক্ষিত ওই স্থানের জন্য এই ব্যক্তি অধিক হকদার সুতরাং তার সংরক্ষিত জায়গা থেকে তার মুসল্লা সরানো উচিত হবে না। কিন্তু একজন ব্যাক্তি যদি প্রথম কাতারে নিজের জন্য একটি স্থান দখল করে বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় অথবা নিজ বাড়িতে চলে যায় অতঃপর পরবর্তী ওয়াক্তের জামআত শুরু হওয়ার সময় পুনরায় আসে তাহলে এটি জায়েজ নয়,এবং এক্ষেত্রে সে তার সংরক্ষিত জায়গার জন্য উপযুক্ত নয় বরং সেখানে উপস্থিত যারা রয়েছেন তারা তার মুসল্লা সরিয়ে উপস্থিত কেউ সেখানে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।