দৈনিক সূরা ইখলাস ফালাক্ব ও নাস পড়ার বিধান

প্রশ্ন: দৈনিক সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব, সূরা নাস পড়ার বিধান কি? এই সূরা গুলো পাঠ করার নির্দিষ্ট সময়, সঠিক সংখ্যা এবং বিশুদ্ধ নিয়ম কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পবিত্র কুরআনের সর্বশেষ তিনটি সূরা অর্থাৎ সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব, সূরা নাস এই তিনটি সূরাকে একসাথে مُعَوِّذَات (মুআওয়িযাত) বা আশ্রয় প্রার্থনার সূরা বলা হয়। এই তিনটি সূরা প্রতিদিন ফজরের সময় থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত তিনটি নিয়মে তেলোয়াতের মাধ্যমে জ্বীন এবং মানুষ শয়তানের কাছ থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা মুস্তাহাব। রাসূল (ﷺ) নিজে এই আমল করেছেন এবং তার উম্মতকে উক্ত আমল করতে উৎসাহিত করেছেন।সূরা ইখলাস,ফালাক্ব,এবং সূরা নাস পড়ার সুন্নাহ সম্মত যে তিনটি নিয়ম রয়েছে; সেগুলো হলো:
.
(১). নির্দিষ্ট করে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের পর অন্যান্য জিকিরের সাথে সূরা আল-ইখলাস সহ সূরা আল-ফালাক্ব ও সূরা আন-নাস একবার করে পাঠ করা মুস্তাহাব। উক্ববাহ ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে প্রত্যেক সালাতের পর মুআওয়াযাত তথা আশ্রয় প্রার্থনার সূরাগুলো পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (আবু দাউদ হা/১৫২৩,তিরমিজি হা/২৯০৩ নাসাঈ হা/১৩৩৫, সিলসিলা সহীহাহ হা/১৫১৪, মুসনাদে আহমাদ হা/১৭৪৫৩, মিশকাত হা/৯৬৯)। উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনে হাজার আসকালানী (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, “উক্ত হাদীসে الْمُعَوِّذَاتِ বা ‘মুআওয়িযাত তথা আশ্রয় প্রার্থনার সূরাগুলো’’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- তিনটি সূরা। সূরা নাস ও ফালাকের সাথে সূরা ইখলাসকেও শামিল করা হয়েছে তাগলীব এর ভিত্তিতে। কেননা, এতে আল্লাহ তাআলা গুনাগুণ বর্ণিত হয়েছে। যদিও তাতে আশ্রয় প্রার্থনার বিষয়টি স্পষ্টভাবে আসে নি। (মিশকাতুল মাসাবিহ হা/৯৬৯ ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
.
(২). সালাতকে নির্দিষ্ট না করে দৈনিক সকাল এবং সন্ধ্যা নিজের সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো সময়ে সূরা আল-ইখলাস, সূরা আল-ফালাক্ব ও সূরা আন-নাস তিনটি সূরা তিনবার করে পাঠ করা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আব্দুল্লাহ ইবনু খুবাইব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলেন,‘তুমি প্রতিদিন বিকালে ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার করে সূরা কুল হুআল্লাহু আহাদ অর্থাৎ সূরা আল-ইখলাস এবং আল-মুআওবিযাতাইন অর্থাৎ সূরা আল-ফালাক্ব ও সূরা আন-নাস পাঠ করবে, তাহলে তা তোমার প্রত্যেক বিষয়ের জন্য যথেষ্ট হবে। (তিরমিযী হা/৩৫৭৫; আবু দাউদ হা/৫০৮২, তা‘লীকুর রাগীব, ১ম খণ্ড, পৃ. ২২৪, সনদ হাসান; ফাতাওয়া শায়খ বিন বায ২৬/২৪ পৃঃ)। এই হাদীসের আলোকে পাঠকদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে সকাল সন্ধ্যা বলতে কোন সময়কে বুঝানো হয়েছে? এবং কখন এই সূরা গুলো পড়া উত্তম?
.
