নাজদ হতে শয়তানের শিং বের হওয়া সংক্রান্ত হাদীসের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা

প্রশ্ন: নাজদ হতে শয়তানের শিং বের হওয়া সংক্রান্ত হাদীসের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা কী? জনৈক বক্তা বলেছেন, নাজদ হতে সৃষ্ট ফিতনা দ্বারা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহহাব নজদী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে উদ্দেশ্য; তার বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ‘নাজদ’ নামক এলাকা থেকে সৃষ্ট ফিতনাহ সম্পর্কে আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে আমাদেরকে সতর্ক করে গেছেন এবং বলেছেন, সেখান থেকে ফিতনাহ ও দুঃখ দুর্দশা বের হবে, এবং নাজদকে তিনি ‘শয়তানের শিং’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি কিছু পথভ্রষ্ট জাহেল লোকেরা দাবী করে, হাদীসে বর্ণিত ‘নাজদ’ এবং ‘শয়তানের শিং’ হচ্ছে হিজরী দ্বাদশ শতাব্দীতে জন্ম গ্রহণ করা সৌদি আরবের প্রখ্যাত মুজাদ্দিদ, শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহহাব বিন সুলায়মান আত-তামীমী (রাহিমাহুল্লাহ)। আসুন আমরা হাদীসে বর্নিত ‘নাজদ’ এবং ‘শয়তানের শিং’ এর প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্য কি তা জানার চেষ্টা করি।
.
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) [মৃত: ৭৩ হি.] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূল (ﷺ) একদিন আলোচনা করছিলেন। এক সময় তিনি বললেন, “হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য আমাদের সিরিয়ায় বরকত দাও। হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য আমাদের ইয়ামানে বরকত দাও। উপস্থিত লোকেরা বলল, আমাদের নজদেও (অর্থাৎ আমাদের নজদের জন্যও দুয়া করুন)। রাসূল (ﷺ) বললেন, “হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের সিরিয়ায় বরকত দাও। হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য বরকত দাও আমাদের ইয়ামানে।” লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমাদের নজদেও। (বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন) আমার মনে হয়, তৃতীয়বারে রাসূল (ﷺ) বললেন, “সেখানে তো কেবল ভূমিকম্প আর ফিতনাহ। আর সেখান (নাজদ এলাকা) থেকেই শয়তানের শিং উদিত হবে।” (সহিহ বুখারী: খন্ড ২, অধ্যায়: ১৭, হাদীস নং- ১৪৭ এবং সহিহ বুখারী: খন্ড ৯, অধ্যায়: ৮৮, হাদীস নং- ২১৪)
.
অপর বর্ননায়, প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা রাসূল (ﷺ) হাফসাহ (রাঃ)-এর দরজার নিকট দন্ডায়মান ছিলেন। এ সময় তিনি তাঁর আঙ্গুল দ্বারা পূর্বদিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ফিৎনা এ দিক থেকে আসবে-যেদিক থেকে শয়তানের শিং উদিত হবে। এ কথাটি তিনি দুই বা তিনবার বলেছেন। (সহীহ বুখারী হা/৩২৭৯; মুসলিম হা/২৯০৫)
.
উক্ত হাদীসগুলোর আলোকে পথভ্রষ্ট বিদাতীরা বলে, ইমাম মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জন্মস্থান হচ্ছে সৌদি আরবের ‘নাজদ’ এলাকায়। সুতরাং তিনিই হচ্ছেন সেই ‘নাজদী’ ফিতনাহ, যার ব্যপারে রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। অথচ এটি ডাহা মিথ্যা কথা। কুরআন-সুন্নাহের সঠিক জ্ঞান, অর্থ ও ব্যখ্যা না জেনে নিজেদের মনগড়া অপব্যখ্যা করে হকের বিরোধীতা করা হচ্ছে- মনপূজারী বিদআতীদের জন্মগত স্বভাব। রাসূল (ﷺ)-এর যামানায় আরবের ৭ থেকে ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন জায়গাকে ‘নাজদ’ নামে ডাকা হতো। নাজদ অর্থ হচ্ছে ‘উঁচু জায়গা’। আমাদের দেশে যেমন, ‘উজান’ বা ‘ভাটি’ বলতে অনেক জায়গাকেই বুঝানো হয়, ঠিক তেমনি তৎকালীন সময়ে আরবের ‘নাজদ’ বলতে উঁচু যে কোন জায়গাকেই বোঝানো হতো। যেমন: আল্লামা ইবনে মানযূর আফরীকী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, النَّجْدُ مِنَ الأَرض : قِفافُها وصَلَابَتُها وَمَا غَلُظَ مِنْهَا وأَشرَفَ وارتَفَعَ واستَوى নাজদ ভূ-পৃষ্ঠের ঐ অংশটি যা উচ্চভূমি, শক্ত স্থান, শক্ত ভূমি, উচ্চে হয়ে থাকে। (লিসানুল আরব,১৪/৪৫)। তিনি আরও বলেছেন, وَمَا ارْتَفَعَ عَنْ تِهامة إِلى أَرض الْعِرَاقِ، فَهُوَ نَجْد- যমীনের ঐ উঁচু অংশ যা তিহামাহ হতে শুরু করে ইরাকের যমীনের দিকে গিয়েছে। (আর) এটাই হলো নাজদ। (লিসানুল আরব, ১৪/৪৫)
.
