ইসলামের দৃষ্টিতে দাড়ি রাখার বিধান কি

প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে দাড়ি রাখার বিধান কি? দাড়ি রাখার প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতাকী? লম্বা দাড়ি এক মুষ্টির উপর কেটে রাখা যাবে কি? এবং ঠোঁটের নিচে যে চুল গজায় এটা কি দাড়ির অন্তর্ভুক্ত? এটা কাটা যাবে কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর:

আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের নিভর্রযোগ্য সকল আলেম দাড়ি রাখা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। অর্থাৎ দাড়ি রাখা ফরজ এবং মুণ্ডন করা হারাম কবিরা গুনাহ দাড়ি মুন্ডন করা কেবল ইহুদী-নাসারা, মুশরিক বা অগ্নিপূজকদের বৈশিষ্ট্য নয়। বরং এটি ছিল ইসলাম বিরোধী সকল কাফেরের বৈশিষ্ট্য সেজন্য রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] দাড়ি শেভ করার বা কাটার ব্যাপারে কোন ছাড় দেননি।

ইয়াহইয়া ইবনু কাছীর বলেন, জনৈক অনারব মসজিদে প্রবেশ করল। যে তার গোঁফকে লম্বা করেছিল এবং দাড়ি কেটে ফেলেছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাকে বললেন, কিসে তোমাকে এই কাজ করতে উৎসাহিত করল? সে বলল, মহান আল্লাহ আমাকে এ কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে আমরা দাড়ি ছেড়ে দেই এবং গোঁফ ছেঁটে ফেলি’। [মুসনাদুল হারেছ হা/৫৮৩,৫৯২; ইবনু হাজার আসক্বালানী, আল-মাতালিবুল আলিয়া হা/২৩০৮]। সুতরাং দাড়ি রাখা কেবল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ নয় বরং আল্লাহরও নির্দেশ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ সমূহকে সম্মান করে, নিশ্চয়ই সেটি হৃদয় নিঃসৃত আল্লাহভীতির প্রকাশ’ [সূরা হজ ২২/৩২]।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
ইরশাদ করেন, “তোমরা গোঁফ কর্তন কর এবং দাড়ি ছেড়ে দাও [লম্বা কর] তোমরা অগ্নিপুজারকদের বিপরীত কর”। [ সহি বুখারি ৫৮৯৩ ইঃফাঃ ৫৩৬১ মুসলিম ১/১২৯; মুসলিম ২/৫১০]।

তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো: দাড়ি বড় করো এবং গোঁফ ছোট করো [বুখারী: ৫৮৯২ ইঃফাঃ ৫৩৬০ মুসলিম: ৬২৫]।

◼️ইসলামে দাড়ি রাখার প্রয়োজনীয়তা কী?
______________________________________
শরী‘আতের কোন বিধানের কারণ তালাশ করা অন্যায়। বরং নির্বিবাদে মেনে নেওয়ার মধ্যেই বান্দার কল্যাণ নিহিত রয়েছে, মুমিন তো তারাই যারা বলে আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। [সূরা বাকারা:২৮৫]। দাড়ি পুরুষের বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক। দাড়ি রাখার যেমন দুনিয়াবী উপকারিতা রয়েছে তেমনি এটি রেখে সুন্নাত পালনের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করা যায় তাছাড়া নারীগণ বাইরে গেলে তারা তাদের মুখমণ্ডল ঢেকে বের হবে, যা সূর্যের অতিরিক্ত তাপ থেকে মুক্তি দেবে। আর পুরুষদের দাড়ি সূর্যের অতিরিক্ত তাপ থেকে মুক্তি দেবে, পৌরুষত্বের প্রমাণ, মুখমণ্ডলের চর্ম রোগ থেকে মুক্তি, পুরুষদের দুর্বলতা দূর করতে সহায়তা করে, ছেলে-মেয়েদের পার্থক্য এবং দাড়ি পুরুষদের সৌন্দর্যের প্রতীক। শায়খ ইবনু বায [রাহিমাহুল্লাহ] কে যেকোন বিধানের প্রয়োজনীয়তা এবং উপকারিতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘বিধানের কোন উপকারিতা বুঝতে পারলে আল-হামদুলিল্লাহ আর বুঝা না গেলেও কোন সমস্যা নেই। মূল বিষয় হল ইত্তেবা বা অনুসরণ’ [ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ১৭তম খণ্ড, পৃ. ৩৮১]।