জবাব: সকাল-সন্ধ্যা বলতে কোন সময় থেকে কোন সময় পর্যন্ত উদ্দেশ্য এটি নিয়ে প্রসিদ্ধ সালাফগণের মধ্যে দুটি মত রয়েছে। তবে কুরআন হাদীসের দলিল এবং ইতিহাস বিখ্যাত অধিকাংশ আলেমগণ যেমন শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম, শাইখ মুহাম্মাদ আস-সাফফারিনী, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম শাইখ উসাইমীন, শাইখ বাকর আবু যায়দ ও শায়খ সিদ্দীক্ব হাসান খান (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, সকালের সময় হলো, ফজর উদিত হওয়া থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। আর সন্ধ্যার সময় হলো, আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত।(আল-কালিমুত্ব-ত্বাইয়িব, পৃ. ৩০ পৃ.; আল-ওয়াবিলুস সাইয়িব, পৃ. ১২০; গিযাউল আলবাব, ২/৩৬৮ পৃ.;ফাতাওয়া নূরুন আলাদ র্দাব লিইবনি উসাইমীন, ১২/২০৪-২০৫ পৃ.; তাসহীহুদ দু‘আ, পৃ. ৩৩৭; নুযলুল আবরার, পৃ. ১০৩-১১৩)। তাঁরা আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত আয়াতকে দলীল হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহ বলেন, وَ اذۡکُرۡ رَّبَّکَ کَثِیۡرًا وَّ سَبِّحۡ بِالۡعَشِیِّ وَ الۡاِبۡکَارِ ‘আর আপনি আপনার প্রতিপালককে অত্যধিক স্মরণ করুন এবং সন্ধ্যায় ও প্রভাতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন।’ (সূরা আলে ইমরান: ৪১; এছাড়া সূরা আল-গাফির: ৫৫; সূরা আল-আন‘আম: ৫২; সূরা আল-কাহ্ফ: ২৮)। উক্ত আয়াতের الۡاِبۡکَارِ বলতে বুঝায় দিনের প্রারম্ভকে। আর الۡعَشِیِّ বলতে বুঝায় সূর্য মধ্যাকাশ থেকে হেলে পড়া থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কালকে। সুতরাং দু‘আ করার সময় হলো,ফজরের ও আসরের সালাতের পর।(তাফরীরুত্ব ত্বাবারী, ৬/৩৯২ পৃ.; আল-আযকার, পৃ. ১০৬; আল-ওয়াবিলুছ সাইয়িব, পৃ. ১২১; গিযাউল আলবাব, ২/৩৬৮ পৃ.; আত-তাহরীর ওয়াত-তানবীর, ৭/২৪৭ পৃ.)। উল্লেখ্য, এই পক্ষের কিছু আলেম বলেছেন, প্রয়োজনে সময় বাড়ানো যাবে। অর্থাৎ প্রয়োজনে সূর্যোদয় ও মাগরিবের পরও দু‘আ পাঠ করা যাবে। (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দ্রাব লিইবনি উসাইমীন, ১২/২০৫ পৃ.)। সুতরাং সকাল-সন্ধ্যার উক্ত সময়ের মধ্যে উপরোক্ত তিনটি সূরা তিনবার করে পাঠ করবেন, এক্ষেত্রে ফজর বা মাগরিবের সালাত নিদিষ্ট করতে হবেনা।
.
(৩). প্রতিদিন ঘুমানের পূর্বে তিনটি সূরা তিনবার করে পড়া এবং দুই হাত দ্বারা শরীর মাসাহ করা। আম্মিজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) [মৃত: ৫৭/৫৮ হি.] বলেন, “প্রতি রাতে বিছানায় শয়ন করার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু হাতের তালুদ্বয় একত্রিত করে তাতে ফুঁ দিতেন।(থুথু দেয়ার মত করে ফুঁ দেয়া অর্থাৎ থুথুর মত আওয়াজ হবে কিন্তু থুথু বের হবে না)। তারপর দু হাতে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়তেন। তারপর হস্ত দ্বয় যতটুক সম্ভব শরীরে মাসেহ করতেন। শুরু করতেন মাথা, তারপর চেহারা তারপর শরীরের সম্মুখভাগ। এভাবে তিনি তিন বার করতেন।(সহীহ বুখারী হা/৫০১৭, ৫৭৪৮, ৬৩১৯; সহীহ মুসলিম হা/ ২১৯২; সুনানু আবি দাউদ হা/ ৩৯০২; সুনানুত তিরমিয়ী হা/৩৩৯৯, মিশকাত হা/২১৩২)। অপর বর্ননায় আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন অসুস্থতা অনুভব করতেন তখন তিনি নিজের উপর মুআওয়িযাত (আশ্রয়ণীয় সূরাগুলো) পড়ে ফুঁ দিতেন। যখন তাঁর ব্যথা তীব্র হলো তখন আমি পড়ে তাঁকে ফু দিতাম এবং তাঁর হাত দিয়ে মাসেহ করতাম; তাঁর হাতের বরকতের আশায়। (সহিহ বুখারী হা/৪৭২৮, সহীহ মুসলিম হা/২১৯২)। উক্ত হাদীসের ব্যাখায় শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, হাদিসে উক্ত النفث (ফুঁক) মানে থুথু ছাড়া কোমলভাবে ফুঁ দেওয়া। কারো কারো মতে, হালকা থুথুসহ ফুঁ দেওয়া। (ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩৪৭৬)
.