তাছাড়া এই সম্পর্কে বর্নিত সবগুলো সহীহ হাদীস একত্র করলে পরিষ্কারভাবে যা বুঝা যায় ‘নাজদ’ বলতে রাসূল (ﷺ) পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে ইরাকসহ পুরো প্রাচ্যকে বুঝিয়েছেন। এটি বর্তমান সৌদি আরবের কোন অঞ্চলকে বোঝানো হয়নি। আর এ কথা দিবালকের ন্যায় প্রমাণিত যে, রাসূল (ﷺ) এর মৃত্যুর পর থেকে আজ পর্যন্ত ইরাক হচ্ছে মুসলমানদের জন্য ফিতনাহ সৃষ্টি এবং দুঃখ দুর্দশার স্থান। এই ইরাকেই রাসূল (ﷺ)-এর আদরের নাতি হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে হত্যা করা হয়েছিলো এবং এই ইরাক থেকেই বাতিল ফিরকা খারেজী, শী‘আ, মু‘তাযিলা, জাহমিয়া, মাজূসী, মানুবিয়া, মুযদাকিয়াসহ বহু ভ্রান্ত দলের আবির্ভাব ঘটেছে। অপরদিকে চীন ও ভারত থেকে হুন্দুসিয়া, বুযিয়া, কাদিয়ানী, বাহাইয়া ও তাতারদের আবির্ভাব ঘটেছে। অত্যাচারী জালেম শাসকের উত্থান ইরাকে। সর্বশেষ, আইসিস নামক বর্তমান খারেজী দলের উত্থানও হয়েছে ইরাক থেকেই। এমনকি, ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, দাজ্জাল ইরাক অর্থাৎ তথাকথিত এই নজদ থেকেই আত্মপ্রকাশ করবে, যা ইতিহাসের সবচাইতে ভয়াবহ মারাত্মক ফিতনাহ সৃষ্টি করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; ‘‘পূর্বের কোন একটি দেশ থেকে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে যার বর্তমান নাম খোরাসান। (সহীহুল জামে আস-সাগীর, হাদীস নং-৩৩৯৮)
.
ফিতনা যে ইরাক থেকে সৃষ্টি হবে তার আরো বড় কয়েকটি প্রমাণ নিম্নলিখিত হাদিসগুলো থেকে পাওয়া যায়। যেমন: সালিম ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলতেন, হে ইরাকবাসী! আশ্চর্য! সগীরা (গুনাহ) সম্পর্কে তোমাদের কতই না প্রশ্ন। অথচ কবীরা (গুনাহ) করতে তোমাদের দ্বিধা নেই। আমি আমার পিতা ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলতেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে তার হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইংগিত করে বলতে শুনেছি, ফিৎনা এদিক থেকে আসবে-যেদিক থেকে শয়তানের দুই শিং উদিত হয়। অথচ তোমরা পরস্পর হানাহানি করছ। (সহীহ মুসলিম হা/২৯০৫)
.
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তাকে ইরাকের এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইহরামের অবস্থায় মশা-মাছি মারা যাবে কি? তিনি বললেন, ইরাকবাসী মশা-মাছি মারা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে অথচ তারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাতিকে হত্যা করেছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আমার নিকট দুনিয়ায় যেন দু’টি ফুল। (সহীহ বুখারী হা/৩৭৫৩, আধুনিক প্রকাশনী ৩৪৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৭৮)
.
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে দেখেছি, তিনি ইরাকের দিকে তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন, সাবধান! নিশ্চয়ই ফিতনা এখান হতে হবে। সাবধান! নিশ্চয়ই ফিতনা এখান হতে হবে। একথাটি তিনি তিনবার বললেন। (অতঃপর বললেন) এখান থেকেই শয়তানের শিং বের হবে। (মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৩০২)। ইরাক হতে শয়তানের শিং বের হবে-কথাটি ইমাম ত্ববারানী আল-মু‘জামুল কাবীর (হা/১৩৪২২) গ্রন্থে, হাফেয হায়ছামী মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ (হা/৫৮১৬) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এ মর্মে আরও বহু হাদীস রয়েছে।
.
