নারী-পুরুষের সালাতের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি

প্রশ্ন: কুরআন-সুন্নাহর আলোকে নারী-পুরুষের সালাতের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি থাকলেও সেগুলো কি কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলামী শরীয়তের বিধি বিধান নারী-পুরুষ সবার জন্য।যেখানে যেখানে পার্থক্য রয়েছে রাসূল (ﷺ) সেটা বলে গেছেন।সালাতের ক্ষেত্রে শরী‘আত পুরুষ ও মহিলার মাঝে মৌলিক অর্থাৎ মূল কাঠামোগত ভাবে কোন পার্থক্য করেনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী ও পুরুষের জন্য দু’বার দু’ভাবে সালাত আদায় করেননি।এবং সালাত আদায় করার জন্য নারী পুরুষ কারোর জন্য স্বতন্ত্র নিয়ম করা হয়নি। জিবরাঈল (আঃ) মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ক্রমে দুই দফায় রাসূল (সাঃ) কে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নিয়ম পদ্ধতি ইমামতি করে বাস্তবভাবে শিখিয়ে গেছেন। এ সময় জিবরাঈল (আঃ) নারীদের সালাতের জন্য আলাদা কোন নিয়ম পদ্ধতির বর্ণনা দেন নাই। নারী-পুরুষ নির্বিশেষের জন্য এ নমুনা শিখানো হয়েছে। আল্লাহর নিয়ম পদ্ধতিতে কখনও কোন পার্থক্য দেখা যাবে না।এ মর্মে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,“আর আপনি আল্লাহর নিয়ম-রীতিতে কখনও কোন পরিবর্তন পাবেন না।” (সূরা-আহযাব: আয়াত-৬২) বিশিষ্ট তাবেঈ ইবরাহীম নাখঈ বলেন, পুরুষেরা সালাতে যা করে নারীরাও তাই করবে। (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ১/৭৫ পৃঃ সনদ সহীহ) অথচ কোন কোন মুসলিম ভাই বিভিন্ন অগ্রহণযোগ্য বর্ণনা দ্বারা নারী-পুরুষের সালাতের মাঝে পদ্ধতিগত পার্থক্য নিরূপণের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন,কিন্তু সফল হতে পারেননি। তারা ১৮টি পার্থক্য তুলে ধরে থাকেন।বঙ্গানুবাদ ‘বেহেশতী জেওর’ বইয়ে ১১টি পার্থক্য উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্ট বড় হবে তাই উল্লেখ করলাম না (দেখুন মোকাম্মাল মোদাল্লাল বেহেশতী জেওর, (ঢাকা: হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড, তৃতীয় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারী ২০০৪ইং, পৃঃ ১১৬-১৭) তারা মারফূ‘, মাওকূফ এবং মাক্বতূ‘ এই তিন প্রকার বর্ণনা উপস্থাপন করে নারী-পুরুষের সালাতের পার্থক্যের ব্যাপারে যে সমস্ত বর্ণনা পেশ করেছেন তার একটি বর্ননাও বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমানিত নয়।
.
প্রকৃতপক্ষে নারী-পুরুষের সালাতের মধ্যে পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষ-নারী, ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল উম্মতকে সম্বোধন করে বলেছেন, صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِيْ أُصَلِّيْ ‘তোমরা ঠিক সেভাবেই সালাত কর, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখছ।’ (সহীহ বুখারী, হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬)। এই নির্দেশ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই। যদি কেউ নারীকে পুরুষ থেকে পৃথক করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই সহীহ সূত্র দ্বারা প্রমাণিত দলীল পেশ করতে হবে।(ইবনু বায (রহ.) মাজমূঊ ফাতাওয়া,১১তম খণ্ড, পৃ. ৭৯-৪১)।
.
তাই যে আদেশ শরীয়ত পুরুষদেরকে করেছে, সে আদেশ মহিলাদের জন্যও এবং যে সকল সাধারণ আদেশ মহিলাদেরকে করেছে তাও পুরুষদের ক্ষেত্রে পালনীয়, যদি বিশেষ হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার দলীল না থাকে। যেমন: “যারা সতী মহিলাদের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদের জন্য শাস্তি হল ৮০ কোড়া। (সূরা নূর,২৪/৪)।পরন্তু যদি কেউ কোন সৎ পুরুষকে অনুরুপ অপবাদ দেয়,তবে তার জন্যও ঐ একই শাস্তি প্রযোজ্য।
.
