নারী ও পুরুষদের জন্য হাতে ও পায়ে মেহেদি ব্যবহারের বিধান

প্রশ্ন: নারী-পুরুষদের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদি ব্যবহারের বিধান কী? পুরুষের হাত-পা ছাড়া মাথা কিংবা দাড়িতে মেহেদী ব্যবহারে কোন সমস্যা আছে কী?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলামী শরীয়তে দৃষ্টিকোণ থেকে পুরুষের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তাই পুরুষদের জন্য বিবাহ উপলক্ষে হোক কিংবা অন্য কোন উপলক্ষে উভয়াবস্থাতেই তাদের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদি লাগানো নিষিদ্ধ। কারণ, হাত-পায়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য মেহেদি ব্যবহার করা শুধু নারীদের বৈশিষ্ট্য, পুরুষদের নয়। আর ইসলামে মুমিন পুরুষের জন্য কোন ক্ষেত্রেই মহিলাদের অনুকরণ করা বৈধ নয়।রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষদের ও পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫৮৮৫)। অপর বর্ননায় আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদিন এক হিজড়াকে নবী (ﷺ)-এর নিকট আনা হলো। তার হাত-পা মেহেদী দ্বারা রাঙ্গানো ছিল। রাসূল (ﷺ) বললেন, এর এ অবস্থা কেন? বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সে নারীর বেশ ধরেছে। রাসূল (ﷺ) তাকে নাকী‘ নামক স্থানে বহিষ্কারের নির্দেশ দিলেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাকে হত্যা করব না? তিনি বললেন, সালাত আদায়কারীকে হত্যা করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। (আবু দাউদ হা/৪৯২৮; মিশকাত হা/৪৪৮১; হেদায়াতুর রুওয়াত হা/৪৪০৭, সনদ সহীহ)।
.
তাছাড়া মেহেদী এক ধরনের রঙ। আর পুরুষদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে রঙ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘পুরুষের সুগন্ধি এমন হবে, যার সুগন্ধ প্রকাশ পায় কিন্তু রঙ গোপন থাকে আর নারীর সুগন্ধি এমন হবে, যার রঙ প্রকাশ পায় কিন্তু সুগন্ধ গোপন থাকে।’’ (তিরমিযি হা/২৭৮৭, মিশকাত হা/৪৪৪৩)। রাসূল (ﷺ) রঙ থাকার কারণে পুরুষদের জন্য যাফরানের সুগন্ধি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী হা/৫৮৪৬; মুসলিম হা/২১০১; মিশকাত হা/৪৪৩৪)।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল; প্রশ্ন: আমাদের এখানে একটি প্রথা আছে, সেটা হলো- একই সময়ে বর ও কনের হাত-পায়ে মেহেদী দেয়া। এই কাজের হুকুম কী?

জবাবে শাইখ বলেন:أما وضع الحناء في رجل العروسة وفي يديها فلا نعلم فيه شيئاً ، من باب الزينة لزوجها ، وأما الرجل فلا يتزين بهذا ؛ لأن هذه زينة النساء وتشبه بالنساء فلا يليق ولا يجوز للرجل التشبه بالنساء لا في الحناء ولا في غير ذلك من الملابس ؛ لأن الرسول صلى الله عليه وسلم منع من ذلك ولعن الرجل أن يتشبه بالمرأة والمرأة أن تتشبه بالرجل ، فهذا لا يجوز” কনের হাতপায়ে মেহেদী দেয়ার ক্ষেত্রে আপত্তিকর কিছু আমরা জানি না। এটি বরের সৌজন্যে সাজ করার মধ্যে পড়ে। তবে বর এমন কিছু দিয়ে সাজ করবে না। কেননা এটি নারীদের সাজ ও নারীদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ; তাই এটি অনুচিত। পুরুষের জন্য নারীদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা জায়েয নয়— না মেহেদী দিয়ে; আর না অন্য কোন পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর থেকে বারণ করেছেন এবং এমন পুরুষকে লানত করেছেন; যে লোক মহিলার সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে এবং এমন মহিলাকে লানত করেছেন যে মহিলা পুরুষের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে। তাই এটি জায়েয নয়। (ইমাম বিন বায ফাতাওয়া
নুরুন আলাদ দারব: ২/৫৯৯, ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৪৭৮১২)।
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: বিয়ের অনুষ্ঠানে পুরুষদের হাত পায়ে মেহেদি দিয়ে রং করার হুকুম কি?