হাদীসে উল্লেখিত ‘নাজদ’ এর ব্যাখ্যায় শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম:৭৭৩ হি: মৃত:৮৫২ হি:] এর রচিত সহীহ বুখারীর অসামান্য ব্যখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারী ফী শারহিল বুখারীতে ‘নাজদ’ এর অর্থ লিখেছেন, “নাজদ এর অবস্থান হচ্ছে পূর্ব দিকে। সুতরাং মদীনাতে অবস্থানরত কারো জন্য ‘নাজদ’ হচ্ছে পূর্ব দিকে, অর্থাৎ ইরাকের মরুভূমির এলাকা।” (সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ; ফতহুল বারী, খন্ড: ১৩ পৃষ্ঠা: ৫৮-৫৯)
.
দ্বাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মুসলিম ঐতিহাসিক, আলি ইবনে আসির (রাহিমাহুল্লাহ) যিনি সালাউদ্দিন আইয়ুবী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর সময়ে বেশ কয়েকবার ইরাকে ভ্রমণ করেছিলেন, তিনি লিখেছেন, “নাজদ অর্থ হচ্ছে উঁচু ভূমি যা কিনা হিজ্জাজ (মক্কা ও মদীনার) বাইরে ইরাকে অবস্থিত।” (আল-নিহায়াহ খন্ড: ৫ পৃষ্ঠা: ১৮)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] ‘নাজদ’ সংক্রান্ত হাদীসের ব্যখ্যায় লিখেছেন, “এই নাজদ হচ্ছে পূর্বদিকে (অর্থাৎ ইরাকে), আর ‘শয়তানের শিং’ এর দ্বারা রাসুল (ﷺ) দাজ্জালের আবির্ভাবের ফেতনাকে বুঝিয়েছেন।” (ইমাম নববী, শারহু সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা: ২৯)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী আদ-দিমাশক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,
.
طرق الحديث متضافرة على أن الجهة التي أشار إليها النبي صلى الله عليه وسلم إنما هي المشرق ، وهي على التحديد العراق ، كما رأيت في بعض الروايات الصريحة ، فالحديث علم من أعلام نبوته صلى الله عليه وسلم ، فإن أول الفتن كان من قبل المشرق ، فكان ذلك سببا للفرقة بين المسلمين ، وكذلك البدع نشأت من تلك الجهة كبدعة التشيع والخروج ونحوها ، وقد روى البخاري (7 / 77) ، وأحمد (2 / 85، 153) عن ابن أبي نعم قال: ” شهدت ابن عمر وسأله رجل من أهل العراق عن مُحرم قتل ذبابا فقال : يا أهل العراق ! تسألوني عن محرم قتل ذبابا ، وقد قتلتم ابن بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ( هما ريحانتي في الدنيا )
.
“হাদীসের সমস্ত বর্ননাগুলো ইঙ্গিত করে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন সেটি ছিল পূর্ব। বিশেষ করে ইরাক, যেমনটি আমি কিছু সুস্পষ্ট বর্ণনায় দেখেছি। এই হাদীসটি তাঁর নবুওয়াতের অন্যতম নিদর্শন। কারণ প্রথম ফিতনা পূর্ব দিক থেকে এসেছিল এবং এটিই ছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদের কারণ। একইভাবে বিদআতও একই দিক থেকে শুরু হয়েছে। যেমন শিয়া, খারিজি ও অন্যান্যদের বিদআত। যেমনটি ইমাম বুখারী তার সহীহ বুখারীতে এবং ইমাম আহমেদ বর্ণনা করেছেন যে, ইবনে আবি নাঈম বলেছেন: আমি ইবনে উমরের সাথে ছিলাম যখন ইরাকের এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করল, ইহরামের অবস্থায় মশা-মাছি মারা যাবে কি? তিনি বললেন, ইরাকবাসী মশা-মাছি মারা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে অথচ তারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাতিকে হত্যা করেছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আমার নিকট দুনিয়ায় যেন দু’টি ফুল। (সহীহ বুখারী হা/৩৭৫৩; বিস্তারিত দেখুন, সিলসিলা সহীহা খন্ড: ৫ পৃষ্ঠা: ৬৫৫, হা/২৪৯৪; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৮৪৫২৯)
.
