আইয়ামে বীজ

প্রশ্ন: আইয়ামে বীজ অর্থ কি? আইয়ামে বীজের সিয়াম কখন রাখতে হয়? আইয়ামে বীজের সিয়ামের গুরুত্ব ও ফজিলত কি?
➖➖➖➖➖➖🌻🌻➖➖➖➖➖➖
উত্তর: আইয়াম হলো আরবি ইয়াওম শব্দের বহুবচন। যার অর্থ হলো দিবসসমূহ বা দিনগুলো। আর বীজ শব্দের অর্থ উজ্জল, সাদা, শুভ্র খাঁটি,ইত্যাদি সুতরাং আইয়ামে বীজ আরবি দু’টি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। একসাথে আইয়ামে বীজ অর্থ উজ্জল দিবসসমূহ। প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখকে আইয়ামে বীজ বলা হয়। কারণ এই দিনগুলোতে চাঁদ সবচাইতে বেশি আলোকিত থাকে এই তারিখগুলোতে জ্যোৎস্নায় রাতগুলো শুভ্র ও আলোকিত হয়। বিশেষত মরুভূমিতে এটি বেশি দৃষ্টিগোচর হয়। এ কারণে তারিখগুলোকে একসঙ্গে বোঝাতে ‘আইয়ামে বীজ’ নামকরণ করা হয়েছে।

◾আইয়ামে বীজের সিয়াম রাখার নিয়ম কি?

আইয়ামে বীজের সিয়াম প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩,১৪,ও ১৫ তারিখে রাখা উত্তম [সহীহ আত-তারগীব হা/১০৩৮]।

কিন্তু উক্ত তারিখে রাখা সম্ভব না হলে মাসের যেকোন তারিখে রাখা যাবে আয়েশা [রাঃ] বলেন, রাসূল [সাঃ] মাসের যে কোন দিনে তিনটি সিয়াম রাখতেন [মুসলিম হা/২৮০১; মিশকাত হা/২০৪৬]

◾আইয়ামে বীজের গুরুত্ব ও ফজিলত:

প্রত্যেক [চান্দ্র] মাসে ৩টি করে রোযা রাখা মুস্তাহাব। আব্দুল্লাহ বিন আম্র বিন আস [রাঃ] বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা রাখা সারা বছর রোযা রাখার সমতুল্য।’’ [সহীহ বুখারী ১৯৭৯ সহীহ মুসলিম ১১৫৯]।

আবূ যার্র [রাঃ]বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক মাসে ৩টি করে রোযা রাখবে, তার সারা বছর রোযা রাখা হবে। আল্লাহ আযযা অজাল্ল্ এর সত্যায়ন অবতীর্ণ করে বলেন, কেউ কোন ভাল কাজ করলে, সে তার ১০ গুণ প্রতিদান পাবে। [সূরা আনআম, ৬/১৬০] এক দিন ১০ দিনের সমান।’’[তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ১৭০৮ ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৪/১০২]।

অবশ্য এই তিন রোযা প্রত্যেক চান্দ্র মাসের শুক½পক্ষের শেষ দিনগুলিতে; অর্থাৎ, ১৩, ১৪ ও ১৫ তারীখে হওয়া মুস্তাহাব। যেহেতু আবূ যার্র [রাঃ] বলেন, আল্লাহর রসূল তাঁকে বলেছেন, ‘‘হে আবূ যার্র! মাসে ৩টি রোযা রাখলে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারীখে রাখ।’’ [আহমাদ, মুসনাদ ৫/১৬২, ১৭৭, তিরমিযী, নাসাঈ, বাইহাকী ৪/২৯৪, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৯৪৭]।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রাখতেন প্রত্যেক মাসের প্রথম সোমবার, অতঃপর তার পরের বৃহস্পতিবার, অতঃপর তার পরবর্তী বৃহস্পতিবার। [আহমাদ, মুসনাদ, আবূ দাঊদ, নাসাঈ, তামামুল মিন্নাহ, আল্লামা আলবানী রহঃ ৪১৫ পৃঃ দ্র]।

কোন কোন বর্ণনা মতে মাসের শুক্লপক্ষের শেষ তিনদিন রোযা রাখতেন। [সহীহ আবূ দাঊদ ২১৪০]।

আর কোন কোন বর্ণনা মতে তিনি কোন নির্দিষ্ট দিনের খেয়াল না করেই যে কোন দিনে ৩টি রোযা রাখতেন।যেমন আয়েশা [রাঃ]-এর কাছে জানতে চাওয়া হ’ল যে, রাসূল [সাঃ] কি প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম, মাসের কোন কোন দিন তিনি সিয়াম পালন করতেন? তিনি বললেন, রাসূল [সাঃ] মাসের যে কোন দিন সিয়াম পালন করতে দ্বিধা করতেন না [সহীহ মুসলিম হা/১১০৭; মিশকাত হা/২০৪৬]।

ইমাম নববী বলেন, চন্দ্র মাসের উক্ত তিন দিন সিয়াম রাখা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে বিদ্বানগণের ঐক্যমত রয়েছে। তবে ঐ তিন দিন নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। জমহূর বিদ্বানগণ ১৩, ১৪, ১৫ তিন দিন নির্দিষ্ট করার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন [মির‘আত হা/২০৭৭ এর আলোচনা দ্রষ্টব্য] [আল্লাহ সবচেয়ে ভাল যানেন]।

উত্তর প্রদানে:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।