.
জবাবে শাইখ বলেন: يحرم على الرجل أن يختضب بالحناء في مناسبة الزواج أو غير مناسبة الزواج ؛ وذلك لأن الخضاب بالحناء من خصائص النساء ، فإذا فعله الرجل كان متشبها بالمرأة ، وتشبه الرجل بالمرأة من كبائر الذنوب ، كما أن تشبه المرأة بالرجل من كبائر الذنوب لأن النبي صلى الله عليه وعلى آله وسلم لعن المتشبهات من النساء بالرجال، والمتشبهين من الرجال بالنساء، বিবাহ উপলক্ষে হোক কিংবা অন্য কোন উপলক্ষে উভয়াবস্থাতেই পুরুষের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদি লাগানো হারাম, বরং এটা কাবীরা গুনাহ। কারণ মেহেদি দিয়ে রং করা নারীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, তাই পুরুষ যদি তা করে তাহলে সে একজন নারীর অনুকরণ করছে, আর একজন পুরুষের জন্য নারীর অনুকরণ করা যেমন মহাপাপ, তেমনি একজন নারীর জন্য পুরুষের অনুকরণ করাও বড় গুনাহ। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষদের ও পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫৮৮৫; উসাইমীন ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৪১৫-৪১৬)।
.
❑ মহিলাদের হাতে মেহেদি ব্যবহারের বিধান কী?
.
আহালুল ইমামগনের দৃষ্টিকোণ থেকে নারীদের জন্য মেহেদী ব্যবহার করা মুস্তাহাব। তবে এ সংক্রান্ত যতগুলো হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলোই জইফ (দুর্বল) একটিও বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়। নারীদের হাতে পায়ে মেহেদী ব্যবহারে বৈধতা সংক্রান্ত যে হাদিসটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত সেটা হচ্ছে: আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: এক নারী একটা পত্র দেওয়ার জন্য রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে হাত প্রসারিত করলে, তিনি তাঁর হাত সংকুচিত করলেন। ঐ নারী বলল; ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার দিকে পত্র এগিয়ে দিলাম আর আপনি তা গ্রহণ করলেন না! তিনি বললেন; এটা কি পুরুষের হাত,না নারীর হাত, তা আমি বুঝতে পারিনি। তিনি বললেন; যদি তুমি নারী হতে তা হলে তোমার হাতের নখসমূহ মেহেদী দ্বারা রাঙ্গাতে। (আবু দাউদ হা/ ৪১৬৬;সুনানে আন-নাসায়ী,হা/৫০৮৯ তাহক্বীক: সনদ জয়ীফ কারন সনদে মুতি বিন মাইমুন আল আম্বরি নামক একজন দুর্বল রাবী রয়েছেন। বিস্তারিত জানতে তাখরিজ সুনানে আবু দাউদ/৪১৬৬ ও তাখরিজ মুসনাদে ইমাম আহমদ, হা/২৬২৫৮) হাদীসগুলো দুর্বল হলেও নারীদের জন্য হাতে পায়ে মেহেদী ব্যবহারে কোন আপত্তি নেই।
.
ইমাম নববী শাফেয়ী রাহ বলেন : ” أما خضاب اليدين والرجلين بالحناء فمستحب للمتزوجة للأحاديث المشهورة فيه وهو حرام على الرجال إلا لحاجة التداوي ونحوه , ومن الدلائل على تحريمه قوله صلى الله عليه وسلم : ( لعن الله المتشبهين بالنساء من الرجال … ) الحديث “উভয় হাত ও পা মেহেদি দ্বারা রঞ্জিত করা বিবাহিত নারীর জন্য মুস্তাহাব। কারণ, এ মর্মে অনেক প্রসিদ্ধ হাদীস রয়েছে। তবে পুরুষদের জন্য চিকিৎসা ও চুল দাড়িতে ব্যবহার ছাড়া তা ব্যবহার করা হারাম। হারামের দলিল হলো- রাসুল (ﷺ)-এর বক্তব্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষদের অভিসম্পাত করেছেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫৮৮৫, নববী, আল-মাজমূ: খন্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৯৪)।
.