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সৌদি ‘উলামাদের সাহীহ ‘আক্বীদাহর প্রশংসা করেছেন এবং ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহহাব বিন সুলায়মান আত-তামীমী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর দা‘ওয়াতকে ‘বরকমতময়’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন,

على كل حال كان له الفضل الثالث بعد الشيخين المشار إليهما ابن تيمية وابن قيم الجوزية في اعتقادي بإحيائه منهج الشيخين في العالم النجديِّ أولاً ثمَّ في العالم الإسلامي ثانيًا له الفضل في عصره في نشر هذه الدعوة المباركة وقد التزمها كثير من العلماء ليس في نجد فقط ثم في الحجاز التي تليها بل وفي سائر العالم الإسلامي في الهند والباكستان وفي بلاد أخرى

”সর্বোপরি, আমি (আলবানী) মনে করি, উল্লিখিত দুই শাইখ তথা ইবনু তাইমিয়্যাহ ও ইবনু ক্বাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহর পরে তাঁর (ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহহাব রাহিমাহুল্লাহ) রয়েছে তৃতীয়তম মর্যাদা। যেহেতু তিনি প্রথমত নজদ এলাকায়, দ্বিতীয়ত পুরো মুসলিম বিশ্বে দুই শাইখের মানহাজকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। স্বীয় যুগে এই বরকমতময় দা‘ওয়াতের প্রসারণায় তাঁর অবদান রয়েছে। অসংখ্য ‘আলিম এই দা‘ওয়াতকে অবলম্বন করেছেন। আর তা শুধুমাত্র নজদেই নয়, বরং নজদের পরে পুরো হেজাজে, এমনকি পুরো মুসলিম বিশ্বে, পাক-ভারতে এবং অন্যান্য দেশেও (‘উলামারা এই দা‘ওয়াত অবলম্বন করেছেন)।”(ইমাম আলবানী সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, ৮৮০ নং অডিও ক্লিপ)
.
সুতরাং, সম্মানিত পাঠক! আপনারাই বিবেচনা করুন, শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব বিন সুলায়মান বিন আলী বিন মুহাম্মাদ আত্ তামীমী (রাহিমাহুল্লাহ) যিনি হিজরী ১১১৫ সালে তিনি নজদ অঞ্চলের উয়াইনা শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জন্মের প্রায় ৩৫০ বছর পূর্বে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাহিমাহুল্লাহ), প্রায় ৫০০ বছর পূর্বে ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং প্রায় ৪৫০ বছর পূর্বে ইবনে আসির (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীসের আলোকে ‘নাজদ’ এর অর্থ করেছেন “ইরাক”, সৌদি আরবের ‘নাজদ’ বা অন্য কোন এলাকা নয়। আর মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব এর জন্মস্থান হচ্ছে উয়াইনা, যা বর্তমানে সৌদি আরবের নাজদ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। সুতরাং, একথা নিঃসন্দেহে প্রমানিত হয় যে, সূফীরা রাসূল (ﷺ)-এর হাদীসের ভুল অর্থ করে ইতিহাস বিখ্যাত একজন মুজাদ্দিদ যিনি শির্ক-বিদআত ও কুসংস্কার উৎখাত করে আরব ভূখণ্ডে পুনরায় তাওহীদের দাওয়াতকে পুনরুজ্জিবীত করেন, যিনি তাওহীদের দাওয়াত দেয়ার পাশাপাশি একাধিক ইলমী মজলিসে দারস দিতেন, প্রতিদিন তিনি তাওহীদ, তাফসীর, ফিকাহ এবং অন্যান্য বিষয়ে একাধিক দারস প্রদান করতেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর দাওয়াতের মধ্যে বরকত দান করেছেন। ফলে আরব উপদ্বীপের লোকেরা তাঁর দাওয়াত কবুল করে শির্ক, বিদআত ও কুসংস্কারের অন্ধকার পরিহার করে তাওহীদের আলোর দিকে ফিরে আসলো। তাঁর বরকতময় দাওয়াত অল্প সময়ের মধ্যেই আরব উপদ্বীপের সীমা পার হয়ে ইরাক, মিশর, সিরিয়া, মরোক্কো, ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর সকল অঞ্চলেই পৌঁছে যায়। ফলে তিনি সর্বমহলে ১২শ শতকের মুজাদ্দীদ উপাধিতে ভূষিত হন। অথচ পথভ্রষ্ট বিদআতীরা তার মত একজন সম্মানিত মুজাদ্দীদ ইমামের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। সহীহ বুখারীর হাদিসে এসেছে,মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলির সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। (সহীহ বুখারী হা/৬১৩৭)। সুতরাং একজন সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলেমের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাঁর সাথে শত্রুতা করার ব্যপারে বিদআতী সূফীদের ভয় করা উচিত। কেননা একদিন প্রতিটি বিষয়ের হিসাব দিতে হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন! (আল্লাহ ই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।