নিয়মিত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ুন এতে অনেক ফজিলত রয়েছে

নিয়মিত তাওহীদী কালিমাহ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়ুন। তাওহীদের এই বানীর শর্ত পূরন করে জীবন পরিচালিত করুন। এতে যেমন অনেক ফজিলত রয়েছে তেমনি মৃত্যুর পর জান্নাত পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
َلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
অনুবাদ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থ আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবুদ নেই। আজ আমরা তাওহীদী কালিমাহ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
.
(১) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্যদান ইসলামের সবচেয়ে বড়ো রুকন (খুঁটি)। এই কালিমাহর সাক্ষ্যদান ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তি ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَان “ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। ১. আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হজ্জ সম্পাদন করা এবং ৫. রমজানের রোজা পালন করা।” (সাহীহ বুখারী, হা/৮; সাহীহ মুসলিম, হা/১৬)
.
(২) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্যদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সর্বপ্রথম ওয়াজিব। সকল আমলের ওপরে রয়েছে এর গুরুত্ব। যেহেতু এর রয়েছে বিশাল মর্যাদা ও বিরাট মাহাত্ম্য। এই কালিমাহর দিকেই সবার আগে দাওয়াত দিতে হয়। নবী (ﷺ) মু‘আয বিন জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় বলেছিলেন, إِنَّكَ تَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّه “তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছে যারা কিতাবধারী (ইহুদি-খ্রিষ্টান)। সুতরাং, তাদেরকে আহ্বান জানাবে এ সাক্ষ্য দেয়ার জন্য যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই, আর আমি আল্লাহর রাসূল।” (সহীহ বুখারী, হা/১৩৯৫; সাহীহ মুসলিম, হা/১৯; মূল শব্দ (টেক্সট) মুসলিমের)
.
(৩) যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলল এবং আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদত করা হয়, তার সাথে কুফরী করল তার জান ও মাল নিরাপদ এবং তার হিসাব আল্লাহর জিম্মায়। (সহীহ বুখারী ১৪০০,১৪৫৭, রিয়াদুস সালেহীন ১২১৮)
.
(৪) সকল রাসূলের দাওয়াতের মূল বিষয় ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র দিকে আহ্বান। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ “আমি তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসূল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি ওহী (প্রত্যাদেশ) করিনি যে, ‘আমি ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই। কাজেই তোমরা আমারই ‘ইবাদাত করো’।” (সূরাহ আম্বিয়া: ২১/ ২৫)
.
(৫) স্বয়ং আল্লাহ, ফেরেশতাবর্গ এবং জ্ঞানীগণ এই কালিমাহর সাক্ষ্য দেন। মহান আল্লাহ বলেন, شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ “আল্লাহ্ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই এবং ফেরেশতাবর্গ ও ন্যায়নীতিতে প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানীগণও (সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে) তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই; তিনি মহাপরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী।” (সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১৯)
.
(৬) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: ঈমানের সত্তর বা ষাটের অধিক শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হলো এ কথা বলা যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। কোন বর্ণনায় রয়েছে : ‘সবচেয়ে উঁচু শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং কোন বর্ণনায় রয়েছে: ‘সবচেয়ে বড় শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। (সহীহুল বুখারী হা/৮, সহীহ মুসলিম হা/১৬২-০, সহীহ ফাযায়েলে আমল হাদিস নং ৪৩)
.
(৭) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র কথক সফলকাম ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত। নাবী (ﷺ) দাওয়াত দিয়ে লোকদেরকে বলতেন, قُوْلُوْا لَا إلٰه إِلَّا الله تُفْلِحُوْا “তোমরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বল, সফলকাম হবে।” (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬০২২; সাহীহ ইবনে খুযাইমাহ, হা/১৫৯; সনদ:সহীহ)
.
(৮) আল্লাহ ত‘আলা বলেন, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেননি, আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? সৎ বাক্যের তুলনা উৎকৃষ্ট বৃক্ষ যার মূল সুদৃঢ় ও শাখা-প্রশাখা ঊর্ধ্বে বিস্তৃত, যা প্রতি মুহূর্তে ফল দান করে থাকে তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। আর আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা এজন্য দেন যে, তারা যেন শিক্ষা অর্জন করে।’ (সূরা ইবরাহীম ২৪-২৭)। উক্ত আয়াতে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু’-এর ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে।
.
(৯) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি জেনে বুঝে এই বিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুবরণ করবে যে, ‘আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, সে ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহীহ মুসলিম, হা/১৪৫, (ইফাবা হা/৪৩-৪৪); মিশকাত, হা/৩৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৩৩)
.
(১০) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (হাদীস সহীহ : ইবনু হিব্বান হা/২০১, সিলসিলাহ্ সহীহাহ হা/২৩৫৫- সহিহ ফাযায়েলে আমল, হাদিস নং ৩৯)
.
(১১) একনিষ্ঠচিত্তে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পাঠকারী ক্বিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শাফা‘আত লাভে ধন্য হবে। (সহীহ বুুখারী, হা/৯৯, ইফাবা হা/৯৯, ১/৭৪ পৃ.‘ইলম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৩)
.
(১২) প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ [আল্লাহ ছাড়া কোন। সত্য উপাস্য নেই] বলবে এবং আল্লাহ ব্যতীত পূজ্যমান যাবতীয় ব্যক্তি ও বস্তুকে অস্বীকার ও অমান্য করবে তার জান ও মাল অবৈধ হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম ১৩৯, হাদিস সম্বার ৬)
.
(১৩) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালের সালাতের পর একশত বার সুবহানাল্লাহ এবং একশত বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনাসম হয়। (সুনানে আন-নাসায়ী, ১৩৫৪)
.
(১৪) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন: তোমরা তোমাদের মৃত্যু পথযাত্রীকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তালকীন করাও। কেননা যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ইবনু হিব্বান হা/৩০০৪- শু’আইব আরনাউত্ব বলেন: হাদীস সহীহ। ইরওয়াউল গালীল হা/৬৮৭, ফাযায়েলে আমল, হাদিস নং ৫৭)
.
(১৫) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন: কোন বান্দা এমন নেই যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে আর তার জন্য আকাশসমূহের দরজাগুলো খুলে যায় না। এমনকি এ কালেমা সোজা আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তবে শর্ত হচ্ছে, এর পাঠকারী কবীরাহ গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকবে। (তিরমিযী হ/৩৫৯০- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহীহ জামিঊস সাগীর হা/৫৬৪৮। সহিহ ফাযায়েলে আমল, হাদিস নং ৫২)
.
(১৬) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলত এই কালেমা তাকে ঐ সময়ে মুক্তি দিবে যখন তার উপর মুসিবত আসবে।”(সিলসিলাহ সহীহাহ্ হা/ ১৯৩২সহিহ ফাযায়েলে আমল, হাদিস নং ৪৯)
.
(১৭) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবে একদিন না একদিন এই কালেমা অবশ্যই তার উপকারে আসবে। যদিও ইতিপূর্বে তাকে কিছুটা শাস্তি ভোগ করতে হবে। (বাযযার হা/৮২৯২ হাদীসের শব্দাবলী তার, ত্বাবারানীর কাবীর হা/১৪০, ৭৩৩, ১১১১, সহীহ আত-তারগীব হা/১৫২৫। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আল্লামা হায়সামী ‘মাজমাউয যাওয়ায়িদ’ গ্রন্থে (হা/১৩) সহিহ ফাযায়েলে আমল, হাদিস নং ৪৭)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।