কে প্রশ্ন করা হয় যে, মহিলাদের জন্য হাতে মেহেদি ব্যবহার করা কি ওয়াজিব? কারণ কেউ কেউ বলে থাকে যে, কোনও মহিলা যদি হাতে মেহেদি ব্যবহার না করে তাহলে তা পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়।

তিনি উত্তরে বলেন, لا شك أن تغيير يديها بالحناء مُستحبٌّ، وقد جاء في أحاديث لا تخلو من ضعفٍ، فالأولى لها أن تُغيرها بالحناء. أما كون ذلك يجب، أو كونه يحرم بقاء يدها بيضاء، فلا أعلم له أصلًا، ولكن الأفضل والأولى أن تُغيرها بالحناء حتى تكون غير مُشابهةٍ ليدي الرجل، هذا هو الأفضل والأولى؛ لأنه جاءت في هذا أحاديث؛ ولأنه من السنة المعلومة بين النساء والمعروفة في عهد النبي ﷺ وبعده: تغيير اليدين بالحناء، فهو أمرٌ معلومٌ، وهو الأولى في حق المرأة “এতে কোনও সন্দেহ নাই যে, মেহেদি দ্বারা তাদের হাতের রং পরিবর্তন করা মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে একাধিক হাদিসে এসেছে যদিও সেগুলো দুর্বলতা মুক্ত নয়। উত্তম হল, মেহেদি দ্বারা হাতের রং পরিবর্তন করা। কিন্তু ওয়াজিব বলা বা হাত সাদা রেখে দেওয়া হারাম বলার কোনও ভিত্তি আছে বলে জানি না। কিন্তু উত্তম হল, মেহেদি দ্বারা হাত পরিবর্তন করা যেন তা পুরুষদের হাতের মত না হয়। এটাই উত্তম। কারণ এ ব্যাপারে একাধিক হাদিসে এসেছে। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগ এবং তৎপরবর্তী সব যুগের নারীদের মাঝে এটি একটি প্রচলিত রীতি। এটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। সুতরাং মহিলাদের ক্ষেত্রে এটিই উত্তম।” (ইমাম বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-৫৪১৩)।
.
শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেছেন, মহিলাদের নখগুলোকে মেহেদী বা অন্য কোন পবিত্র বস্তু দ্বারা সুশোভিত করা দোষণীয় নয়। তবে শর্ত হচ্ছে,বস্তুটা যেন অপবিত্র না হয় এবং ওযু-গোসলের পানির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে। যদি অঙ্গ- প্রত্যঙ্গে ওযু বা গোসলের পানি পৌঁছতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে,তবে তা ওযু বা গোসলের পূর্বে অপসারিত করা অপরিহার্য। (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ২৯ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৪৭, ইবনু বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৪৩-২৪৪)।
.
❑.পুরুষের মাথায় কিংবা দাড়িতে মেহেদী ব্যবহারে কোন সমস্যা আছে কী?
.
নারী-পুরুষ উভয়ে পাকা চুলে এবং পুরুষরা দাড়িতে মেহেদি বা অন্য রং ব্যবহার করতে পারবে।এমনকি প্রয়োজনে চুল দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করা সুন্নাহ। কিন্তু কোনভাবেই কালো রং ব্যবহার করতে পারবে না।
.
জাবের (রাঃ) বলেন; মক্কা বিজয়ের দিন আবু কুহাফাহ (রাঃ)-কে নিয়ে আসা হলো। তার চুল-দাড়ি ছিল ছাগামার (কাশফুলের) ন্যায় শুভ্র। সে সময় রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘একে একটা কিছু দিয়ে পরিবর্তন করে দাও, তবে কালো রং থেকে বিরত থাকবে।’ (মুসলিম হা/২১০২; মিশকাত হা/৪৪২৪; সিলসিলা সহীহাহ হা/৪৯৬)। অন্য বর্ননায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: اذْهَبُوْا بِهِ إِلَى بَعْضِ نِسَائِهِ، فَلْتُغَيِّرْهُ، وَجَنِّبُوْهُ السَّوَادَ، তাকে তার কোন এক স্ত্রীর নিকটে নিয়ে যাও। যাতে সে তার চুল-দাড়ির রঙ পরিবর্তন করে দেয়। অবশ্যই তোমরা কালো রং ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে। (ইবনু মাজাহ হা/৩৬২৪; তামামুল মিন্নাহ ১/৮৫)। আরেক বর্ননায় আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, إِنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى لاَ يَصْبُغُونَ فَخَالِفُوهُمْ- ‘ইহুদী ও নাসারারা খেযাব লাগায় না। অতএব, তোমরা তাদের বিপরীত করবে। (সহীহ বুখারী হা/৫৮৯৯; মুসলিম হা/২১০৩; মিশকাত হা/৪৪২৩)
.
আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন; ‘আমরা একদা রাসূল (ﷺ)-এর পাশে বসা ছিলাম। সে সময় তাঁর নিকট একদল ইহূদী প্রবেশ করল। তিনি তাদের সাদা দাড়ি দেখে বললেন, তোমরা কেন এগুলো পরিবর্তন কর না? তাকে বলা হলো যে, তারা এটা অপছন্দ করে। তখন তিনি বললেন, কিন্তু তোমরা পরিবর্তন করবে এবং কালো খেযাব ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে।’ (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/১৪২; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৭৮৯)। উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮] বলেন, وهذا اللفظ دل على الأمر بمخالفتهم والنهي عن مشابهتهم فإنه إذا نهى عن التشبه بهم في بقاء بيض الشيب الذي ليس من فعلنا، ‘এই উক্তি প্রমাণ করে ই-হূ-দীদের বিরোধী আমল করা ও তাদের সাথে সাদৃশ্য পোষণ না করার নির্দেশের উপর। কেননা যখন চুল-দাড়ি সাদা অবস্থায় রেখে তাদের সাথে সাদৃশ্য পোষণ করতে নিষেধ করা হলো যা আমাদের আদর্শ নয়, সেখানে চুল-দাড়িতে কালো খেযাব ব্যবহার করে সাদৃশ্য ঘটানো আরো মারাত্মক। (ইকতিযাউ সিরাতিল মুস্তাকীম ১/২০৩; জিলবাব পৃষ্ঠা: ১৯১)। বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন; أن أمر النبي صلى الله عليه وسلم استقر أخيرًا على مخالفة أهل الكتاب حتى في الشعر، ‘শেষ পর্যন্ত রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশ স্থির ছিল আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করার এমনকি চুলের বিধানের ক্ষেত্রেও। (জিলবাব পৃষ্ঠা: ৯২)। ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) যখন কোন মেহেদী ব্যবহারকারীকে দেখতেন তিনি বলতেন, إنِّي لَأَرَى رَجُلًا يُحْيِي مَيِّتًا مِنْ السُّنَّةِ، وَفَرِحَ بِهِ حِيْنَ رَآهُ صَبَغَ بِهَا، ‘অবশ্য আমি এমন একজন ব্যক্তিকে দেখছি যে মৃত সুন্নাতকে জীবিত করেছে। তিনি কাউকে মেহেদী ব্যবহার করতে দেখলে খুব খুশি হতেন। (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ১/১৫৫; ২/১১৯)
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণ বলেছেন; নারী- পুরুষ সবার জন্য কালো রং ব্যতীত যে কোন রংয়ের খেযাব দ্বারা বার্ধক্যের চুল পরিবর্তন করা মুস্তাহাব। কারণ রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘তোমরা এই বার্ধক্যের চুলকে পরিবর্তন কর এবং কালো খেযাব থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে। (গায়াতুল মারাম; হা/১০৫)। এটি মেহেদী দ্বারা পরিবর্তন হতে পারে বা কালো ব্যতীত যেকোন রং দ্বারা পরিবর্তন করা যেতে পারে। (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, খন্ড:২৪, পৃষ্ঠা: ১০৮)।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন; বার্ধক্যের চুলে খেযাব ব্যবহার করা নির্দেশিত সুন্নাত। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই ই-হূ-দী, খ্রীষ্টানরা (চুল-দাড়ি) রং করে না। সুতরাং তোমরা তাদের বিরুদ্ধাচারণ করো। অতএব, নারী ও পুরুষদের জন্য সুন্নাত হলো- যখন সে বার্ধক্যে উপনীত হবে তখন সে লাল ও হলুদ খেযাব দ্বারা শুভ্রতা পরিবর্তন করবে। (সহীহ বুখারী, মিশকাত হা/৪৪২৩, বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব)। ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-বলেন, تغيير شعر الشيب سنة أمر به النبي صلى الله عليه وسلم، ويُغيَّره بكل لون ما عدا السواد، ‘বার্ধক্যের চুলকে পরিবর্তন করা সুন্নাত। এ ব্যাপারে নবী (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটি কালো ব্যতীত যে কোন রং দ্বারা পরিবর্তন করা যাবে। (উসাইমীন,মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল,খন্ড: ১১, পৃষ্ঠা: ১২০)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।