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, وأمَّا شَعْرُ اللِّحْيَةِ، فِفِيهِ مَنَافِعُ : مِنْهَا الزِّينَةُ والوَقَارُ والهَيْبَةُ. وَلِهَذا لا يُرَى عَلَى الصِّبْيَانِ والنِّسَاءِ مِنَ الهَيْبَةِ والوَقَارِ مَا يُرَى عَلَى ذَوِي اللِّحَى. ‘দাড়ির চুলে প্রভূত কল্যাণ রয়েছে, যেমন সৌন্দর্য, সম্মান-মর্যাদা ও শ্রদ্ধা। সেজন্য দাড়ি ওয়ালাদের প্রতি যেরূপ সম্মান-মর্যাদা ও শ্রদ্ধা দেখানো হয়, তদ্রূপ নারী ও শিশুদের প্রতি দেখানো হয় না’।[আত-তিবইয়ানু ফী আকসামিল কুরআন ১/৩১৭]।

দাড়ি রাখার উপকারিতা হল

(১) এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশের আনুগত্য করা হয়।

(২) মুশরিক এবং অগ্নি পূজকদের বিরোধিতা করা হয়।

(৩) এতে মহিলাদের সাদৃশ্য থেকে বেঁচে থাকা যায়।

(৪) গোঁফ ছাঁটা এবং দাড়ি রাখা মুসলমানদের নিদর্শন।

(৫) এতে পুরুষদের পৌরুষ ফুটে ওঠে।

(৬) এতে চেহারা ও চোখের দীপ্তি, যৌনশক্তি এবং দেহের স্নায়ুবিক ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকে।

◼️লম্বা দাড়ি এক মুষ্টির উপর কেটে রাখা যাবে কি?
________________________________________
তিরমিযীর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়ির বর্ধিত অংশ ছাটতেন মর্মে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীসটি মুহাদ্দিছীনের নিকট বাতিল বলে গণ্য [সিলসিলা যঈফাহ হা/২৮৮]।

তবে ইবনু ওমর থেকে এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কাট-ছাঁট করার বর্ণনা রয়েছে। যা বিশেষ সময়ের জন্য তার ব্যক্তিগত আমল ছিল, ইবনু ওমর [রাঃ] যখন হজ্জ বা ওমরা করতেন তখন তিনি তাঁর দাড়ি মুষ্টি করে ধরতেন এবং মুষ্টির বাহিরে যতটুকু বেশী থাকত, তা কেটে ফেলতেন বলেন বর্ণিত হয়েছে [সহীহ বুখারী হা/৫৮৯২, ‘পোষাক’ অধ্যায়, ৬২ অনুচ্ছেদ]।

মারওয়ান বিন সালেম আল-মুকাফ্ফা‘ বলেন, আমি ইবনু ওমর (রাঃ)-কে দেখেছি তিনি দাড়ি ধরতেন অতঃপর এক মুষ্টির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। [আবূদাউদ হা/২৩৫৭; ইরওয়া হা/৯২০, সনদ হাসান]।

▪️প্রথমতঃ এটি ছিল তার ব্যক্তিগত আমল। অন্য কোন ছাহাবী এমনটি করেছেন মর্মে দলীল পাওয়া যায় না। আর তিনি কাউকে করার জন্য নির্দেশও দেননি।

▪️দ্বিতীয়ত: তিনি শুধু হজ্জ ও ওমরার সময় করেছেন, অন্য কোন সময় নয়।

▪️তৃতীয়ত: এটি ব্যাখ্যাগত ইজতিহাদী বিষয়, যা স্পষ্ট দলীলের কাছে টিকে না। আর ইজতিহাদে ছাহাবায়ে কেরামেরও ভুল হ’তে পারে। যদিও তিনি ইজতিহাদ করার কারণে ছওয়াব পেয়ে যাবেন। আল্লাহর বাণী, আল্লাহ চাইলে অবশ্যই তোমরা মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে নির্ভয়ে মস্তক মুন্ডিত অবস্থায় অথবা কেশ কর্তিত অবস্থায় [সূরা ফাৎহ ৪৮/২৭]। অত্র আয়াতের মাথা মুন্ডন ও চুল কর্তন উভয় বিধানের উপর ইবনু ওমর [রাঃ] আমল করতে চেয়েছিলেন তবে জানা উচিত, উক্ত আয়াত রাসূলের উপরই নাযিল হয়েছে। কিন্তু তিনি দাড়ি ছাটার কথা বলেননি।

ইমাম শাওকানী (রহঃ) ইবনু ওমরের আমল বর্ণনা করার পর বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত হাদীছগুলো ইবনু ওমরের আমলকে প্রত্যাখ্যান করে’। [নায়লুল আওত্বার ১/১৪৯]।

শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, যারা ইবনু ওমরের আমল দ্বারা এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কাটার পক্ষে দলীল গ্রহণ করে থাকে, তাতে তাদের পক্ষে কোন দলীল নেই। কারণ এটি ইবনু ওমর (রাঃ)-এর ইজতিহাদ ছিল। আর দলীল রয়েছে তার বর্ণিত হাদীছে, তার ইজতিহাদে নয়। সেজন্য বিদ্বানগণ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবী ও তৎপরবর্তী বর্ণনাকারীকর্তৃক বর্ণিত হাদীস দলীল। আর এটিই অগ্রাধিকার পাবে যখন তার মতামত সুন্নাতের বিপরীত হবে’। [মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৮/৩৭০, ১০/৭৯, ২৫/২৯৬, ২৯/৩৫]।

তাছাড়া ইবনে ওমরের পিতা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর একটি আমলের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমলের দ্বন্দ্ব হ’লে করণীয় সম্পর্কে ইবনু ওমরকে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি উত্তরে স্পষ্টভাবে বলেন, أَفَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَحَقُّ أَنْ تَتَّبِعُوْا سُنَّتَهُ أَمْ سُنَّةَ عُمَرَ-‘তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এর সুন্নাত অধিক অনুসরণযোগ্য, না ওমরের সুন্নাত’ [মুসনাদে আহমাদ হা/৫৭০০; তিরমিযী হা/৮২৪, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘তামাত্তু’ অনুচ্ছেদ, সনদ সহীহ]।

ইমাম নববী বলেন, সৌন্দর্য বর্ধনের নামে দাড়ির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ছাটা সিদ্ধ নয় [ফাৎহুল বারী ১০/৩৫১]।

তিনি বলেন, দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াটাই বিশুদ্ধ। যেভাবে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে’ [আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ১/২৯০]।

সঊদী আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ এ ব্যাপারে বলেন যে, দাড়ি মুন্ডন বা দাড়ির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হ’তে কিছু কেটে নেওয়া বৈধ নয়। এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)সুন্নাত বিরোধী কাজ [ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/১৩৭]।

শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করতে চায়, তারা যেন অবশ্যই দাড়ির কোন অংশ না কাটে। কেননা শেষনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার পূর্বের কোন নবী দাড়ি কাট- ছাঁট করতেন না [উসাইমিন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৮২]।

শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, দাড়িকে তার নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব [বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৯৬-৯৭]।

সঊদী আরবের অন্যতম গ্রান্ড মুফতী শায়খ ছালেহ আল-ফাওযান বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক দাড়ি ছাড়ার নির্দেশ তা নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব হওয়ার দলীল বহন করে’। [আল-ই‘লাম বেনাকদি কিতাবিল হালাল ওয়াল হারাম ১৮-১৯ পৃ. আল-বায়ান লিআখতায়ে বা‘যিল কিতাব ১/৩০১।]।

অতএব সৌন্দর্যের দোহাই দিয়ে দাড়ি কাট-ছাঁট করা সঠিক নয়। বরং দাড়ি তার নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াটাই সৌন্দর্য। যেভাবে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহ নিজে সুন্দর। তিনি সৌন্দর্যকে পসন্দ করেন [সহীহ মুসলিম হা/৯১; মিশকাত হা/৫১০৮]।

অতএব সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাতের অনুসরণই সৌন্দর্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার সকল উম্মতকে মাফ করা হবে, তবে (পাপ) প্রকাশকারী ব্যতীত’।[সহীহ বুখারী হা/৬০৬৯; মিশকাত হা/৪৮৩০] দাড়ি মুন্ডন ও ছোট করা আর প্রকাশ্য পাপ। আল্লাহু আলাম।

◼️ঠোঁটের নিচে যে চুল গজায় এটা কি দাড়ির অন্তর্ভুক্ত? এটা কি কাটা যাবে?
_______________________________________
ঠোঁটের উপরের অংশকে বলা হয় মোচ বা গোঁফ, যা কাটার ব্যাপারে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো। দাড়ি লম্বা করো এবং গোঁফ ছোট করো’ [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৯২ সহীহ মুসলিম, হা/২৫৯; মিশকাত, হা/৪৪২১]।

আর ঠোঁটের নিচের অংশকে বলা হয় দাড়ি, যা কাটার ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কোনো দলীল পাওয়া যায় না।বরং হাদিসে এসেছে, বৃদ্ধাবস্থাতেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ঠোঁটের নিম্নভাগে উক্ত লোম ছিল। যার কিছু অংশ সাদা ছিল। [দেখুন সহীহ বুখারী হা/৩৫৪৫-৪৬] অতএব এ চুলকে দাড়ির অন্তর্ভুক্ত ভেবে তা কাটা হতে বিরত থাকাই উত্তম। আল্লাহু আলাম।
______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।