এখন উক্ত হাদীস নিয়ে পাঠকদের মনে দুটি প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন:

(১). দুই হাতের তালু দ্বয় একসাথে জমা করে প্রথমে ফুঁ দিবো নাকি আগে তিনটি সূরা পড়ে তারপর ফু দিয়ে শরীর মাসেহ করবো?

(২). হাদীসের শেষে বলা হয়েছে, রাসূল (ﷺ) এরূপ তিনবার করতেন। প্রশ্ন হলো; রাসূল (ﷺ) কি সূরাগুলো তিনবার করে পাঠ করে তিনবার ফুঁ দিতেন নাকি সূরাগুলো একবার পাঠ করে তিনবার ফুঁ দিতেন?
.
জবাব প্রথমত: ঘুমানোর পূর্বে প্রথমে দুই হাতের তালু দ্বয় জমা করে তাতে প্রথমে থুথু দেয়ার মত করে ফুঁ দিয়ে তারপর তাতে তিন কুল (সূরা ইখলাস,ফালাক্ব ও নাস) পড়ে প্রথমে মাথা, তারপর চেহারা তারপর শরীরের উপরিভাগে যতটুকু সম্ভব মাসেহ করবেন,এটাই বিশুদ্ধ নিয়ম।তবে বিপরীত হলেও সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। এই মর্মে ভারতবর্ষে হাদীসশাস্ত্রের দিকপাল,মিশকাতুল মাসাবীহ’র বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ মির‘আতুল মাফাতীহ’র সম্মানিত মুসান্নিফ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, আল-আল্লামাহ, ইমাম উবাইদুল্লাহ বিন আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.] বলেছেন; উক্ত হাদীসে فقرأ فيهما” ‘ফা’ হরফটি নিয়ে আলেমগন মতভেদ করেছেন। কারণ,এটি ফুঁ দেওয়ার পরে সূরা গুলো পাঠ করা বুঝাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা তার ভিন্ন রকম। বলা হয়, রাসূল (ﷺ) ফুঁ দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন তারপর পড়েছেন। ‘ফা’ হরফটি ওয়াও হরফের অর্থ দিয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন; পাঠ করার আগে ফুঁ দেওয়াটা জাদুকরদের বিপরীত। কেউ বলেছেন; এটি বর্ণনাকারী বা লেখকের পক্ষ থেকে ভুল হয়েছে। (আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা সবচেয়ে বেশি জানেন)। মুতাহহার বলেছেন: ফা হরফটি তা’কীব (পর্যালোচনা) এর জন্য ব্যবহার হয়েছে। যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাস্তবতা বুঝায়। কিন্তু প্রথমে হাতের তালুতে ফুঁ দিয়েছেন তারপরে তিলাওয়াত করেছেন, এই কথাটি কেউ বর্ণনা করেনি এবং তাতে কোন ফায়দাও নাই। সম্ভবত এটা লেখক কিংবা বর্ণনাকারী ভুল করেছেন। কেননা তেলায়তের পরে ফুঁ দেওয়াটা উচিত, যাতে করে কুরআন তেলাওয়াতের বরকত পাওয়া যায় এবং আল্লাহ তাআলার নাম তিলাওয়াতকারীদের অন্তরে গাঁথে। এই ফা হরফটি কি আল্লাহ তায়ালার ওই কথার ওপর কিয়াস করা যায় না? যা সূরা নাহলের ৯৮ নাম্বার আয়াতে রয়েছে। কিছু আলেম হাদীসটাকে তার এই বাস্তবতার উপরে বুঝিয়েছেন। এবং বলেছেন পাঠ করার পূর্বে ফুঁ দেওয়াটা হয়ে থাকে। ইবনে আলান রহ. বলেন, হাদীসের বাস্তবতা হলো ফুঁ দেওয়ার পরে সূরা পাঠ করা। (দালিলুল ফালিহিন শরহে রিয়াযুস সলিহিন: ৪/২৭৫)
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন; এ বিষয়টির মধ্যে প্রশস্ততা রয়েছে। যে কেউ নেকীর উদ্দেশ্যে যে পদ্ধতিতে করবে সেই পদ্ধতি সঠিক হবে। কেউ হয়তো আগে ফুঁ দিল আর পরে পাঠ করল অথবা কেউ আগে পাঠ করল তারপরে ফুঁ দিল, তাতে কোন সমস্যা নাই। ইমাম ইবনে উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-কে আরো জিজ্ঞেসা করা হয়েছিল যে, ফুঁ তিলাওয়াত করার আগে দিবে নাকি পরে দিবে? তিনি উত্তরে বলেছেন; হাদীসের বাহ্যিক দিক থেকে মনে হচ্ছে ফুঁ দেওয়াটা পাঠ করার পূর্বে হবে। কিন্তু এ বিষয়টার মধ্যে প্রশস্ততা রয়েছে। তাই যে যে পদ্ধতিতে করবে সে সেটাই সঠিক করবে।(উসাইমীন লিকাউল বাবিল মাফতুহ, সাক্ষাৎকার নং-১৩৯)। সুতরাং আপনাদের সুবিধা অনুযায়ী সূরা গুলো পড়ার পূর্বে অথবা পরে ফুঁ দিয়ে শরীর মাসেহ করবেন, ইনশাআল্লাহ।
.