সুতরাং মহিলারাও তাদের নামাযে পুরুষদের মতই হাত তুলবে, দাঁড়ানোর পদ্ধতি, বুকে হাত বাঁধা, রুকু, সিজদা ও বৈঠক এসবই পুরুষ ও মহিলারা একই কায়দায় আমল করবে।তাশাহ্‌হুদেও সেইরুপ বসবে, যেরুপ পুরুষরা বসে। উম্মে দারদা (রাঃ) তাঁর নামাযে পুরুষের মতই বসতেন। আর তিনি একজন ফকীহ্‌ ছিলেন। (আত্‌-তারীখুস স্বাগীর, বুখারী ৯৫ পৃ:, বুখারী, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৩৫৫)।আর মহিলাদের জড়সড় হয়ে সিজদাহ করার ব্যাপারে কোন হাদীস সহীহ নেই। (সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ২৬৫২)। মসজিদে নববীতে নারী পুরুষ সকলে রাসূল (ﷺ) এর (ইমামতি) পিছনে একই নিয়মে সালাত ও জুম’আ আদায় করেছেন। (বুখারী, মিশকাত হা/৯৪৮, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৯)। এ জন্যই ইবরাহীম নাখয়ী (রহঃ) বলেন,‘নামাযে মহিলা ঐরুপই করবে,যেরুপ পুরুষ করে থাকে।’ (ইবনে আবী শাইবা, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী (রহ.) ১৮৯পৃ:) এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, সালাতের মধ্যকার ফরয ও সুন্নাত সমূহ মুসলিম নারী ও পুরুষ সকলে একই নিয়মে আদায় করতে হবে। (মির’আত ৩/৫৯ পৃঃ; ফিকহুস সুন্নাহ ১/১০৯; নায়লুল আওত্বার ৩/১৯)। মহিলারা পুরুষদের মত একই নিয়মে সালাত আদায় করবে। (ইবনে আবি শাইবা ১/৭৫/২, সিফাতু সালাতুন্নবী ১৮৯ পৃঃ)।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,‘মহিলারা ঠিক সেভাবেই সালাত আদায় করবে, যেভাবে পুরুষরা করে থাকে। ক্বিয়াম, রুকূ, সিজদাহ, বৈঠক সবকিছুই পুরুষের মত হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, وَصَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِيْ أُصَلِّيْ ‘তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখছ, ঠিক সেভাবেই সালাত আদায় করবে।’ (সহীহ বুখারী, হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬)। এখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী-পুরুষ উভয়কেই সম্বোধন করেছেন। (আশ-শারহুল মুমতি‘, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩০৩-৩০৪)।শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন,‘কিছু আলিম নারী-পুরুষের সালাত আদায়ের পদ্ধতি পৃথক বলে মন্তব্য করেছেন এবং তারা এর পক্ষে কিছু হাদীস দ্বারা দলীল দিয়েছেন। কিন্তু এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস গুলো সবই যঈফ। আর যঈফ হাদীছ দ্বারা দলীল পেশ করা সঠিক নয়।’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৩৮১৬২)।
.
বিগত শতাব্দীর আরেক শ্রেষ্ঠ ইমাম ফাদ্বীলাতুশ শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাতের যে বিবরণী ও পদ্ধতি উল্লেখ করা হল, এতে নারী-পুরুষ উভয়ই সমান। যে সকল পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, এগুলো নারীদের জন্য স্বতন্ত্র বিধান। অথচ এর পক্ষে কোন সহীহ দলীল নেই। বরং নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীর মধ্যে তারাও অন্তর্ভুক্ত, ‘তোমরা সেভাবেই সালাত আদায় কর, যেরূপ আমাকে আদায় করতে দেখছ।’ (সহীহ বুখারী, হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬)। অন্যত্র আলবানী বলেন, إِنَّمَا النِّسَاءُ شَقَائِقُ الرِّجَالِ ‘নারীরা তো পুরুষদেরই অংশ।’ (আবূ দাঊদ, হা/২৩৬; তিরমিযী, হা/১১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬১৯৫; সনদ হাসান, সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৮৬৩; সহীহুল জামে‘, হা/২৩৩৩)। এ সম্পর্কে বিখ্যাত তাবিঈ ইবরাহীম নাখঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, تفعل المرأة في الصلاة كما يفعل الرجل ‘সালাতে নারী তা-ই করবে,যা পুরুষ করে।’ (সিফাতু সালাতিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, পৃ. ১৮৯)।

