জুম‘আর সালাত কত রাকাআত ফরজ

প্রশ্ন: জুম‘আর সালাত কত রাকাআত ফরজ?কেউ কেউ বলে থাকেন যে, যোহরের চার রাক‘আতের স্থলে জুম‘আর ছালাত দু’রাক‘আত আর খুৎবাকে অবশিষ্ট দু’রাক‘আতের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: জুম‘আর ফরয সালাত দু’রাক‘আত। জুম‘আর ফরয সালাতের পূর্বে নির্দিষ্ট কোন সুন্নাত নেই ইচ্ছেমত পড়া যায়। জুমু‘আর ফরয সালাতের পর বাড়িতে দুই রাক‘আত অথবা মসজিদে ৪ রাক‘আত অথবা মসজিদে দুই বা চার অথবা চার ও দুই রাক‘আত সালাত আদায় করা হয়। (তিরমিজি: ৫২২-২৩ মিশকাত: ১১৬৬)। জুম’আর সালাতে ক্বিরাআত হবে জেহরী অর্থাৎ উচ্চস্বরে। এ সালাতে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা বা আয়াত যথা নিয়মে পড়া যায়। তবে সুন্নত হল, জুম‘আর সালাতে ইমাম প্রথম রাক‘আতে সূরায়ে ‘জুম‘আ’ অথবা সূরায়ে ‘আ‘লা’ এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরায়ে ‘মুনা-ফিকূন’ অথবা সূরায়ে ‘গা-শিয়াহ’ পড়বেন। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৮৩৯-৪০ সালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২) অন্য সূরাও পড়া যাবে। (আবুদাঊদ হা/৮১৮, ৮২০, ৮৫৯)। জুম‘আর দিন ফজরের ১ম রাক‘আতে রাসূল (ﷺ) সূরায়ে ‘সাজদাহ’ ও ২য় রাক‘আতে সূরায়ে ‘দাহর’ পাঠ করতেন।(মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৩৮)।
.
কেউ কেউ বলে থাকেন যে, যোহরের চার রাক‘আতের স্থলে জুম‘আর সালাত দু’রাক‘আত আর খুৎবাকে অবশিষ্ট দু’রাক‘আতের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। এ কারণে খুৎবা সালাতেরই অংশ। অতএব খুৎবা চলা অবস্থায় যেমন কোন কথা বলা যাবে না, তেমনিভাবে কোন সালাতও আদায় করা যাবে না। যারা এ কথা বলেন, তারা আসলে জুম‘আর সালাত সংক্রান্ত নবী করীম (ﷺ) এর সহীহ হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সহীহ হাদীস প্রমাণ করছে যে, জুম‘আর সালাতের মধ্যে কোন প্রকার অপূর্ণতা নেই; বরং দু’রাক‘আতই হচ্ছে জুম‘আর পূর্ণাঙ্গ সালাত। যেমন:

عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ صَلاَةُ السَّفَرِ رَكْعَتَانِ وَصَلاَةُ الْأَضْحَى رَكْعَتَانِ وَصَلاَةُ الْفِطْرِ رَكْعَتَانِ وَصَلاَةُ الْجُمُعَةِ رَكْعَتَانِ تَمَامٌ غَيْرُ قَصْرٍ عَلَى لِسَانِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ভাষায় ‘সফরের সালাত দু’রাক‘আত, ঈদুল আযহার সালাত দু’রাক‘আত, ঈদুল ফিতরের সালাত দু’রাক‘আত এবং জুম‘আর সালাত দু’রাক‘আত পূর্ণাঙ্গ অসম্পূর্ণ নয়’।(মুসনাদে আহমাদ হা/২৫৯ সহীহ ইবনু মাজাহ হা/১০৬৩ নাসাঈ, ১৪২০ সনদ সহীহ)।

উপরোক্ত হাদীসটি প্রমাণ করে যে, জুম‘আর সালাতকে দু’রাক‘আত হিসাবেই পূর্ণাঙ্গ করে ফরয করা হয়েছে। আসলে একটি মতকে সাব্যস্ত করতে গিয়ে কয়েকটি হাদীসকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
.
উল্লেখ্য, যে হাদীসে খুৎবাকে দু’রাক‘আতের পরিবর্তে উল্লেখ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। আরো বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি খুৎবা পাবে না সে যেন চার রাক‘আত সালাত আদায় করে। কিন্তু এটি ভিত্তিহীন। (য‘ঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ হা/৫২০২)।
.
আম্মাজান আয়েশা (রাঃ)-এর উদ্ধৃতিতে বলা হয়ে থাকে যে, খুৎবার কারণে জুম‘আর সালাত দু’রাক‘আত করা হয়েছে। এটাও মিথ্যা বর্ণনা। এর কোন সনদই পাওয়া যায় না। (ইরওয়াউল গালীল হা/৩৭৩)। আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।