দ্বিতীয়ত: প্রথমে দুই হাতে ফুঁ দিয়ে সূরা ইখলাস, ফালাক্ব এবং নাস তিনটি সূরা একবার করে মোট তিনবার পড়ে শরীরের উপরিভাগে যতটুকু সম্ভব মাসেহ করতে পারেন অথবা তিনটি সূরা একসাথে তিনবার করে পড়ে তারপর শরীরের উপরিভাগে সামনে থেকে পিছনে তিনবার মাসেহ করতে পারেন। দুটিই নিয়মই বিশুদ্ধ ইনশাআল্লাহ। ইব্রাহীম নাখায়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: مُعَوِّذَات (মুআওউয়িযাত) অর্থাৎ সূরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস এই তিনটি সূরা প্রতি রাতে ঘুমানোর পূর্বে তিনবার পাঠ করাকে তারা মুস্তাহাব মনে করতেন। (ইমাম নববী আল আযকার: ২২১, ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৭২৫৯১)। ইমাম ইবনু রজব আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৯৫ হি.] বলেছেন,সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস এই তিনটি সূরা পাঠের দু’টি পদ্ধতি রয়েছে।

(১). প্রত্যেক সূরা ধারাবাহিক একবার করে মোট তিন বার পাঠ করবে।

(২). প্রত্যেক সূরা তিন তিন বার করে পাঠ করে শরীর মাসেহ করবে। (ইবনু রজব,ফাৎহুল বারী ৭/৪১৪-১৬)। যার নিকট যেটি সহজ হয়, সে সে-ই পদ্ধতিতে আমল করবে।
.
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনায় সূরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস পাঠের সময় এবং নিয়ম সম্পর্কে আমি যেভাবে উল্লেখ করেছি এটাই সুন্নাহ সম্মত সর্বোত্তম পদ্ধতি। এর বিপরীত কেউ কিছু বললে সেটা তাদের ইজতিহাদ হবে, সর্বোত্তম পদ্ধতি হবেনা ইনশাআল্লাহ।পাশাপাশি জেনে রাখা ভাল আমাদের সমাজে প্রচলিত পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পর যিকির,তাসবীহ ও আয়াতুল কুরসীসহ বিভিন্ন সূরা পড়ে শরীর মাসাহ করার যে নিয়ম চালু রয়েছে সেটি সুন্নাহ সম্মত নয়। কেননা এই বিষয়ে কোন সহীহ দলীল পাওয়া যায় না। তাই এগুলো পরিহার করাই উচিত। বিশেষ করে কেউ যদি তা নিয়মিত করে তাহলে বিদ‘আতে পরিণত হবে। তবে প্রয়োজনে রুকইয়া তথা ঝাড়ফুঁকের উদ্দেশ্যে যদি কেউ করে থাকে তাহলে তাতে বাধা নেই।(দেখুন সহীহ বুখারী, হা/৪৪৩৯, ৫৭৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/২১৯২)। বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, সৌদি ফাতাওয়া বোর্ডের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, কোন রোগ বা যাদু-টোনা থেকে মুক্তির জন্য যেকোন সময় পড়ে রুকইয়ার জন্য মাসাহ করা যেতে পারে; সালাতের পর সময়কে নির্দিষ্ট করা যাবে না।(ইবনু বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৮৮)। মহান আল্লাহ সবাইকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইখলাসের সাথে মহান আল্লাহর ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।