◾পক্ষান্তরে দলীলের ভিত্তিতেই নারী-পুরুষের সালাতে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। যেমন:
_________________________________________
১. মেয়েরা শুধুমাত্র মুখমণ্ডল ও দুই হাত ছাড়া বাকি আপাদমস্তক ঢেকে দাঁড়াবে। পায়ের গোড়ালির নিচ পর্যন্ত কাপড় ঝুলিয়ে পা ঢেকে রাখবে।কারন মহিলাদের দুই হাতের তালু ও চেহারা ব্যতীত মাথা হ’তে পায়ের পাতা পর্যন্ত সর্বাঙ্গ সতর (আবুদাঊদ হা/৪১০৪; মিশকাত হা/৪৩৭২)।

➤(১) সালাতে মহিলা ইমাম মহিলাদের প্রথম কাতারের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে। (বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান হা/১৬২১; সুনানুল কুবরা হা/৫৫৬৩; আওনুল মা‘বূদ ২/২১২ পৃঃ; আবুদাঊদ ইরওয়া হা/৪৯৩)।

➤(২) মহিলারা পুরুষ ইমামের পিছনে সালাত আদায় করলে সবার পিছনে দাড়াবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১০৮-১১০৯)। কারন মহানবী (ﷺ) বলেন,“পুরুষদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল প্রথম কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল সর্বশেষ কাতার। আর মহিলাদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল সর্বশেষ কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল প্রথম কাতার।” (সহীহ মুসলিম,৪৪০ মিশকাত ১০৯২ সনদ সহীহ)।

➤(৩) বেগানা অর্থাৎ ননমাহারম পুরুষ আশে-পাশে থাকলে (জেহরী নামাযে) মহিলারা সশব্দে কুরআন পড়বে না বরং নিচু স্বরে আস্তে আস্তে পড়বে। (আলমুমতে, শারহে ফিক্‌হ ইবনে উসাইমীন ৩/৩০৪)।

➤(৪) ইমাম কোন ভুল করলে মহিলা মুক্তাদীরা পুরুষের মত ‘সুবহা-নাল্লাহ্‌’ না বলে হাতে হাত মেরে আওয়ায করবে। রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেছেন, সালাতের মধ্যে যে ব্যক্তির কাছে কোন কিছু আপতিত হয় সে ব্যক্তি যেন ‘সুব্হানাল্লা-হ’ পড়ে নেয়। আর হাতে হাত মারা কেবল মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট’ (সহীহ বুখারী হা/৬৮৩ ও ১২০৩, সালাতের মধ্য অন্যান্য কর্ম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫; মুসলিম হা/৭৮২; মিশকাত হা/৯৮৮, পৃঃ ৯১)।

➤(৫) প্রাপ্ত বয়স্কা মহিলারা বড় চাদর দিয়ে পুরা দেহ না ঢাকলে তাদের সালাত হবে না।(আবুদাঊদ হা/৬৪১, ১/৯৪ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩৭৭; মিশকাত হা/৭৬২-৬৩, পৃঃ, ৭৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭০৬, ২/২৪০ পৃঃ)।

➤(৬) পুরুষের জন্য টাখনুর উপরে কাপড় থাকতে হবে। (আবুদাঊদ হা/৬৩৭, ১/৯৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৪৩৩১, পৃঃ ৩৭৪, ‘পোশাক’ অধ্যায়)

➤(৭) মহিলাগণ টাখনু ঢাকতে পারেন। এটি উত্তম (তিরমিযী হা/১৭৩১; আবুদাঊদ হা/৪১১৭; মিশকাত হা/৪৩৩৪-৩৫, পৃঃ ৩৭৪) তবে রুকূ-সিজদার সময় পায়ের পাতা প্রকাশ পেলে সালাত বিনষ্ট হবেনা। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তবে যেটুকু স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় সেটুকু ব্যতীত’ (নূর ২৪/৩১; (দ্র. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ ফাতাওয়া ২২/১১৪-১২০)।

