কোন মানুষ কি কারো জন্য আশীর্বাদ বা অভিশাপ হতে পারে

প্রশ্ন: কোন মানুষ কি কারো জন্য আশীর্বাদ বা অভিশাপ হতে পারে?এই বিষয়ে ইসলাম কি বলে?
_________________🔰🌹________________
উত্তর: ইসলামে কোন মানুষ অথবা অন্যকিছুর মধ্যে আশীর্বাদ-অভিশাপ কল্যাণ-অকল্যাণ শুভ-অশুভ লক্ষণ বলে কিছু নেই। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউ নুনতম কল্যাণ বা অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখে না। [সুনানে তিরমিযী ২৫১৬ মুসনাদে আহমাদ ২৬৬৪, ২৭৫৮, ২৮০০ রিয়াদুস সলেহিন,৬৩]।

তবে অকল্যাণের বিষয়টি সরাসরি আল্লাহর দিকে সম্পর্কযুক্ত করা যায় না। অকল্যাণ মানুষের নিজের কৃতকর্মের ফলেই সংঘটিত হয়ে থাকে। যদিও তাও তাকদীরে আল্লাহর পক্ষ থেকে লিখা; কিন্তু সেটাকে আল্লাহর দিকে সম্পর্কযুক্ত করা নিষেধ। রাসূলের হাদীসে এসেছে, অকল্যাণের বিষয়টি আল্লাহর দিকে সম্পর্কিত নয়”। [সহীহ মুসলিম,১৬৯৭ ইঃ ফাউঃ১৬৮২ সেন্টার১৬৮৯] সুতরাং মুমিনের উচিত হবে, কল্যাণ হলে সেটাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে বলে সেটার শুকরিয়া আদায় করবে, আর যদি তার কাছে কোনো অকল্যাণ এসে যায়, তবে সেটাকে নিজের কৃতকর্মের ফল, অথবা শয়তানের কারণে, অথবা পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করবে।

রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন, ‘ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই, কোন কিছুতে অশুভ নেই, পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণ নেই এবং ছফর মাসেও কোন অশুভ নেই। একথা শুনে জনৈক বেদুঈন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তাহ’লে পালের মধ্যে একটা চর্মরোগী উট আসলে বাকীগুলি চর্মরোগী হয় কেন? জবাবে রাসূলুল্লাহ ]সাঃ] বলেন, তাহ’লে প্রথম উটটিকে চর্মরোগী বানালো কে?’[সহীহ বুখারী হা/৫৭৭০; মুসলিম হা/২২২০; মিশকাত হা/৪৫৭৭-৭৮]।

অপর হাদিসে এসেছে কোনকিছুর মধ্যে অকল্যাণ নেই। যদি থাকত তবে ঘোড়া, নারী ও বাড়ীর মধ্যে অকল্যাণ থাকত [আহমাদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৪২ ও ৯৯৩]।

কল্যাণ অকল্যাণ, শুভ -অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস করা শিরক [আবু দাউদ, হাঃ৩৯১০ মিশকাত হা/৪৫৮৪]।

কোন কিছুর মধ্যে কল্যান অকল্যান আছে এই বিশ্বাস মূলত মক্কার মুশরিকদের আরবরা কোথাও যাত্রার প্রাক্কালে বা কোন কাজের পূর্বে পাখি উড়িয়ে তার শুভাশুভ লক্ষণ নির্ণয় করত। পাখি ডান দিকে গেলে শুভ মনে করে সে কাজে নেমে পড়ত। আর বামে গেলে অশুভ মনে করে তা হ’তে বিরত থাকত। একেই ‘শুভলক্ষণ’ বা ‘কুলক্ষণ’ বলা হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, ‘যখন ফেরাঊন ও তার প্রজাদের কোন কল্যাণ দেখা দিত, তখন তারা বলত, এটা আমাদের জন্য হয়েছে। আর যদি কোন অকল্যাণ হ’ত, তারা তখন মূসা ও তাঁর সাথীদের ‘কুলক্ষণে’ বলে গণ্য করত’ [সূরা আ‘রাফ, ১৩১]।

উল্লেখ্য যে,সুলক্ষণ লক্ষণের ধারণা মনে জন্ম নেয়া স্বভাবগত ব্যাপার, যা সময়ে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়। এর একমাত্র চিকিৎসা হ’ল আল্লাহর উপর পূর্ণভাবে তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা। যেমন রাসূল [সাঃ] বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার মনে কুলক্ষণ সংক্রান্ত কিছুই উঁকি দেয় না। কিন্তু আল্লাহর উপর ভরসা তা দূর করে দেয়’[আবুদাঊদ হা/৩৯১০; মিশকাত হা/৪৫৮৪] আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানেঃ
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।