হাদিস থেকে বাছাইকৃত উচ্চারণ ও অর্থসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি দুআর মধ্যে ২৫তম দুআ সাইয়্যিদুল ইসতিগফার

সাইয়্যিদুল ইসতিগফার” তথা ক্ষমা প্রার্থনার সর্বশ্রেষ্ঠ দু’আ। এই দু’আটি প্রতিটি মুসলিমের মুখস্থ করা উচিত।
▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: আল্লাহ মানব জাতিকে সৃষ্টি করে তাঁর ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ আল্লাহর নির্দেশ ভুলে পার্থিব চাকচিক্য দেখে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে প্রতিটি মুহূর্তেই গোনাহের মধ্যে পতিত হচ্ছে। আল্লাহ অসীম দয়ালু হিসাবে মানুষের গোনাহ ক্ষমা করার জন্য অনেক পদ্ধতি ও বিশেষ আমল নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যা সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে মানুষ তাদের গোনাহ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।”(আবূ দাউদ হা/১৫২০, ইবনে মাজাহ,হা/৩৮১৯, তাবরানি:হা/৬২৯১ হাদীসটি বিশুদ্ধ) প্রশ্ন হতে পারে তাহলে কিভাবে আল্লাহর কাছে ইসতিগফার করে ক্ষমা চাইতে হবে অর্থাৎ সর্বোত্তম পদ্ধতিতে ইস্তিগফারের নিয়ম কী?
.
এর উত্তরে ইমাম ইবনু রজব আল-হাম্বালী আল-বাগদাদী রাহিমাহুল্লাহ [জন্ম: ৭৩৬ হি.] বলেছেন,ইস্তিগফারের সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো, প্রথমে আল্লাহর মহান সত্তা ও গুণাবলীর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করা; এরপর (লজ্জিত ও অনুশোচিত হয়ে) নিজের গুনাহের স্বীকারোক্তি প্রদান করা এবং সর্বশেষ আল্লাহর কাছে মাগফিরাত তথা ক্ষমার ফরিয়াদ করা। এই তিনটি মূলনীতির প্রমাণ হলো আজকের দু’আ অর্থাৎ সায়্যিদুল ইস্তিগফারের বাক্যগুলো। সেখানে এই তিনটিই আছে। আর, এটিকে হাদিসেই বলা হয়েছে, সব ইস্তিগফারের নেতা (সায়্যিদুল ইস্তিগফার)। দু’আটি পাঠের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় এটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে, অতঃপর সেদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর, যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এটি পড়বে, অতঃপর সকাল হওয়ার আগেই মারা যাবে, সেও জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ সায়্যিদুল ইস্তিগফারের মূল আরবি হচ্ছে,
.
ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲْ ﻟَﺎ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲْ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ ﺃَﻋُﻮْﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ ﺃَﺑُﻮْﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺃَﺑُﻮْﺀُ لَكَ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ
.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি ওয়া আনা ‘আবদুক, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহ্দিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতা ত’তু, আ‘উ-যুবিকা মিন শাররি মা সনা’তু, আবু-উ লাকা বিনি’মাতিকা ‘আলাইয়া, ওয়া আবু-উ লাকা বিযানবি, ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয যুনু-বা ইল্লা আনতা।(আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন,পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন, না হয় ভুল শিখতে হবে)।
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনিই আমার রব। আপনি ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই। আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন আর আমি আপনারই বান্দা। আপনি আমার কাছ থেকে যে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন, সাধ্যানুযায়ী আমি তার ওপর চলবো। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আপনি আমার প্রতি আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন, তা আমি স্বীকার করছি এবং আমার আপনার কাছে আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে মাফ করে দিন। কারন আপনি ব্যতীত কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না।(সহীহ বুখারী হা/ ৬৩০৬, তিরমিযী হা/৩৩৯৩, নাসায়ী হা/৫৫২২, মুসনাদে আহমাদ হা/ ১৭১১১, সহীহ ইবনু হিব্বান হা/৯৩৩, সহীহ আত তারগীব হা/ ৬৫০, সহীহ আল জামি‘ হা/৩৬৭৪)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন:
.
ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲْ
(আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বি) অর্থ: হে আল্লাহ! আপনিই আমার রব।
.
ﻟَﺎ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ
(লা-ইলাহা ইল্লা আনতা) অর্থ: আপনি ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই।

ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲْ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ
(খালাক্বতানি ওয়া আনা ‘আবদুক) অর্থ: আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন আর আমি আপনারই বান্দা।
.
ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ
(ওয়া আনা ‘আলা ‘আহ্দিকা) অর্থ: আপনি আমার কাছ থেকে যে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন,
.
ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ
(ওয়া ওয়া’দিকা মাসতা ত’তু) অর্থ: সাধ্যানুযায়ী আমি তার ওপর চলবো,
.
ﺃَﻋُﻮْﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ
(আ‘উ-যুবিকা মিন শাররি মা সনা’তু) অর্থ: আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।
.
ﺃَﺑُﻮْﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ
(আবু-উ লাকা বিনি’মাতিকা ‘আলাইয়া) অর্থ: আপনি আমার প্রতি আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন,
.
ﻭَﺃَﺑُﻮْﺀُ لَكَ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ
(ওয়া আবু-উ লাকা বিযানবি) অর্থ: তা আমি স্বীকার করছি এবং আমার আপনার কাছে আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি।,
.
ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ
(ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু) অর্থ: অতএব, আপনি আমাকে মাফ করে দিন।
.
ﻟَﺎ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ
(লা ইয়াগফিরুয যুনু-বা ইল্লা আনতা) অর্থ: কারন আপনি ব্যতীত কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না
.
প্রিয় পাঠক! ইস্তিগফারটি একটু বড় হলেও,ব্যাপক অর্থবোধক এবং ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।খেয়াল করে দেখুন, দু‘আটিতে প্রথমে আছে আল্লাহর প্রশংসা, এরপর নিজ ভুলের স্বীকৃতি এবং সবশেষে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা। ইমাম ইবনু রজব রাহিমাহুল্লাহর মতে, এটি হলো ইস্তিগফারের সর্বোত্তম পদ্ধতি। তবে, ইস্তিগফারের সব বাক্যে এই পদ্ধতিটি অনুসৃত হয়নি। অতএব, হুবহু এই নিয়মে সবসময় ইস্তিগফার করা জরুরি নয়। বরং ইস্তিগফারের যেকোনো বাক্য দিয়েই ইস্তিগফার করা যায়। হোক সেটি কুরআনে বর্ণিত কোনো দু‘আ বা হাদিসের কোনো দু‘আ। এমনকি নিজের মতো করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েও ইস্তিগফার করা যাবে। তবে এই ইস্তিগফারটি যেহেতু ক্ষমা প্রার্থনার সর্বশ্রেষ্ঠ দু’আ এবং এর ফজিলতও বিরাট তাই দু’আটি সবার মুখস্ত করে প্রতিদিন কমপক্ষে সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দিনে দুইবার পড়া উচিত। চাইলে মাঝে মধ্যে এই দু’আটি নামাজের সিজদায়,শেষ বৈঠকে কিংবা নামাজের বাহিরেও পড়তে পারেন, নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন দু’আ পড়ার সময় অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখবেন। পরিশেষে বলা যায়, রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে অনেক সময় পাপ কাজে প্রবৃত্ত হয়। শয়তান এক্ষেত্রে তাকে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করে। তাই আল্লাহর কাছে আমাদের একান্ত প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদেরকে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার এবং পাপ সংঘটিত হয়ে গেলে তওবা করার সুযোগ করে জান্নাতুল ফেরদাঊসে যাওয়ার তাওফীক দান করেন! আমীন!!(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।