➤(৮) মসজিদে যেতে চাইলে মহিলারা সুগন্ধি মেখে মসজিদে আসবেন না। এবং তারা পুরুষের ইমামতি করবেন না। (দ্রঃ সালাতুর রাসূল (ﷺ) ৪র্থ সংস্কর, ১৪৩-৪৪ পৃঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে উপস্থিত হয়, সে যেন খোশবু স্পর্শ না করে’। (সহীহ মুসলিম হা/৪৪৩)।

➤(৯) মহিলারা কখনো মসজিদ গিয়ে সালাত আদায় করলে সালাত শেষে মসজিদ থেকে পুরুষের আগে বের হবেন আর মহিলাদের বের হওয়া শেষ হ’লে পুরুষরা বের হবেন। হিন্দ বিনত হারিছ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ)-এর স্ত্রী সালামাহ (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন, নারীরা আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সময় ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে উঠে যেতেন এবং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ও তাঁর সঙ্গে ছালাত আদায়কারী পুরুষগণ, আল্লাহ যতক্ষণ ইচ্ছা করেন অবস্থান করতেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) উঠলে পুরুষরাও উঠে যেতেন’। (সহীহ বুখারী: ৮৬৬)।

➤(১০) জাম‘আতে সালাত আদায় কালীন পুরুষদের মাথা উঠানোর পর মহিলারা মাথা উঠাবে। সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,”হে নারী সমাজ। পুরুষরা তাদের মাথা উত্তোলন না করা পর্যন্ত তোমরা সাজদা হতে তোমাদের মাথা উত্তোলন করবে না।” (সহীহ মুসলিম ১/১৮২পৃঃ হা/৬৬৫)।

➤(১১) মহিলারা সালাতের আযান দিবে না। আযান দেওয়া শুধুমাত্র পুরুষদের কাজ। তবে অধিকাংশ ফকীহদের মতে মেয়েদের জামায়াতে নারীরা ইকামত দিতে পারবে। (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/২৩৩৮; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯১তামামুল মিন্নাহ, পৃ. ১৫৩ হাফছা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) যখন সালাত আদায় করতেন, তখন ইক্বামত দিতেন’ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/২৩৩৯)।

➤(১২) অনেক মহিলা আছে,যারা মসজিদে বা বাড়িতে পুরুষদের নামায পড়া না হলে নামায পড়ে না। এটা ভুল। আযান হলে বা নামাযের সময় হলে আওয়াল ওয়াক্তে নামায পড়া মহিলারও কর্তব্য। (মুত্বাসা ১৮৮-১৮৯পৃ:)

উপরোক্ত পার্থক্যগুলো পদ্ধতিগত পার্থক্য নয়।এ জন্য শাইখ আলবানী (রহ.) বলেন, وَلاَ أَعْلَمُ حَدِيْثاً صَحِيْحاً فِى التَّفْرِيْقِ بَيْنَ صَلاَةِ الرَّجُلِ وَصَلاَةِ الْمَرْأَةِ وَإِنَّمَا هُوَ الرَّأْىُ وَالْاِجْتِهَادُ ‘পুরুষ ও মহিলার সালাতের পার্থক্য সম্পর্কে আমি কোন সহীহ হাদীস জানতে পারিনি। এটা ব্যক্তি রায় ও ইজতিহাদ মাত্র। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৫০০ এর আলোচনা দ্রঃ)।
.
পরিশেষে, উপরোক্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে, নারী-পুরুষের সালাতের প্রচলিত পার্থক্য সমূহ সঠিক নয়। বিশেষ করে নারীদের জড়সড় হয়ে সিজদা দেওয়ার নিয়ম বিশুদ্ধ নয়। মূলতঃ সালাত আদায়ের পদ্ধতি ও তাসবীহ তাহলীলের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে নারীরা জামা‘আতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম একই কাতারের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে, সালাতে ত্রুটি হলে মুক্তাদী নারী হাতের উপর হাত মেরে সতর্ক করবে। এছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহ আমাদের সহীহ হাদীস অনুযায়ী সালাত আদায়ের তাওফীক দান করুন আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।